পেশা গড়ি বেসরকারি ব্যাংকে

পেশা গড়ি বেসরকারি ব্যাংকে

  • ক্যারিয়ার ডেস্ক

হালের তরুণ-তরুণীদের পছন্দের চাকরির মধ্যে ব্যাংকিং সেক্টর শীর্ষে অবস্থান করছে। আরও সুনির্দিষ্ট করে বললে বেসরকারি ব্যাংকে ক্যারিয়ার গড়ার স্বপ্নে বিভোর নবীন গ্রাজুয়েটরা। এর প্রধান কারণগুলো হল- বেসরকারি ব্যাংকে কাজের ভালো (কর্পোরেট) পরিবেশের সঙ্গে রয়েছে চোখ ধাঁধানো বেতন কাঠামো। আছে বছরে বেশ কয়েকটি ইনসেনটিভ যা অন্যান্য বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে নেই। মাস শেষে হাতভরে বেতনের টাকা, ভাতা, উৎসব বোনাস, কার লোন, হোম লোন, বার্ষিক ইনক্রিমেন্ট, নিয়মিত প্রমোশন কী নেই এখানে। রয়েছে সপ্তাহে দু’দিন ছুটি, যেই সুযোগ বেশিরভাগ বেসরকারি প্রতিষ্ঠানেই নেই। ব্যাংকারদের সামাজিক মর্যাদার পাশাপাশি রয়েছে চাকরি নিরাপত্তা এবং পেনশনের ব্যবস্থা। সবমিলিয়ে তুমুল প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় ভালো করে ব্যাংকে একটি চাকরি মিলে গেলে জীবনে আর পিছু টান নেই। যে চাকরিতে এত সুবিধে সেটি নিশ্চিত করতে তো কাঠখড় একটু পোহাতেই হবে। তাই বেসরকারি ব্যাংকের নিয়োগ পরীক্ষাটাও প্রচণ্ড প্রতিযোগিতামূলক হয়ে থাকে। নিয়োগ পরীক্ষায় ভালো করতে হলে গুছানো জোর প্রস্তুতি নেয়া চাই।

প্রচুর কর্মসংস্থান
আমাদের দেশে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের পাশাপাশি প্রচুর বেসরকারি ব্যাংক সেবা দিয়ে যাচ্ছে। সদ্য অনুমোদন পাওয়া ৯টি ব্যাংকসহ বাংলাদেশে এখন মোট ব্যাংকের সংখ্যা ৫৬টি। তার মধ্যে চারটি ব্যাংক রাষ্ট্রায়ত্ত। বাকি ৫২টি ব্যাংকের মধ্যে বেসরকারি ৩৯টি, বিশেষায়িত চারটি ও বিদেশি ৯টি। বেসরকারি ব্যাংকগুলো সংখ্যা, শাখা ও কার্যক্রম বৃদ্ধি পাচ্ছে নিয়মিত। এজন্য এসব ব্যাংক উন্নত গ্রাহকসেবা নিশ্চিত করতে গিয়ে প্রচুর জনবল নিয়োগ দিচ্ছে। ফলে এখানে তরুণদের স্বপ্নময় ক্যারিয়ার গড়ার সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে।

আর্থিক নিরাপত্তা
ব্যাংকিং পেশায় দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে অবদান রাখার পাশাপাশি নিজেদের জীবনযাত্রার মান, সামাজিক মর্যাদা ও আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়। বেসরকারি ব্যাংকে একজন প্রবেশনারী অফিসার চাকরির শুরুতেই ব্যাংক ভেদে ৪০ থেকে ৫০ হাজার বেশি উপার্জন করতে পারেন। সার্বিক মূল্যায়নে ব্যাংকিং পেশা একটি চমৎকার পেশা। এসব কারণে ব্যাংকিং ক্যারিয়ার (বিশেষ করে বেসরকারি ব্যাংকে) এখন অনেক মেধাবীর স্বপ্ন। তবে সেই স্বপ্ন পূরণে দরকার দৃঢ় সংকল্প, প্রস্তুতি ও পড়ালেখা।

চাই গুছানো প্রস্তুতি
ব্যাংকে চাকরি পেতে দরকার দীর্ঘমেয়াদি প্রস্তুতি; বিস্তর পড়ালেখা। স্নাতক পর্যায়ের পড়াশোনার শেষ দিকে শুরু করতে পারেন এ প্রস্তুতিপর্ব। শুরুতে বিভিন্ন ব্যাংকের নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নের ধরন দেখে ধারণা নেয়া যায়। যে কোনো ব্যাংকের নিয়োগ পরীক্ষায় সাধারণত দুই ভাগে প্রশ্ন হয়। একাংশে থাকে বহু নির্বাচনী (এমসিকিউ), অপরাংশে লিখিত বা বর্ণনামূলক প্রশ্ন। দুটি অংশের পরীক্ষা একসঙ্গে হতে পারে আবার আলাদাও হতে পারে। ব্যাংকভেদে পরীক্ষার সময় ও নম্বরে তারতম্য দেখা যায়। তবে প্রশ্ন যেমনই হোক না কেন, যথার্থ প্রস্তুতি থাকলে, প্রাথমিক বাছাই ও লিখিত পরীক্ষার গণ্ডি পেরিয়ে চাকরিতে প্রবেশ সময়ের ব্যাপার মাত্র।

