কেন করবেন ইভেনিং এমবিএ

কেন করবেন ইভেনিং এমবিএ

আমাদের দেশের শিক্ষার্থীদের কাছে এমবিএ বা মাস্টার অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের চাহিদা দিন দিন বেড়েই চলছে। বর্তমান বিশ্বে এমবিএ প্রোগ্রামকে ব্যবসা এবং ব্যবস্থাপনায় সবচেয়ে মর্যাদাসম্পন্ন কোর্স হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। এ বিষয়ে শিক্ষার্থীদের চাহিদার কথা বিবেচনা করে এরই মধ্যে বেশ কয়েকটি পাবলিক ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়মিতর পাশাপাশি চালু করা হয়েছে সন্ধ্যাকালীন এমবিএ প্রোগ্রাম।

কেন সন্ধ্যাকালীন এমবিএ

সন্ধ্যাকালীন প্রোগ্রাম অনেক শিক্ষার্থীকে এমবিএ করার একটি আলাদা পথ করে দিয়েছে। জীবনের নানা ব্যস্ততায় স্নাতক শেষ করার পর যাঁরা এমবিএ করতে পারেন না তাঁদের জন্য সান্ধ্যকালীন এমবিএ প্রোগ্রাম বাড়তি সুযোগ সৃষ্টি করেছে।

ক্লাসের সময় ও কোর্স

অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয়ে সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত সন্ধ্যাকালীন এমবিএ প্রোগ্রামের ক্লাস পরিচালিত হয়। নিয়মিত ও এক্সিকিউটিভ_দুটি ক্যাটাগরিতে শিক্ষার্থীদের ভর্তি করা হয়। শুধু চাকরিজীবী এবং অনিয়মিতরা এক্সিকিউটিভ ক্যাটাগরিতে ভর্তি হতে পারেন। দুই বছর মেয়াদি এই প্রোগ্রামে ২০টি কোর্স করতে হয়। প্রতিটিতে তিনটি করে মোট ৬০টি ক্রেডিট রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় ভেদে সময় ও কোর্স সংখ্যার পার্থক্য রয়েছে।

কোথায় পড়বেন

সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশাপাশি বেশ কয়েকটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে সন্ধ্যাকালীন এমবিএ প্রোগ্রাম রয়েছে। বছরের বিভিন্ন সময়ে এই প্রোগ্রামে ভর্তি হওয়া যায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাণিজ্য অনুষদের অধীনে ৮টি বিষয়ে সন্ধ্যাকালীন এমবিএ পড়া যায়। এগুলো হচ্ছে_ম্যানেজমেন্ট, অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস, মার্কেটিং, ফিন্যান্স, ব্যাংকিং, ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেমস, ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট এবং ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস। সন্ধ্যাকালীন এমবিএ প্রোগ্রামের প্রধান সমন্বয়কারী সহিদুর রহমান জানান, প্রতিবার ভর্তি পরীক্ষায় বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থী অংশ নেন। কিন্তু আসনসংখ্যা সীমিত থাকায় সবাইকে সুযোগ দিতে পারি না। এ ছাড়া রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশনেও (আইবিএ) সন্ধ্যাকালীন এমবিএ পড়ার সুযোগ রয়েছে। আইবিএ-র পরিচালক ড. মোখলেসুর রহমান বলেন, যারা বিভিন্ন পেশায় কর্মরত শুধু তাদেরই এখানে ভর্তির সুযোগ থাকে।

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটিতে অর্থনীতি, ব্যবস্থাপনা, রিসার্চ মেথোডলজি এবং ব্র্যাক ইউনিভার্সিটিতে হিউম্যান রিসোর্স, ফিন্যান্স, মার্কেটিং বিষয়ে এমবিএ করা যায়। আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশে বাণিজ্যের প্রায় সব বিষয়ে সান্ধ্যকালীন এমবিএ করার সুযোগ রয়েছে। এ ছাড়া ইন্ডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ, ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি ও ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটিসহ বেশ কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ে সান্ধ্যকালীন এমবিএ পড়া যায়।

