লক্ষ্য যখন ডাক্তার হওয়া

লক্ষ্য যখন ডাক্তার হওয়া

  • ক্যারিয়ার ডেস্ক :

ছাত্রাবস্থায় একটি প্রশ্নের মুখোমুখি অনেককেই হতে হয়। বড় হয়ে কী হতে চাও? ডাক্তার না ইঞ্জিনিয়ার? মানুষের সহজাত স্বভাব হলো নিজেকে নিয়ে স্বপ্ন দেখা। শিক্ষার্থীরাও এর বাইরে নয়। তাদের মধ্যে বড় হওয়ার স্বপ্নবীজ বুনে দেন মা-বাবা অথবা শিক্ষাগুরু। শিক্ষার্থীরা যত বড় হতে থাকে তত স্বপ্ন দানা বাঁধতে থাকে। মূলত এর শুরু এসএসসি পাসের পর। এরপর এইচএসসি পাস করে স্বপ্নের কাছাকাছি ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার পালা। আর্টস বা কমার্সের শিক্ষার্থী হলে অবশ্য ভিন্ন কথা। চিকিৎসক হওয়া মানেই সুনিশ্চিত ভবিষ্যৎ। এ পেশায় মানুষকে সরাসরি সেরা করা যায়। তাই অনেকেই ডাক্তার হতে চান। তাছাড়া প্রায় সব পিতা-মাতারই স্বপ্ন থাকে সন্তান বড় হয়ে ডাক্তার হবে। এ মহান পেশার মাদ্যমে মানুষের আবেগকে সহজভাবে বোঝা যায়। মৃত্যু পথযাত্রী একজন মানুষকে সুচিকিৎসা প্রদানের মাধ্যমে সুস্থ ও আলোকিত জীবন ফিরিয়ে দেয়ার চেয়ে বড় আর কিছু হতে পারে না। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়, প্রকৌশল ও কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় এবং সবচেয়ে বেশি প্রতিযোগিতা হবে মেডিক্যালে। যেহেতু পেশা হিসাবে ডাক্তারের চাহিদা খুবই বেশি সেজন্য প্রতিযোগিতা হয় তীব্র।


এবারের ভর্তি পরীক্ষা সেপ্টেম্বর মাসে অনুষ্ঠিত হবে। সারা দেশে একযোগে এ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকে যারা বিজ্ঞান বিভাগ থেকে উত্তীর্ণ হয়েছে তারাই ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবে। তবে আবেদনকারীর জীববিজ্ঞান থাকা আবশ্যক। আবেদনের ক্ষেত্রে যথাযথভাবে ফর্ম পূরণ করা বিশেষভাবে জরুরি। ফর্ম পূরণে ভুল হলে আবেদন বাতিল বলে গণ্য হবে।

সরকারি-বেসরকারি মেডিকেল ও ডেন্টাল কলেজে ভর্তির শর্ত শিথিল করেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। চলতি বছর মোট ১২০ নম্বর পেলেই শিক্ষার্থীরা ভর্তির সুযোগ পাবেন। তবে ১০০ নম্বরের লিখিত ভর্তি পরীক্ষায় বাধ্যতামূলকভাবে ৪০ নম্বর পেতেই হবে। গত বছর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় মোট ২০০ নম্বরের মধ্যে (এসএসসি ও এইচসি পরীক্ষার প্রাপ্ত মোট নম্বরের ওপর ১০০ ও ভর্তি পরীক্ষা ১০০) ভর্তি পরীক্ষায় ৪০ নম্বরসহ মোট ১৪০ নম্বর পাওয়ার বাধ্যবাধকতা বেঁধে দিয়েছিল।  ভর্তি পরীক্ষার মোট নম্বর ২০০। ১০০ নম্বর এমসিকিউ পদ্ধতিতে লিখিত পরীক্ষা এবং বাকি ১০০ নম্বর এইচএসসির জিপিএর ৮ গুণ, এসএসসির জিপিএ’র ১২ গুণ যোগ করে মোট  নম্বর । এমসিকিউ পরীক্ষার বিষয়ওয়ারী নম্বর যথাক্রমে- উদ্ভিদবিদ্যা, প্রাণিবিদ্যা ও ইংরেজিতে ১৫ করে, পদার্থবিদ্যা-২০, রসায়ন-২৫, সাধারণ জ্ঞান-১০, মোট ১০০ নম্বর।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর গত দুই বছর ভর্তি পরীক্ষা পরিচালনা করছে। নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্নে পরীক্ষা হবে ১০০ নম্বরের। চারটি ভুল উত্তরের জন্য এক নম্বর করে কাটা হবে। পরীক্ষায় জিপিএ-৮ পেতে হবে তবে কোনো পরীক্ষায় তিন দশমিক পাঁচ এর কম হলে আবেদনের যোগ্য হবেন না। সকল উপজাতীয় ও পার্বত্য এলাকার অউপজাতীয় প্রার্থীদের ক্ষেত্রে এসএসসিও এইচএসসি পরীক্ষায় মোট জিপিএ-৭ থাকতে হবে। এককভাবে কোনো পরীক্ষায় তিন এর কম পেলে চলবে না। লিখিত পরীক্ষায় প্রতিটি ভুল উত্তরের জন্য দশমিক ২৫ নম্বর কর্তন করা হবে।

