ছয় অভ্যাসে সাফল্য আসে

ছয় অভ্যাসে সাফল্য আসে

অভ্যাস তো আর চন্দ্র-সূর্যের মতো ‘ইউনিভার্সাল ট্রুথ’ নয় যে তা কস্মিণকালেও বদলাবে না। সময়ের সাথে সাথে মানুষের অভ্যাসের বদল ঘটে। তাই চেষ্টা করলেই সু-অভ্যাস গড়ে তোলা সম্ভব। খ্যাতিমান লেখক ডা. লৎফর রহমান বলেছেন, চেষ্টা করলে শয়তানকেও পরাজিত করা সম্ভব। এদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের এক কুলীন পত্রিকা ইউএসএ টুডে জানাচ্ছে, মাত্র ছয়টি অভ্যাস আয়ত্ত্বে অনলেই নাকি জীবনে সাফল্য আসবে। এই শীতে একবার চেষ্টা করেই দেখুন না, কিছু ভালো অভ্যাস গড়ে তোলা যায় কি না? লিখেছেন মারুফ ইসলাম


১. একাগ্রতা

  • ধরা যাক, আপনি অফিসের কোনো মিটিংয়ে অংশ নিয়েছেন। সেখানে সবার সামনে অপনার একজন সহকর্মী কোনো একটি ব্যাসায়িক আইডিয়া তুলে ধরে অফিসকর্তার প্রশংসা কুড়ালেন-কিন্তু আইডিয়াটা ছিল আদতে আপনার! আপনি তখন কী করবেন? কপালে বিস্ময়ের ভাজ ফেলে কি বলবেন, ‘হায় খোদা! উনি তো আমার আইডিয়া চুরি করেছেন!’ না, অপনাকে তখন চরম একাগ্রতার পরিচয় দিতে হবে। মিষ্টি হেসে বলতে হবে, ‘আসলে এই আইডিয়াটা ছিল আমার, সম্ভবত আমার সহকর্মী আমার নাম বলতে ভুলে গেছেন।’

২. ভিন্নভাবে সহযোগীতা

  • যেকোনো প্রতিষ্ঠানে কাজ করতে হয় একটি ‘টিম’ হিসেবে। একটি টিমে অনেক ধরনের মানুষ থাকে। তারা শুধু ব্যাক্তিত্বের কারণেই আলাদা হন না; ধর্ম-বর্ণ-লিঙ্গ ইত্যাদি ভেদেও আলাদা হন। সঙ্গত কারণে সবাইকে আপনি যেমন সমানভাবে সহযোগিতা করতে পারবেন না, তেমনি সবার কাছ থেকে সমান সহযোগিতা পাবেনও না। আপনাকে তাই সহযোগিতার ভিন্ন ভিন্ন কৌশল খুঁজে বের করতে হবে।

৩. স্থিতিস্থাপকতা

  • সমাজে এমন কিছু মানুষ থাকবেই যারা সবকিছুতে নির্বিকার, নির্লিপ্ত। কোনো কিছুতেই তারা কোনো প্রতিক্রিয়া দেখান না। এমন কিছু মানুষ আপনার অফিসেও পাবেন। তাদের স্বভাবটাই স্থিতিস্থাপক। এটা একটা ভালো গুণ হলেও সবক্ষেত্রে স্থবির কিংবা জড়বস্তুর মতো আচরণ করাটা মোটেও শোভনীয় নয়। ধরা যাক, আপনার অফিসে বড় রকমের কোনো দুর্ঘটনা ঘটে গেছে, কিন্তু আপনি কোনো প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছেন না, সেটা রীতিমতো অমানবিক। আপনি তাই শুরু থেকেই একটি ভদ্রতাপূর্ণ স্থিতিস্থাপক অভ্যাস গড়ে তুলুন। অর্থাৎ কোনো ব্যাপারে উপযাচক হয়ে নাক গলানোর দরকার নেই আবার কোনো ব্যাপারে ‘কুছ পরোয়া নেহি’ আচরণ করারও দরকার নেই। যেখানে যে আচরণ করা প্রয়োজন সেটাই করুন। এটি একটি বিরল গুন, আয়ত্বে আনা কঠিন বলেই মনে করেন গুণীজনেরা। তবে তারা এটাও বলেছেন, ব্যাপারটা একেবারে অসম্ভবও নয়।

৪. সর্বাত্মক প্রচেষ্টা

  • কর্মক্ষেত্রে আপনাকে যে কাজই করতে দেওয়া হোক না কেন, সেই কাজে সম্পূর্ণ মনোযোগ ঢেলে দিন। অর্থাৎ আপনার মেধা ও যোগ্যতার সর্বাত্মক প্রয়োগ ঘটিয়ে কাজটি করুন। একটানা দীর্ঘ সময় ধরে কাজ না করে একটু একটু করে কাজ করুন। এতে কাজটি নিখুঁত হবে, নির্ভুল হবে। কাজের গুরুত্ব বুঝে প্রতিদিন অপনার ‘টু ডু লিস্ট’ তৈরি করুন। তারপর সেই তালিকা অনুযায়ী একটি একটি করে কাজ সম্পূর্ণ করুন।

৫. সহমর্মীতা

  • আপনার সব সহকর্মী সমান যোগ্যতাসম্পন্ন হবেন না, এটাই স্বাভাবিক। যারা অপেক্ষাকৃত কম যোগ্যতাসম্পন্ন তাদের প্রতি সহানুভূতিশীল না হয়ে সহমর্মী হোন। ‘সহানুভূতি’ আর ‘করুণা’ প্রায় একই ধরণের শব্দ। মানুষ সাধারণত করুণা পছন্দ করেন না। তাই সহকর্মীকে ‘অপনার প্রতি আমি সহানুভূতিশীল’ না বলে বলুন, ‘আমি আপনার সহমর্মী, আমি আপনার ব্যাথায় ব্যাথীত’।

৬. অনুসন্ধান

  • এই অনুসন্ধান মানে ছিদ্রান্বেষন নয়। অনুসন্ধান মানে শেখার আকুলতা, জানার আকুলতা। প্রতিষ্ঠান আপনার ওপর যে দায়িত্ব ন্যাস্ত করেছে তা যথাযথভাবে পালন করার জন্য আপনার কোথায় কোথায় ঘাটতি রয়েছে তা অনুসন্ধান করুন। তরপর সেই অনুসন্ধানের ফলকে কাজে প্রয়োগ করুন। নিজেই নিজেকে প্রশ্ন করুন, আপনার ভিতরে কী কী অনাবিষ্কৃত রয়ে গেছে। আত্মনুসন্ধান করুন প্রতিনিয়ত। কর্মক্ষেত্রে সফল হবেন নিশ্চিত।

ইউএসএ টুডে অবলম্বনে

Sharing is caring!

Leave a Comment