সাফল্য আনবে ‘বাচনিক যোগাযোগ’

সাফল্য আনবে ‘বাচনিক যোগাযোগ’

  • হ্যালি ক্রফোর্ড

সফল ব্যবসায়িক সম্পর্কের জন্য ‘বাচনিক যোগাযোগ’ খুবই গুরুত্বপূর্ন। এই ধরনের সম্পর্ক কার সঙ্গে গড়ে তুলতে হয়? অবশ্যই আপনার প্রতিষ্ঠানের সহকর্মী, ক্লায়েন্ট বা এক্সিকিউটিভসদের সঙ্গে। ভাবছেন, বাচনিক যোগাযোগ আবার কি জিনিস? একটা উদাহরণ দিলেই বুঝতে পারবেন। যেমন ব্যবসায় জগতে আমরা গুরুত্বপূর্ন মানুষজনদের অভ্যর্থনা জানাতে চেষ্টা করি হাসি দিয়ে এবং করমর্দন করে। এর নামই বাচনিক যোগায্গে।

মিটিং এবং প্রেজেন্টেশনে বাচনিক যোগাযোগ উন্নয়নের ৫ টি উপায়:


চোখে চোখ রাখা…

  • আপনি যখন কথা বলছেন তখন অন্যদের সাথে চোখের মাধ্যমে যোগাযোগ করা দৃঢ় প্রত্যয় প্রকাশের অন্যতম মাধ্যম। আপনি যখন উপস্থাপনা করবেন তখন গোড়া থেকে শুরু করুন সম্ভাব্য ক্রেতাদের জন্য। আপনি যদি তাদেরকে বলেন তাদের সম্পদকে ব্যবহার করার জন্য কেন আপনার কোম্পানিকে বাছাই করা উচিত, কিন্তু কার্যকরি আই কন্টাক্ট না করেন, যদিও আপনি চমৎকার পাওয়ার পয়েন্ট প্রস্তুত করেছেন, হতে পারে তারা অনুপ্রাণিত হবে না। পরবর্তী গ্রুপ উপস্থাপনা অথবা মিটিং এর জন্য শ্রোতাদের সাথে পৃথকভাবে কন্টাক্ট করুন। সর্বোপরি আপনি ভাষণ দিচ্ছেন এমনভাবে গ্রুপের দিকে তাকাবেন না। কোনো একজনের দিকে ফোকাস করুন এবং তাকে উদ্দেশ্য করেই কয়েকটি বাক্য বলুন তারপর অন্যকারো দিকে ঝুঁকে যান। পুরো গ্রুপের উপর ক্রমান্বয়ে এই পন্থা চালান। কিন্তু কারো উপর অনেকক্ষণ তাকিয়ে থাকা পরিহার করুন যা তাকে অস্বস্থিকর করে তুলতে পারে। আপনি যদি নার্ভাস এবং লজ্জিত হোন তাহলে অন্যদের সাথে আই কন্টাক্ট অনুশীলন করুন। আকস্মিক পরিবেশে প্রশ্ন জিজ্ঞাসা এবং উত্তর প্রদানের জন্য সরাসরি কারো উপর তাকান। এটি অন্যকারো সাথে আই কন্টাক্ট এ আপনাকে আরো স্বাভাবিক করে তুলবে।

বরং কণ্ঠ ছাড়ো জোরে…

  • আপনার কন্ঠস্বর বলে দিবে আপনার অনুভূতি। উদাহরণস্বরুপ: কাউকে প্রশ্ন করার পর জোড়ে দীর্ঘশ্বাস ফেললে অন্যরা ভাববে আপনি বিরক্ত হচ্ছেন। একঘেয়েমী বক্তব্য অন্যদের ভাবিয়ে তুলবে যে আপনি যে বিষয়ের উপর কথা বলছেন তাতে আপনি আগ্রহী নন। কঠোর স্বর রাগের বহিঃপ্রকাশ। উপস্থাপনা এবং মিটিং পরিচালনার সময় আপনার কন্ঠস্বর পরিবর্তিত হওয়া গুরুত্বপূর্ন। যেমন, আপনি যদি কর্মীদের নতুন পলিসি বাস্তবায়নের গুরুত্ব প্রকাশ করার চেষ্টা করেন, এই শব্দগুচ্ছ আপনি খুব ধীরে এবং ভেবেচিন্তে বলুন যথাসম্ভব একটূ জোড়ে বলুন। যখন আপনি চিৎকার করতে চান না তখন আপনার কন্ঠস্বর ও গতির সমন্বয় করুন যা আপনার শ্রোতাদের বলার আগেই বুঝতে সাহায্য করবে কোন পয়েন্টগুলো আপনার জন্য গুরুত্বপূর্ন। এটা অনুশীলন করতে খবরের কলাম জোড়ে পড়ুন। যখন আপনি কন্ঠস্বরের সমন্বয়ে এটি পড়ছেন কলামের মূল পয়েন্টগুলোর দিকে জোড় দিন। প্রয়োজনবোধে বন্ধুর সাথে চর্চা করুন।
হ্যালি ক্রাফোর্ড। ছবি : হ্যালি ক্রাফোর্ডের ওয়েবসাইট।
হ্যালি ক্রাফোর্ড। ছবি : হ্যালি ক্রাফোর্ডের ওয়েবসাইট।

