পেশা : অনলাইন টুরিস্ট গাইড

পেশা : অনলাইন টুরিস্ট গাইড

  • ক্যারিয়ার ডেস্ক

নভেম্বর-ডিসেম্বর এলে সবার মন কেমন উড়ূ উড়ূ হয়ে যায়! স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় ছুটি দেওয়া হয়। অফিস থেকেও পাওয়া যায় ছুটি। তাই অনেকে এই সময়টাকে ঘুরে বেড়ানোর উপযুক্ত সময় মনে করে ঘর থেকে বেরিয়ে পড়েন। আপনারও খুব ইচ্ছা বেরিয়ে পড়ার? কিংবা আপনি টইটই গ্রুপেরই একজন? সারাদেশ চষে বেড়িয়েছেন ইচ্ছামতো? অন্য কোনো চাকরিতে উড়নচণ্ডী থিতু করতে পারেন না? বলি, দরকার নেই জোর করে অন্য চাকরি নিয়ে ভাবার। ঘোরাঘুরিতেই থাকুন। এখানেই পেশা গড়ে নিন। কিছুদিনের মধ্যেই আপনি হয়ে উঠতে পারেন সেরা টুরিস্ট গাইড।

অনলাইন টুরিস্ট গাইড

এটি আসলেই চমৎকার এক ব্যাপার। এখানে কাজের পাশাপাশি পাবেন ব্যাপক আনন্দ, সম্মান ও আয়ের ভালো একটি উৎস। বিষয়টি খুবই সহজ, আর হয়তো আপনি জানেনও; কিন্তু খেয়াল করেননি! একটু গুছিয়ে ভাবলেই বুঝতে পারবেন, কত বড় সুযোগ হাতছানি দিয়ে ডাকছে। এ মাধ্যমে ব্যক্তিগত সুবিধার পাশাপাশি রয়েছে দেশ সেবার সুযোগ। নিজের দেশকে সারাবিশ্বের সামনে গুরুত্বপূর্ণভাবে উপস্থাপন করার এত সহজ পদ্ধতি বোধহয় আর হয় না। সেই সঙ্গে দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতেও নিজের অবদানকে পারবেন সরাসরি কাজে লাগাতে।

টুরিস্ট বা পর্যটক যখন কোথাও বেড়াতে যান, সেখানকার সব কিছুর সঙ্গে তার পরিচয় না থাকা স্বাভাবিক। তাই তিনি এমন একজন অপারেটর বাছাই করেন, যিনি সহজে তাকে বেড়ানোর স্থানগুলোতে নিয়ে যেতে, সেগুলো সম্পর্কে ব্রিফ করতে আর বুঝিয়ে দিতে সক্ষম। এই অপারেটরই হলেন টুরিস্ট গাইড। সাধারণত নির্দিষ্ট পারিশ্রমিকের বিনিময়ে একেকজন টুরিস্ট গাইড কাজ করে থাকেন।

যোগ্যতার হিসেব
অনেকেই আছেন বেড়াতে পছন্দ করেন। আর এই মনোভাব থেকেই নিজেকে টুরিস্ট গাইড হিসেবে গড়ে তুলে থাকেন। তবে সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে একধাপ এগিয়ে অনলাইন টুরিস্ট গাইড হিসেবে নিজেকে কীভাবে গড়ে তুলবেন_ আজ বরং সে ব্যাপারটি জানা যাক। এ পেশায় নিজেকে জড়াতে চাইলে যে গুণগুলো থাকা চাই-

  • ইংরেজিতে বিশেষ দক্ষতা অর্জন।
  • কথা বলায় স্পষ্টবাদী ও সাবলীল হওয়া।
  • পোশাক-পরিচ্ছদ ও আচার-আচরণে স্মার্টনেস ফুটিয়ে তোলা।
  • উপস্থাপনায় সুন্দর ভঙ্গি।
  • অনলাইনে জানা-শোনা।
  • নিজ দেশের দর্শনীয় ও সুন্দর স্থানগুলো সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা রাখা।

