সফল হতে প্রতিদিনের পাঁচ অভ্যাস

সফল হতে প্রতিদিনের পাঁচ অভ্যাস

  • মুল রচনা : ড্যান ম্যাককাটচেন
  • অনুবাদ :  শিমি আক্তার

অনেকেই মনে করেন যে একটা বিশেষ ক্ষমতা বা ‘এক্স-ফ্যাক্টর’ এর কারণে উদ্দ্যোক্তারা সফলতা পেয়ে থাকেন। আমার মতে, তাঁদের প্রাত্যহিক জীবনযাপনের ধরনে উপর এই সফলতা নির্ভর করে থাকে। দৈনন্দিন অভ্যাস সফল উদ্দ্যোক্তাদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। উদ্দ্যোক্তাদের প্রতিদিনের এই রুটিনগুলো  নিয়মিত অনুশীলন করার ফলে তাঁদের শরীর, মন আবৃত করে রাখে ও কাজে অধিক গতি সঞ্চারিত করে । একজন যা করছে অন্যকেও যে ঠিক তাই করতে হবে তা নয়, তবে সফলতা লাভের জন্য একটা নির্দষ্ট লক্ষ্য স্থির করতে হবে ও প্রাত্যহিক পরিপালনের মাধ্যমে স্বাস্থ্য সুরক্ষার চেষ্টা করতে হবে। নিম্নে  ৫টি গুরুত্বপূর্ণ অভ্যাসের কথা তুলে ধরা হলে।


১. প্রতিদিন যথাসময়ে ঘুম থেকে ওঠা

কর্মদিবসের প্রথম ১০মিনিট খুব গুরুত্বপূর্ণ। এসময় দিনের বাকী অংশের কাজ সুন্দর ও ফলপ্রসূভাবে সম্পন্ন করার জন্য নিজেকে সুনিয়ন্ত্রণ করা দরকার।  সফল উদ্দ্যোক্তাদের একটা সাধারন চারিত্রিক বৈশিষ্ট হলে তাঁরা যথাসময়ে ঘুম থেকে উঠে পারেন। গত বৎসর, ‘ফাস্ট কোম্পানী’ সফল উদ্দ্যোক্তাদের প্রাত্যহিক অভ্যাসের উপর একটি জরিপ চালান, এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো টি-মোবাইলের জন লিগারি ও চোবানির হামদি উলুকায়া। উক্ত জরিপে দেখা যায় তাঁদের মধ্যে কেউই সকাল ৭টার পরে ঘুম থেকে ওঠেন না। বস্তুত জরিপের অধিকাংশ উদ্দ্যোক্তাই সকাল ৬টার পূর্বেই শয্যা ত্যাগ করে থাকেন।

২.  সফলতাকে ছবির মতো মনে আনা

আপনি কি করতে চান তা কল্পনায় একটু দেখে নিন। সম্প্রতি ফোর্বস আর্টিকেল সিটিজ -এর একটি গবেষণায় দেখা যায় যে, এমনকি মাএ দুই মিনিটের প্রত্যক্ষীকরণ এবং ভালো কিছুর চিন্তাভাবনা মানসিক অবস্থার উন্নতি এবং সারাদিনের করণীয় বিষয়বস্তুকে পরিস্কার  করতে সহায়তা করবে। সফল উদ্দ্যোক্তা হওয়ার জন্য অন্তর্দৃষ্টি থাকা দরকার। এক্ষেত্রে নিচের দুইটি উদহারণ বিবেচনা করা যেতে পারে-

  • মাইকেল জর্দান জানিয়েছেন, তিনি বাস্তব জীবনে কোন কিছু করার পূর্বে সর্বদা মনে মনে শেষ পদক্ষেপটি কেমন হতে পারে তা দূরদৃষ্টি দিয়ে দেখে নিতেন।
  • মুহাম্মাদ আলী নিয়মিত চাপের মধ্যে থাকতেন কারণ তিনি মূল লড়াইয় শুরু হওয়ার আগেই অন্তর্দৃষ্টি দিয়ে  দেখতে পেতেনে যে জয়ের জন্য তাকে দীর্ঘ সময় লড়াই করতে হচ্ছে।

একজন বিনিয়োগকারী হিসেবে, আপনাকে প্রাত্যহিক জীবনে সকল পজিটিভ দর্শন একত্রে অন্তরে রাখার অভ্যাস করতে হবে। আপনি যদি সফলভাবে এসবের অনুশীলন না করতে পারেন, সকল উদ্দেশ্য অর্জনে এবং সব কাজ যথাযথভাবে শেষ করা আপনার পক্ষে সম্ভব হবে না।

