আর্কিটেকচারে ক্যারিয়ার : সৃষ্টির আনন্দ নিয়ে

আর্কিটেকচারে ক্যারিয়ার : সৃষ্টির আনন্দ নিয়ে

  • ক্যারিয়ার ডেস্ক
একই সঙ্গে আর্থিকভাবে মর্যাদাপূর্ণ এবং সৃষ্টিশীল যে কয়টি পেশা রয়েছে, আর্কিটেকচার বা স্থাপত্যবিদ্যা নিঃসন্দেহে সেগুলোর মধ্যে অন্যতম। এ পেশার প্রাথমিক যোগ্যতা অর্জন, অর্থাৎ প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা গ্রহণের পথে বেশ কঠিন মনোনিবেশ ও পাঠ্যাভাস্যের ভেতর দিয়ে যেতে হয় একেকজন শিক্ষার্থীকে। তারপর পেশাজীবনে এসে প্রতিনিয়ত মগ্ন হতে হয় নিজের কাজে; তুখোড় শিল্পীর মতো প্রতিনিয়ত ভেঙে ভেঙে গড়তে হয় নিজেকে।


মানুষের আবাসন চাহিদা মেটানোর লক্ষ্যে বিভিন্ন শ্রেণী-গোষ্ঠীর চাহিদা অনুযায়ী কাজ করে যান আর্কিটেক্ট বা স্থাপত্যবিদরা। ক্রমবর্ধমান চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে আমাদের দেশেও সম্ভাবনাময় এ ক্ষেত্রটি ক্রমেই প্রসারিত হচ্ছে। দেশে সাম্প্রতিক বাণিজ্যিক মাত্রা ছাড়িয়ে ক্রেতার সংস্থাপন-সংক্রান্ত বিভিন্ন চাহিদা, দুর্যোগ মোকাবেলায় ভবনের দৃঢ়তা, দীর্ঘস্থায়িত্ব, নান্দনিকতা প্রভৃতি বিষয় দ্রুত প্রসারমান এ ক্ষেত্রটিতে বিজ্ঞানসম্মতভাবে পূরণ করার ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে।

স্বল্প সম্পদের মধ্যে পরিমিত বাস-উপযোগী জমি নিয়ে এ দেশের প্রতিনিয়ত ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার চাপ সামলাতে পরিকল্পনামাফিক নগরায়ন ও স্যাটেলাইট সিটি স্থাপন একজন সফল আর্কিটেক্ট কিংবা একটি আর্কিটেকচারাল কোম্পানির জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। বিল্ডিং ডিজাইন ও স্থায়িত্ব এবং সেটিকে শৈল্পিক ও নান্দনিক করার ক্ষেত্রে ক্রেতামুখী ও যুগোপযোগী করে তোলার লক্ষ্যে এ মাধ্যমটির উদ্যোক্তারা আর্কিটেক্ট বিষয়ের ওপর প্রাতিষ্ঠানিক, তত্ত্বীয় ও ব্যবহারিক পড়াশোনা জানা লোকবলের ব্যাপক প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করছেন। চাইলে সেই প্রয়োজনীয়তা মেটাতে পারেন আপনিও। এ মাধ্যমে গড়ে তুলতে পারেন ঈর্ষণীয় ক্যারিয়ার।
  • শুরুর গল্প 
রাজ্যের পেশার ভিড়ে এ পেশাটা সামনে থাকলেও এখানে কিন্তু পর্যাপ্ত লোকবলের অভাব দখা যায়। তাই আপনি স্থাপত্যবিদ্যার পাঠ নিলে অনায়াসেই ক্যারিয়ারটা শুরু করতে পারেন এ পেশায়। আপনার কর্মসংস্থানের জন্য নিয়োজিত আছে অনেক প্রতিষ্ঠান। কেউ কেউ আবার এসব প্রতিষ্ঠানের দ্বারস্থ না হয়ে নিজেই প্রতিষ্ঠান খুলে বসেন। তার মানে, চাইলে আপনি নিজেই একটি প্রতিষ্ঠান দিয়ে শুরু করতে পারেন এ পেশায় যাত্রা। চাকরির প্রথম দিন থেকে নিজেই হয়ে যেতে পারেন বস। তবে অভিজ্ঞতা বলে একটা কথা আছে। তাই একেবারে শুরুতেই নিজের প্রতিষ্ঠান খোলার আগে ছোটখাটো বা নামি যে কোনো প্রতিষ্ঠানে কাজ শুরু করে অভিজ্ঞতায় সমৃদ্ধ করতে পারেন নিজেকে। এতে আপনার প্রতিষ্ঠান খোলার চিন্তাকে আরও ঋদ্ধ করতে পারবেন।