এ বিষয়গুলো সম্পর্কে সম্যক ধারণাই আপনাকে এই পেশায় যোগ্যতর হিসেবে উপস্থাপন করবে। এ ব্যাপারগুলোর কিছু আছে, যা আপনাকে নিজের চেষ্টায় আয়ত্ত করতে হবে, আর বাকিগুলো শিখে বা জেনে নিতে হবে কোথাও থেকে বা কারও কাছ থেকে। এ পেশায় আসার ব্যাপারে আপনি যখন নিবেদিতপ্রাণ হতে পারবেন, তখনই পা বাড়ানো ভালো।

লোনলি প্ল্যানেট
টুরিস্টদের জন্য বিশ্বের সবচেয়ে তথ্যবহুল ওয়েবসাইটটির নাম ‘লোনলি প্ল্যানেট’ [www.lonelyplanet.com]। এ ওয়েবসাইটে লাখ লাখ পর্যটক প্রতিদিন ভিজিট করছেন নির্দিষ্ট তথ্য সম্পর্কে জানার জন্য। কেউ কেউ এখানে ভিজিট করছেন বেড়ানোর নতুন কোনো স্থান খুঁজে পেতে। আপনার কাজ হচ্ছে এ সাইটে যোগ দেওয়া এবং যারা বাংলাদেশে বেড়ানো সম্পর্কে জানতে চান, তাদের কাছে তথ্য সরবরাহ করা। তাছাড়া যারা নতুন স্থানে বেড়াতে আসতে চান, বাংলাদেশের সুন্দর পর্যটন অঞ্চলগুলোর কথা উল্লেখ করে তাদের আগ্রহী করে তোলা। সম্ভব হলে তাদের বাংলাদেশের সুন্দর টুরিস্ট স্পটগুলোর ছবি দেখান।

বিশ্বায়নের যুগে পিওর বা খাঁটি গ্রাম সম্পর্কে আগ্রহ অনেকের। বাংলাদেশে উত্তরবঙ্গ, বরিশাল প্রভৃতি অঞ্চলসহ রয়েছে অনেক সুন্দর সুন্দর গ্রাম। সেসব গ্রামের কথা বর্ণনা করুন। ছবি দেখান। বলুন, কেউ চাইলেই এই গ্রামের মানুষের সঙ্গে একান্তে সময় কাটাতে পারে; তাদের সঙ্গে খাওয়া-দাওয়া, চলাফেরা করে গ্রাম্যজীবনের আনন্দ উপভোগ করতে পারে। হ্যাঁ, সত্যিই এটা অনেকে চান।

ইট-কাঠ-পাথরের শহরে যারা থাকেন, তারা একটা নির্মল গ্রাম্যজীবনে কয়েকদিন থাকার জন্য উতলা হয়ে ওঠেন। সুতরাং এটি তাদের কাছে লোভনীয়।

এভাবে দেশের সৌন্দর্য তুলে ধরতে পারেন ওয়েবসাইটে। আমাদের দেশের ঋতু বৈচিত্র্য অনেক দেশের চেয়ে সুন্দর। বর্ষা শুরু হলে গাছে-গাছে নতুন পাতা গজায়, বৃষ্টির রিমঝিম শব্দ টিনের ঘরে বসে শোনার ও দেখার মুহূর্ত অতুলনীয়; তাই না?

ফেসবুক
‘লোনলি প্ল্যানেট’ অবশ্যই বড় প্ল্যাটফর্ম। তবে এটিই শেষ বা একমাত্র জায়গা নয়; বরং সুযোগ আছে আরও। এ রকমই একটি বড় মাধ্যম ফেসবুক। ফেসবুকে বেড়ানোর তথ্যসমৃদ্ধ অনেক বড় বড় পেজ, গ্রুপ আছে। ওইগুলোয় যোগ দিন। বাংলাদেশের বেড়ানোর জায়গাগুলো নিয়ে ডকুমেন্ট তৈরি করে আপলোড করুন। টুরিস্টদের আগ্রহী করে তোলার জন্য সুন্দর স্থানগুলোর বর্ণনা ও ছবি দিন।