ভর্তির যোগ্যতা
স্বাধীনতার আগে দেশের মেডিকেল কলেজগুলোয় কোনো ভর্তি পরীক্ষা ছিল না। ভর্তি পরীক্ষা নেয়া শুরু হয় ১৯৮০-এর দশকে। এরপর অনেকদিন যাবত কেবল সরকারি মেডিকেলে ভর্তির জন্যই ভর্তি পরীক্ষা আয়োজন করত সরকার। কয়েক বছর আগে সরকারি- বেসরকারি মেডিক্যাল এবং ডেন্টাল কলেজে শিক্ষার্থী ভর্তিতে কেন্দ্রীয়ভাবে পরীক্ষার আয়োজন করছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। স্বাস্থ্য অধিদফতর সূত্র থেকে জানা যায়, সরকারি-বেসরকারি মেডিক্যাল ও ডেন্টাল কলেজ মিলিয়ে ২৯ টি সরকারি মেডিক্যাল কলেজে আসন সংখ্যা ৩ হাজার ১৬২টি এবং ৯টি ডেন্টাল কলেজে আসন সংখ্যা ৫৩২টি। বেসরকারি ৫৫টি মেডিক্যাল ও ১৮টি ডেন্টাল কলেজের মোট আসন সংখ্যা ৫ হাজার ৯০০টি।

আবেদন করবেন যেভাবে
এবারও ভর্তি ফরম ও পরীক্ষার ফি টেলিটক মোবাইল সংযোগের মাধ্যমে দেওয়া যাবে। ভর্তির তথ্য-নির্দেশিকাসহ ফরম পাওয়া যাবে অনলাইনে। ভর্তি বিজ্ঞপ্তির বিস্তারিত পাবেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে  http:/ww/w.dghs.gov.bd।  আবেদন করতে চাইলে http://dghs.teletalk.com.bd  ওয়েবসাইটে প্রবেশের পর দিকনির্দেশনা অনুসারে প্রয়োজনীয় তথ্য পূরণ করে জমা দেওয়ার কাজ শেষ করতে হবে।

চিকিৎসা বিজ্ঞানে উচ্চতর ডিগ্রি
বর্তমানে চিকিৎসাবিজ্হানে বিশেষায়িত যুগ চলছে। এ ছাড়া পেশাগত দক্ষতা বাড়ানোর জন্য সব শিক্ষার্থীই উচ্চতর ডিগ্রি নিতে চান। মেডিক্যালে ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য কিছু দিক নির্দেশনা-

মূল বইয়ের ওপর গুরুত্ব দিতে হবে
মেডিক্যালের প্রশ্নগুলো মূলত বই থেকেই করা হয়ে থাকে। তাই মূল বইয়ের কোনো বিকল্প নেই। তবে বিভিন্ন আঙ্গিকে এ প্রশ্ন হয়। প্রত্যেক বিষয়ে একটি করে মূল বই প্রথম থেকেই নির্বাচন করতে হবে এবং সে বইয়ের প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত গুরুত্ব সহকারে পড়তে হবে। মনে রাখার জন্য একই পড়া বার বার পড়তে হবে।

