বাংলাদেশের ম্যাক্রো অর্থনীতির বিস্ময়কর রূপান্তর
- ড. আতিউর রহমান
সম্প্রতি অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলাদেশের সামষ্টিক (‘ম্যাক্রো’) অর্থনীতির গতি-প্রকৃতি বিষয়ে অনুষ্ঠিত সম্মেলনে মূল বক্তৃতা দিই। দেশি-বিদেশি অংশগ্রহণকারীদের বাংলাদেশের অর্থনীতির অভাবনীয় পরিবর্তনের গল্প শোনাতে পেরে আমি সেদিন সত্যি অনেকটাই সন্তুষ্ট ছিলাম। বিগত সাড়ে চার দশকে বাংলাদেশের ম্যাক্রো অর্থনীতির রূপান্তর, এক কথায়, বিস্ময়কর। বিদেশি বিনিয়োগকারীদের কাছে মনে হয় এই সত্যি যেন এক লুকোনো গুপ্তধন। ধীরে ধীরে এই পরিবর্তনের পর্দা স্তরে স্তরে উন্মোচিত হচ্ছে। সবচেয়ে অবাক করার বিষয় এই যে, অর্থনীতির তিনটি খাত (শিল্প, সেবা ও কৃষি) একই লয়ে পাশাপাশি বেড়ে চলেছে। সচরাচর এমনটি ঘটে না। একটি বাড়লে আরেকটি থমকে থাকে বা খুব ধীরে বাড়ে।
কিন্তু বাংলাদেশ যেন ব্যতিক্রমী এক দেশ। এখানে সব খাত একযোগে বাড়ছে। আরও অবাক বিষয় হলো, গণতান্ত্রিক পরিবেশে কম-খরচের শিল্পায়নের উড্ডয়ন (‘টেক-অফ’) এক বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করে চলেছে বাংলাদেশ। আর এমন এক সময়ে এই উড্ডয়ন ঘটছে যখন সারা বিশ্বের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার খুবই দুর্বল। বাংলাদেশে বছরে বিশ লাখ নতুন কর্মীকে কাজ দেবার এক বিরল সুযোগ সৃষ্টির জন্য নিঃসন্দেহে শিল্পায়নের এই ধারাকে আরো জোরালো করার প্রয়োজন রয়েছে। পাশাপাশি সেবা খাতেরও আরো উন্নতি আমরা চাই। তবে কর্মসংস্থানের সুযোগ সেখানে অপেক্ষাকৃত কম। ভারত এই খাতের উন্নয়নের মাধ্যমে অনেকদূর এগিয়েছে। কিন্তু এতো বড় দেশে বছরে মোট পঞ্চাশ কোটির মধ্যে মাত্র ২৫ লাখ নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে পারে এই খাত। বাংলাদেশের কৃষিখাতও নয়া প্রযুক্তি গ্রহণ ও বাড়তি উত্পাদনশীলতার কারণে ম্যাক্রো অর্থনীতির রূপান্তরে বড় ভূমিকা রেখে চলেছে। এই খাতে এখনও দেশের পঞ্চাশ শতাংশেরও বেশি কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়ে থাকে। সময়মতো বাণিজ্য ও শিল্প নীতির উদারীকরণ এবং আর্থিক খাতকে আধুনিক ও অন্তর্ভুক্তি করার কারণে বাংলাদেশের ম্যাক্রো ও মাইক্রো অর্থনীতিতে এমন অভাবনীয় পরিবর্তনের ঘটনা ঘটেছে। এই পরিবর্তনে বাংলাদেশের তরুণ জনসম্পদও ইতিবাচক ভূমিকা রেখে চলেছে। বিশেষ করে তৈরি পোশাক শিল্পের অগ্রগতিতে তরুণ উদ্যোক্তা ও কম বয়সী নারী শ্রমিকদের অবদান সত্যি অভাবনীয়।
