কাজের ধ্যান কাজের জ্ঞান

কাজের ধ্যান কাজের জ্ঞান

  • ক্যারিয়ার ডেস্ক

আধুনিক সময় বড়ই কর্মমুখর। নানান কাজের ভিড়ে ব্যস্ত মানুষ। কিন্তু এই কাজ কতটা নিজের জন্য, কতটা সমাজের জন্য_ সেটা ভাবার ফুরসত মেলে না আমাদের অনেকেরই। ভবিষ্যতের সফলতায় যোগ্য মানুষ হিসেবে নিজেকে গড়ে তোলার সময় এখন। তরুণ যারা, তারাই আগামীর ঝাণ্ডা তুলে নেবেন হাতে। তাদের হাতেই আলোকিত হবে ভবিষ্যতের পৃথিবী। নিজের জন্য আলাদা সময় রেখে, নিজেকে গড়ে তুলতে, সমাজের উন্নয়নে কর্মী হওয়ার মন্ত্র দিতে চাই তাদের।


কর্মী হওয়ার মানে

কর্মী শব্দের অর্থ হচ্ছে, যিনি কর্ম সম্পাদন করেন। অর্থাৎ কাজ যারা করেন, তারাই কর্মী। প্রশ্ন হতে পারে, এখানে আসলে কোন কাজের কথা বলা হচ্ছে? এবার একটু খুলেই বলি, এই কাজ জীবিকার জন্য নয়, বরং জীবনের জন্য। জীবনের জন্য কর্মী হওয়ার মানে যদি ভাবনার অদূরে থাকে, তাহলে বলি, নিজের জন্য, মানুষের জন্য, সমাজের জন্য কর্মী হওয়া। কিভাবে এই কর্মী হওয়া যায়? এই কর্মী হতে হলে প্রথমে চাই ইচ্ছা। ইচ্ছা থাকলেই সম্ভব ‘কর্মী’ হিসেবে নিজেকে গড়ে তোলা।

নিজেকে গড়তে

সমাজের জন্য, পাশের মানুষটির জন্য কিছু করতে চাইলে, অর্থাৎ কর্মী হিসেবে তৈরি হতে হলে সবার আগে প্রয়োজন নিজেকে যোগ্যতর মানুষ হিসেবে গড়ে তোলা। নিজের লেখাপড়া ও নিজের স্বপ্নের পথে হেঁটে চলার কাজটি করতে হবে সবার আগে। সমস্ত বদঅভ্যাসকে ত্যাগ করে ব্যক্তিগত উন্নয়নের কাজটি করা চাই সবার আগে। কেউ যখন নিজে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়, তখনই আরেকজনের দুঃখ, কষ্ট, অভাব মোচনে এগিয়ে আসতে পারবে।

সবার ছাত্র

কবি সুনির্মল বসুর ‘সবার আমি ছাত্র’ কবিতাটি মনে আছে নিশ্চয়ই। কবি বলেন, প্রকৃতির কাছ থেকে তিনি শিক্ষা নিয়েছেন। আকাশের কাছ থেকে উদারতার শিক্ষা নিয়েছেন। বায়ুর কাছে শিক্ষা পেয়েছেন কর্মী হওয়ার। পাহাড় শিখেয়েছে তার সমান উদার হতে। এভাবে প্রকৃতির প্রতিটি ক্ষেত্র থেকে শিক্ষা নিয়েছেন কবি। আপনাদের বলছি, প্রতিনিয়ত শিক্ষা নিতে হবে নিজের চারপাশ থেকে। এই শিক্ষা নিতে হলে খোলা রাখতে হবে মনের চোখ। সংযত ব্যবহার আর পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ থাকলে যে কেউ মনোযোগী ছাত্র হয়ে প্রকৃতি থেকে, সমাজ থেকে শিক্ষা নিতে পারে। বাতাস যেমন সারাদিন বয়ে চলে, মনে প্রাণে দেয় শান্তির পরশ,কবির ভাষায় বাতাসের কাছ থেকে কর্মী হবার শিক্ষা নিলে সবার কাজটি সহজ হয়ে যায়।

উদ্যোক্তার গুণগান

নিজেকে কর্মী হিসেবে গড়ে তুলতে চাইলে, হতে পারেন উদ্যোক্তা। নিজের স্বপ্ন বাস্তবায়নে উদ্যোক্তা হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করেছেন অনেকেই। বর্তমান সময়ে যে সব প্রতিষ্ঠান তাদের কাজ দিয়ে, তাদের পণ্য দিয়ে, তাদের সেবা দিয়ে পুরো বিশ্বকে একই সুতোয় গেঁথেছে, তারা এক সময় সবাই উদ্যোক্তা ছিল। নতুন কোনো কাজের উদ্যোগ নিতে হলে চাই ইচ্ছার জোর আর স্বপ্ন দেখার মন। যে কোনো মানুষের যে কোনো উদ্যোগ তখনই সফল হয়, যখন সেটা গণমানুষের কথা মাথায় রেখে নেওয়া হয়। তাই বলছি, যে কোনো ভালো উদ্যোগ নিতে পিছ পা না হয়ে বরং এগিয়ে যান। তবেই আপনি পাবেন কর্মী হওয়ার যথার্থ আনন্দ।