অঙ্গবিন্যাস

  • আপনার অনুভূতি প্রকাশ পায় অঙ্গবিন্যাসের মাধ্যমে। যেমন, অবচেতনমনে আপনার বাহু ভাজ করা অন্যদের কাছে প্রতীয়মান করবে যে আপনি নিজেকে গুটিয়ে নিতে চাচ্ছেন, জবুথবু করা বলে দিবে আপনি তথ্যের ব্যাপারে নির্লিপ্ত, পায়ে মৃদু আঘাতকরণ প্রকাশ করে আপনার অস্থিরতা। আপনি যদি মিটিং পরিচালনা করেন বা উপস্থিত থাকেন তাহলে আপনার অঙ্গবিন্যাসের দিকে মনোযোগী হোন। দাঁড়ান অথবা সোজা বসুন এবং বেশী বাহু নাড়ানো থেকে বিরত থাকুন। আপনি যদি পরোক্ষভাবে নম্রতা প্রকাশ করতে চান আপনার কর্মীদের ভয় কম দেখানোর উদ্দেশ্যে তাহলে মিটিং এর সময় তাদের সাথে বসুন।

আকার-ইঙ্গিত

  • আপনি যা বলতে চান তার গুরুত্ব বাড়াবে আপনার আকার-ইঙ্গিত। বিপরীতটাও সত্য। অঙ্গ সঞ্চালন না করা এই নির্দেশনা দিবে যে আপনি যা বলছেন তা সম্পর্কে আপনার আগ্রহ নেই, আপনাকে রবোটিক দেখাবে, কাজেই শুনতে কম আকর্ষিক মনে হবে। আপনি যখন কোনকিছু সম্পর্কে উৎসাহী হবেন তা স্বাভাবিকভাবে বলুন, অঙ্গভঙ্গি স্বাভাবিক করুন। আপনি আকার-ইঙ্গিত করতে পারেন কনকিছু বর্ণনা করতে বা কোন পয়েন্টে জোড় দিতে। যখন স্বাভাবিক কথোপকথন চলে তখন স্বাভাবিক অঙ্গভঙ্গির দিকে মনোযোগী হোন, মিটিং পরিচালনার সময় আকার-ইঙ্গিতে আরো সচেষ্ট হোন। যাইহোক আপনার অঙ্গভঙ্গির অতিরিক্ত প্রস্তুতি সম্পর্কে সচেতন হোন, তা দেখতে স্বাবাবিক মনে হতে হবে। শ্রোতাদের ইশারা বা আঙ্গুলের নির্দেশ করা থেকে বিরত থাকুন, নয়ত এটা তাদের বিরক্ত করে তুলতে পারে।

বাহ্যিক রূপ

  • আপনি যখন মিটিং পরিচালনা করবেন বা উপস্থাপনা করবেন সকলের চোখ আপনার দিকে থাকবে। তাই নিজেকে পেশাদারীভাবে ফুটিয়ে তোলা খুবই গুরুত্বপূর্ন। আপনার কম্পিউটার, আই-প্যাড এবং অন্যান্য সরঞ্জাম যা আপনি ব্যবহার করছেন তাদের পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিত করুন। কম্পিউটারের ব্যাকগ্রাউন্ড এবং স্ক্রিনসেভারস দুইবার চেক করুন যেন সঠিকভাবে কাজ করা যায়। স্ক্রিনসেভারে যেন ব্যক্তিগত বিচ ট্রিপের ছবি না থাকে যা মিটিং এর কথোপকথনের মাঝে বিরতিতে ভেসে উঠে।

যখন পরিশ্রমের উপর মান নির্ভর করে, আপনার পোষাক নিরপেক্ষ তা নিশ্চিত করুন। আপনি নিশ্চিত করুন অংশগ্রহণকারীরা তথ্যের উপর বেশী মনোযোগী হবে যা আপনি হাজির করেছেন, আপনি কি পরেছেন তা নিয়ে বিভ্রান্ত হবেনা। তথাপি, এর মানে এই নয় যে আপনি আপনার ব্যাক্তিত্ব ফুটিয়ে তুলবেন না। হালকা কিছু পরিধান করুন যা আপনাকে প্রকাশ করবে যেমন, স্পেশাল টাই, স্কার্ফ এবং জুয়েলারি যা গ্রহণযোগ্য। সর্বশেষে নিশ্চিত করুন যে আপনার পোষাকই শুধু প্রফেশনাল নয় আপনার চুল, চুলের কাট সবকিছুই প্রফেশনাল।

হ্যালি ক্রফোর্ড : সনদপ্রাপ্ত ক্যারিয়ার কোচ। ক্যারিয়ার বিষয়ে নিয়মিত নিবন্ধ লেখন সিএনএন, ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল এবং ফোর্বস ম্যাগাজিনে।
অনুবাদ : রিক্তা রিচি
সূত্র : ইউএস নিউজfavicon59

Sharing is caring!

Leave a Comment