ব্যাংকিং খাতে অন্তর্ভুক্তিমূলক নানা উদ্যোগ, বিশেষ করে গ্রামে-গঞ্জে শাখা স্থাপন, সহজেই হিসাব খোলা এবং মোবাইল আর্থিক সেবার ব্যাপক বিস্ফোরণ বাংলাদেশের ম্যাক্রো অর্থনীতিকে যেমন গতি দিয়েছে তেমনি আবার অন্তর্ভুক্তিমূলকও করেছে। এর ফলে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বেশ বেড়েছে। বেড়েছে এর অংশীদারিত্ব ও গ্রহণযোগ্যতা।
মাত্র ৪৫ বছরে বাংলাদেশে যে বিস্ময়কর উন্নতি ঘটেছে তা অনেক বিদেশিদের কাছে প্রায় অবিশ্বাস্য। সত্তরের দশকে যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশ যখন যাত্রা শুরু করে তখন তার রাস্তাঘাট, রেল, বন্দর, বিমানবন্দর, শিল্প-কারখানাসহ সকল অবকাঠামো ও স্থাপনাই ছিল বিধ্বস্ত। এক ধ্বংসস্তূপ থেকে আমাদের উন্নয়ন অভিযাত্রার সূচনা হয়। ১৯৭৩ সালে আমাদের মাথাপিছু আয় ছিল মাত্র ১১০ ডলার। সঞ্চয়ের হার জিডিপির ৩ শতাংশ; বিনিয়োগের হার জিডিপির ৯ শতাংশ। কেন্দ্রীয় ব্যাংকে বিদেশি মুদ্রার মজুদ ছিল প্রায় শূন্য। বিদেশ থেকে খাদ্য সাহায্য ছাড়া দুর্ভিক্ষাবস্থা এড়ানো মুশকিল ছিল। গড়পড়তা জীবনের আয়ুষ্কাল ছিল চল্লিশের সামান্য ওপরে। এ অবস্থায় বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার দেশকে উন্নত করার লক্ষ্যে দিনরাত পরিশ্রম করে পরিস্থিতি দ্রুত স্বাভাবিক করে আনছিল। দেশি-বিদেশি নানা ষড়যন্ত্র সত্ত্বেও বাংলাদেশ ধ্বংসযজ্ঞ কাটিয়ে উন্নয়নের নয়া সড়কে উঠতে যাচ্ছিল। এমন সময় এলো দুঃসময়। ১৯৭৫-এর আগস্টে ষড়যন্ত্রকারীদের এক নারকীয় আক্রমণে দেশবাসী তাদের প্রিয় নেতাকে হারালেন। এর কয়েক মাসের মধ্যে বাকি শীর্ষস্থানীয় নেতাদেরও জেলখানায় হত্যা করা হলো। নিরাশায় অন্ধকারে ডুবে গেল জাতি।
উল্লেখ্য, বঙ্গবন্ধুর সরকার পঁচাত্তরের শুরুর দিকেই অর্থনৈতিক নীতিমালায়, বিশেষ করে, শিল্পখাতে উদারীকরণের বেশ কিছু উদ্যোগ নিয়েছিলেন। খাদ্য উত্পাদনে নয়া প্রযুক্তি ব্যবহারে উদ্যোগী হয়েছিলেন। কিন্তু ঐ বছরের আগস্টের আচমকা আক্রমণের কারণে হঠাত্ যেন সবকিছু লণ্ডভণ্ড হয়ে গেলো। এই ধাক্কা কাটাতে বেশ খানিকটা সময় লেগেছিল। সামরিক শাসনের যাঁতাকলে মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার তখন ক্ষুণ্ন হচ্ছিল। এর নেতিবাচক প্রভাব অর্থনীতিতেও পড়ছিল। তবে অর্থনৈতিক নীতিমালায় কিছু উদারীকরণ নীতি গ্রহণের কারণে শিল্প ও বাণিজ্যে প্রবৃদ্ধির ধারা জোরদার হতে শুরু করে।
