যোগ্যদের জন্য ভয় নেই

যোগ্যদের জন্য ভয় নেই

  • ক্যারিয়ার ডেস্ক :

চাকরি সম্পর্কে ভয় থাকে অনেকের মধ্যেই। বিশেষ করে যারা পড়ালেখা শেষ করে চাকরি খোঁজার মিশনে নামবে, তাদের মধ্যে এই ভয়টা বেশি কাজ করে। তবে বাস্তবতা হলো, নিজে যথেষ্ট পরিমাণে যোগ্য হলে আর চাকরি নিয়ে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠুন নিজের যোগ্যতায়। তবে প্রফেশনাল হিসেবে নিজেকে গড়ে তুলতে কিছু গুণাবলী ধারণ করা প্রয়োজন নিজের মধ্যে। শিক্ষাজীবন থেকেই সেই অভ্যাস গড়ে তুলতে পারলে তা আপনার জন্য ভালো ফল নিয়ে আসবে। জানাচ্ছেন সানজিদা সুলতানা

শুধু বাংলাদেশ নয় পুরো বিশ্বজুড়েই চাকরি বাজার সংকুচিত হয়ে বেকারত্বের সংখ্যা বাড়ছে। তবে অন্য দেশের তুলনায় আমাদের দেশে বেকারদের সংখ্যা আশংকাজনক হারে বেড়ে যাওয়ার মূল কারণ হচ্ছে এ দেশে যে হারে কর্মক্ষেত্র বাড়ছে, সে হারে কাজের লোক বাড়ছে না। প্রতিবছর বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে হাজার হাজার শিক্ষার্থী অনার্স, মাস্টার্স করে বের হচ্ছে ঠিকই, তবে তাদের নেই নির্দিষ্ট কাজে দক্ষতা। ফলে চাকরির বাজারে খুব একটা সুবিধাও করে উঠতে পারছে না তারা।

চাকরি না পাবার আরেকটি বড় কারণ কাজ করে যোগ্যতার ভিত্তিতে আয়ের মানসিকতা কমে যাওয়া। একজন শিক্ষার্থী যখন পড়াশোনার করে, তখন তার লক্ষ্য থাকে দুইটি। প্রথমত, যে বিষয়ে পড়ালেখা করছে, সে বিষয়টি আত্মস্থ করা। দ্বিতীয়ত, পড়ালেখা করে ভালো ফলাফলের একটি সার্টিফিকেট অর্জন। তবে সাম্প্রতিক সময়ে সার্টিফিকেটনির্ভর শিক্ষার দিকেই ঝুঁকে পড়েছে সবাই। ফলে পড়ালেখার বিষয়ে যতটা না শিখছে, তার চেয়ে বেশি মনোযোগ তারা দিচ্ছে সার্টিফিকেটে। ফলে ভালো ফলাফলের দিকে মনোযোগ বেশি থাকায় শেখার জায়গায় ঘাটতি থেকে যাচ্ছে, পড়ালেখায় চলছে ফাঁকিবাজি। এখন শিক্ষার্থীদের মধ্যে কাজ করে কীভাবে সহজে চাকরি পাওয়া যায়। শুধু তাই নয়, চাকরিতে গিয়েও কাজটা নয়, বরং কী করে কম কাজ করে বেশি উপার্জন করা যায়, কী করে ঘুষ খাওয়া যায়—এসব বিষয়েও এখন মনোযোগী অনেকেই। এসব লোক বেশিদিন কোনো প্রতিষ্ঠানে চাকরিও করতে পারে না।

চাকরিদাতার মূল লক্ষ্য থাকে কোনো একজন কর্মী নিয়োগ করে তার কাছ থেকে সর্বোচ্চ আউটপুট বের করে আনা। কারণ সেই কর্মী আউটপুট না দিতে পারলে সেই প্রতিষ্ঠান চলতে পারবে না এবং প্রতিষ্ঠান অচল হয়ে পড়লে সে তার কর্মীদের বেতনই বা দেবে কীভাবে। কাজেই চাকরিতে যোগ দেওয়া ব্যক্তিটি যদি প্রতিষ্ঠানের দিকে নজর না দিয়ে নিজের লাভই কেবল খুঁজতে চায়, সেটি প্রতিষ্ঠানের জন্য বিপদজনক।

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গ্রন্থগত বিদ্যা শেখানো হয়, বাস্তব শিক্ষা শেখানো হয় না। কাস্টমার কেয়ার, ব্যবস্থাপনা, মার্কেটিং, ম্যানেজমেন্ট-সাইকোলজি শেখানো হয় না। একটি প্রতিষ্ঠানের কর্মীর আচরণ বিধি কেমন হতে হবে তা শেখানো হয় না। আবার দেশের বাজার এবং মার্কেটিং পরিবেশের সাথে পাঠ্য বইতে শেখা বিদ্যার মিল নেই। যে কারণে চাকরি প্রার্থী চাকরি পাওয়ার পর লক্ষ্য করে যে, বই এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে যে শিক্ষা গ্রহণ করেছে তার মধ্যে মিল নেই। এ কারণে কয়েকবছর লেগে যায় প্রতিষ্ঠানের আচরণ বিধি শিখতেই।