যে বিষয়টি মনে রাখতে হবে
মেডিক্যালে যে সকল শিক্ষার্থী ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে মূলত তারা সবাই মেধাবী। তবে যারা শুরু থেকেই সময়ের অপচয় না করে, কঠোর অধ্যবসায়, শ্রম এবং আতত্মবিশ্বাস রেখে পড়ালেখা চালিয়ে যায়, তারা কখনো ব্যর্থ হয় না। মেডিক্যালে ভর্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিকের বিজ্ঞান বিষয়গুলো পুঙ্খানুপুঙ্খরূপে পড়তে হবে। আবশ্যিক বিষয়ে ভালো নম্বর তোলার জন্য মৌলিক বিষয়গুলো সম্পর্কে পূর্ণাঙ্গ ধারনা থাকতে হবে। ইতোপূর্বে অনুষ্ঠিত ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র সংগ্রহ করে স্পষ্ট ধারনা নিয়েও প্রস্তুতিকে যথার্থ রূপ দেয়া যায়। যারা কেবল আত্মবিশ্বাসী আর নিজের মেধাকে সময়মতো কাজে লাগাতে পারে তারাই টিকে থাকে ভর্তিযুদ্ধে। মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি পরীক্ষা বেশ প্রতিযোগিতাপূর্ণ, প্রশ্নও টেকনিক্যাল হয়ে থাকে তাই ব্যতিক্রমী অনুশীলনের মাধ্যমে প্রস্তুতির বিষয়গুলোকে আয়ত্ত করতে হয়। কেবল আত্মবিশ্বাস আর যথাযথ অনুশীলনের মাধ্যমে মেডিক্যালে ভর্তির সুযোগ পাওয়া সম্ভব, ফলাফল যতই ভালো হোক না কেনো পরীক্ষার পূর্বমুহূর্ত পর্যন্ত নিজের প্রস্তুতিকে ধরে রাখতে হবে। তা না হলে পিছিয়ে পড়ার সম্ভাবনা বেশি। যারা মেডিক্যালে ভর্তি হয়ে ভবিষ্যতে ডাক্তার হিসেবে নিজেদের দেখতে চান এখন থেকেই ভালোভাবে প্রস্তুতি শুরু করুন। খেয়াল রাখতে হবে আপনার প্রস্তুতি কখনই যেনো অন্যদের তুলনায় কম না হয়। শুধু ভাবলেই চলবে না সেই অনুসারে কাজও করতে হবে। এবছর ভর্তি প্রতিযোগিতা পূর্বের বছরগুলোর চেয়ে আরো বাড়বে। তবে হতাশার কিছু নেই। শেষ সময়ে যথাযথ অধ্যবসায়ী ও নিষ্ঠাবান হলে শত ভিড়েও সাফল্য সম্ভব।

সময়কে কাজে লাগান
সাফল্যের চাবিকাঠি সময়ানুবর্তিতা। প্রস্তুতির জন্য প্রতিটি মুহূর্ত যেন ফলপ্রসূ হয় সেদিকে নজর দিতে হবে। মেডিক্যালে ভর্তির জন্য কতক্ষণ পড়তে হবে সেই বিষয়ে ধরাবাঁধা কোনো নিয়ম নেই। তাই পাঠ্যবিষয় অনুযায়ী সময় বণ্টন করে নিতে হবে। কেবল সময় ব্যয় করলে চলবে না সব বিষয়কে সমান গুরুত্ব দিয়ে পড়তে হবে। যতটুকু সময় পড়বে তা যেন মনোযোগের সঙ্গে হয়। পুরনো পড়াগুলো রিভাইজ দিতে হবে। প্রয়োজনে রুটিন করে নিতে হবে। প্রতিটি পড়া রুটিন অনুসারে পড়তে হবে।

বিষয়ভিত্তিক প্রস্তুতি
মেডিক্যাল ভর্তি পরীক্ষায় টেক্সট বই থেকে অনেক প্রশ্ন করা হয়। পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন, জীববিজ্ঞান থেকে এই প্রশ্নগুলো করা হয়। এজন্য বইগুলোর প্রথমপত্র ও দ্বিতীয়পত্র সম্পর্কে ধারনাটা পরিষ্কার রাখা জরুরি। টেক্সট বইয়ের বিকল্প নেই। টেক্সট বইয়ের খুঁটিনাটি বিষয় সম্পর্কে ভালো ধারণা থাকা বাঞ্ছনীয়, সময় একদম নষ্ট করা যাবে না। টেক্সট বইয়ের জন্য সময় বেশি বরাদ্দ করতে হবে। পুরনো পড়াগুলো বারবার রিভাইজ দিতে হবে। টেক্সটবইয়ের পাশাপাশি ইংরেজি ও সাধারণ জ্ঞান থেকেও প্রশ্ন করা হয়। অন্যান্য বিষয়ের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ইংরেজি বিষয়কে গুরুত্ব দিতে হবে। কেননা ইংরেজিতে অন্যদের চেয়ে তুলনামূলক ভালো করলে ভর্তিযুদ্ধে নিজের টিকে থাকার সম্ভাবনা অনেক বেড়ে যায়।

