প্রকৌশলে কেন পড়ব

প্রকৌশলে কেন পড়ব

  • মারুফ ইসলাম

উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা শেষ। দুমাস বাদেই বেরুবে ফল। তারপরই স্নাতক পড়ার জন্য সেরা বিষয় খুঁজে নেওয়ার পালা। তো কোন বিষয়ে পড়বেন আপনি তা ভাবতে হবে এখন থেকেই। কারণ এরসঙ্গে জড়িয়ে আছে আপনার ভবিষ্যৎ জীবনের ক্যারিয়ার।বিভিন্ন সংবাদপত্রের প্রতিবেদন বলছে, এখন চাকরির বাজারে বিজ্ঞান কিংবা প্রযুক্তি পড়ুয়া স্নাতকদের চাহিদাই বেশি।  সুতরাং আপনি যদি বিজ্ঞানের শিক্ষার্থী হয়ে থাকেন তবে স্নাতক পর্যায়ে পড়তে পারেন প্রকৌশলে। দেশের বেশিরভাগ পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রকৌশল বিষয়ে পড়ানো হয়।

কেন পড়ব প্রকৌশলে

রাইসা বিনতে আনোয়ার পড়ছেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পুরকৌশল বিভাগে। তাঁর কাছে জানতে চেয়েছিলাম, কেন পড়ছেন প্রকৌশলে? তিনি উত্তর দিলেন, ‘সোজা হিসাব-চাকরির সুযোগ বেশি।’ শুধু কী এই একটি কারণেই প্রকৌশলে পড়ছেন? পাল্টা প্রশ্ন করি। তখন মৃদু হেসে রাইসা বলেন, ‘শুধু চাকরির নিশ্চয়তার জন্যই প্রকৌশলে পড়ছি, তা নয়। প্রকৌশলে পড়ার একটা আনন্দ আছে।’

রাইসার মতো অনেক তরুণ-তরুণী এখন প্রকৌশলে পড়ছেন। বিভিন্ন বিষয় এখনকার তরুণ শিক্ষার্থীদের প্রকৌশল বিষয়ে পড়তে আগ্রহী করে তুলছে। যেমন:

প্রকৌশলীরা নতুন কিছু করতে পারে

শুধু মোটা অঙ্কের বেতনের জন্যই প্রকৌশলীরা কাজ করেন না, তারা পৃথিবীকে নতুন কিছু দিতে চেষ্টা করেন। এই যে দিন দিন বদলে যাচ্ছে পৃথিবীর চেহারা তার পেছনে বিরাট অবদান আছে প্রকৌশলীদের। স্মার্ট ফোনের কথাই ধরা যাক। এটি আপনার জীবনের একটি প্রয়োজনীয় অনুষঙ্গ হয়ে দাঁড়িয়েছে। অস্বীকার করার উপায় নেই, এটি তৈরি করেছেন একজন প্রকৌশলী। শহর থেকে সড়ক পথে গ্রামের বাড়িতে যাচ্ছেন, পথের মাঝে দেখা দিল নদী। কীভাবে পার হবেন? একটি সেতু আপনার গাড়িকে মুহূর্তে ওপারে নিয়ে যাবে। জানেন তো, এই সেতুর নকশা ও অবকাঠামো তৈরি করেছেন একজন প্রকৌশলী। আপনার যাতায়াতকে কত সহজ করে দিয়েছেন তারা! আপনার চারপাশে এরকম অনেক উদাহরণ ছড়ানো। প্রকৌশলীদের হতে হয় কঠোর পরিশ্রমী ও দক্ষ।

প্রকৌশল হতে পারে নিছক মজা!

প্রকৌশল এমন একটি বিষয় যা আপনার কৌতুহলী মনকে আরও কৌতুহলী করে তোলে। আপনার সকল পরিশ্রম, ক্লান্তি, অবসাদ আনন্দে পরিণত হয় যখন আপনি সফলভাবে কিছু একটা তৈরি করতে পারেন। প্রকৌশলে পড়াশোনা মানে যন্ত্রের কলাকৌশল আয়ত্ব করা। ব্যবহারিক ক্লাসগুলোতে যখন আপনি বিভিন্ন যন্ত্রের অভ্যন্তরীণ কলাকৌশল সম্পর্কে জানবেন তখন এক অদ্ভূত আনন্দে ভরে উঠবে আপনার মন।

