কোটিপতিদের লক্ষ্য

কোটিপতিদের লক্ষ্য

  • ড্যানিয়েল অ্যালি

সমৃদ্ধি লাভ বা বেড়ে ওঠার জন্য আপনি কি করত চান? এই ধরনের প্রশ্ন আমরা সকলেই করতে চাই। যদিও আমারা বিভিন্ন অভিজ্ঞতার মধ্যে দিয়ে সারাজীবন ধরেই শিখতে থাকি তারপরও আমরা এর উত্তর বলে দিতে পারি না । তাই চলুন দেখে নিই মাল্টি-মিলিয়নাররা  যে  ১০টি  উপায়ে তাঁদের লক্ষ্য নির্ধারণ করে থাকেন সেই বিষয়গুলো।


১. নিজেকে ছাড়িয়ে যাওয়া

বেশির ভাগ মানুষই নিজের জন্য সফল হতে চান, অন্যের জন্য নয়। তাঁরা সকল পুরস্কারই জিততে চান, বিভিন্নভাবে অনেক পয়সা আয় করতে চান। সবই ঠিক আছে, কিন্তু আপনাকে নিজের সীমানাকে ছাড়িয়ে যাওয়ার জন্য একটা পন্থা নির্বাচন করতে হবে। আপনাকে বুঝতে হবে যে আপনার উদ্দেশ্য আপনার চেয়েও বড়। একজন নিঃস্বার্থ নেতা অন্যদের উত্থানের বিষয়েই মনোযোগ নিবদ্ধ করে থাকে, যাতে তারা নিজেদের বিকশিত করতে পারে। যতটুকু সময় অন্যদের কাজে সাহায্য করা হয় উক্ত সময় নিজেকেই সাহায্য করা হয়। সমৃদ্ধি অর্জন করতে হলে অবশ্যই আগে অন্যকে সমৃদ্ধ করুন।

২. লক্ষ্য হবে অনেক বড়

বেশিরভাগ মানুষই নির্ধারিত লক্ষ্যকে  ‘বাস্তব’ মনে করে, যা তাদের সামনে এগিয়ে যাওয়ার স্বপ্নকে নষ্ট করে দেয়। তাদের লক্ষ্য ছোট হওয়ার কারণে লক্ষ্য অর্জনে তাদের পদক্ষেপ ও  ছোট হয়। অধিকাংশ মানুষ যথেষ্ট বড় লক্ষ্য নির্ধারণ করে না  কারণ তারা একই সমান্তরালে অন্যদের সাথে চলতে পারে না।বড় লক্ষ্য নির্ধারণ করুন যাতে এই লক্ষ্যই আপনাকে সঠিক যায়গায় পৌছাতে সহায়তা করবে।

৩. ভোক্তার পছন্দ অনুযায়ি উৎপাদন

লক্ষ্য নির্ধারণে ভোক্তার চাহিদার কথা মাথায় রাখতে হবে। অর্থাৎ ভোক্তা যদি পিজা খেতে চায় আপনাকে পিজা বানিয়ে দিতে হবে, ভোক্তা মুভি দেখতে চাইলে আপনাকে মুভি বানাতে হবে। অর্থাৎ ভোক্তা যা খুঁজবে আপনাকে তাই সরবরাহ করতে হবে। মূলকথা হলো উৎপাদকের কাজ ভোক্তাকে ভোগ করানো। সকল ধনীরাই একজন উৎপাদক, আর উৎপাদকেরাই ধনী হতে পারে।

৪. লিপিবদ্ধ করে রাখা

মিলিয়নাররা তাদের লক্ষ্য অর্জনে নির্ধারিত প্রতিটি পদক্ষেপই লিপিবদ্ধ করে রাখেন। অনেকে আবার প্রতিদিনই লক্ষ্যেগুলোর তালিকা আকারে প্রস্তুত করে রাখেন এবং পরবর্তীতে লক্ষ্য অর্জনে ওই তালিকা অনুযায়ী কাজ করে থাকেন। লিপিবদ্ধ করুন আপনার অর্থনৈতিক অবস্থা, সাপ্তাহিক কাজ বা নতুন রূপরেখা ইত্যাদি। দৈনিক ভিত্তিতে আপনাকে প্রতিদিনের নির্ধারিত লক্ষ্য অর্জনের জন্য গতিশীল প্রয়াস চালাতে হবে।

৫. শুধুমাএ লাভজনক কাজ করা

সফল ব্যক্তিরা লক্ষ্য অর্জনে সময়সূচী ঠিক করে রাখেন অর্থাৎ কত সময়ের মধ্যে তিনি তাঁর লক্ষ্যে পৌছাবেন। সারকথা এই যে, তাদের করণীয় কী ওই সময়সূচীই তা বলে দেয় । মিলিয়নাররা সর্বোচ্চ পুরস্কার পেতে পারেন এমন কাজই করে থাকেন। গুরুত্বপূর্ণ হোক আর না হোক তাঁরা কোনোভাবেই মূল্যবান সময় নষ্ট করতে চান না। যতদ্রুত সম্ভব মানুষের কাছে অধিক গুরুত্ব সৃষ্টির উপর দৃষ্টি আরোপ করতে চান। তারা শিখে যান কীভাবে মূল উদ্দেশ্য ঠিক করতে হয়, তাই তারা কাজের পথে কোনো ধরনের বিরক্তি বা বাধা রাখতে চান না। আর এভাবেই তাদের পরম চেষ্টা স্থায়ীভাবে সফল হওয়ার সুযোগ তৈরি করে।

