মেধাবীদের ঠিকানা ফার্মেসি বিভাগ

মেধাবীদের ঠিকানা ফার্মেসি বিভাগ

  • ক্যাম্পাস ডেস্ক

একাত্তরে স্বাধীন হওয়ার পর মুমূর্ষু বাংলাদেশ। অন্নের সঙ্গে ওষুধের সংকট। বাঁচতে হলে দুটোই দরকার। সুজলা সুফলা বাংলাদেশের মাটিতে তখনও রক্তের দাগ। বিপন্ন চাষিদের মাঠে যেতেই ভয়। প্রতিবেশী দেশের বদন্যতায় অন্ন সংস্থান যদিও বা হল, ওষুধ কোথায়। রোগশয্যার রোগীর পাশে দাঁড়িয়ে প্রেসক্রিপশন লিখতে লিখতে ডাক্তার জানিয়ে দিচ্ছেন, এ সব ওষুধ আপনাদের যোগাড় করতে হবে। না পেলে কিছু করার নেই। ওষুধ তো আকাশের মেঘ নয় যে বৃষ্টি হয়ে টুপটাপ ঝরবে। অনেক কষ্টে ২০ শতাংশ ওষুধ দেশে তৈরি। বাকি ৮০ শতাংশ আসবে কোত্থেকে। পাকিস্তান দিতে পারত। তারা দেওয়া বন্ধ করেছে। প্রকারান্তরে বলতে চাইছে, বোঝ এবার স্বাধীন হওয়ার জ্বালা। ইউরোপ, আমেরিকার বহুজাতিক ওষুধ কোম্পানিও ওষুধ দিতে নারাজ। তাদের সাফ কথা, ডলার দাও, ওষুধ নাও। সদ্য স্বাধীন দেশে ডলারের রিজার্ভ তখন শূন্য। দুঃসময়ে বাংলাদেশের পাশে দাঁড়ায় পূর্ব ইউরোপের হাঙ্গেরি। সেখানকার ওষুধ সংস্থা ইগিস, গেইডেন, রিখটার কাইরন, মেডিম্পেস বাংলাদেশে ওষুধ সরবরাহে রাজি হয়। তারা জানিয়ে দেয়, বার্টার সিস্টেমে বা পণ্যের বিনিময়ে ওষুধ দেবে। এ তো হাতে চাঁদ পাওয়া। হাঙ্গেরিতে যেতে লাগল বাংলাদেশের পাট আর অন্যান্য কাঁচা পণ্য। পরিবর্তে এল ওষুধ।

ধীরে ধীরে ওষুধ উৎপাদন শুরু বাংলাদেশে। বিদেশি সংস্থার মাথায় হাত। বাংলাদেশের বাজার হারালে যে বিরাট ক্ষতি। ১৯৮২তে অর্ডিন্যান্স জারি করে বিদেশের ওষুধ নিয়ন্ত্রণ। কুঁড়ি থেকে ফুল হওয়ার মতো পাপড়ি মেলল বাংলাদেশের ওষুধ শিল্প। এই মুহূর্তে বিশ্বের অনুন্নত ৪৮ দেশের মধ্যে ওষুধ উৎপাদনে শীর্ষে বাংলাদেশ। ২৫৭ কোম্পানির ২৪ হাজার ব্র্যান্ডের ওষুধ। বছরে ২৫ হাজার কোটি টাকার ওষুধ দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে যাচ্ছে। রফতানি বাড়ছে দ্রুত। কর্মসংস্থান দু’লাখের। উল্টো দিকে এখন আতান্তরে পাকিস্তান। তাদের ওষুধ শিল্পে ভাটার টান। অভাব মেটাতে বাংলাদেশের কাছে ওষুধ চাওয়ারও মুখ নেই।

