চাকরি খোঁজার নতুন ক্ষেত্র

চাকরি খোঁজার নতুন ক্ষেত্র

  • ক্যারিয়ার ডেস্ক

গ্র্যাজুয়েশন শেষে চাকরির ভূত মাথায় চাপলে কোনো কিছুই যেন আর ঠিক থাকে না! সব ওলটপালট হয়ে যায়। হতাশা আর না পাওয়া যেন এলোপাতাড়ি হামলা করে! ফলে ভুলে যান সিভি কোথায় পোস্ট করবেন। কিংবা সচেতন আপনি, চাকরির খোঁজখবর রাখেন, পড়ে থাকেন অনলাইনে। যে সাইটে দেশের সবচেয়ে বড় সংস্থাগুলো তাদের ভ্যাকেনসির অফারটা দেয়, তা চোখ এড়ায় না। বলি, শুধু দেশেই নয়; বিশ্বের নামিদামি প্রতিষ্ঠানগুলো চাকরিপ্রার্থীদের খোঁজে সোশ্যাল মিডিয়ায়।

এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, বিভিন্ন টেক জায়ান্ট থেকে বিপিও সেন্টার সবাই নিজেদের সংস্থার জন্য কর্মী খুঁজতে সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটের আশ্রয় নিচ্ছে। প্রধানত, ফেসবুক ও লিঙ্কড-ইনের মধ্যেই চাকরিপ্রার্থীদের খোঁজ করেন তারা। শুধু তাই নয়, গত কয়েক বছরে প্রায় ৬৫ শতাংশ চাকরিপ্রার্থীর খোঁজ মিলেছে এই সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে।

অপরিহার্য অংশ
যারা অনলাইনে থাকেন, তারা নিশ্চয়ই বুঝে গেছেন, সময় এখন সোশ্যাল মিডিয়ার। এই সোশ্যাল মিডিয়া শুধুই নিজেকে জাহির বা অন্যের কাছে পরিচিত করে তোলার জন্যই নয়, বরং চাকরি খোঁজার ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। প্রস্তুতি নিন, কী করে এটি ব্যবহারের মাধ্যমে আপনি পাবেন কাঙ্ক্ষিত সাফল্য।

পরিকল্পনা দিয়ে শুরু
চাকরি খোঁজার ক্ষেত্রে পরিকল্পনার বিকল্প নেই। সোশ্যাল মিডিয়াকে ব্যবহার করে কীভাবে এ কাজ আপনি সফলভাবে করবেন, তার পরিকল্পনা তৈরি করে নিন। তারপর আপনার দিন শুরু হোক সেই পরিকল্পনার পালে হাওয়া দিয়ে। আর দিন শেষ হোক পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নের মধ্যে একটা হিসাব টেনে। তো, এত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করা পরিকল্পনায় রাখবেন কী কী?

– ফেসবুক, টুইটার, গুগল প্লাসসহ সম্ভাব্য সব গুরুত্বপূর্ণ সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি যথাযোগ্য অ্যাকাউন্ট খোলা।

– নিজের প্রোফাইলকে অর্থপূর্ণ করে তোলা।

– নেটওয়ার্কিংয়ের ওপর জোর দেওয়া।

– নিজেকে সক্রিয় রাখা।

প্রোফাইল বলবে কথা
সোশ্যাল মিডিয়ায় চাকরি খোঁজার ধারণা নতুন নয়। তবুও যারা এখানে নতুন তাদের জন্য বলি, এখানে চাকরি খোঁজার জন্য সবার আগে নিজের একটি যথাযোগ্য প্রোফাইল তৈরি করে নিন। অর্থাৎ যে অ্যাকাউন্টটি এ ক্ষেত্রে ব্যবহার করবেন, সেটি হতে হবে চাকরি পাওয়ার অর্থযোগ্য। এ ক্ষেত্রে প্রোফাইলে সংযুক্ত করুন আপনার এমন সব তথ্য, যেখানে একাডেমিক ফল, ছোট-বড় সব অভিজ্ঞতা, বিশেষ যোগ্যতা, আগ্রহের বিষয়-আশয়কে অন্তর্ভুক্ত করুন। আর নিজের যে ছবিটি ব্যবহার করবেন, সেটি যেন আপনার ব্যক্তিত্বকে ইতিবাচকভাবে তুলে ধরে। ভালো হয়, সাধারণত সিভিতে আমরা যে রকম ছবি ব্যবহার করি, তেমন ছবি ব্যবহার করলে।

আরও খেয়াল রাখুন, আপনার প্রোফাইলকে ঋদ্ধ করে- এমন প্রাসঙ্গিক ছবি আপলোড করলেও, মোটেও তেমন ছবিগুলো এখানে রাখা যাবে না- যেগুলোর প্রভাব হবে নেতিবাচক। অন্যরাও যেন আপনার প্রোফাইলে ইচ্ছা হলেই যা-তা ছবি ট্যাগ করতে না পারে, সে জন্য অ্যাকাউন্টের প্রাইভেসি জোরালো বা হাই সিকিউর করুন।