এই ধারা আরো বেগবান হয় নব্বইয়ের দশকে সামরিক শাসনের অবসানের পর। গণতান্ত্রিক পরিবেশে নব্বইয়ের দশকের শেষভাগে উদ্যোক্তার বিকাশের ধারায় আরো গতি আসে। বঙ্গবন্ধু কন্যার নেতৃত্বে ঐ সময়ে যে সরকার গঠিত হয় তার একটি বৈশিষ্ট্য ছিল উদারীকরণের পাশাপাশি কৃষি ও খুদে উদ্যোক্তাদের প্রয়োজনীয় সমর্থন প্রদান। বিশেষ করে কৃষি উত্পাদনে বৈপ্লবিক পরিবর্তন ঘটে তাঁর সরকারের সমর্থনে। উন্নয়নে নারীর অংশগ্রহণ ও ক্ষমতায়নও ছিল তাঁর সরকারের আরেক বৈশিষ্ট্য। উদার অর্থনীতি এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধির ঐ কৌশল তাঁর সরকারের পর যেসব সরকার আসে তাদের এতোটা স্পষ্ট ছিল না। এক পর্যায়ে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা চরমে পৌঁছালে বাংলাদেশে ফের ভিন্ন ধরনের সামরিক হস্তক্ষেপ ঘটে। তবে এই হস্তক্ষেপ খুব বেশিদিন টেকেনি। মূলত জনচাপে মাত্র দু’বছরের মাথায় একটি সুষ্ঠু নির্বাচন দিয়ে সামরিক সমর্থনপুষ্ট তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিদায় নেয়। ঐ নির্বাচনে বিপুল ভোটে বিজয়ী হয়ে শেখ হাসিনা ফের ক্ষমতায় বসেন।
২০০৯-এর শুরু থেকে এই সরকারের আমলে ডিজিটাল বাংলাদেশসহ আর্থিক অন্তর্ভুক্তিমূলক সুদূরপ্রসারী অনেক কর্মসূচির বাস্তবায়নের ফলে অর্থনীতি এক নয়া গতি পায়। বিশ্ব আর্থিক মন্দা সত্ত্বেও দিন দিনই প্রবৃদ্ধির গতি বেড়ে চলেছে। সবচেয়ে অবাক করার মতো বিষয় হলো যে এই প্রবৃদ্ধি বাড়ার সময় আয়ের বৈষম্য সেরকমটি বাড়েনি। বরং নিচের দিকের মানুষের আয়-রোজগার বেশিহারে বেড়েছে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে। যে কর্মীরা মূলত শিল্পখাতে বেশি বেতনে অংশগ্রহণ করেছে তারাই এই সাম্যের অর্থনীতির মূল কারিগর। বিদেশি অনেক বিনিয়োগকারী এখন বাংলাদেশে উন্নতমানের গার্মেন্টস ও অন্যান্য ম্যানুফেকচারিং কারখানা স্থাপন করেছেন।
এসব কারখানায় কাজের পরিবেশ ভালো। আমাদের কর্মীরা এসব কারখানায় কাজ করে নতুন দক্ষতা অর্জন করার সুযোগ পান। এরপর তারা অন্য দেশীয় কারখানায় কাজ খুঁজে নেন। এখানে বেশি বেতনে কাজ পান এবং নয়া কর্মস্থানে তাদের অর্জিত দক্ষতা বিকাশের সুযোগ পান। এভাবেই আহরিত দক্ষতা ব্যবহারের সুযোগের সদ্ব্যবহার করে তারা বাংলাদেশের শিল্পায়নে উত্পাদনশীলতা যেমন বাড়াচ্ছেন, তেমনি কর্ম-পরিবেশকেও বিশ্বমানে উন্নীত করতে সহযোগিতা করছেন। কাজের মাধ্যমে দক্ষতা অর্জনের কারণেই আমাদের প্রবৃদ্ধি এমন গুণমানের হতে পারছে। আশার কথা, আমাদের সরকার ব্যক্তিখাতকে এই নয়া ধারার গুণমানের প্রবৃদ্ধি অর্জনে যাবতীয় সুযোগ ও সহযোগিতা দিতে কার্পণ্য করছে না। তবে এর ফলে নগরায়নের ওপর চাপ পড়ছে। এই চাপ মোকাবেলার জন্যে আরো বিচক্ষণ শাসন-ব্যবস্থার কোনো বিকল্প নেই। গভর্নেন্স কাঠামোর দিকে নীতিনির্ধারকদের নজর আরো তীক্ষ করার সময় এসেছে।
