তরুণদের পছন্দের বিষয় নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা

তরুণদের পছন্দের বিষয় নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা

  • ক্যারিয়ার ডেস্ক

‘পরিকল্পনাবিদ হিসেবে ভবিষ্যতে শহর কীভাবে গড়ে উঠবে সে বিষয়ের রূপরেখা দিতে পারা যাবে। আবার শহর ও অঞ্চলের মানুষের জীবনযাপন পদ্ধতি, সুযোগ-সুবিধা পরিকল্পিতভাবে নির্ধারণ করে দিতে পারা যায়, এসবের জন্যই এ বিষয়ে পড়তে আসা।’ বলছিলেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের ছাত্র রুবেল।

বাবা-মায়ের খুব ইচ্ছা যেন বড় হয়ে চিকিৎসক হই। কিন্তু এইচএসসি পরীক্ষার পর যখন মেডিকেলে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পেলাম না আব্বু-আম্মুর মন ভেঙে গেল। আবার বুয়েটে ভর্তি পরীক্ষা দিয়েও সুযোগ পেলাম না। কিন্তু ভাগ্যের কাছে হার মানিনি। নিজের মনে বিশ্বাস রেখে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে নগর ও অঞ্চল বিভাগে পরীক্ষা দিলাম। সুযোগ পেয়েই ভর্তি হয়ে গেলাম এই বিভাগে। এটাই ছিল আমার স্বপ্নপূরণে এগিয়ে যাওয়ার শুরু—বলছিলেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের ছাত্রী লিজা।

কেন পড়বেন নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা
যেহেতু বড় বড় কিংবা ছোট শহরগুলো অপরিকল্পিতভাবে ইচ্ছামতো গড়ে উঠছে, বাড়ছে জনবসতি, বাড়ছে যানজট। তাই জনগণের অবস্থার উন্নয়ন এবং তাদের জন্য বাসযোগ্য পরিবেশ গড়ে তোলার লক্ষ্যেই পরিকল্পনাবিদদের উদ্দেশ্য হয়ে থাকে। অর্থনৈতিক ও শহরের আকর্ষণে অনেক মানুষ অভিবাসিত হয়ে চলে আসছে নগরে। ফলে সৃষ্টি হচ্ছে নাগরিক সমস্যার। নগর ও গ্রামে জনগণের সুযোগ-সুবিধা, বিনোদনসহ সব ধরনের সুবিধা পরিকল্পিত উপায়ে করা যায়, যাতে জনগণ সুষ্ঠুভাবে বাস করতে পারে। এসব কারণেই এ বিষয়ে পড়ার প্রয়োজন বলে মনে করেন অধ্যাপক সারওয়ার জাহান।

কোথায় পড়বেন
বাংলাদেশে সর্বপ্রথম ১৯৬৯ সালে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতকোত্তর পর্যায়ে নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিষয়টি চালু হয়। পরে ১৯৯১ সালে সর্বপ্রথম খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে নগর ও গ্রামীণ পরিকল্পনা ডিসিপ্লিন স্নাতক পর্যায়ে প্রোগ্রাম চালু হয়। ১৯৯৬ সালে বুয়েটে স্নাতক পর্যায়ে চালু হয়েছে। আর ২০০০ সালে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক পর্যায়ে চালু হয় এবং অতি সম্প্রতি স্নাতকোত্তর পর্যায় চালু হয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে চট্টগ্রাম ইউনিভার্সিটি অব ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি (চুয়েটে) নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগ যাত্রা শুরু করেছে।

যা পড়ানো হয়
চার বছরের অনার্স কোর্সে পরিকল্পনাবিদদের কমিউনিকেশন স্কিল, অ্যানালিটিক্যাল স্কিলস, কম্পিউটার স্কিলস, জিআইএস স্কিলস, আরবান প্ল্যানিং, হাউজিং অ্যান্ড কমিউনিটি ডেভেলপমেন্ট, রিজিওনাল প্ল্যানিং, রুরাল প্ল্যানিং, ট্রান্সপোর্টেশন প্ল্যানিং, এনভায়রনমেন্ট প্ল্যানিং অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট, ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট, প্রজেক্ট ইভ্যালুশন অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট এসব বিষয়ে প্রাধান্য দিয়ে এ চারটি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ানো হয়ে থাকে। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আরও ভিন্ন ভিন্ন কোর্স পড়ানো হচ্ছে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে চার বছর মেয়াদি আট সেমিস্টার প্রোগ্রামে ১৫৬ ক্রেডিট পড়ানো হয়।

কর্মক্ষেত্রে সুযোগ
দেশের নগর পরিকল্পনাবিদদের জন্য রয়েছে জাতীয় পেশাজীবী সংগঠন বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্স (বিআইপি)। পেশাজীবী সংগঠন হিসেবে বিআইপি পরিকল্পনা শিক্ষার বিস্তৃতি, সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে গবেষণাকর্ম পরিচালনাও পেশাগত উৎকর্ষতা বৃদ্ধিসহ পরিকল্পিত নগরের দেশের নগর পরিকল্পনা সম্পর্কিত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও দপ্তরের সঙ্গে পারস্পরিক সহযোগিতার ভিত্তিতে কাজ করে যাচ্ছে। কর্মক্ষেত্রে আসার আগে শিক্ষার্থীদের পেশা হিসেবে নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয় বিআইপি প্রতিষ্ঠান থেকে। এ ছাড়া বিভিন্ন উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, যেমন রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক), চট্টগ্রাম উন্নয়ন অধিদপ্তর (সিডিএ), রাজশাহী উন্নয়ন অধিদপ্তর (আরডিএ), খুলনা উন্নয়ন অধিদপ্তর (কেডিএ) এসব স্থানে চাকরির সুযোগ রয়েছে। আঞ্চলিক পর্যায়ে পৌরসভায় পরিকল্পনাবিদ হিসেবে কাজ করার সুযোগ রয়েছে। এ ছাড়া এলজিইডি, উন্নয়ন, গ্রামীণ পরিকল্পনায় প্ল্যানিং ইস্যু নিয়ে কাজ করে এমন বেসরকারি সংস্থায়, কনসাল্টিং ফার্মে, রিয়েল এস্টেট সেক্টর, জিআইস ফার্মে কাজ করার সুযোগ রয়েছে এ বিষয়ে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের, বলছিলেন পরিকল্পনাবিদ মনোয়ারুল ইসলাম।

সূত্র: প্রথম আলো

Sharing is caring!

Leave a Comment