একটুখানি পরিবর্তন, অনেকখানি সাফল্য
- স্বর্ণা কাজী
মানুষমাএই পরিবর্তশীল।। আবার তা জীবনে সাফল্যের চাবিকাঠিও হতে পারে। পৃথিবীতে বেশিরভাগ সফল মানুষেরই সফলতার পিছনে অনুপ্রেরণা হিসাবে কাজ করে পরিবর্তনের সাথে পথ চলার আত্নবিশ্বাস । আর গত রবিবার এমনই কিছু মানুষের মিলনমেলায় পরিনত হয়েছিল আমেরিকার ক্যালিফোর্নিয়ায় অবস্থিত স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটির পঞ্চম বার্ষিক ‘টেডএক্স স্ট্যানফোর্ড’ কনফারেন্সটি । ‘দি হিউম্যান রেস’ শীর্ষক কনফারেন্সটিতে উপস্থিত হয়েছিলেন সমাজের কিছু সফল মানুষেরা যারা নির্দ্বিধায় মানবিকতার জয়ধ্বনি করেন।
ঘোড়দৌড় থেকে শুরু করে সামাজিক কর্মকাণ্ড সহ সমাজের সকল ক্ষেএে সাফল্যের কথাসহ আরও বিভিন্ন বিষয় উঠে এসেছিল বক্তাদের বক্তব্যে। অনুষ্ঠানে স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃতি, বিভিন্ন পরিসংখ্যানভিত্তিক আলোচনা এবং শৈল্পিক উপস্থাপনায় উৎসবমুখর পরিবেশের সৃষ্টি হয়।
শিখতে হয় ভুল থেকে
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন মার্গারেট নেইল। তিনি ‘গ্র্যাজুয়েট স্কুল অব বিজনেস’ এর ম্যানেজমেন্ট ডিপার্টমেন্টের একজন অধ্যাপক। নেইল তাঁর জীবনের একটি শিক্ষার কথা বলছিলেন, যা কিনা তিনি পেয়েছিলেন তাঁর পোষা ঘোড়া স্যালের থেকে।
স্যাল জন্মগতভাবেই জেদী ঘোড়া। এদিকে নেইলও জেদ ধরলেন যে কোনো কিছুর বিনিময়ে তাঁকে ঘোড়দৌড় জিততেই হবে। কিন্তু বিষয়টি যে এতো সহজ নয় তা অচিরেই নেইল বুঝতে পারলেন।যদিও তিনি প্রথম দিকে শুধু খেলায় জেতার নেশায় বিভোর ছিলেন, কিন্তু পরবর্তীতে নিজের ভুলটা বুঝতে পারেন। বক্তব্যে নেইল বলেন, ‘আমার নিজেকে পরিবর্তন করাটা জরুরী ছিল। কেননা, ঈশ্বর আমাকে উন্নত বুদ্ধি এবং অধিকতর প্রতিবাদ ক্ষমতা দিয়েছেন।’
এরপর থেকে নেইল তাঁর ঘোড়া স্যালের সাথে প্রভুত্বের সম্পর্কের বদলে একটি বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলেন। স্যালকে তিনি পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ দিতে থাকেন অত্যন্ত নিষ্ঠা এবং ধৈর্য্য সহকারে। স্যালকে তিনি সময় দিতেন ভুল থেকে শিক্ষা গ্রহণের জন্য। নেইল মনে করেন তিনি এই মানবিকতা দেখাতে পেরেছিলেন বলেই পরবর্তীতে স্যালের মতো একটি ঘোড়াও লক্ষ্যে পৌঁছাতে সক্ষম হয়েছিল।
জোশ রোজারিও একজন হাইস্কুলের ইংরেজির শিক্ষক। তিনি স্ট্যানফোর্ড থেকেই উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করেন। আজ নিজের সাফল্যের জন্য তিনি ইচ্ছা, শ্রম এবং একনিষ্ঠতাকে কৃতিত্ব দিতে চান। একজন শিক্ষক হিসেবে তিনি চান তাঁর ছাএ ছাএীরাও নিজেদের শ্রম ও মেধা দিয়ে জীবনে সাফল্য অর্জন করুক। তিনি তাঁর বক্তব্যে বলেন, ‘আমার ছাএরা যখন নিজেদের পাঠ্যবিষয়ের অস্পষ্টতা নিজেরাই দূর করতে পারে, শিক্ষক হিসাবে তখন আমি সার্থক মনে করি নিজেকে। কেননা, তারা ভুল করতে করতে শিখে এবং পড়াটাকে নিজেদের মধ্যে ধারন করে।’
নিরাশকে ‘না’
ডেভিড ক্যামারিল্লো বায়োইঞ্জিনিয়ারিংয়ের একজন সহ-অধ্যাপক। তিনি কনফারেন্সে ব্রেন ইনজুরি নিয়ে কথা বলেন। ক্যামারিল্লো এক সাবেক ফুটবলারের কথা উল্লেখ করেন যিনি ব্রেন ইনজুরিতে আক্রান্ত। এমনকি নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে তিনি নিজের মেয়েকেও বাইসাইকেল চালাতে দিতেন না। কিন্তু তিনি পরবর্তীতে বুঝতে পারেন যে ‘আঘাত’ পাওয়ার ভয়ে তিনি পিছুপা হচ্ছেন। এখন তিনি বিশ্বাস করেন যে কখনো ভয় পেয়ে নিরাশ হতে নেই। তাই তিনি সকলকে আশাবাদী দৃষ্টিভঙ্গি রাখতে উৎসাহিত করেন।
জেনি সাকল একজন ভূগোলের সহ-অধ্যাপক। তিনি কনফারেন্সে ভূমিকম্প, আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুতপাত, সুনামি এবং বরফ ধসের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগসমূহের উপর আলোকপাত করেন। কিন্তু তাঁর আজকের এই অবস্থানের পথটা সহজ ছিল না। একজন নারী হয়ে সাফ্যলের পথে তাঁকে পার করতে হয়েছে অনেক বাধা। কিন্তু তিনি কোনোদিন আশা ছাড়েননি। আর তাই জীবনের বিভিন্ন দুর্যোগ মোকাবিলা করে আজ তিনি স্বস্থানে অধিষ্ঠিত।
পরিবর্তন আনুন আপনার স্ক্রিপ্টে
কনফারেন্সে আরো বক্তব্য রাখেন স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাএ পরিষদের প্রেসিডেন্ট এবং ভাইস প্রেসিডেন্ট ব্র্যানডন হিল এবং জন ল্যানকাস্টার ফিনলে। তারা তাদের বক্তব্যে বলেন, ‘আপনি চাইলেই একটি অনুষ্ঠানকে বদলে দিতে পারেন। এর জন্যে আপনাকে শুধু নিজের স্ক্রিপ্টটা একটু এডিট করে হবে।’ তাঁদের মতে প্রত্যেককে নিজের জায়গাটা করে নিতে হয়। আর তার জন্য শুধু কিছু পরিবর্তন দরকার।
জীবনে চলার পথে কিছু দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন কীভাবে সাফল্য এনে দিতে পারে এই মানুষগুলো তারই উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। তাই এখনই আনুন নিজের মধ্যে কিছু পরিবর্তন। নিঃসন্দেহে সাফল্য ধরা দিবে আপনার হাতের মুঠোয়।