শরণার্থীদের জন্য অনলাইন বিশ্ববিদ্যালয়

শরণার্থীদের জন্য অনলাইন বিশ্ববিদ্যালয়

  • ক্যাম্পাস ডেস্ক

যুদ্ধবিধ্বস্ত অঞ্চলসহ বিভিন্ন দেশের শরণার্থীদের জন্য ডিগ্রি কোর্সের সুযোগ করে দিচ্ছে একটি অনলাইন বিশ্ববিদ্যালয়। ক্যালিফোর্নিয়াভিত্তিক ‘দা ইউনিভার্সিটি অব পিপল’ নামের এই বিশ্ববিদ্যালয়টি একটি অলাভজনক প্রকল্পের অংশ এবং দিনে দিনে এটি জনপ্রিয় হচ্ছে ও এর শিক্ষার্থীও বাড়ছে।

মূলত যেসব শরণার্থীদের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা রয়েছে, যারা উচ্চ শিক্ষা নিতে আগ্রহী কিন্তু টাকার জন্য পড়তে পারছে না, তাদের বিনামূল্যে শিক্ষার ব্যবস্থা করাই এ বিশ্ববিদ্যালয়ের লক্ষ্য। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রায় পাঁচ হাজার শিক্ষার্থী এখন এই সুযোগ গ্রহণ করছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি শাই রেশেফ বলছেন, “ইন্টারনেটের সবচেয়ে ভালো ব্যবহারের জন্য এর চেয়ে দারুণ পথ আর নেই”। চার বছর মেয়াদী ডিগ্রি কোর্সের ব্যবস্থা করছে এই বিশ্ববিদ্যালয়টি।  ১৮০টি দেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা শিক্ষার্থীরা চার বছরের পুরো কোর্স অনলাইনেই শিখতে পারবে।

“উচ্চ শিক্ষা নেয়ার জন্য যাদের আর কোনও পথ নেই, আমরা তাদের বিকল্প। তাদের জন্য আমরা সেই দরজা খুলে দিয়েছি। রুয়ান্ডার গণহত্যার ঘটনা থেকে যারা বেঁচে ফিরেছেন, গৃহযুদ্ধ কবলিত সিরিয়ার শরণার্থী, হাইতিতে ভূমিকম্পে গৃহহারা মানুষ-এদের জন্যই মূলত আমাদের দ্বার উন্মুক্ত”-বিবিসিকে বলছিলেন মি: রেশেফ।

৪০টি পৃথক ইউনিট নিয়ে একেকটি কোর্স তৈরি করা হয়েছে। সাধারণ সব বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসেবে ধরলে প্রত্যেকটি ইউনিটের খরচ ১০০ ডলার- চার বছর মেয়াদী কোর্স সম্পন্ন করতে খরচ পড়বে ৪ হাজার ডলার।

সিরিয়ান শরণার্থীদের জন্য এই কোর্স ফি মওকুফ করা হয়েছে।

160811094611_online_university_for_refugee_student_study_640x360_thinkstock_nocredit“শরণার্থীদেরও উচ্চ শিক্ষা নেয়ার অধিকার আছে। এই মানুষেরা সব হারিয়েছে। অনেকে আর কখনোই দেশে ফিরে যেতে পারবে না এবং তাদের শিশু, নাতি সবাই শরণার্থী হয়ে পড়ছে। আর এই অবস্থা থেকে মুক্তির অন্যতম উপায় শিক্ষা। একমাত্র শিক্ষার মাধ্যমেই নতুন দেশে নিজেকে একাত্ম করা সম্ভব”-বলেন শাই রেশেফ।

প্রাতিষ্ঠানিক ও প্রযুক্তিক্ষেত্রে যাদের ভালোবাসা রয়েছে সেসব বিশেষজ্ঞ ব্যক্তিদের অবদানেই এই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রসার বাড়ছে। আর তাই গত দু’বছরে এর শিক্ষার্থী পাঁচশো থেকে পাঁচ হাজারে উন্নীত হয়েছে। আর খুব শীগগিরই এই সংখ্যা দ্বিগুণ হবে বলে আশা করছে কর্তৃপক্ষ।