তাছাড়া বড় প্রতিষ্ঠানে ঘোরাঘুরি করলে নিজের প্রতিষ্ঠানকেও সাজাতে পারবেন স্বপ্নের মতো। তবে প্রতিষ্ঠান দেওয়ার ঝক্কি সামলাতে মন না চাইলে যোগাযোগ করুন আর্কিটেকচারাল কনসালট্যান্সি ফার্মগুলোতে। এসব প্রতিষ্ঠানে সব সময় বিষয়ভিত্তিক পর্যাপ্ত লোকবলের অভাব থাকে। আপনি সেই অভাবটা পূরণ করতে পারেন অনায়াসেই।

  • কাজে পরিচয় 
যে কোনো স্থাপনা নির্মাণের আগে প্রয়োজন নকশা। সে নকশা করেন স্থপতি। একজন স্থপতিই নিশ্চিত করেন স্থাপনাটি পরিবেশবান্ধব, ঝুঁকিমুক্ত ও নিরাপদ কি-না। স্থাপত্য বিভাগের শিক্ষার্থী হিসেবে নতুন স্থপতিকে দুনিয়ার অনেক জিনিস সম্পর্কে জানাশোনা থাকতে হবে। যে কোনো স্থাপনা যেন খুব সহজেই আমাদের নজর কাড়ে, তার জন্য আপনাকে শিল্পকলা, নন্দনতত্ত্ব, উদ্ভাবন আর সৃজনশীলতার বিকাশ ঘটাতে হবে শিক্ষাজীবন থেকেই। তবে যে কাজটাই আপনাকে দেওয়া হোক না কেন, তাতেই দেখাতে হবে মুন্সিয়ানা। এটি এমনই এক কর্মক্ষেত্র, যেখানে আপনার সৃজনশীল ক্ষমতা টের পাওয়া যাবে ছোট থেকে শুরু করে যে কোনো কাজেই। তাই প্রথম কাজটা দিয়েই নিজেকে প্রমাণে তৈরি থাকুন। এ তৈরি থাকাটাও কিন্তু আপনার অন্যতম কাজ। ফলে বিষয়টিকে মোটেও হালকাভাবে নেওয়া ঠিক হবে না।
  • ভাবনার ল্যাম্পপোস্ট 
প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে পাওয়া ডিগ্রি আপনাকে এ পেশায় নিজেকে নিয়োজিত করতে সাহায্য করবে ঠিকই, তবে এটুকুই আপনার একমাত্র অবলম্বন হওয়া উচিত নয়। এটি একটি সৃষ্টিশীল মাধ্যম। ফলে প্রযুক্তির অবাধ যোগাযোগের এ সময় আর্কিটেকচার-সংক্রান্ত নানা ম্যাগাজিন ও ওয়েবসাইটে চোখ বুলাতে পারেন। এ মাধ্যমের মহান কারিগরদের কাজগুলো নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করতে পারেন।
  • আয়-রোজগার 
এ পেশায় বেতনের ধরাবাঁধা কোনো কাঠামো নেই। প্রতিষ্ঠানের ওপর নির্ভর করে বেতন কাঠামো। পাশাপাশি মাথায় থাকে প্রতিষ্ঠানও। শুরুতেই আপনার কাজের দক্ষতার চেয়ে প্রতিষ্ঠানটিকেই গুরুত্ব দেওয়া হয়। মানে, আপনি যে প্রতিষ্ঠান থেকে পড়া শেষ করেছেন, সেই প্রতিষ্ঠানটি কতটা গুরুত্বপূর্ণ- সেটাও দেখা হয়। তবে কাজের মাধ্যমে আপনি কিন্তু শুরুর ধারণা পুরোটাই বদলে দিতে পারবেন। তবু এ পেশাটি ৩৫ থেকে ৪০ হাজার টাকা বেতন দিয়ে শুরু করতে পারেন।

