পেশা : মেডিকেল প্রমোশন অফিসার

পেশা : মেডিকেল প্রমোশন অফিসার

  • ক্যারিয়ার ডেস্ক

আমাদের দেশে ওষুধ কোম্পানীগুলোর  সংখ্যা প্রতিনিয়তই বাড়ছে। এই শিল্পকে এগিয়ে নিতে যারা অক্লান্ত পরিশ্রম করছেন বা এই শিল্পের চালিকশক্তি হিসেবে যাদেরকে ধরা হয় তারা হলেন ‘মেডিকেল প্রমোশন অফিসার’। চিকিত্সকদের ও বিভিন্ন ফার্মেসিতে প্রতিষ্ঠানগুলোর পণ্য পরিচিতির কাজে তার সর্বদা নিয়োজিত থাকেন। যতগুলো চ্যালেঞ্জিং পেশা সম্পর্কে আমরা জানি তার মধ্যে মেডিকেল প্রমোশন অফিসার একটি। যারা এই পেশায় নিয়োজিত তারা সমাজে বেশ কদর পাচ্ছেন এবং  অর্থনৈতিকভাবেও এগিয়ে যাচ্ছেন।

যেমন কাজ করতে হয়

মেডিকেল প্রমোশন অফিসারদের কাজের ধরন সম্পর্কে বঙ্গবন্ধু মেডিকেল কলেজের মেডিসিন বিভাগের সহকারী রেজিস্ট্রার ডা. শাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘মেডিকেল প্রমোশন অফিসাররা চিকিত্কদের কাছে তাদের পণ্যের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন। যেমন ধরুন- ওষুধ উত্পাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো নতুন কোনো ওষুধ তৈরি করলে তার গুনাগুন কী, কোন রোগের জন্য চিকিৎসকরা এই ওষুধ রোগীকে দিতে পারবেন অর্থাৎ এই ওষুধ কোন রোগের নিরামক হিসেবে কাজ করবে এবং তাদের উৎপাদিত বিভিন্ন ওষুধের গুনাবলি ও কার্যকারিতা তুলে ধরাই মেডিকেল প্রমোশন অফিসারদের কাজ।’

কাজের ধরন সম্পর্কে জানতে চাইলে মেডিকেল প্রমোশন অফিসার মো. সারোয়ার হোসেন বলেন, ‘আমাদের কাজ হচ্ছে কোম্পানির উৎপাদিত বিভিন্ন পণ্য নিয়ে ডাক্তারদের কাছে পৌঁছানো। তাদেরকে আমাদের ওষুধ সম্পর্কে সঠিক ধারণা দেওয়ার মাধ্যমে আমাদের ওষুধের গুনাবলী তুলে ধরা। অনেক সময়ই দেখা যায় কোম্পনি নতুন নতুন ওষুধ বাজারে নিয়ে  আসে। নতুন ওষুধটি কেন ভালো, আগের ওষুধের থেকে এর কোন গুনাবালীর জন্য এই ওষুধটি ডাক্তাররা ব্যবস্থাপত্রে লিখবেন, এসব বিষয় নিয়েই ডাক্তারদের বোঝাতে হয়। এই কাজের পাশাপাশি বিভিন্ন ওষুধের দোকান থেকে অর্ডার গ্রহণ করার কাজটিও মেডিকেল প্রমোশন অফিসাররাই করে থাকেন।’

পেশা হিসেবে মেডিকেল প্রমোশন অফিসার

পেশা হিসেবে মেডিকেল প্রমোশন অফিসারের অবস্থান সম্পর্কে এরিস্টো ফার্মার সিনিয়র মেডিকেল প্রমোশন অফিসার মো. এনামুল হক জানান, এই পেশায় যারা কাজ করেন তারা  অনেক সম্মান নিয়েই সমাজে বসবাস করছেন। বলা যায় পেশা হিসেবে মেডিকেল প্রমোশন অফিসাররা খুব ভালো পেশাতেই আছেন। এই পেশাতে যারা আছেন এবং যারা এই পেশাতে আসতে চাচ্ছেন তাদেরকে অবশ্যই পরিশ্রমী হতে হবে। মেডিকেল প্রমোশন অফিসারদের যোগ্যতা ও পরিশ্রমের মাধ্যমেই  উন্নতি করতে হয়। কঠোর পরিশ্রম আর যোগ্যতা থাকলে এই পেশায় চাইলেও পিছিয়ে থাকা যাবে না। তার নিজের কাজই তাকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাবে। যখন কোনো প্রমোশন অফিসার কাজের প্রতি মনোযোগী হন তখন তার সাফল্য সে নিজে অনুভব করতে পারেন। কাজের প্রতি তার একটি নেশা হয়ে যায়।

শিক্ষাগত যোগ্যতা

এই পেশায় আসতে চাইলে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে পাস করা হলে ভালো হয়। অন্য বিষয় নিয়ে যারা লেখাপড়া করছেন তারা যে এ পেশায় আসতে পারবেন না ব্যাপারটা সেরকম নয়। তারাও চাইলে এই পেশায় আসতে পারেন। যদি পেশাজীবনে সফলতা পেতে হয় তা হলে উচ্চ মাধ্যমিক ও স্নাতকে বায়োলজিক্যাল বিষয়ে লেখাপড়া থাকলে ভালো। অনেকগুলো প্রতিষ্ঠান নিয়োগে তাদের চাহিদার কথা উল্লেখ  করে থাকে। অনেক সময় দেখা যায় ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগ থেকেও নিয়োগ দেন তারা। এখানে একটি বিষয় খুব গুরুত্বপূর্ণ। তা হলো, অভিজ্ঞ লোকদের জন্য সাবজেক্ট কোনো বড় ব্যাপার হিসেবে কাজ করে না।