৩. নির্দিষ্ট লক্ষ্য নির্ধারন

সফল হওয়ার জন্য একটি নির্দিষ্ট লক্ষ্য নির্ধারন করা অতি প্রয়োজন। উদ্দ্যোক্তরা নির্দিষ্ট লক্ষ্য নিয়েই বিনিয়োগ করে থাকেন। তাঁরা আসলে জানেন যে তাঁদের কি করা উচিত বা কি করা উচিত নয় এবং কিভাবে কর্মসম্পাদন করতে হবে তা লিপিবদ্ধ করে রাখেন । বিনিয়োগকারীদের শুধু প্রাথমিক লক্ষ্যের কথা কল্পনা করলে হবে না, চুড়ান্ত লক্ষ্য অর্জনে পর্যায়ক্রমে প্রত্যেকটা ধাপে সফল হওয়ার জন্য অধিক মনোযোগ নিবদ্ধ করতে হবে।

দ্বিতীয় পদক্ষেপ হলো পরিকল্পনা, সংগঠন ও অগ্রাধিকার মূলক লক্ষ্য। এই বিষয়গুলোকে কয়েকটি ভাগে বিভক্ত করতে হবে যেমন-বাৎসরিক, মাসিক, সাপ্তাহিক ও দৈনিক ভিত্তিতে, যাতে স্বল্প ও দীর্ঘ সময়ের পরিকল্পনা থাকে। এসব অর্জনে নতুন বিনিয়োগকারীদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হলো আতœ-শৃংখলা শিখে নেয়া । নিজেদের নিয়মশৃংখলার মধ্যে আনার ক্ষমতা, আতœনিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা, সঠিক দিক নির্দেশনার ক্ষমতা ইত্যাদি শুধুমাত্র তাঁদের লক্ষ্য অর্জনে সহায়তাই করবেনা একজন সফল উদ্দ্যোক্তা হতেও সহায্য করবে।

৪. নেটওয়ার্ক তৈরী করা

বিশ্বের অধিকাংশ সফল ব্যক্তিরা অভিজ্ঞদের সাথে তাঁদের ধারনা বিনিময়ের মূল্য বুঝতে পারেন। যাকে নেটওয়ার্কিং বলা যেতে পারে। নেটওয়াকিংয়ের চর্চা করলে একসময় বিস্তৃত নেটওয়ার্ক তৈরী হবে যা আপনার দীর্ঘস্থায়ী সফলতার জন্য সহায়তা করবে। নতুন বিনিয়োগকারী বিভিন্ন ট্রেড শো, কনফারেন্স বা স্থানীয় কফি শপ অথবা অন্যান্যভাবে নতুন বন্ধু, পরামর্শদাতা এবং অংশীদার খুঁজতে পারেন যারা পরবর্তীতে আপনাকে বিভিন্ন বিষয়ে সহায়তা  করতে পারে। নতুন ব্যবসায়িদের জন্য নেটওয়াকিং চর্চা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

৫. নিজের সাথে কথ বলা

ইউনিভার্সিটি অব ইলিনইজ এর এক নতুন পর্যবেক্ষণে জানা যায় যে, উপনামের ব্যবহার যেমন ‘আমি’ এর পরিবর্তে ‘তুমি’ যখন আমরা কোনো কঠিন কাজের মুখোমুখি হই নিজেদের সাথে এভাবে কথা বললে  আমাদের ইচ্ছা শক্তি ও  উৎসাহ বৃদ্ধি পাবে ফলে সমস্য সমাধান সহজ হবে। বিশ্বাস করেন আর নাই করেন, নিজেদের সাথে প্রতিনিয়ত কথা বলা সফল উদ্দ্যোক্তাদের আরেকটি অভ্যাস। নিজের সাথে কথা বলার অভ্যাস রপ্ত করার সময়ে নিজেকে দুর্বল ভেবে কথা বলার চেয়ে দৃড়ভাবে কথা বলা উচিত, যাতে আত্ববিশ্বাস তৈরী করা হয়। সফল ব্যবসায়ি হতে হলে বিনিয়োগকারীদের দরকার নিজেদের একজন ঘটনার শিকর বা ভিকটিম লোকদের মতো কথা বলার পরিবর্তে একজন বিজয়ী বা চ্যাম্পিয়নের মতে কথা বলা। বারবার এসকল বাক্য বলুন যেমন ” আমি যা করছি তাই সেরা”, ” এমন কোনো জিনিস নেই যা আমি পারবো না” এবং ” আমার সম্পর্কে কোনো কিছুই সাধারণ নয়” এসব চিন্তাভাবনা পুনরায় আপনাকে ভালো অবস্থানে নিয়ে আসবে।

রাতারাতি একজন ব্যক্তি সফল উদ্দ্যোক্তা হতে পারে না, জন্মগতভাবে কিছু নিয়েও নয়। সফল হতে হলে ছোট পদক্ষেপ নিয়ে এগিয়ে যেথে হবে এবং অভিষ্ট গন্তব্যে পৌছাতে সময় লাগবে। উল্লেখিত অভ্যাসগুলো ভবিষ্যতের অন্তরায়গুলো দূর করে সফলতা লাভের জন্য সঠিক মানসিকতা তৈরীতে সাহায্য করবে।

(এই লেখাটি হেল্পফুলইনভেস্টিংডটকম অবলম্বনে লেখা)।

Sharing is caring!

Leave a Comment