আর নিজের ক্ষমতা ও দক্ষতা দেখিয়ে ছয়-সাত মাসের মধ্যেই এই বেতন-কাঠামো ভেঙে ফেলতে পারেন। আপনার বেতন হতে পারে ৬০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা। বেতনের এ বৃদ্ধিটা কিন্তু প্রতিনিয়ত বাড়তেই থাকবে। তাই নিজের দক্ষতা ও সৃজনশীলতা মাথায় রেখেই কাজ করে যেতে হবে আপনাকে।

  • নিজের ঘর 
আপনি নিজের প্রতিষ্ঠান গড়তে চাইলে শুরুতেই অভিজ্ঞতার কথাটা মাথায় রাখবেন। প্রতিষ্ঠান খোলার পর আপনি হয়তো অনেক কাজ পাবেন। তবে এসব কাজে দক্ষতার ছাপ না থাকলে বেশিদিন সুনাম ধরে রাখতে পারবেন না। কেননা, এটি খুবই স্মার্ট এক পেশা। তবে প্রতিষ্ঠানের প্রতি দরদ ধরে রাখতে পারলে অল্প দিনের মধ্যেই অন্যদের ছাড়িয়ে যেতে পারবেন। বলি, সেই চেষ্টা করে দেখতে তো দোষ নেই!
  • সৃষ্টির আনন্দ 
সৃষ্টিশীল মানুষের জন্য যেসব পেশা আদর্শ মনে করা হয়, তার মধ্যে অন্যতম এই স্থাপত্যবিদ্যা। একজন স্থাপত্যবিদের মূল কাজটির কথা বলাই হয়েছে। যে কোনো ভবন বা স্থাপনাকে যতটা চমৎকারভাবে ডিজাইনের মাধ্যমে ফুটিয়ে তুলতে পারবেন, ঠিক ততটাই উজ্জ্বল আপনার ক্যারিয়ার। এ ডিজাইনের কাজটি করার সময় সংশ্লিষ্ট ভবন বা স্থাপনার কাঠামোর পাশাপাশি এর পরিবেশসহ অন্যান্য বিষয়েও নজর রাখতে হবে। আরও নজর রাখতে হবে- যেখানে স্থাপনাটি তৈরি হচ্ছে, সেখানকার সাংস্কৃতিক আবহ ও ঐতিহ্যের প্রতি।

বিশ্ববিখ্যাত সব ভবন আর স্থাপনা তৈরি করে অমর হয়েছেন অনেক স্থাপত্যবিদ। সে সব কাজ বস্তুত পক্ষে তাদের সৃজনশীল মেধার একেকটি ম্যানিফেস্টো। আমাদের জাতীয় সংসদ ভবনের কথাই ধরা যাক। এর স্থপতি ভিনদেশি লুই কান তার সৃষ্টিশীলতার মহিমায় এখনও আমাদের কত আপন হয়ে আছেন! এবার আপনার পালা। দেখিয়ে দিন নিজের মেধার ব্যায়াম! স্মার্ট এই পেশাকে আপন করে আজই নেমে পড়ূন কাজে। favicon59-4

Sharing is caring!

Leave a Comment