ভর্তির যোগ্যতা ও সময়

যেকোনো অনুমোদিত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক করা শিক্ষার্থীরা সন্ধ্যাকালীন এমবিএ প্রোগ্রামে ভর্তি হতে পারেন। এসএসসি, এইচএসসি ও স্নাতক পরীক্ষার ফলাফলে পৃথকভাবে জিপিএ-২.৫ থেকে ৩ থাকলে ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেওয়া যায়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাণিজ্য অনুষদের অধীনে প্রতিবছর মার্চ-এপ্রিল এবং সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে দুটি সেমিস্টারে পরীক্ষার মাধ্যমে ভর্তি নেওয়া হয়।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশনে (আইবিএ) ফেব্রুয়ারি-মার্চের মধ্যে সন্ধ্যাকালীন এমবিএ-তে ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি, আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ, ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি, ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ, ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশ, ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে বছরে তিনবার জানুয়ারি, মে ও সেপ্টেম্বর মাসে সান্ধ্যকালীন এমবিএ প্রোগ্রামে নিয়মিত এবং এক্সিকিউটিভ কোর্সে ভর্তি করা হয়। এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতি সেমিস্টারে গড়ে ৮০-১০০ জন ভর্তির সুযোগ পান।

কেমন খরচ হবে

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সন্ধ্যাকালীন এমবিএ প্রোগ্রাম করতে বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীদের প্রায় দুই লাখ টাকা, বাণিজ্য বা মানবিক বিভাগের শিক্ষার্থীদের এক লাখ ২০ হাজার টাকার মতো খরচ হয়। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে খরচ হয় ৭০ হাজার টাকা।

এ ছাড়া নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটিতে দুই লাখ ৫০ হাজার থেকে তিন লাখ, আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে দেড় থেকে দুই লাখ, ব্র্যাক ইউনিভার্সিটিতে দেড় থেকে তিন লাখ পঁচিশ হাজার, ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটিতে নিয়মিত শিক্ষার্থীদের তিন লাখ ৫০ হাজার এবং এক্সিকিউটিভ শিক্ষার্থীদের দুই লাখ ৮০ হাজার, ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে নিয়মিত শিক্ষার্থীদের দুই লাখ ৬২ হাজার এবং এক্সিকিউটিভ শিক্ষার্থীদের দুই লাখ, ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টসে নিয়মিতদের দুই লাখ ১৬ হাজার এবং এক্সিকিউটিভ শিক্ষার্থীদের এক লাখ ৬৩ হাজার, ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটিতে নিয়মিত শিক্ষার্থীদের দুই লাখ ৯৬ হাজার এবং এক্সিকিউটিভ শিক্ষার্থীদের দুই লাখ ১৪ হাজার টাকা খরচ হয়।

কিভাবে প্রস্তুতি নিবেন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইভিনিং এমবিএ তে ভর্তির খুঁটিনাটি

“ম্যাথ” কে অনেকেই ভয় পান। অনেকে অংক করতে চান না, অথবা অংক করে মজা পান না। কিন্তু এই আপাত ভীতিকর ও বিরক্তিকর বিষয়টিই কিন্তু আপনার জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইভিনিং এমবিএতে ভর্তির দুয়ার খুলে দিতে পারে! আর সেজন্য প্রয়োজন একুটু ঠান্ডা মাথা, সঠিক পরিকল্পনা আর মনোসংযোগ।

