পাঁচ বন্ধুর ‘ব্লাড বট’
- ক্যাম্পাস ডেস্ক
বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস অ্যান্ড টেকনোলজির (বিইউবিটি) শিক্ষার্থী অনিরুদ্ধ চক্রবর্তী ও তাঁর বন্ধুরা তৈরি করেছেন ফেইসবুক ম্যাসেঞ্জারভিত্তিক অ্যাপ্লিকেশন ‘ব্লাড বট’। রক্তদাতা ও গ্রহীতার মধ্যে যোগাযোগের প্ল্যাটফর্ম। ৫০ লাখ রক্তদাতার ডাটাবেইস তৈরির লক্ষ্যে কাজ করছেন তাঁরা।
প্রয়োজনের সময় রক্ত জোগাড়ে বাধে নানা বিপত্তি। সময়মতো পাওয়া যায় না। ব্লাড ব্যাংকের রক্তের মান ও দাম নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে ভালো উপযুক্ত রক্তদাতা (ডোনার) খুঁজে বের করা।
ফেইসবুকে অনেকে রক্ত চেয়ে পোস্ট দেন। এ ক্ষেত্রে সাধারণত পোস্টটি শুধু তার অনুসারীদের কাছে পৌঁছায়। তাই কাঙ্ক্ষিত রক্ত পাওয়া কষ্টসাধ্য হয়।
বিইউবিটির শিক্ষার্থী অনিরুদ্ধ চক্রবর্তী গত বছর একই ধরনের পরিস্থিতিতে পড়েন। এক আত্মীয়ের জন্য বি-নেগেটিভ রক্ত খুঁজছিলেন। বন্ধুদের জানিয়ে পাওয়া গেল না। কাজ হয়নি ফেইসবুকে বিভিন্ন গ্রুপে পোস্ট লিখেও। পরে অনেক ঝামেলা করে চড়া দাম দিয়ে ব্লাড ব্যাংক থেকেই কিনতে হয়েছে।
এর কয়েক দিন পর অনিরুদ্ধ দেখলেন, ফেইসবুকে পোস্ট করে রক্ত দিতে চাইছেন একজন। প্রতি চার মাস পর পর রক্ত দেন তিনি।
এই দুই ঘটনায় অনিরুদ্ধ রক্তাদাতা ও গ্রহীতার মধ্যে সহজে যোগাযোগ করিয়ে দেওয়ার উপায় নিয়ে গবেষণা শুরু করেন। দেখতে পান যে রক্তদাতাদের নিয়ে দেশে বেশ কয়েকটি ওয়েবসাইট রয়েছে। ফেইসবুকভিত্তিক গ্রুপও আছে কিছু। তবে প্রয়োজনের সময় এসব সাইট খুঁজে এলাকা অনুযায়ী রক্তদাতা খুঁজে পাওয়া সময়সাপেক্ষ। তাই কম সময়ে সহজে যেন রক্তদাতা খুঁজে পাওয়া যায় সে লক্ষ্যে ‘ব্লাড বট’ তৈরিতে হাত দেন অনিরুদ্ধ।
ব্লাড বট কী
ব্লাড বট ফেইসবুকের ম্যাসেঞ্জারভিত্তিক অ্যাপ্লিকেশন। রক্তদাতা ও গ্রহীতাদের মধ্যে যোগাযোগের একটি প্ল্যাটফর্ম। যারা রক্ত দিতে ইচ্ছুক তারা বটকে রক্তের গ্রুপ, লোকেশন দিয়ে বার্তা পাঠালেই হবে। যখন কেউ রক্ত চেয়ে বটকে বার্তা পাঠাবেন তখন বট স্বয়ংক্রিয়ভাবে রক্তদাতাকে তা জানিয়ে দেবে। সহজ বলা যায়, জরুরি প্রয়োজনে রক্ত দরকার হলে আমরা যেভাবে ফেইসবুক বন্ধুদের নক করে রক্ত চাই। ঠিক একইভাবে বটের সাহায্যে রক্ত চাওয়া ও দেওয়া যাবে। মার্চ মাসে ‘ব্লাড বট’ উন্মুক্ত করা হয়। এরই মধ্যে আট হাজারের বেশি রক্তদাতা ব্লাড বটে যুক্ত হয়েছেন। আর ব্লাড বট ব্যবহার করে এক মাসে রক্ত পেয়েছেন ৬০০ জনের বেশি মানুষ।
যেভাবে কাজ করে
‘ব্লাড বট’-এ ফেইসবুকের ম্যাসেঞ্জারে কোথায় এবং কোন গ্রুপের রক্ত প্রয়োজন, তা জানিয়ে দিলে সঙ্গে সঙ্গেই ফিরতি বার্তায় ডোনারের তথ্য জানিয়ে দেওয়া হয়। ফোন নম্বর থাকায় রক্তদাতাও নিজ উদ্যোগে রোগীর স্বজনদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন।
