চ্যালেঞ্জিং পেশা : মেডিকেল রিপ্রেজেন্টেটিভ

চ্যালেঞ্জিং পেশা : মেডিকেল রিপ্রেজেন্টেটিভ

  • ক্যারিয়ার ডেস্ক 

দেশে ওষুধ কোম্পানি বৃদ্ধির সাথে সাথে বাড়ছে কর্মসংস্থান। প্রতিটি কোম্পানির বিভিন্ন বিভাগে কাজের সুযোগ পাচ্ছেন দেশের শিক্ষিত তরুণ-তরুণীরা। কোম্পানিগুলোর অন্যতম প্রধান কাজ উৎপাদিত ওষুধের বাজারজাতকরণ। ডাক্তারের প্রেসিক্রিপশন ছাড়া কোনো রোগীর ওষুধ কেনার সুযোগ নেই। তাই নিজের কোম্পানির ওষুধের গুণাগুণ ডাক্তারের কাছে যারা তুলে ধরেন তারা হলেন মেডিকেল রিপ্রেজেন্টেটিভ। এ পেশাটির সামাজিক মর্যাদার পাশাপাশি রয়েছে পর্যাপ্ত বেতন-ভাতা। মেডিকেল রিপ্রেজেন্টেটিভ পেশায় আসাতে হলে যে সব গুণাবলী বা যোগ্যতা থাকতে হবে তা নি¤েœ তুলে ধরা হলো। পেশা হিসেবে কেমন : এরিস্টো ফার্মার সিনিয়র মেডিকেল রিপ্রেজেন্টেটিভ মো. নাসির আল হাবিব ইনকিলাবকে বলেন, পেশা হিসেবে মেডিকেল রিপ্রেজেন্টেটিভ অত্যন্ত আকর্ষণীয়। এ পেশায় যেহেতু শিক্ষিতরাই আসতে পারেন তাই সামাজিক মর্যাদাও বেশ উন্নত। আজকাল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সর্বোচ্চ ডিগ্রিধারীদের কাছে মেডিকেল রিপ্রেজেন্টেটিভ পেশার গুরুত্ব ক্রমেই বাড়ছে।

বাংলাদেশের একমাত্র পেশা মেডিকেল রিপ্রেজেন্টেটিভ, যেখানে চাকরি পেতে কোনো মামা-চাচা-খালুর প্রয়োজন হয় না। দুর্নীতি কিংবা স্বজনপ্রীতির কোনো সুযোগ নেই। কঠোর পরিশ্রম, মেধা, যোগ্যতা বলে এ পেশায় নিজেকে এগিয়ে নিতে হয়। এ পেশার সঙ্গে এসিআই কোম্পানির মেডিকেল রিপ্রেজেন্টেটিভ মো. জালাল উদ্দিন বলেন, মেডিকেল প্রতিনিধি পেশাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি পেশা। এ পেশায় জড়িয়ে আমি আমার জীবনকে আমার মতো করে সাজিয়ে নিয়েছি। এ পেশায় আসতে তেমন কোনো ঝামেলা পোহাতে হয় না। খুব সহজেই এ পেশায় আসা যায়। শুধু দরকার একটু সাহস, স্বইচ্ছা আর কর্মদক্ষতা। বেতন-ভাতা মেডিকেল রিপ্রেজেন্টেটিভ পেশায় যোগদানের মাধ্যমে একজন শিক্ষিত যুবক-যবতী দ্রুত উন্নতি করতে পারেন। এ পেশা শুধু মর্যাদা, সুনাম, মুখ্য নয় এর পাশাপাশি দেশসেবার অংশও এটি। যোগদানের শুরুতে ১৫ হাজার থেকে শুরু করে ১৮ হাজার টাকা পর্যন্ত মাসিক বেতন পেতে পারেন। তবে কোম্পানি ভেদে বেতন কমবেশি হতে পারে।