১৯৮২ সালের জাতীয় ওষুধনীতির পর স্বল্প সময়ে আমাদের দেশে ওষুধ শিল্পের যে বিকাশ ঘটেছে তার ফলশ্রুতিতে বর্তমানে দেশীয় চাহিদা মিটিয়ে বিশ্বের ৭২টিরও অধিক দেশে রপ্তানী করেছে যা অত্যন্ত গৌরবের দাবিদার। দেশের অর্থনীতিতে যে কয়টি বিকাশমান খাত রয়েছে ওষুধ শিল্প তার মধ্যে অন্যতম। বাংলাদেশে ৭০০ মিলিয়ন ডলারের এ ওষুধ শিল্পে বর্তমানে রয়েছে ২৩০টি উত্পাদন কারখানা। এসব কারখানায় প্রতিনিয়ত নতুন নতুন ওষুধ যেমন উৎপাদিত হচ্ছে তেমনি বাজার হিসাবে যুক্ত হচ্ছে নতুন নতুন দেশ। ২০০৪ সালে যেখানে ৩৭টি দেশে ওষুধ রপ্তানি হত সেখানে ২০১৫ সালে রপ্তানি হচ্ছে ৬০টি দেশে। বাংলাদেশের ওষুধ শিল্প এখন ওষুধের কাঁচামাল উত্পাদনে হাত দিয়েছে। ওষুধ শিল্প এবং এ শিল্পে কাঁচামালের বিনিয়োগ ছাড়াও বাংলাদেশ এখন বায়ো-ইকুইভ্যালেন্স স্টাডি, ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালস, ভ্যালিডেশন রিপোর্ট ও ম্যানুফ্যাকচারিং প্লান্ট এর নকশা তৈরি ও স্থাপনের সক্ষমতা অর্জন করেছে এবং বাংলাদেশের সামনে এখন বিশ্বের ৬০০ বিলিয়ন ডলরের ওষুধ বাজারে ওষুধ রপ্তানি করার সুযোগ তৈরি হয়েছে। এ সুযোগ দেশের মানুষের, এ সুযোগ মেধাবী ফার্মাসিস্টের, কেননা ভালো ফার্মাসিস্ট ছাড়া গুনগত মানের ওষুধ উৎপাদন সম্ভব নয়।

ফার্মেসি শিক্ষা ও বাংলাদেশ

১৯৬৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ফার্মাসী বিভাগ প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর বাংলাদেশে ফার্মেসী শিক্ষার সুযোগ হয়। ১৯৬৪ সাল থেকে ২০১৬, এত বছরের ব্যাপ্তিকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়াও দেশের বেশ কয়েকটি সরকারী ও বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় ফার্মেসী শিক্ষা চালু করা হয়েছে। ফার্মেসী শিক্ষা একটি পেশাদার শিক্ষাব্যবস্থা, ফার্মেসী বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রী অর্জনকারী এবং ফার্মেসী কাউন্সিল থেকে নিবন্ধিত ওষুধ বিজ্ঞানীকে ফার্মাসিস্ট বলা হয়। ফার্মাসিস্টরা ওষুধ কোম্পানীতে ওষুধ উৎপাদন, গুনগতমান বিচার, বিপণন প্রভৃতিতে দক্ষতার সাথে কাজ করে। বিভিন্ন হাসপাতালে হসপিটাল ফার্মাসিস্ট এবং কমিউনিটিতে কমিউনিটি ফার্মাসিস্ট হিসেবেও কাজের সুযোগ রয়েছে।

ফার্মেসিতে পড়ার যোগ্যতা

বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এইচএসসি পাশ করে যে কেউ ফার্মেসীতে পড়তে পারবে, তবে তাকে স্ব স্ব ইউনিভার্সিটির ভর্তি পরীক্ষার প্রয়োজনীয় শর্ত পুরণ করে যোগ্যতা অর্জন করতে হবে। শিক্ষার্থীকে রসায়ন ও জীববিজ্ঞানে ভালো দক্ষতা থাকতে হবে। এ বিষয়ে আরও জানতে যোগাযোগ করতে পারেন ০১৭১৩৪৯৩০৫০ নম্বরে। একজন ফার্মাসিস্টের ভুলে কিংবা নকল ও ভেজাল ওষুধ উত্পাদন ও বিপননের জন্য বিপন্ন হতে পারে অসংখ্য মানুষের জীবন। ফার্মাসিস্টদের তাই তত্ত্বীয় বিষয়ে পারদর্শী হওয়ার সাথে সাথে ব্যবহারিক দিকে দক্ষতা অর্জনসহ উন্নত নৈতিকতা বোধ সম্পন্ন হতে হবে। আর এ ব্যাপারে ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি খুবই সচেতন, কেননা ফার্মেসী বিভাগে প্রয়োজনীয় সংখ্যক শ্রেনীকক্ষ, গবেষনাগার, রাসায়নিক বিকারক, অধুনিক যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জাম থাকার কারণে শিক্ষার্থীরা সেমিষ্টারের শুরুতেই তত্ত্বীয় ক্লাশের সাথে সাথে ব্যবহারিক ক্লাশে নিয়মিত অংশ নেয়।

সূত্র: ইত্তেফাকfavicon59

Sharing is caring!

Leave a Comment