পূর্বের নিয়ম অনুযায়ী ভর্তি পরীক্ষায় শুধু ৮০ নম্বরের MCQ থাকতো। তার ভিতরে ম্যাথ এবং লজিক্যাল রিজনিং পার্ট এ থাকতো ৪০ নম্বর। ম্যাথ এ থাকতো ৩০ নম্বর। গত জুলাই সেশন থেকে পরীক্ষা পদ্ধতি পরিবর্তিত হয়েছে। এখন ৫৫ নম্বরের MCQ এবং ২৫ নম্বরের Written Exam নেওয়া হয়। (এখানে উল্লেখ্য, এই Marks Distribution ৫৫/২৫ না হয়ে ৬০/২০ ও হতে পারে।) MCQ পার্ট এর ৫৫ নম্বরের ভিতরে ২০ নম্বর বরাদ্দ থাকে ম্যাথ এর জন্য। তার মানে তিন ভাগের এক এরও বেশি। এই ২০ নম্বর এর ভিতরে আপনি যত বেশি মার্কস পাবেন, পরীক্ষায় চান্স পাওয়া আপনার জন্য ততটাই সহজ হয়ে যাবে।
সিলেবাস

কোন ভর্তি পরীক্ষারই সুনির্দিষ্ট কোন সিলেবাস থাকে না। ভর্তি পরীক্ষা মানেই যেন মহাসমুদ্র। কিন্তু সমুদ্রের মাঝেও যেমন দ্বীপ দেখতে পাওয়া যায়, ঠিক তেমনিভাবে এই বিশাল সিলেবাসেও কি কি পড়তে হবে, সেগুলো বোঝা যায়। বিগত বছরগুলোর ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন পর্যবেক্ষণ করে দেখা গেছে, ম্যাথ প্রশ্নে মূলত তিন ধরণের Problems থাকে।

Arithmetic: এই পার্ট এ Percentage, Commission & Consumption, Mixture, Interest, Unitary Method, Average, Venn, Fraction, Speed, Age, Number Property, Profit & Loss, Ratio ইত্যাদি থেকে প্রশ্ন থাকতে পারে। একেকবার একেক Topic থেকে ২/১ টা প্রশ্ন বেশি আসতে দেখা যায়।

Algebra: এই পার্ট এ Equation, Value Finding, Index, Log, Word Problems, Inequalities ইত্যাদি থেকে বেশি প্রশ্ন আসে।
Geometry: এই পার্ট এ খুবই Basic লেভেলের প্রশ্ন আসতে দেখা যায়। Angle, Triangle, Square, Rectangle ইত্যাদি সম্বন্ধে ভালো ধারণা রাখতে হবে।

এ তো গেলো সিলেবাসের কথা। এগুলো কোন কোন বই থেকে কিভাবে পড়বেন, সে বিষয়ে আসছি।
প্রয়োজনীয় বই

ম্যাথ প্রিপারেশনের জন্য বাজারে বিভিন্ন বই পাওয়া যায়। এগুলোর ভিতরে Saifur’s Math, Official GMAT, Mentors Math Q Bank এই বইগুলো থেকে ম্যাথ Practice করলেই ম্যাথ এর উপর ভালো দখল এসে যাবে। তবে সবচেয়ে Effective হলো “Saifur’s/Mentors এর Evening MBA Test Paper (Latest Edition)” কিনে প্রশ্নগুলো Solve করে ফেলা। ওই প্রশ্নগুলো দেখলে পরীক্ষায় কি ধরণের প্রশ্ন আসে, সে সম্পর্কে আপনি স্পষ্ট ধারণা পাবেন। বারবার Problems গুলো Solve করুন। একই নিয়মের অংক বারবার করতে করতে একটা সময় আপনি খুব সহজেই যেকোন অংক Solve করে ফেলতে পারবেন।
শর্টকাট নিয়মে অংক সমাধান

পরীক্ষা প্রস্তুতির ব্যাপারে কিছু কৌশল অবলম্বন করা জরুরী। শুধু এক সাইড থেকে ম্যাথ করতে শুরু করলেই যে আপনি ভালো করবেন, সেটা কিন্তু কখনোই বলা যায় না। আপনাকে ম্যাথ করতে হবে, সেইসাথে এটাও বুঝতে হবে যে আপনি যা পড়ছেন বা শিখছেন তা কতটুকু মনে রাখতে পারছেন। আর এই মনে রাখার জন্য দরকার কিছু পদ্ধতি বা টেকনিক।