পেশাগত দক্ষতা ও প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণের মাধ্যমে আর্থিক সুযোগ-সুবিধা দ্রুত বৃদ্ধি সম্ভব। নিয়োগের পরে প্রাথমিক প্রশিক্ষণ চলাকালে ভাতা প্রদান করে নিয়োগকর্তা বা কোম্পানিগুলো। প্রতিনিধিদের বেশিরভাগ কোম্পানি নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা দেয়। তা পূরণ যাতে সম্ভবপর হয় এজন্য রয়েছে নানা রকম ইনসেনটিভ বা উৎসাহ ভাতা। দুই ঈদ ছাড়াও কোনো কোনো কোম্পানি বছরে ২/৩ বার বোনাস দিয়ে থাকে। কাজের সুবিধার্থে মোটরসাইকেল দিয়ে থাকে বেশিরভাগ কোম্পানি। প্রতিনিধিদের কাজ যোগদানের পরই সরাসরি কাজে পাঠানো হয় না। প্রথমে দুই থেকে তিন মাস মেয়াদি একটি প্রশিক্ষণ কোর্সে অংশ নিতে হবে। নিয়োগকর্তা কোম্পানি নিজেরাই এ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে থাকে। এখান থেকে প্রোডাক্ট সম্পর্কে ধারণা পেয়েই পরবর্তীতে কাজ করতে হয়। মেডিকেল প্রতিনিধিদের কাজ হলো প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত। প্রত্যেক প্রতিনিধির জন্য এলাকা নির্ধারিত থাকে। নির্দিষ্ট এলাকার ডাক্তারদের সাথে সাক্ষাৎ করাই তার কাজ।

ডাক্তারদের চেম্বারে উপস্থিত হয়ে একজন মেডিকেল রিপ্রেজেন্টেটিভের কাজ কি হবে তা আগেই অফিস থেকে ধারণা দেয়া হয়। সে অনুযায়ী কোম্পানির ওষুধের গুণাগুণ ডাক্তারদের সামনে বিস্তারিত তুলে ধরেন তারা। অধিকাংশ মেডিকেল প্রতিনিধির কাজ প্রত্যেক সকালে হাসপাতালে উপস্থিত হওয়া। বিকালে ডক্টরস পয়েন্ট ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ডাক্তারদের চেম্বারে উপস্থিত হওয়া। সারাদিনের কাজ পরের দিন সকালে অফিসের সংশ্লিষ্ট বিভাগে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে বুঝিয়ে দেয়া। শিক্ষাগত যোগ্যতা এক সময় কেবল বিজ্ঞান বিভাগের গ্রাজুয়েটরাই এ চাকরিতে আবেদন করতে পারতেন। এখন কোম্পানিগুলো অন্যান্য ডিসিপ্লিন বা বিভাগ থেকে আসা ব্যাচেলর বা মাস্টার্স ডিগ্রিধারীদের এ পেশায় কাজ করার সুযোগ দিচ্ছে। বিভিন্ন কোম্পানির মানবসম্পদ বিভাগের কর্মকর্তাদের সাথে আলাপ করে জানা যায়, ইদানীং বিজ্ঞান বিভাগ ছাড়াও বিবিএ, এমবিএ ডিগ্রিধারীরাও বিশেষ গ্রহণযোগ্যতা পাচ্ছেন এ পেশায়।

ওষুধ উৎপাদন বা বাজারজাতকারী প্রতিষ্ঠানগুলো মেডিকেল রিপ্রেজেন্টেটিভ নিয়োগে সাধারণত জাতীয় দৈনিকে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। এ পেশায় আগ্রহীরা পত্রিকায় উল্লেখিত শর্তসমূহ মেনে আবেদন করতে পারেন। আবেদন প্রক্রিয়া মেডিকেল রিপ্রেজেন্টেটিভ পেশায় আবেদন প্রক্রিয়া অন্যান্য চাকরির মতোই। এজন্য সাম্প্রতিক তোলা দুই কপি পাসপোর্ট সাইজ ছবি, জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি, শিক্ষাগত যোগ্যতার সকল সার্টিফিকেটের সত্যায়িত ফটোকপি আবেদনপত্রের সাথে জমা দিতে হবে। বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখিত ব্যাংক ড্রাফট বা পে-অর্ডার অবশ্যই আবেদনপত্রের সাথে সংযুক্ত করতে হবে। তাছাড়া অন্য কোনো প্রতিষ্ঠান থেকে প্রশিক্ষণ বা সার্টিফিকেট কোর্স সম্পন্ন করে থাকলেও বাড়তি যোগ্যতা হিসেবে আবেদনপত্রে যোগ করতে পারেন। এতে চাকরি প্রার্থীর ওপর নিয়োগকর্তার আস্থা তৈরি হতে পারে।favicon59-4

Sharing is caring!

Leave a Comment