প্রতি সপ্তাহে অনলাইনে বিশ ঘন্টা ক্লাস করেন শিক্ষার্থীরা, প্রতি ক্লাসেই ২০ থেকে ৩০ জন শিক্ষার্থী থাকেন। শিক্ষা বিষয়ক নানা পরামর্শসহ বাড়ির কাজও দেয়া হয় ক্লাস থেকে। আর এসব কাজে সহায়তা করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষক ও কর্মকর্তাসহ একটি স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী। আর এ কাজের জন্য ‘দা ইউনিভার্সিটি অব পিপল’ থেকে নামমাত্র টাকা দেয়া হয় তাঁদের।

মি: রেশেফ জানালেন শরণার্থীদের শিক্ষা দেবার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকের কোন অভাব নেই। বিশ্ববিদ্যালয়টি যেন স্বনির্ভর হয়ে উঠতে পারে সেটিই এখন লক্ষ্য। বর্তমানে এটি গুগল, গেটস ফাউন্ডেশন এবং হিউলেট প্যাকার্ডের মতো বড় বড় দাতা প্রতিষ্ঠানের সহায়তায় চলছে।

আর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাতিষ্ঠানিক শীর্ষ কর্মকর্তাদের মধ্যে রয়েছেন স্যার কলিন লুকাস, অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির সাবেক ভাইস চ্যান্সেলর, নিউ ইয়র্ক ইউনিভার্সিটির সাবেক প্রেসিডেন্ট সহ গণ্যমাণ্য ব্যক্তিগণ।

অনলাইনে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোর্স আগে থেকে চালু থাকলেও সেগুলো শর্ট কোর্স, হয়তো কয়েকটা ইউনিট করতে পারে কোনও শিক্ষার্থী। কিন্তু সম্পূর্ণ ডিগ্রি কোর্স কেউ চালু করেনি এর আগে।

ইউনিভার্সিটি অব পিপল সম্পূর্ণ ভিন্নভাবে তার কাজ শুরু করেছে। যেসব শিক্ষার্থী ভিন্ন এক অবস্থার মধ্যে বাস করছে তাদের যোগ্যতা কিভাবে আরও উন্নত করা যায় সে বিষয়ে সাহায্য করছে এ বিশ্ববিদ্যালয়। একইসাথে এরা কম সংখ্যক, ছোট পরিসরের বিষয় নিয়ে পড়াচ্ছে, যেমন স্বাস্থ্য, কম্পিউটার এবং ব্যবসা।

“অনলাইনে শিক্ষা কিন্তু সবার জন্য নয় আর সহজ কিছু নয়। এটার জন্য ব্যাপক উদ্যম ও ইচ্ছাশক্তি প্রয়োজন। আত্ম-নিয়ন্ত্রণ প্রয়োজন। আপনি কোথাও চাকরি করছেন, তারপর আবার বাসায় এসে পড়তে বসছেন, এটা যথেষ্ট কঠিন কাজ”-বলছিলেন মি: রেশেফ।

“সাধারণ বিশ্ববিদ্যালয়ে হয়তো আপনি ঘুমিয়ে পড়লেন ক্লাসের সময়, পাশের ছাত্রের কাছ থেকে পরে আপনি বুঝে নিতে পারবেন। কিন্তু এখানে তা সম্ভব নয়”।

শরণার্থী শিক্ষার্থীদের জন্য এ বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিকল্পনা হলো, এরা যদি দুই বছর অনলাইনে পড়তে পারে তাহলে বাকি দুই বছর স্থানীয় কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে পারবে শরণার্থীরা।

ইউনিভার্সিটি অব পিপলের মূল লক্ষ্যই হলো শরণার্থী যাদের পড়াশোনা বন্ধ হয়ে গেছে তারা যেন এই ডিগ্রি অর্জন করতে পারে।

সূত্র: বিবিসি বাংলাfavicon59

Sharing is caring!

Leave a Comment