পড়ার বিষয় জনস্বাস্থ্য

পড়ার বিষয় জনস্বাস্থ্য

  • রবিউল কমল

বর্তমান তীব্র প্রতিযোগিতামূলক বাজারে যাঁরা তুলনামূলক সহজভাবে কোনো কাজ করতে বা পেতে চান এবং একই সঙ্গে মানবকল্যাণও করতে চান তাঁদের জন্য কাজের সুযোগ রয়েছে। আর সেটি হলো এমপিএইচ বা মাস্টার্স অব পাবলিক হেলথ বিষয়ে পড়াশোনা করে স্বাস্থ্যসেবায় যোগ দেওয়া। এমপিএইচ পাস করলে সরকারি-বেসরকারি উভয় খাতেই চাকরির সুযোগ আছে। শহরে যেমন কাজের সুযোগ আছে তেমনি শহুরে কোলাহল ছেড়ে কেউ গ্রামে চলে যেতে চাইলে তাও অনেক ক্ষেত্রেই সম্ভব হয়। সংশ্লিষ্টদের মতে, এই পেশায় সম্মানজনক আয় উপার্জন এবং মানব সেবার সুযোগ রয়েছে।

জনস্বাস্থ্য কী?

জনস্বাস্থ্য বলতে মূলত রোগ প্রতিরোধমূলক কর্মকাণ্ডকেই বোঝানো হয়ে থাকে। সাধারণত রোগের চিকিৎসাকে দুইভাবে আলাদা করা যায়। রোগ হওয়ার পর চিকিৎসা, অন্যটি প্রতিরোধের মাধ্যমে শরীরকে রোগমুক্ত রাখা। রোগ হওয়ার পর নয়, এর আগেই সচেতনতামূলক প্রতিরোধের মাধ্যমে জনগণের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিয়ে কাজ করাই হলো জনস্বাস্থ্য।

জনস্বাস্থ্য কেন গুরুত্বপূর্ণ?

জনস্বাস্থ্য-সচেতনতা যত বেশি জোরদার হবে, একটা দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা তত উন্নত হবে। জনস্বাস্থ্যের গুরুত্ব অনেক বেশি। কারণ, জনস্বাস্থ্য কর্মসূচি শুরুর ফলেই মানুষের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি পেয়েছে। আমরা যদি আগে থেকেই রোগের কারণগুলো খুঁজে বের করতে পারি এবং এ বিষয়ে সচেতন থাকি, তাহলে সহজেই সুস্থ থাকতে পারি। চিকিৎসকেরা রোগ হওয়ার পর কাজ করেন। কিন্তু জনস্বাস্থ্যকর্মী রোগ হওয়ার আগে থেকেই কাজ করেন। বিশেষ করে, আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশের ক্ষেত্রে এ ধরনের কর্মীদের গুরুত্ব অনেক বেশি। যেখানে জনসংখ্যার ঘনত্ব বেশি, সেখানে বিভিন্ন ধরনের সংক্রামক রোগের প্রবণতাও বেশি থাকে। এখনো আমাদের দেশের অনেকের পরিবার পরিকল্পনা বিষয়ে জ্ঞানের অভাব রয়েছে। বিশেষ করে, গ্রামগঞ্জে প্রসূতি মায়েদের স্বাস্থ্য-সচেতনতার অভাব এবং শিশুদের প্রতিষেধক বিভিন্ন টিকা নিয়ে আছে স্বল্প জ্ঞানের পরিধি। প্রতিরোধের মাধ্যমে রোগমুক্ত রেখে দেশের মানুষকে সামাজিক ও আর্থিকভাবে লাভবান করতে জনস্বাস্থ্য বিষয় খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

এমপিএইচে যা পড়ানো হয়?

