ক্লান্তি-অবসন্নতা কমাতে

ক্লান্তি-অবসন্নতা কমাতে

  • ক্যারিয়ার ডেস্ক

অফিসে কাজ করতে করতে ক্লান্ত। অফিসের ক্লান্তি কাটিয়ে না উঠতেই বাসায় ফিরেই আবার ঘরের কাজ। এত ব্যস্ততার মাঝে হাঁপিয়ে ওঠাটাই স্বাভাবিক। কিন্তু দৈনন্দিন জীবনে সবকিছুই আমাদের সামাল দিতে হয়। ক্লান্তি-অবসন্নতার ফলে কাজে মারাত্মক ব্যাঘাত যেমন ঘটে, তেমনি ঘরের কাজের ও স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় এর প্রভাব পড়ে। এ জন্য ক্লান্তি-অবসন্নতা দূর করতে যে কাজগুলো সাহায্য করে, সেগুলো করলে কাজে উৎসাহ পাওয়া যায় আবার ঘর সামলাতেও বেগ পেতে হয় না। 

  • অফিসে ক্লান্তি কাটানোর কিছু পদ্ধতি 

অফিসে একসঙ্গে সব কাজ মাথার ওপর নেবেন না। কারণ একসঙ্গে সব কাজ করতে গেলে দেখা যায় কোনোটাই ঠিকমতো হয় না। ক্লান্তি দূর করার জন্য প্রয়োজনীয় কাজগুলো গুছিয়ে নিন। প্রতিদিন অফিসে আসার আগে ঠিক করে নিন কোন কাজটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, কোনটি আগে করতে হবে, প্রয়োজনে কাজগুলো একটি কাগজে লিখে নেওয়া যেতে পারে। প্রতিদিন অফিস থেকে বের হওয়ার আগে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র-ফাইলগুলো ঠিকভাবে গুছিয়ে রাখুন। এক থেকে দেড় ঘণ্টা পর পর একটু ব্রেক নিন ১০-১৫ মিনিটের। ব্রেক নেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে চা-কফি পান করতে পারেন। কিছুক্ষণ নিজের চেয়ার ছেড়ে একটু হাঁটাহাঁটি করা যেতে পারে। আশপাশের সহকর্মীদের সঙ্গে একটু মতবিনিময় করুন। জরুরি ফোন কলগুলো সেরে নেওয়া যেতে পারে, পত্রিকায় চোখও বুলিয়ে নেওয়া যেতে পারে এই ফাঁকে। অনেকক্ষণ কাজের পর কিছুক্ষণের জন্য একটু ব্রেক নিলে আর ক্লান্ত লাগে না; বরং কাজে উৎসাহ পাওয়া যায়।

কাজের ক্ষেত্রে তাড়াহুড়ো না করে নির্দিষ্ট একটা সময়ের ভেতর কাজটা শেষ করা যেতে পারে। এ ব্যাপারে জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক মেখলা সরকার বলেন, যেকোনো কাজ করার প্রধান শর্ত কাজটাকে ভালোবাসা। যে ব্যাপারগুলো খারাপ লাগে, সেগুলো এড়িয়ে ইতিবাচক বিষয় নিয়ে ভাবা। কাজের ক্ষেত্রে যে ব্যাপারগুলো পছন্দনীয়, সেগুলো আগে খুঁজে নিতে হবে। একটা ব্যাপার খেয়াল রাখতে হবে যে কাজটা ছাড়া আর কোনো গতি নেই, তাই ইতিবাচক ব্যাপারগুলো খুঁজে কাজটা করা উচিত। যে ব্যাপারটায় ক্লান্ত লাগে বা ক্লান্তি কাজ করে, সেগুলো আগে বের করা উচিত অথবা অফিসের সহকর্মী বা বসের সঙ্গেও এ ব্যাপারে আলাপ করা যেতে পারে। অনেক কাজের চাপ একবারে নেওয়া উচিত নয় এবং কাজের ফাঁকে একটু চোখ বন্ধ করে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিতে পারলে তা উপকার দেবে। এ ছাড়া অফিস থেকে বেরিয়ে কিছুক্ষণ হেঁটে আসা যেতে পারে। মনে রাখতে হবে অফিসের কাজের পাশাপাশি একজন মানুষকে তার পরিবার-বন্ধু সবাইকে সময় দিতে হবে। তাই কাজগুলো ভাগ করে নেওয়াই উচিত। বাসায় অফিসের কাজ না করাটাই শ্রেয়। এতে করে ক্লান্তি আসে। সবশেষে নিজের কাজের প্রতি আনন্দ খুঁজে নিতে হবে বলে মনে করেন তিনি।

আপনি কাজে যতই দক্ষ হন অতিরিক্ত কাজ নেবেন, অতিরিক্ত কাজ সামলাতে না পেরে ক্লান্ত হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা বেশি। আস্তে ধীরে গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো শেষ করুন। অনেক সময় অনেকক্ষণ না খেয়ে থাকার ফলেও ক্লান্তি দেখা দেয়। সে ক্ষেত্রে দুই-তিন ঘণ্টা কাজ করার পর পর কিছু খেয়ে নিন। এতে শক্তি বজায় থাকবে। দুপুরে মধ্যাহ্নভোজে হালকা খাবার খাওয়াটাই উচিত। কারণ ভারী খাবার খেলে কাজে অসুবিধা হতে পারে। এ ছাড়া জাঙ্কফুড এড়িয়ে হালকা খাবার যেমন—ফল, বিস্কুট, কেক ইত্যাদি খাওয়া যেতে পারে। খুব বেশি অসুবিধা না হলে অফিসে নিজের ডেস্কে ১০-১৫ মিনিটের জন্য একটা ছোট ঘুম দিয়ে নিতে পারেন। অফিসে খুব বেশি ক্লান্ত লাগলে ওয়াসরুমে গিয়ে চোখমুখে একটু পানির ঝাঁপটা দিয়ে দিন অনেকটা সতেজ লাগবে। আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ কাজ আপনি যতই এড়িয়ে চলুন না কেন, সেটা অফিসে কাজের ক্ষেত্রে অনেক সহায়ক তা হলো ছোটখাটো ব্যায়াম। অফিসে কাজের ফাঁকে একটু ব্যায়াম করে নিতে পারেন। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো অফিসে ক্লান্তি-অবসন্নতা যেন আপনাকে না ছোঁয়—এ জন্য প্রতিদিন রাতে পরিপূর্ণ একটা ঘুম দিন।

গ্রন্থনা: ফারজাানা জামান    favicon59-4

Sharing is caring!

Leave a Comment