সুবিধাটি পেতে শুরুতে https://www.facebook.com/bloodbot/ গিয়ে রক্ত চেয়ে বার্তা দিতে হবে। তখন ‘ব্লাড বট’ রক্তের গ্রুপ, রক্ত পৌঁছানোর জন্য যোগাযোগের নম্বর, হাসপাতালের অবস্থান জানতে চাইবে। এরপর ফোনে একটি ভেরিফিকেশন কোড আসবে। ভেরিফাই হলে ব্লাড বট স্বয়ংক্রিয়ভাবে হাসপাতালের দুই কিলোমিটার ব্যাসার্ধে থাকা কাঙ্ক্ষিত রক্তের গ্রুপের ডোনারদের মেসেঞ্জারে নোটিফিকেশন পাঠিয়ে দেবে। ডোনারকে details, cannot go, already donated বাটন পাঠায় বট। রক্ত দিতে যেতে চাইলে ‘details’ চাপলে লোকেশন, ফোন নম্বরসহ বিস্তারিত দেখাবে।
রক্ত ইতিমধ্যে দিয়ে থাকলে already donated বাটন চাপলে কোন মাসে রক্ত দিয়েছেন বট তা জানতে চাইবে। তথ্যটি দিলে পরবর্তী চার মাস ওই ব্যক্তিকে নোটিফিকেশন দেবে না বট। বট ব্যবহার সুশৃঙ্খল করতে এক ফেইসবুক আইডি থেকে দিনে একবার এবং এক ফোনে নম্বর থেকে সপ্তাহে একবারের বেশি রক্ত চাওয়া যাবে না।
পেছনে যাঁরা আছেন
বিইউবিটির কম্পিউটার বিভাগের পঞ্চম সেমিস্টারে পড়ুয়া অনিরুদ্ধ চক্রবর্তীর নেতৃত্বে চলছে ‘ব্লাড বট’। পাঁচ মাসের দীর্ঘ পরিশ্রমের ফসল ব্লাড বট তৈরিতে অনিরুদ্ধের সঙ্গে ছিলেন বন্ধুরা। এর মধ্যে ওমরান জামাল ও নওফেল মাশনুর আছেন অনিরুদ্ধের কোডিং ও ডেভেলপমেন্ট দলে। বিনিয়োগ সংগ্রহের দায়িত্ব সুমনা চক্রবর্তীর। মোহাম্মদ আদনান আছেন সমন্বয়ে। জেরিন তাসনিম প্রচারণা ও রক্ত সংগ্রহের দিকটি দেখেন। আরো অনেক স্বেচ্ছাসেবক রয়েছেন তাঁদের দলে।
ব্যবহারকারীর তথ্যের নিরাপত্তা
রক্তদাতা ও গ্রহীতাদের তথ্যের নিরাপত্তার দিকে নজর দেওয়া হয়েছে ব্লাড বটে। কেউ যেন তথ্য নিয়ে কাউকে হয়রানি না করতে পারে সে জন্য ব্যক্তি বা কোনো প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে তথ্য শেয়ার করা হয় না। নিবন্ধনও তাই সহজ করা হয়েছে। যার রক্ত প্রয়োজন শুধু তার অবস্থান ও ফোন নম্বর রক্তদাতাকে দেওয়া হয়।
এ ছাড়া রক্তদাতা ও গ্রহীতাদের তথ্য যে সার্ভারে রাখা হয়েছে তাতে চার ধাপে নিরাপত্তাব্যবস্থা রাখা হয়েছে। হ্যাকিং রোধে প্রতিনিয়ত সার্ভার নিরাপত্তা বাগ চেক করা এবং তা সংস্কার করা হয়।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
অনিরুদ্ধ বলেন, ৫০ লাখ ডোনারের ডাটাবেইস তৈরির ইচ্ছা আছে। আমরা চাই, মানুষ ডোনার তার আশপাশ থেকেই পেয়ে যাক। রক্তের জন্য প্রথম আবেদন ব্লাড বটকে জানাক এবং দ্রুত সময়ে রক্তদাতা নিশ্চিত হোক। রক্ত নিয়ে স্বজনদের দুশ্চিন্তা কমে যাক।
ভবিষ্যতে হাসপাতালগুলোর সঙ্গে কথা বলে তাদের কিছু নম্বর মার্ক করে রাখা হবে। সে নম্বরগুলোর অনুমতি থাকবে একাধিক ব্যবহারের।
প্রতিকূলতা
অনেকেই ব্লাড বট কিভাবে কাজ করে সেই কৌতূহল থেকে বটকে রক্ত চেয়ে মেসেজ দিচ্ছেন। এতে অনেক ডোনারের কাছে নোটিফিকেশন যাচ্ছে। অনাকাঙ্ক্ষিত এ ধরনের ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন রোগীরা। ডোনারদের এ ক্ষেত্রে ব্লাড বটের ফেইসবুক পেইজে জানাতে অনুরোধ করেছেন অনিরুদ্ধ। তিনি বলেন, ‘আমাদের কাছে ভেরিফাইড নম্বর থাকে। কে এমনটা করছে তা আমরা খোঁজ করতে পারি। তাদের সাবধানও করতে পারি। ’