চবিতে সুবর্ণজয়ন্তী উৎসব শুরু
- ক্যাম্পাস ডেস্ক
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতিবিজ্ঞান বিভাগের প্রাক্তন ছাত্র ফরিদুল আলম। ক্যাম্পাস ছেড়েছেন সেই আশির দশকের শুরুতে। তারপর বিশ্ববিদ্যালয়জীবনের বন্ধুদের সঙ্গে খুব একটা দেখা হয়নি। গতকাল শুক্রবার বন্ধুদের দেখা পেয়ে ফিরে গেলেন ক্যাম্পাসের সেই তারুণ্যভরা দিনগুলোতে। উপলক্ষ বিশ্ববিদ্যালয়ের সুবর্ণজয়ন্তী উৎসব।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সুবর্ণজয়ন্তীর অনুষ্ঠানে যোগ দিতে গতকাল চট্টগ্রাম নগরের বাদশা মিয়া সড়কের চারুকলা ইনস্টিটিউট চত্বরে এসেছিলেন ফরিদুল আলম। তাঁর মতো হাজারো প্রাক্তন ও বর্তমান শিক্ষার্থীর মিলনমেলা বসেছিল এই চত্বরে। সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে সেখান থেকে বের করা হয় শোভাযাত্রা। বয়সের সীমারেখা ঘুচিয়ে দিয়ে তাঁরা প্রাণে প্রাণ মিলিয়েছেন সেই শোভাযাত্রায়।
বর্ণাঢ্য এই শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণকারীদের হাতে ছিল প্ল্যাকার্ড, মাথায় টুপি, শরীরে নানা রঙের টি-শার্ট। প্রাক্তন ও বর্তমান শিক্ষার্থীদের উচ্ছ্বাসে গতকাল বিকেলে চট্টগ্রাম পরিণত হয় উৎসবের নগরে।
বেলা সাড়ে তিনটায় বেলুন উড়িয়ে সুবর্ণজয়ন্তী উৎসবের শোভাযাত্রার উদ্বোধন করেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী। হাজারো শিক্ষার্থীর অংশগ্রহণে এ শোভাযাত্রা শেষ হয় নগরের সিআরবির শিরীষতলায় গিয়ে। তখন ওই জায়গাটিই যেন হয়ে ওঠে বিশ্ববিদ্যালয়ের জারুলতলা। হেমন্তের পড়ন্ত বিকেলে পুরোনো দিনের স্মৃতিচারণা ও আড্ডায় মেতে ওঠেন শিক্ষার্থীরা।
সিআরবির শিরীষতলায় সাবেক শিক্ষার্থীদের উচ্ছ্বাস আর পুরোনো বন্ধুকে পেয়ে জড়িয়ে ধরার দৃশ্য ছিল বেশ আবেগময়। সুবর্ণজয়ন্তীর অনুষ্ঠানে যোগ দিতে ছুটে আসা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী ও ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আনিসুল হক বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫০ বছর পূর্তিতে এসে পুরোনো সব স্মৃতি জেগে উঠছে। এতজনকে একসাথে দেখে ভালো লাগছে।’
নবম জাতীয় সংসদের চিফ হুইপ আব্দুস শহীদ ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় ব্যাচের শিক্ষার্থী। শোভাযাত্রায় কথা হয় তাঁর সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫০ বছর পূর্তিতে এসে আমার মন বাঁধভাঙা উল্লাসে মেতে উঠেছে। পুরোনো বন্ধুদের সঙ্গে সাক্ষাৎ হয়েছে। এখন মন চাইছে আবার ভর্তি হই বিশ্ববিদ্যালয়ে।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫০ বছরের গৌরবের অংশীদার হতে পেরে নিজেদের ধন্য মনে করছেন সাবেক শিক্ষার্থীরা। তাঁদেরই একজন রসায়ন বিভাগের ১৭তম ব্যাচের জাফর আলম। চট্টগ্রাম বন্দরের এই কর্মকর্তা বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫০ বছর পূর্তি একটা ঐতিহাসিক ঘটনা। এই ইতিহাসের অংশ হতে পেরে গৌরবান্বিত বোধ করছি। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় অনেক এগিয়েছে। সামনে আরও এগিয়ে যাবে।’
আরেক সাবেক শিক্ষার্থী মোহাম্মদ মহিউদ্দিন বলেন, ‘এ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা আজ বিভিন্ন জায়গায় নেতৃত্ব দিচ্ছেন। পূর্বসূরিদের এই ধারা বজায় রাখবেন উত্তরসূরিরাও।’
প্রাণের এই উৎসবে অংশ নিতে অনেক দিন ধরে প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন সাবেক শিক্ষার্থীরা। গতকাল বিকেলে তাঁদের অপেক্ষার প্রহর শেষ হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৪তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ও ব্যাংকার শাহীন সুলতানা বলেন, ‘দুই মাস আগ থেকে সুবর্ণজয়ন্তীর অনুষ্ঠানে আসার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। এখন মাহেন্দ্রক্ষণ পেয়ে আমার আনন্দের সীমা নেই।’
এদিকে শোভাযাত্রা শেষে নগরের সিআরবির শিরীষতলায় সংক্ষিপ্ত সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘আমি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫০ বছর পূর্তি আমাদের জন্য গৌরবের। এ বিশ্ববিদ্যালয়ের গৌরব বৃদ্ধি করেছেন সাবেক শিক্ষার্থীরা। তাঁরা দেশ-বিদেশের বিভিন্ন উচ্চপর্যায়ে নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছেন। এতে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম। এ বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান শিক্ষার্থীরাও সম্ভাবনাময়। তাঁরা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসকে আরও সমৃদ্ধ করবেন।’
প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা সন্ধ্যায় জড়ো হন নগরের জিইসি কনভেনশন সেন্টারে। সেখানে তাঁদের জন্য আয়োজন করা হয় ‘ওয়েলকাম নাইট’। অনুষ্ঠানে সংগীত পরিবেশন করেন রুনা লায়লা, সন্দীপন ও হৈমন্তী রক্ষিত মান।