ক্যারিয়ারে গ্লাস সিলিং

ক্যারিয়ারে গ্লাস সিলিং

  • ক্যারিয়ার ডেস্ক

চাকরিক্ষেত্রে ‘গ্লাস সিলিং’ বলে একটা টার্ম প্রচলিত আছে। একটা নির্দিষ্ট পর্যায়ের পরে আর ওপরে উঠতে পারা যায় না। একটা অদৃশ্য কাচের সিলিং তাদের গতিরোধ করে। পাশেই সহকর্মীরা তরতরিয়ে ওপরে উঠে যায়। আর আপনি যাবতীয় যোগ্যতা থাকার পরও আটকে আছেন। ‘গ্লাস সিলিং’ শুনলেই মনে হতে পারে এ শুধু গুটিকয় কর্মীর সমস্যা। কিন্তু বিষয়টা এত সোজা নয়।


গ্লাস সিলিং, পৃথিবীজুড়ে আছে। হোয়াইট কালার জবে গ্লাস সিলিং এফেক্ট আছে। অর্থাৎ যত ওপরে উঠবে ল্যাডারে তত বেশি ডমিনেশন থাকার ফলে একটা সিলিংয়ে গিয়ে মাথা ঠেকে যায়। গ্লাস সিলিং এক অদৃশ্য দেয়াল, যা থাকবে আপনার আর আপনার উন্নতির মধ্যিখানে। বছরের পর বছর আটকে থাকবেন একই জায়গায়, একই পদে। কী সমস্যাটা চেনাচেনা ঠেকছে? দেরি না করে এই গ্লাস সেলিং ভাঙার প্রস্তুতি নিন।

প্রাথমিক পাঠ : নতুন চাকরি শুরুর আগে ভালো করে সেই কোম্পানি সম্বন্ধে জেনে নিন। শুধু বার্ষিক টার্নওভার, ছুটি, স্যালারি বা ইনক্রিমেন্ট সম্বন্ধে জানলেই হবে না। জানতে হবে আরও বেশি কিছু। যেমন এইচআর পলিসি, কোড অব এথিকস ইত্যাদি। যারা সব কাজে এগিয়ে যান তাদের, নাকি যারা সঠিক সময়ে সুপরামর্শ দেন তাদের। সেই অনুযায়ী নিজের স্ট্র্যাটেজি ঠিক করুন।

স্পটলাইটের ফোকাস : শুধু কাজ করে গেলেই হবে না। যে কাজ করছেন এটাও জানান দিতে হবে। কারণ কাজটা আপনি করলেন, নাকি অন্য কেউ বস জানবেন কী করে? আপনার ইমিডিয়েট বস যে সব ক্রেডিট নিয়ে যাবে না তারই বা গ্যারান্টি কী? তাই কাজ করার সঙ্গে সঙ্গে তা বসকে জানাতেও ভুলবেন না। তাই বলে বসকে দেখলেই চেঁচিয়ে কাজের কথা বলবেন না। অ্যাসাইনমেন্ট জমা দেওয়ার আগে বসকে দেখান। আরও কীভাবে ভালো কাজ করতে পারেন সে বিষয়ে টিপস চান।

কমিউনিকেশন গ্যাপ রাখা যাবে না : শুধু নিজের টিম নয়, অন্য টিমের সঙ্গেও নিয়মিত যোগাযোগ রাখুন। অফিস ক্যান্টিনে কিংবা অফিস শেষে রেস্টুরেন্টে সবার সঙ্গে গল্প করুন। দু-একটা ব্যক্তিগত কথাও শেয়ার করতে পারেন। অনুষ্ঠানে বা জন্মদিনে সবাইকে শুভেচ্ছা জানান।

পজিটিভ ইমেজ তৈরি করুন : চাকরিটা একটা যুদ্ধ। এখানে কে কখন পিঠে ছুরি মেরে দেয় তার নিশ্চয়তা নেই। আপনার সম্বন্ধে ভালো কিছু কেউ সহজে বলবে না। তাই নিজের ঢাকটা কায়দা করে নিজেকেই পেটাতে হবে। কোনো বিশেষ গুণ থাকলে গল্পের ছলে সহকর্মীদের জানিয়ে রাখুন।

বেশি কাজ করুন : সাধারণত কাজ করুন একটু বেশি। আপনার কাজ যদি টেকনিক্যাল সাপোর্ট দেওয়া হয়, অথচ আপনি যদি লেখালেখি বা অন্য কোনো কাজেও পারদর্শী হন তাহলে সেই কাজটাও করুন। নিজের কাজ হয়ে গেলে সিনিয়র কলিগদের কাজে সাহায্য করুন। এতে আপনারও কাজ শেখা হবে আর সিনিয়ররাও খুশি হবেন।

মেন্টর খুঁজুন : সব সময় নিজের কথা নিজে বললে কোনো কাজ নাও হতে পারে। তাই এমন একজন প্রভাবশালী ব্যক্তিকে খুঁজুন যিনি আপনার হয়ে বলতে পারেন। তবে তাকে কিন্তু নিজের কাজ দিয়েই প্রভাবিত করতে হবে। খেটে কাজ করুন।

অধিকার সম্পর্কে জানুন : এটা গুরুত্বপূর্ণ। কোম্পানি আপনাকে কী কী সুযোগ-সুবিধা দিতে বাধ্য, কত বছরের মধ্যে প্রমোশন করতে পারে এই বিষয়ে বিস্তারিত জেনে নিন। যদি দেখেন আপনার সঙ্গে জয়েন করে, একইরকম পারফর্ম করে অন্য সহকর্মীর উন্নতি হয়েছে, তাহলে বসকে এবং এইচআরডিকে প্রশ্ন করুন। যা পাচ্ছেন তাকেই ভাগ্য বলে মেনে নেবেন না। কোম্পানি পলিসি আর স্থানীয় আইন সম্বন্ধে সচেতন থাকুন।

শেষের পাঠ : সব রকমভাবে নিজেকে প্রমাণ করুন। কাজে ফাঁকি দেবেন না। নিজের দু’শ শতাংশ দিন কাজের জায়গায়। অন্য সহকর্মীরা যতটা খাটেন তার থেকে একটু বেশি পরিশ্রম করুন। সবার সঙ্গে ভালো ব্যবহার করুন। কলিগদের প্রয়োজনে তাদের পাশে দাঁড়ান। অফিসের নিয়ম মেনে চলুন। এই ছোটখাটো নিয়মগুলো মেনে চললে আপনার পারফরম্যান্স সবার চোখে পড়তে বাধ্য। আর গ্লাস সিলিং? সেটা দেখবেন কখন অদৃশ্য হয়ে গেছে। favicon59-4

Sharing is caring!

Leave a Comment