সমাজের দাবি

পরিবার, আত্মীয়-স্বজন ও প্রতিবেশী নিয়ে যেখানে আমরা বাস করি, তার নাম সমাজ। এই কথা ছোটবেলায় সমাজ বিজ্ঞান বইয়ে পড়েছি আমরা সবাই। তাহলে সমাজের জন্য কাজ কী হবে? মানুষের জন্য কাজ করা মানেই সমাজের জন্য কাজ করা। আমাদের চারপাশে অসংখ্য দরিদ্র মানুষ আছেন, যারা একবেলা খাবার যোগাড় করতে অমানুষিক পরিশ্রম করছেন। তাদের দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে পারি আমরা। গৃহহীন অনেক মানুষ আছেন, যারা শীত-গ্রীষ্ম-বর্ষায় অসহনীয় কষ্ট ভোগ করেন। তাদের কষ্ট লাঘবেও এগিয়ে আসতে পারি আমরা নানাভাবে। আমাদের দেশের বানভাসি মানুষ প্রতিবছর ভোগ করেন অমানবিক কষ্ট। তাদের সাহায্যের জন্যও কাজ করা যেতে পারে। এভাবে একটু চোখ-কান খোলা রাখলেই দেখতে পাব, আসলেই সমাজের মানুষের জন্য অনেক কিছু করার আছে আমাদের।

প্রতিদিন একটি কাজ

আমরা যে কেউই চাইলে প্রতিদিন একটি কাজ করতে পারি। সেটা হতে পারে আপনার ইচ্ছেমতো। সেটা হতে পারে প্রতিদিন একটু একটু করে টাকা জমানো, যেন বছর শেষে কাউকে কোনো কাজে আর্থিক সাহায্য করা যেতে পারে। হতে পারে, রক্তের প্রয়োজনে কাউকে সাহায্য করা। হতে পারে, দিনের মধ্যে অন্তত একবেলা কোনো ক্ষুধার্ত মানুষকে খাবার খাওয়ানো। রাস্তা পার হতে কাউকে সাহায্য করাও একটি কাজ হতে পারে। এভাবে আমরা সবাই যদি প্রতিদিন মানুষের জন্য একটি অন্তত কাজ করে ঘরে ফিরি, তবে সত্যিই সেটা হবে অনেক বড় একটি কাজ।

পরিবার-পরিজন

প্রতিটি মানুষের জীবনে পরিবার একটি আরাধ্য স্থান। পরিবার ছাড়া আমরা বড়ই দুর্বল আর প্রাণহীন হয়ে পড়ি। অভিজ্ঞতার প্রয়োজন হলে, পরিবার ছেড়ে বাইরে কাটান কিছুদিন, তবেই বুঝবেন পরিবার ছাড়া আমরা মানুষ কতটা নিঃস্ব। তাই বলি, পরিবারকে সময় দেওয়ার মাধ্যমেও নিজেকে কর্মী হিসেবে গড়ে তোলা যায়। ঘরের কাজে মা-বাবাকে সাহায্য করা, নিজের কাজগুলো নিজেই শেষ করে ফেলা, পরিবারের ছোটদের ভালোবাসা আর বড়দের সম্মান করা, পরিবারের যে কোনো সদস্যকে গুরুত্বপূর্ণ ভাবা – এভাবেই আমরা পরিবারকে মূলত সময় দিতে পারি। হাসি-আনন্দে ভরিয়ে তুলতে পারি আমাদের পরিবার।

ভালো বন্ধু

আপনি নিজে ভালো মানুষ হয়ে অন্যের যেমন ভালো বন্ধু হতে পারেন, তেমনি অন্য বন্ধুদের মধ্য থেকেও নিজের ভালো বন্ধুদের বেছে নিন। কর্মী হতে হলে প্রয়োজন একদল ভালো বন্ধুর। কারণ, আপনার বন্ধুই যদি না থাকে, তবে কীভাবে নিজের কাজ, নিজের চিন্তা, নিজের ভাবনা, নিজের স্বপ্ন অন্যদের মাঝে ছড়িয়ে দেবেন। সৎ সঙ্গ গ্রহণ করে অসৎ সঙ্গ ত্যাগ না করে বরং তাদের ভালো ও সুন্দর পথের দিকে আহ্বান করুন। এভাবেও আপনি বন্ধুদের নিয়ে সবাই মিলে কর্মী হয়ে উঠতে পারেন। favicon59-4

Sharing is caring!

Leave a Comment