আমাদের দেশে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে যেসব শিক্ষার্থী বের হয় তাদের বলা হয় র’হ্যান্ড। এদেরকে কর্মপোযোগী করে গড়ে তোলার জন্য প্রয়োজন বাড়তি শিক্ষা। এই বাড়তি প্রশিক্ষণের জন্যে কোনো প্রশিক্ষণ কেন্দ্র নেই। কিছু ক্ষেত্রে দু’একটি বিশ্ববিদ্যালয় এবং কর্পোরেট হাউজ শিক্ষা শেষে নিয়োগের পূর্বে ইন্টার্নির ব্যবস্থা করে। লক্ষ্য করলে দেখা যাবে ইন্টার্নি শেষে যোগ্য প্রার্থীরা সহজে চাকরি পেয়ে যায়। এ জন্যে শুধু সার্টিফিকেট দিয়ে চাকরি পাওয়ার যুদ্ধে যাওয়ার চেয়ে প্রকৃত কর্মী হয়ে চাকরি পেতে গেলে সহজেই চাকরি হয়ে যায়। যে কারণে প্রতিটা শিক্ষার্থীরই উচিত শিক্ষার সাথে পার্ট টাইম জব করা অথবা শিক্ষা শেষে প্রয়োজনীয় ইন্টার্নি করা।

প্রফেশনাল হতে জরুরি

প্রফেশনাল হিসেবে নিজেকে তৈরি করতে হলে কিছু উপাদান থাকা প্রয়োজন নিজের মধ্যে। এসব উপাদান তুলে ধরা হলো এখানে।

সততা : প্রতিষ্ঠানের প্রতি পূর্ণ মাত্রায় সত্ হতে হবে। অন্যের ব্যক্তিগত তথ্য চুরি বা ব্যক্তিগত তথ্য উদ্ধারের চেষ্টা থেকে সবসময় নিজেকে কঠোরভাবে দমন করতে হবে। সততা থাকতে হবে প্রতিষ্ঠানের সকল বিষয়ে। সত্যবাদী হতে হবে এবং কমিটমেন্ট করলে সেটা যেকোনা মূল্যে রাখার চেষ্টা করতে হবে। প্রতিষ্ঠানের তথ্যকে সংরক্ষণ করতে হবে নিজের দায়িত্ব মনে করে।

দায়িত্বশীলতা : একজন প্রফেশনাল শুধু অফিসের প্রতি এবং তার কাজের প্রতি নয়, প্রতিষ্ঠানের সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীর প্রতি দায়িত্বশীল মনোভাবের হন। মনে রাখতে হবে, প্রতিষ্ঠানের ভালো কিছুর জন্য যেমন ক্রেডিট নেন, তেমনি যেকোনো ভুলের জন্যও দায়িত্ব নিতে হবে।

অন্যের প্রতি সম্মান : অন্যকে সবসময় সম্মান দেখানো প্রফেশনাল হওয়ার একটা অন্যতম চিহ্ন। মানবিকতার একটা ধারায় পড়ে এ গুণটি। ছোট-বড় সকল কর্মসঙ্গীকে সম্মান দেখানো উচিত। এতে তারাও এ আচরণ দেখাবে।

ব্যক্তিগত উন্নয়ন : প্রতিনিয়ত ব্যক্তিগত উন্নয়নের মধ্য দিয়ে প্রতিষ্ঠানের উন্নতি হয়। আর একজন প্রফেশনাল সবসময় ব্যক্তিগত উন্নয়নে সচেষ্ট থাকেন। পড়াশোনা বাড়িয়ে, কাজে বেশি বেশি নিমগ্ন হয়ে অথবা নতুন নতুন কাজ করে এ উন্নয়ন করা সম্ভব। সৃষ্টিশীলতা আর কাজের প্রতি মনোযোগ ব্যক্তি উন্নয়নে সহায়তা করে।

সচেতনতা : সচেতন ব্যক্তির ভুল হয় কম। একজন প্রফেশনালের কাছে ভুল কাজ মোটেও কাম্য নয়। তাই সচেতনতা রক্ষা করে নিজের দক্ষতা আর জ্ঞানের পরিধি বাড়াতে হবে।

নেটওয়ার্ক : প্রফেশনালদের মধ্যে নেটওয়ার্কিং গড়ে তুলতে হবে। কোলাবোরেশন, নেটওয়ার্কিং এবং যোগাযোগ নতুন চিন্তা, নতুন কর্মপন্থা, নতুন সুযোগ তৈরি করে।

সাবমিশন : প্রফেশনালিজমের অন্যতম প্রধান উপাদন হলো প্রতিষ্ঠানের প্রতি সাবমিশন থাকা। আপনার যদি প্রতিষ্ঠানের প্রতি নিষ্ঠা আর নিজেকে সম্পূর্ণভাবে প্রয়োগের মনোভাব না থাকে তাহলে প্রতিষ্ঠানও আপনার কাজকে স্বীকৃতি দেবে না। পরিপূর্ণরূপে নিজেকে প্রতিষ্ঠানের জন্য নিবেদন করে প্রফেশনাল হওয়ার প্রথম ধাপ অতিক্রম করতে হবে।

আমাদের দেশে প্রফেশনালিজমের চর্চা খুব একটা নেই। তবে সময়ের সাথে এগিয়ে যেতে হলে এটা থাকা প্রয়োজন। কাজেই ভালো ক্যারিয়ার গড়ে তুলতে হলে এখন থেকেই শুরু করে দিন অভ্যাস। favicon59

Sharing is caring!

Leave a Comment