নিজের পরিচিতি
আপনার ব্যাপারে যত সম্ভব অনলাইনের বিভিন্ন জায়গায় লিখুন। সম্ভব হলে নিজের একটি ওয়েবসাইট তৈরি করুন। সেখানে নিজের সম্পর্কে বিস্তারিত লিখুন। বাংলাদেশের প্রতিটি দর্শনীয় স্থান সম্পর্কে লিখুন। গ্রাম্যজীবন সম্পর্কে লিখুন। তারপর বিভিন্ন জায়গায় আপনার ওয়েবসাইটের কথা ছড়িয়ে দিন। ওয়েবসাইটে অবশ্যই আপনার সঙ্গে যোগাযোগের মাধ্যম রাখবেন। আর যদি ওয়েবসাইট না থাকে, তাহলে নিজের একটি ই-মেইল অ্যাড্রেস দিন সর্বত্র। ঠিকই দেখবেন এক-দু’জন করে আপনার সঙ্গে যোগাযোগ করছেন অনেক বিদেশি। আর এভাবে যোগাযোগের মাধ্যমেই আপনি তাদের সঙ্গে চুক্তিতে যাবেন।

যা করা যাবে না
লোনলি প্ল্যানেট বা ফেসবুকে বাংলাদেশ সম্পর্কে লেখার সময় ভুলেও আগে থেকে উল্লেখ করবেন না আপনি টুরিস্ট গাইড বা এ রকম কিছু। আপনি জাস্ট ইনফরমেশন দেবেন। কেউ কিছু জানতে চাইলে উত্তর দেবেন বা পরে জেনে জানানোর কথা বলবেন; এর বেশি নয়। হ্যাঁ, কেউ যদি আপনাকে জিজ্ঞাসা করে বাংলাদেশে এলে তাকে গাইড করতে পারবেন কি-না, তখন অবশ্যই টুরিস্ট গাইড হিসেবে নিজের পরিচয় দেবেন।

লেনদেন
একটা কথা মনে রাখবেন, বিদেশিরা আমাদের অতিথি। আর দ্বিতীয় কথা হলো, ওরা যদি একবার এসে উপভোগ করেন, তাহলে বারবার আসবেন। বন্ধু-বান্ধব-পরিজন নিয়ে আসবেন। নানাজনকে রেফার করবেন আপনার কাছে। অনলাইনে আপনার সম্পর্কে লিখবেন।

সুতরাং তাদের সঙ্গে পারিশ্রমিক নিয়ে তর্কে না যাওয়াই ভালো। তার পরও ‘লোনলি প্ল্যানেট’ থেকে দেখে নিতে পারেন টুরিস্টদের পারিশ্রমিকের ব্যাপারটা। শুধু একটি ব্যাপার জানুন, টুরিস্ট সর্বনিম্ন আপনাকে যেটা অফার করবে, সেটাও আপনার কল্পনার চেয়ে অনেক বেশি হয়ে উঠতে পারে!

ফুলটাইম কিংবা ফ্রিল্যান্স
মনে রাখবেন, এই ক্যারিয়ারে আপনি ফুলটাইম কিংবা ফ্রিল্যান্স- দু’ভাবেই কাজ করতে পারেন। সবচেয়ে বড় কথা হলো, একজন দায়িত্বশীল মানুষ হিসেবে দেশের ভাবমূর্তির কথাই আপনাকে সবার আগে ভাবতে হবে। আপনার দায়িত্ব দেশের ভাবমূর্তি বৃদ্ধি করা। পাশাপাশি নিজের পেশাগত উন্নয়নের কথা মাথায় রাখা। বলি, আধুনিক এ পেশায় নিজেকে যোগ্য করে তুলুন। আপনার মঙ্গল হোক।favicon59-4

Sharing is caring!

Leave a Comment