নেটওয়ার্কিং
শুধু অ্যাকাউন্ট ক্রিয়েট করলেই হবে না, বরং নেটওয়ার্কিংও জোরালো করুন।
এ ক্ষেত্রে যে পেশায় কাজ করতে আপনি আগ্রহী, সে পেশার সোশ্যাল নেটওয়ার্ক পেজগুলোতে লাইক দিন, সেখানে সম্ভব হলে গুরুত্বপূর্ণ ও প্রাসঙ্গিক কোনো আর্টিক্যাল পোস্ট করুন এবং সেই পেশার গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সঙ্গে সম্ভব হলে অ্যাড থাকুন অথবা অন্তত তাদের ফলো করুন। তবে খেয়াল রাখবেন, অহেতুক পোস্ট কিংবা বাড়াবাড়ি রকমের নক দিয়ে কাউকে যেন বিরক্ত করতে যাবেন না, তাতে হিতে বিপরীত হওয়ার আশঙ্কা প্রবল! নিয়মিত ঢুঁ মারুন চাকরিদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর পেজে। দেখবেন, কাঙ্ক্ষিত কোনো চাকরির বিজ্ঞপ্তি কিংবা অন্তত সেটির সম্ভাবনার দেখা একসময় পেয়ে যাবেন।

নিজের ঢোল
নিজের ঢোল পেটানো বা নিজেকে পরিচিত করার একটি সহজ ও অর্থবহ মাধ্যম এই সোশ্যাল মিডিয়া। ফলে আপনি পিছিয়ে থাকবেন কেন? বরং ইতিবাচকভাবে সক্রিয় হোন। চাকরি-সংক্রান্ত কোনো প্রশ্নের সামনে পড়লে সেগুলোর যথাযোগ্য ও মার্জিত উত্তর পোস্ট করুন। আর কোনো প্রসঙ্গে কিংবা কোনো মন্তব্যের বিপরীতে আপনার কাছে যদি থাকে জোরালো জবাব, তাহলে নিজের মেধার স্বাক্ষর সেখানে প্রকাশ করতে পিছপা হবেন না। বরং দ্ব্যর্থহীনভাবে তা প্রকাশ করে জানিয়ে দিন, এ ব্যাপারে আপনার দক্ষতার নমুনা।

নেতিবাচক ধারণা
কখনও কোনো কর্তাব্যক্তির কাছে কিংবা এমন কোনো পেজে গিয়ে সরাসরি চাকরি চেয়ে বসবেন না যেন। এমনটা করলে আপনার ব্যক্তিত্ব সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা তৈরি হতে পারে। তাই বলে হাত-পা গুটিয়ে রাখাও ঠিক হবে না; বরং মার্জিত ও নিয়মনিষ্ঠভাবে প্রকাশ করুন- চাকরিটা আপনি করতে সক্ষম। আর পরোক্ষভাবে জেনে নিন, কোন প্রক্রিয়ায় সেই চাকরির আবেদন করতে হবে।

আরও বেশি
গুরুত্বপূর্ণ কম-বেশি সব চাকরি কিংবা চাকরিদাতার পেজে আপনার লাইক দেওয়া আছে, আর সেগুলোর আপডেট আপনি নিয়মিতই খেয়ালে রাখেন। তাই বলে আপনার চাকরির অনুসন্ধান কিন্তু শেষ হয়ে গেল না। বরং আরও বেশি, যতগুলো সম্ভব_ এ ধরনের পেজের সঙ্গে সংযুক্ত থাকুন এবং আরও মনোযোগের সঙ্গে খেয়াল রাখুন পোস্টগুলো। আর সরাসরি কোনো বিজ্ঞপ্তি যদি নাও থাকে, তবু নিজের বুদ্ধিমত্তাকে ব্যবহার করে নতুন চাকরির ক্ষেত্র বের করে নিতে পারেন কি-না, সেদিকে সচেষ্ট হোন।

আস্থাই সম্বল
সোশ্যাল মিডিয়ায় চাকরি খোঁজার সঙ্গে আমরা যেহেতু খুব বেশি অভ্যস্ত নই, আর এ ক্ষেত্রে চাকরি খুঁজে পাওয়াটাও যেহেতু অতটা সহজ ও সাবলীল কাজ নয়, ফলে আপনার ধৈর্যের বাঁধ যে কোনো মুহূর্তে ভেঙে যেতে পারে। তাই বলি, এই ভাঙনকে আটকে রাখার যথাসাধ্য চেষ্টা করুন। তাতে একদিকে যেমন আপনার মধ্যে হতাশা তৈরি হবে না, অন্যদিকে এ অভিজ্ঞতা আপনার ভবিষ্যৎকে করবে সমান উজ্জ্বল।
নতুন সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে, নতুন মাধ্যম ব্যবহার করে, নতুন পন্থায় আপনার চাকরি খোঁজার প্রচেষ্টা সফল হোক!favicon59-4

Sharing is caring!

Leave a Comment