কিছু কিছু টেকনিক আপনি বারবার অংক করতে করতে নিজেই বের করতে পারবেন। আর কিছু টেকনিক বা শর্টকাট মেথড আপনাকে নির্দিষ্ট কিছু বই দেখে শিখে নিতে হবে। আর এ কাজটি আপনাকে করতে হবে আপনার নিজের জন্যই। কারণ পরীক্ষার হলে আপনি সময় পাবেন খুবই কম। অল্প সময়ের মধ্যেই আপনাকে প্রশ্ন পড়ে, বুঝে তারপর উত্তর দিতে হবে। শর্টকাট নিয়মে অংক শেখার জন্য বাজারে অনেক বই আছে।

এদের মধ্যে মোঃ আরিফুর রহমানের “Bank Job/MBA ShortCut Math” বইটা উল্লেখযোগ্য। তবে শর্টকাট নিয়ম শেখার আগে মূল নিয়মটি আগে শিখে নিন। তাহলে আপনারই সুবিধা হবে।

প্রশ্নপত্রের নতুন ধরণ অনুযায়ী, MCQ সেকশনের ৫৫ নম্বরের ভেতরে ২৫ নম্বর থাকে Language পার্ট এর উপর। এই ২৫ এর ১৫ নম্বর থাকে Verbal এবং ১০ নম্বর থাকে Analytical Ability এর উপর।

কোন ভর্তি পরীক্ষারই কোন সুনির্দিষ্ট সিলেবাস থাকে না। তবে বিগত বছরগুলোর প্রশ্ন পর্যবেক্ষণ করলে একটা ধারণা পাওয়া যায়। এজন্য Saifur’s অথবা Mentor’s এর ইভিনিং এমবিএ টেস্টপেপার কিনে বিগত বছরগুলোর প্রশ্ন পর্যালোচনা করে দেখতে হবে যে কোন ধরণের প্রশ্ন পরীক্ষায় বেশি আসে।

Verbal সেকশনের ১৫ নম্বরের ভিতরে ৫ নম্বর থাকে Seen Comprehension এর উপর। একটা প্যাসেজ দেওয়া থাকে। সেটা পড়ে উত্তর দিতে হয়। বিগত বছরগুলোর প্রশ্ন দেখলে এর সম্বন্ধে ভালো ধারণা পাওয়া যাবে। এছাড়াও Synonyms/Antonyms, Choose the right form of verbs, Appropriate Preposition, Phrase, Sentence Correction, Analogy ইত্যাদি থেকে প্রশ্ন আসে।

“Cliff’s TOEFL” বইটা খুব ভালোভাবে পড়তে হবে। একবার না, কয়েকবার। এই বই থেকে Grammar এর Rules গুলো অনুশীলন করতে হবে। Grammar এর জন্য “Saifur’s Newest Grammar” বইটাও বেশ ভালো। আর “Barron’s Official Guide for GMAT Review” থেকে Sentence Correction পার্ট টা Solve করে ফেলুন। ভাগ্য ভালো থাকলে হুবহু Common পেয়ে যেতে পারেন।

Vocabulary পার্ট এর কোন Short Suggestion নেই। কাজেই এর প্রস্তুতিও নির্ভর করবে অনেকটাই নিজের উপর। শুরুতেই যে কাজটা করবেন, EMBA Test Paper আগে Solve করুন। কারণ বিগত বছরের প্রশ্ন থেকে অনেক Repeat হয়। আর ভালো প্রস্তুতির জন্য Saifur’s Vocabulary/ Word smart-1/ Word Power Made Easy by Norman Lewis এই তিনটা বইয়ের যেকোন একটা ভালোভাবে পড়ে Complete করে ফেলুন।

Analytical Ability সেকশনে ১০ নম্বরের Analytical Ability থেকে প্রশ্ন থাকে। Saifur’s Analytical Ability বইটা কিনে পুরোটা Solve করে ফেলুন। ১০ এ ১০ পাওয়াটা খুব কঠিন হবে না। তবে প্রচুর Practice করতে হবে। favicon59-4

Sharing is caring!

Leave a Comment