৬. অঙ্গিকারাবদ্ধ হওয়া

সর্বোচ্চ লক্ষ্যে পৌছানোর জন্য আপনাকে সকলের নিকট প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হতে হবে। আপনি যদি সবাইকে বলে বেড়ান যে আপনি কোটিপতি হতে চলেছেন তাহলে যারা এই ধারনাকে ঘৃনা করে আপনাকে তাদের উর্ধ্বে উঠতে হবে। যারা আপনাকে আপনার লক্ষ্যে পৌছানোর জন্য লোক দেখানো সাহায্য করতে চেয়েছিল একসময় তারাও  চলে যাবে। মনে রাখবেন যে, যাদের আপনার দরকার তাদেরকেই বেছে নিতে হবে। আপনার প্রত্যাশা অনুযায়ী তাদের যা বলবেন তারা তাই করবে। সামনে এগিয়ে যান এবং সকলকে বলুন যে আপনি একটা বই লিখছেন, নতুন একটা ব্যবসা শুরু করছেন বা ওজন কমাচ্ছেন। আপনার বাসনাই আপনার পক্ষে কাজ করবে।

৭. দৃষ্টিগোচর করা

আপনি নিজের জন্য যা কল্পনা করবেন সঠিক পথে চলতে পারলে একসময় দেখবেন তা আপনার সামনে এসে হাজির হবে। আপনার অন্তরে তার ছবি আকঁতে হবে। আপনার মনের রাজ্যের এসব ছবিগুলো আপনাকে পরিস্কার করে লিপিব্ধ করে রাখতে হবে বাস্তবায়নের জন্য। এটা আপনাকে নিশ্চিত করবে আপনি কি চান। যাহোক, সাধারণত অধিকাংশ মানুষ সেই সব বিষয়গুলো ফোকাস করে যা তারা করতে চায় না। তারা চিন্তা করে তাদের চাকরি হারানো নিয়ে, গাড়ি দুর্ঘটনায় নষ্ট হয়ে যেতে পারে তা নিয়ে বা তার বন্ধুদের মাঝে ইমেজ হারানো নিয়ে। যখন তারা এগুলো করে তখন তাদের সফলাতার পথ আটকে যায়। আপনি আপনার জন্য কোন ধরনের ভবিষ্যৎ দেখতে চান? দারিদ্রতা নাকি স্বচ্ছলতা? আপনি তাই পাবেন যা আপনার অন্তরে রয়েছে।

৮. দৃঢ়তার সাথে ঘোষণা করা

প্রতিদিন কিছু সময় নিজের সঙ্গে কথা বলতে হবে। প্রতিদিন প্রায় ১২হাজার বার একজন মানুষ নিজের সঙ্গে কথা বলে!  তাঁরা নিজেদের সঙ্গে কীভাবে কথা বলে সেই বিষয়টা সফল ও ব্যর্থ মানুষের মধ্যে পার্থক্য গড়ে দেয় ।

৯. নিজেকে একটু সরিয়ে রাখুন

আপনাকে অবশ্যই মানবহিতৈষী লক্ষ্য নির্ধারণ ও জনগণের সেবামূলক কাজ করতে হবে। জনগণের জন্য সেবামুলক কিছু  করতে পারলে পুরস্কৃত হবেন, তারা চাইবে আপনাকেও এর প্রতিদান দিতে। আপনার পণ্য ও সেবা উদার হাতে বিনিয়োগ করুন। আপনি হয়ত ভাবতেই পারবেন না, এই শুভেচ্ছামুলক উপহার বা পথনির্দেশনা নাটকীয়ভাবে অন্যের জীবনের পথ পরিবর্তন করতে পারে।

১০. কর্মোদ্যোগী হওয়া

কীভাবে নেতাদের মতো কর্মোদ্যোগ নেওয়া যায় তা ভাবতে থাকুন। আপনাকে দুঃসাহসী ও নাছোরবান্দা হতে হবে। আপনার দুঃসাহসিক  কাজে যখন দেখবেন অন্যরা অত্যন্ত মনোযোগী তখন আত্মবিশ্বাস অনেক বেড়ে যাবে। দ্রুতই মানুষ এই আত্মবিশ্বাস অনুধাবন করবে এবং তাদের অনেকেই এমন কিছু করার চেষ্টা করবে। মোট কথা আপনি দুঃসাহসী, সংক্রামক এবং একগুয়ে বা নাছোরবান্দা হতে পারলে আপনি সাফল্যের চুড়ায় উঠতে পারবেন।

eT03JBmQলেখক : ড্যানিয়েল অ্যালি

অনুবাদ : শিমি আক্তার

সূত্র : এন্ট্রাপ্রেনার ডটকম।

Sharing is caring!

Leave a Comment