নিয়োগের পদ্ধতি

অন্য সব চাকরির মতো মেডিকেল প্রমোশন অফিসার নিয়োগের জন্য সংবাদপত্র ও অনলাইন জব পোর্টাল সাইটগুলোতে নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। যে প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ দেওয়া হবে তাদের নিজস্ব ওয়েবসাইটেও নিয়োগের যাবতীয় তথ্য দেওয়া থাকে। এই পেশায় যারা কর্মরত আছেন তাদের মাধ্যমেও নিয়োগের অনেক তথ্য পাওয়া যায়। আবেদনের যাবতীয় কার্যক্রম শেষে নিয়োগপ্রাপ্তদের বিভিন্ন মেয়াদে প্রশিক্ষণ দেয় নিয়োগদাতা প্রতিষ্ঠান। প্রশিক্ষণ শেষে তাদের চূড়ান্তভাবে নিয়োগ দেওয়া হয়ে থাকে।

বেতন ও সুযোগ সুবিধা

এই পেশায় যারা কাজ করেন তাদের বেতন নির্ভর করে তার যোগ্যতার উপর। যে তার যোগ্যতা কাজের মাধ্যমে বেশি প্রমাণ করতে পারবেন, তার বেতন তত বেশি হবে।

পপুলার ফার্মাসিটিক্যালসের মানবসম্পদ অধিদপ্তর থেকে জানোনো হয়েছে, মেডিকেল প্রমোশন অফিসারদের বেতন প্রাথমিক অবস্থায় ১২ হাজার থেকে ১৮ হাজার টাকার মতো হয়ে থাকে। তাদের কাজের জন্য খরচ বাবদ আলাদা টাকা দেওয়া হয়। তাদেরকে বিভিন্ন টার্গেট দেওয়া হয়ে থাকে। এই টার্গেট পূরণ করতে পারলে তাদেরকে বিশেষ সুবিধা দেওয়া হয়ে থাকে। তাদের যাতায়াতের জন্য মোটর সাইকেল দেওয়া হয়। মেডিকেল প্রমোশন অফিসারদেরকে প্রতি বছর সব্বোর্চ ৫টি বোনাস দেওয়া হয়ে থাকে।

মেডিকেল প্রমোশন অফিসার থেকে ব্যবস্থাপনা পরিচালক হওয়ারও সুযোগ রয়েছে। এর উদাহারণও আছে। প্রাথমিক নিয়োগের এক থেকে দেড় বছরের মধ্যে পদোন্নতি পাওয়া সম্ভব হয়। এরপর বিভিন্ন ধাপে প্রমোশন হতে থাকে। এরিয়া ম্যানেজার, সিনিয়র এরিয়া ম্যানেজার, সেলস ম্যানেজার, সিনিয়র সেলস ম্যানেজার  থেকে হেড অব সেলস ম্যানেজার হওয়ার সম্ভাবনা অনেক।

সম্ভাবনার জায়গা

মেডিকেল প্রমোশন অফিসার পদে মোট কত লোক কাজ করে তার সঠিক কোনো পরিসংখ্যান নেই এবং এই খাতে কত লোক নিয়োগ দেওয়া হয় তাও বলা কঠিন। তবে সারা বছরই দেশব্যাপী এ নিয়োগ হয়ে থাকে।

এ বিষয়ে এরিয়া ম্যানেজার  শহিদুল ইসলাম জানান, এই খাতে সারা দেশে কত লোক নিয়োগ হয় তার সঠিক সংখ্যা বলা মুসকিল। প্রতি বছর এই খাতে নতুন করে যুক্ত হচ্ছেন ৪ থেকে ৫ হাজার নতুন কর্মী। যত দিন যাচ্ছে এই খাতে লোকবলের চাহিদাও তত বৃদ্ধ পাচ্ছে। ওষুধ উত্পাদনের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান যোগ্যদেরকে উপরের পদে যায়গা করে দিচ্ছে বলেও জানান তিনি। তিনি আরও জানান, এই পেশায় বর্তমানে মেয়েরাও যুক্ত হচ্ছেন। মেয়েদের জন্য এই পেশা একটু বেশি চ্যালেঞ্জিং হলেও তারা তা করছেন। নারী চিকিত্সকদের কাছে মহিলা প্রমোশন অফিসাররা গেলে একটু ভালো ফলাফল পাওয়া যায়। এতে নারী ডাক্তার ও নারী প্রমোশন অফিসার উভয়েই স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন।

আবেদনে যা লাগবে

অন্য সব চাকরির মতোই মেডিকেল প্রমোশন অফিসারদের নিয়োগ প্রক্রিয়া। এজন্য সদ্য তোলা ৪ কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি, জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি,  শিক্ষাগহ যোগ্যতার যাবতীয় সনদের সত্যায়িত ফটোকপি আবেদন পত্রের সাথে জমা দিতে হবে। উল্লেখিত ব্যাংক ড্রাফট বা পে-অর্ডার অবশ্যই আবেদনপত্রের সাথে যুক্ত করতে হবে।

সূত্র: ইত্তেফাকfavicon59-4

Sharing is caring!

Leave a Comment