উচ্চতরশিক্ষার সুযোগ

প্রকৌশলীদের জন্য উচ্চতরশিক্ষার দ্বার খোলা রয়েছে বিশ্বব্যাপী। স্নাতক শেষ করার পর যে কেউ ইচ্ছে করলে উচ্চতর শিক্ষা নিতে পারেন। স্নাতকোত্তর পর্যায়ে রয়েছে ন্যানোটেকনোলজি, মেকাট্রনিক্স এবং রোবটিক্সের মতো চাহিদা সম্পন্ন বিষয় যা আপনার ভবিষ্যৎকেই বদলে দেবে।

engineering_02

গবেষণাধর্মী কাজের সুযোগ

প্রকৌশলের মৌল বিষয় নিয়ে গবেষণা করা সুযোগ রয়েছে প্রকৌশলীদের। বিজ্ঞানীরা যেসব তত্ত্ব দিয়েছেন সেসবের বাস্তব প্রয়োগ ঘটান প্রকৌশলীরা। এমনকি অনেক বিজ্ঞানীর তত্ত্ব স্বীকৃতি পেয়েছে কেবল প্রকৌশলীদের শ্রমসাধ্য গবেষণার কারণে। স্নাতক দিয়ে শুরু করে পরবর্তীতে স্নাতকোত্তর ও পিএইচডি পর্যায়ে আপনি গবেষণা কাজ করতে পারবেন। আপনি যদি চান আপনার কারিগরি জ্ঞান দিয়ে সমাজকে বদলে দিতে, তবে প্রকৌশল বিষয়ে পড়াশোনা হতে পারে আপনার সবচেয়ে ভালো প্ল্যাটফর্ম।

মোটা অঙ্কের সম্মানী

বাংলাদেশ যদিও তথ্যপ্রযুক্তিতে এখনো খুব উন্নত নয়; তারমানে এই নয় যে এখানে প্রকৌশলীর চাকরি অপ্রতুল।বরং চাকরির বাজারে প্রকৌশলীর চাহিদা সব সময়ই তুঙ্গে থাকে। বাংলাদেশ ডিজিটাল হচ্ছে। এখানকার প্রযুক্তির ক্ষেত্র বিস্তৃত হচ্ছে। সুতরাং প্রকৌশলীর চাহিদাও বাড়ছে। বলার অপেক্ষাই রাখে না, এটি একটি অত্যন্ত সম্মানজনক পেশা এবং এ পেশায় আর্থিকভাবে মোটা অঙ্কের সম্মানী পাওয়া যায়।

পেশা বদলের সুযোগ

engineering_01প্রকৌশলীরা চাইলেই পেশা পরিবর্তন করতে পারেন। ইদানিং অনেক প্রকৌশলী সাপ্লাই চেইন ম্যানেজমেন্ট, ব্যবস্থাপনা, উন্নয়ন সেক্টর সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে পেশা গড়ছেন। এটা প্রকৌশলীদের পক্ষে সম্ভব, কারণ তারা স্নাতক পর্যায়ে বিভন্ন বিষয়ের ওপর শিক্ষা গ্রহণ করে থাকেন।

সম্মান

বেতনের দিক থেকে প্রাচুর্যতা তো রয়েছেই, সেই সাথে রয়েছে সম্মান। প্রকৌশলীরা সমাজে উচ্চশিক্ষিত হিসেবে বিশেষ সম্মান পেয়ে থাকেন। প্রকৌশলে কেন পড়াশোনা করবেন, এ প্রশ্নের উত্তরে নানা জন নানা মত দিলেও একটা ব্যাপারে সবাই একমত। সেটি হচ্ছে-সম্মান।

প্রতিটি মানুষের উচিত, তার নিজের পছন্দের ওপর ভিত্তি করে পেশা বেছে নেওয়া। যে কাজে আনন্দ পাওয়া যায় সে কাজকেই পেশা হিসেবে গ্রহণ করা উচিত। যেমনটা বলছিলেন ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির কমপিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ থেকে পাশ করা শিক্ষার্থী মেজবাহ উদ্দীন, ‘যদি কারও পদার্থ, রসায়ন, গণিত এবং যন্ত্রপাতি বিষয়ে আগ্রহ থাকে তবে তিনি প্রকৌশল বিষয়ে স্নাতক পড়তে পারেন। শুধু বাবা মায়ের ইচ্ছাতে প্রকৌশলে পড়তে আসা উচিত নয়। কারণ একটা কাজ নিজের ইচ্ছার বিরুদ্ধে খুব বেশি দিন করা যায় না।’

সূত্র : ডেইলি স্টার ও যুগান্তর favicon59

Sharing is caring!

Leave a Comment