বিষয়টি যেহেতু জনস্বাস্থ্য নিয়ে, ফলে এখানে বিভিন্ন ধরনের রোগের ইতিহাস ও প্রতিরোধমূলক কার্যক্রম নিয়ে পড়ানো হয়। রোগ সম্পর্কে প্রাথমিক কিছু ধারণা দেওয়া হয়। যেমন— কেন রোগ হয়, কীভাবে ছড়ায়, কোন উপায়ে রোগগুলো প্রতিরোধ করা যায়? পাশাপাশি সমাজ ও অর্থনীতিসহ অন্যান্য বিষয়ও পড়ানো হয়ে থাকে এমপিএইচে। যেমন: শারীরবিজ্ঞান, জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা তথ্য-পদ্ধতি, জনস্বাস্থ্য তথ্য প্রশিক্ষণ ও যোগাযোগ, পরিবেশগত স্বাস্থ্য, স্বাস্থ্য অর্থনীতির উন্নয়ন, স্বাস্থ্যনীতি, স্বাস্থ্যঝুঁকি ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা, বিভিন্ন ছোঁয়াচে রোগ, মা ও শিশুস্বাস্থ্য, পরিসংখ্যান, স্বাস্থ্য উন্নয়ন, পুষ্টিবিজ্ঞান, বাজেট তৈরি, জনস্বাস্থ্য ও হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা, মানবসম্পদ, যৌনরোগ ও সচেতনতা এবং মানসিক স্বাস্থ্য পড়ানো হয়। এ ছাড়া শিক্ষার্থীদের তাত্ত্বিক জ্ঞানের পাশাপাশি ব্যবহারিকের জন্য মাঠপর্যায়ে কাজ করতে হয়। যাঁরা সামাজিক উন্নয়নমূলক ও গবেষণাধর্মী কাজে আগ্রহী, তাঁদের এ পেশায় আসা উচিত বলে।

কাজের সুযোগ ও চাহিদা:

দেশ-বিদেশ দুই জায়গাতেই এ পেশার যথেষ্ট চাহিদা রয়েছে। দেশে সরকারি প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা (এনজিও) ও আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানে কাজের অনেক সুযোগ আছে। দেশের প্রতিটি থানা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে জনস্বাস্থ্যবিষয়ক কর্মকর্তা হিসেবে কাজ করার সুযোগ তৈরি হচ্ছে। বেসরকারি হাসপাতাল ব্যবস্থাপনায়ও ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। কাজ করা যায় বিভিন্ন গবেষণামূলক প্রতিষ্ঠানেও। এমপিএইচ পড়া একজন জনস্বাস্থ্যকর্মী গবেষক, কর্মসূচি পরামর্শক, প্রশিক্ষক, দুর্যোগ ব্যবস্থাপক, ক্লিনিক্যাল রিসার্চ ব্যবস্থাপক, স্বাস্থ্য প্রকল্প ব্যবস্থাপক, মনিটরিং ও মূল্যায়ন কর্মকর্তা ও পরিচালক এসব পদে কাজ করতে পারেন।

ভর্তির যোগ্যতা ও প্রক্রিয়া:

এমপিএইচ শিক্ষা কার্যক্রম শুধুই এমবিবিএস ডিগ্রিধারীদের জন্য নয়। এমবিবিএস ছাড়াও আপনার যদি লাইফ সায়েন্স, মেডিসিন, নার্সিং, পাবলিক হেলথ, সমাজবিজ্ঞান প্রভৃতি বিষয়ে স্নাতক বা স্নাতকোত্তর ডিগ্রি থাকে, তবে আপনি সহজেই আবেদন করতে পারেন এখানে ভর্তির জন্য। শুধু প্রয়োজন হবে ইংরেজি ও গণিত বিষয়ে দক্ষতা। সেখান থেকে লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষার মাধ্যমে সীমিতসংখ্যক শিক্ষার্থীকে ভর্তির জন্য মনোনীত করা হয়। তবে স্বাস্থ্য বা অন্যান্য সামাজিক ক্ষেত্রে কমপক্ষে এক বছরের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন আবেদনকারীরা অগ্রাধিকার দেওয়া হয়।

কোথায় পড়বেন:

ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি : বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে দেশের অন্যতম সেরা বিশ্ববিদ্যালয় ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি । ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে এই বিষয়ে পড়ার সুযোগ রয়েছে। ভর্তি সংক্রান্ত বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব ওয়েবসাইটে http://daffodilvarsity.edu.bd । ইমেইল : info@daffodilvarsity.edu.bd । যোগাযোগ : ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, ১০২, শুক্রাবাদ, মিরপুর রোড, ধানমন্ডি, ঢাকা-১২০৭ এই ঠিকানায় যোগাযোগ করতে হবে। প্রয়োজনীয় টেলিফোন নাম্বার সমূহঃ ৯১৩৮২৩৪-৫, ৯১১৬৭৭৪, ৮১৩০৮৬৪, মোবাইলঃ ০১৭১৩৪৯৩০৫০-১, ০১৮১১৪৫৮৮৭৮ ফ্যাক্সঃ ৮৮-০২-৯১৩১৯৪৭।

সূত্র : প্রথম আলো, কালের কণ্ঠ, সংবাদfavicon59

Sharing is caring!

Leave a Comment