প্রশ্নের ধরন
বিভিন্ন রাষ্ট্রায়ত্ত, বিশেষায়িত ও বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর বিগত পরীক্ষার প্রশ্নপত্র পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, রাষ্ট্রায়ত্ত ও বেসরকারি ব্যাংকের লিখিত পরীক্ষার প্রশ্নপত্রে সামান্যই পার্থক্য থাকে। তবে নিয়োগদাতাদের ওপরও প্রশ্নের ধরন নির্ভর করে। সাধারণত ব্যাংকের নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র প্রণয়ন করে থাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন ইন্সটিটিউট (আইবিএ), ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদ, অর্থনীতি বিভাগ ও বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্ট (বিআইবিএম)। সাধারণত বহুনির্বাচনী (এমসিকিউ) এবং লিখিত রচনামূলক পরীক্ষা হয়ে থাকে।

প্রাথমিক বাছাই পরীক্ষা
রাষ্ট্রায়ত্ত ও বেসরকারি প্রায় সব ব্যাংকেই ১০০ নম্বরের এমসিকিউ বা প্রাথমিক বাছাই পরীক্ষা হয়ে থাকে। সাধারণত এ অংশে ভালো করার জন্য সময়জ্ঞান, তাৎক্ষণিক বুদ্ধিমত্তা, সার্বক্ষণিক মনোযোগ ও মনোবল খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাছাড়া ভুল উত্তরের জন্য নম্বর কাটার বিধান থাকায় বাড়তি সতর্কতাও জরুরি। ব্যাংক জব সল্যুশন কিংবা প্রাইভেট ব্যাংক জব সল্যুশন নামে বাজারে বিভিন্ন প্রকাশনীর বই আছে সেগুলো সমাধান করলে প্রাথমিক প্রস্তুতিটা হয়ে যায়।

যেসব বিষয় থেকে প্রশ্ন হয়
বিভিন্ন ব্যাংকের নিয়োগ পরীক্ষায় সাধারণত বাংলা, ইংরেজি, গণিত, সাধারণ জ্ঞান (বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক প্রসঙ্গ) বিষয় থেকে প্রশ্ন হয়ে থাকে। এ ছাড়া গাণিতিক যুক্তি, মানসিক দক্ষতা ও বিজ্ঞান প্রযুক্তি, অর্থনীতি ইত্যাদি বিষয় থেকেও প্রশ্ন হতে পারে। কোনো কোনো ব্যাংকের ক্ষেত্রে চার-পাঁচটি বিষয়ই থাকে। আবার কোনো কোনো ক্ষেত্রে তিনটি বিষয় থেকে প্রশ্ন হতে পারে। প্রস্তুতি নেয়ার সময় আপনাকে সব কটি বিষয়েই জানা থাকা ভালো। সার্বিক প্রস্তুতি থাকলে পরীক্ষার প্রশ্ন যেমনই হোক না কেন, আপনি ভালো করতে পারবেন। তবে আপনি যে ব্যাংকে পরীক্ষা দিচ্ছেন, যদি তার সিলেবাস আগেই উল্লেখ করা থাকে, তবে তো কথাই নেই।

লিখিত পরীক্ষা
প্রাথমিক বাছাই পরীক্ষার বহুনির্বাচনী প্রশ্নে ভালো করার পর ব্যাংকে চাকরি পাওয়া বহুলাংশে নির্ভর করে লিখিত পরীক্ষার নম্বরের ওপর। প্রাথমিক বাছাই পরীক্ষায় ভালো করেছেন মানে টুকিটাকি তথ্য আপনার দখলে। এখন ক্রমানুসারে সেগুলো লিখিত আকারে উপস্থাপনের পালা। এ অংশে অনুবাদ, গণিত, বাংলা ও ইংরেজিতে সংক্ষিপ্ত রচনা থাকতে পারে। ১০০ নম্বরের (কোনো কোনো ব্যাংকে ২০০ নম্বর) লিখিত পরীক্ষার প্রশ্নপত্র বাংলায় বা ইংরেজিতে হয়ে থাকে। লিখিত বা বর্ণনামূলক পরীক্ষায় প্রশ্ন থাকে গণিত, ইংরেজি ও অ্যানালিটিকাল অ্যাবিলিটি থেকে। তবে ইসলামী ব্যাংকগুলোর প্রশ্ন একটু অন্য ধাঁচের হয়ে থাকে। প্রশ্নে উল্লিখিত বিষয় ছাড়াও ইসলামী সংস্কৃতি ও অর্থব্যবস্থার ওপর বেশ কিছু প্রশ্ন থাকে। সরকারি এবং ইসলামী ব্যাংক ছাড়া অন্য ব্যাংকের প্রশ্ন করা হয় সাধারণত ইংরেজিতে। পরীক্ষার সময় এবং নাম্বার বণ্টনের ক্ষেত্রে বিভিন্ন ব্যাংকের মধ্যে ভিন্নতা দেখা যায়।

মৌখিক পরীক্ষা
আনুমানিক ১৫ মিনিটের মৌখিক পরীক্ষার ওপর ভিত্তি করে সাধারণত একজন নিয়োগদাতা প্রার্থীর বিচার বিশ্লেষণ ক্ষমতা, উপস্থিত বুদ্ধি, যোগাযোগ দক্ষতা, নেতৃত্ব দানের ক্ষমতা যাচাই করে থাকেন। বাংলাদেশের আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো, দেশের মুদ্রানীতি, পুঁজিবাজার, চলমান অর্থনৈতিক অবস্থা, দেশের বাজেট, কৃষি ইত্যাদি বিষয়েও চাকরিপ্রার্থীর কাছ থেকে জানতে চাওয়া হয়।favicon59-4

Sharing is caring!

Leave a Comment