গত একযুগ ধরে বাংলাদেশ গড়ে ৬.১৪ শতাংশ হারে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন করে চলেছে। আর প্রবৃদ্ধির হারের স্থিতিশীলতা এ অঞ্চলের সব দেশের মধ্যে উত্তম। বিগত সাত বছরের গড় প্রবৃদ্ধি আরো ভালো, ৬.২৪%। সারা দুনিয়া জুড়ে জলবায়ু পরিবর্তন ছাড়াও নানা মাত্রিক ঝুঁকি মোকাবেলা করেই বাংলাদেশের এগিয়ে যাবার ভঙ্গিটি প্রশংসিত হচ্ছে। শুধু প্রবৃদ্ধি বাড়ছে তাই নয়, এ প্রবৃদ্ধি সকলেই ভাগ করে নিচ্ছে। দ্রুত দারিদ্র্য নিরসনের হারই প্রমাণ করে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি খুবই গুণমানের। অতি দারিদ্র্যের হার প্রায় বারো শতাংশে নেমে এসেছে। এ বছর প্রবৃদ্ধি সাত শতাংশ ছাড়িয়েছে। এ ধারা অব্যাহত রাখা গেলে অতি দারিদ্র্যের এই হার অচিরেই এক ডিজিটে নেমে আসবে। এটা সম্ভব হচ্ছে আমাদের প্রবৃদ্ধির চালক কৃষি, রেমিট্যান্স ও তৈরি পোশাক শিল্পের সমান্তরাল প্রসারের কারণে। এসবই কর্মসংস্থান-বর্ধক খাত। এ কারণে আমাদের অর্থনৈতিক বৈষম্যের মাত্রাও এখনো পর্যন্ত সহনীয় রয়েছে। আমাদের এই অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধির মূলে রয়েছে একাত্তরের লড়াকু চেতনা, দুর্ভিক্ষ ও দুর্যোগ মোকাবেলায় আমাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টা এবং প্রতিটি বিপর্যয়কে সুযোগে রূপান্তরিত করার অবিস্মরণীয় সক্ষমতা। ষোলো কোটি মানুষের দেশ বাংলাদেশ। তাই আমরা গভীরভাবে ‘কানেক্টেড’। শহর আর গ্রামের সংযোগ খুবই নিবিড়। তাই গ্রামীণ মানুষের আয়-রোজগার বাড়ার প্রভাব শহরের মানুষের জীবনকেও প্রভাবান্বিত করছে। অভ্যন্তরীণ চাহিদাকে চাঙ্গা রেখেছে। শিল্পায়নের গতি বাড়াতে সাহায্য করছে।
বর্তমান সরকারের ‘ভিশন-২০২১’ জনগণের মৌলিক চাওয়াকে ঘিরেই তৈরি করা হয়েছে। ব্যক্তি খাতের প্রাধান্য, উদারীকরণ ও বিনিয়োগবান্ধব নীতি সংস্কার, বড় বড় অবকাঠামো গড়ার উদ্যোগ, দেশব্যাপী ডিজিটাল প্রযুক্তির প্রসার এবং মার্কেটের সাথে অধিকহারে সংযুক্তির কৌশলের ওপর ভিত্তি করে এই দীর্ঘমেয়াদী কর্মকৌশল প্রণয়ন করা হয়েছে। দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকও এই কৌশল বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় অর্থায়নের নীতিমালা গ্রহণ করেছে।
আর এমন কৌশল ব্যবহার করে বাংলাদেশ যেহারে তার অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন করে চলেছে তা বিশ্ব অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হারের দ্বিগুণেরও বেশি। সরকারের বাজেটীয় উদ্যোগগুলোর পাশাপাশি কেন্দ্রীয় ব্যাংক সকল ব্যাংককেই অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থায়নে ব্রতী করেছে। ফলে কৃষি ও খুদে খাতে প্রচুর অর্থায়ন ঘটেছে। এর ফলে দেশীয় চাহিদা ও বাজার যেমন বেড়েছে, তেমনি সরবরাহও বেড়েছে। দুইয়ে মিলে মূল্যস্ফীতিকে ক্রমান্বয়ে স্থিতিশীল ও কমিয়ে আনা গেছে। আজ বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় ১৪৬৬ ডলার। জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার এরই মধ্যে স্থিতিশীল হয়ে এসেছে। তার মানে মাথাপিছু আয় বাড়ার হার আগামীতে আরও বেশি হবে। রপ্তানি, রেমিট্যান্স, কৃষি প্রক্রিয়াজাতকরণসহ সব ক্ষেত্রেই দিন দিনই উন্নতি হচ্ছে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ গত সাত বছরে পাঁচগুণের মতো বেড়ে ৩১ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে গেছে। বাংলাদেশ এখন ৭-৮ শতাংশের মতো প্রবৃদ্ধির হার ধরে রাখতে পারবে বলে আশা করছে। অবকাঠামো উন্নয়নে এবং আধুনিক প্রযুক্তি গ্রহণে বর্তমান সরকার যেমন আগ্রহ দেখাচ্ছে তাতে মনে হয় আগামী দিনে প্রবৃদ্ধির এই হার আরো বাড়বে।
আর সরকার প্রধানের গরিব-হিতৈষী অঙ্গীকারের কারণে এই প্রবৃদ্ধি আসবে সমাজের নিচেরদিককার মানুষের আরো বলিষ্ঠ অংশগ্রহণের মাধ্যমে। পাশাপাশি বিদেশি বিনিয়োগকারীদের অবদানও বাড়বে। দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশের ঝুঁকি সমন্বয় করার পরেও যে মুনাফা অর্জন করে তা আশে-পাশের সব দেশ থেকে বেশি। আর সে কারণেই বাংলাদেশের গুণমানের এই উন্নয়ন অভিযাত্রা টেকসই হবে। তাই যদি সন্ত্রাসমুক্ত পরিবেশে নগরায়ন, শিল্পায়ন, তরুণ জনশক্তির সমন্বয় ঘটানোর স্বার্থে গণতান্ত্রিক পরিবেশ বজায় রাখা যায় তাহলে বাংলাদেশের উন্নয়নের গতি ঠেকিয়ে রাখা যাবে না। ২০৩০ সালে উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশ হতে তার কোনোই অসুবিধা হবে না। পরবর্তী সময়ে ২০৪১ সালে উন্নত দেশ হবার যে স্বপ্ন বাংলাদেশের নেতৃত্ব, বিশেষ করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেখছেন তাও বাস্তবায়ন করা সম্ভব। তাই আমাদের হাতে হাত রেখে একযোগে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে। পথ বন্ধুর ও প্রতিবন্ধকতাময় হলেও একসাথে চলার কারণেই আমরা আমাদের স্বপ্নীল লক্ষ্যে পৌঁছে যেতে পারবো।
লেখক: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এবং সাবেক গভর্নর, বাংলাদেশ ব্যাংক