জীববিজ্ঞান
প্রাণিবিজ্ঞান থেকেই বেশি প্রশ্ন করা হয়, তাই প্রাণিবিজ্ঞানের মূল বইয়ের সংজ্ঞা, বইয়ের সব ছক, বৈশিষ্ট্য, পার্থক্য খুবই ভালো করে আয়ত্ত করতে হবে। বিশেষ করে মানবদেহ-সম্পর্কিত সব তথ্য ঝালিয়ে নাও বারবার। প্রতিটি তন্ত্র ও প্রক্রিয়ার ওপর পরিষ্কার ধারণা রাখার সঙ্গে সঙ্গে নতুন বইয়ে যে ক্লিনিক্যাল বিষয়গুলো সংযুক্ত করা হয়েছে, সেখান থেকে প্রশ্ন আসার সম্ভাবনা রয়েছে। উদ্ভিদবিজ্ঞানের প্রশ্নগুলো হয়ে থাকে উদ্ভিদের বিভিন্নতা, অণুজীব, জৈবনিক প্রক্রিয়া, অর্থনৈতিকভাবে উপকারী উদ্ভিদ- এসব বিষয়ের ওপর। কোন বিজ্ঞানী কোন মতবাদের জন্য বিখ্যাত, কোন সূত্রটি কত সালে আবিষ্কৃত হয়েছে, এসব তথ্য নখদর্পণে থাকতে হবে।

রসায়ন
বিগত বছরের প্রশ্ন পর্যালোচনা করে দেখা যায় রসায়ন দ্বিতীয় পত্র থেকে প্রশ্ন সাধারণত বেশি হয়ে থাকে। কোন বিক্রিয়ার সঙ্গে কোন বিজ্ঞানীর নাম জড়িত, কোনটি উপকারী, আবিষ্কারের সাল সেসব বিষয় খেয়াল রেখো।
জৈব রসায়ন, পরিবেশ রসায়ন, তড়িৎ রসায়ন, মৌলের পর্যাবৃত্ত ধর্ম, ডি ব্লক মৌল, রাসায়নিক বন্ধন ও অর্থনৈতিক রসায়নের বিষয়গুলো গুরুত্ব দিয়ে পড়তে হবে।

পদার্থবিজ্ঞান
পদার্থবিজ্ঞানে পরিচিত সূত্র এবং যেসব সূত্র ব্যবহার করে সহজে ছোট অঙ্ক কষা যায়, সেসব প্রশ্নই দেওয়া হয়। পার্থক্য, একক মান ইত্যাদি যত ছক আছে ভালোভাবে মনে রেখো, চর্চা কোরো। মনে রেখো, পরীক্ষার হলে কিন্তু ক্যালকুলেটর নিয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই।

ইংরেজি
ইংরেজিতে বেশি নম্বর পাওয়ার জন্য Vocabulary  তে ভালো হতে হবে। তাহলে Synonym- antonym নিয়ে বাড়তি কষ্ট হবে না। Right forms of verb, tense, parts of speech  থেকে প্রতিবছরই প্রশ্ন করা হয়। Narration, voice, phrases and idioms,  preposition নিয়ে একটু বাড়তি মনোযোগ দিন।

সাধারণ জ্ঞানের জন্য প্রস্তুতি 
কোথায় কখন কী ঘটছে এসব সাম্প্রতিক বিষয়ের ওপর খোঁজ-খবর রাখতে হবে। রেডিও-টেলিভিশনের খবর শুনতে হবে নিয়মিত। সাধারণ জ্ঞানে ভালো করার জন্য বাজারে প্রচলিত বিভিন্ন বইয়ের পাশাপাশি বাংলাপিডিয়া, বাংলাদেশের ইতিহাস ও মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক বই, এনসাইক্লোপিডিয়া ও উইকিপিডিয়ার সহায়তা নেয়া যেতে পারে। দৈনন্দিন বিষয়ে ভালো করার জন্য জাতীয় দৈনিকের গুরুত্বপূর্ণ খবর ও সম্পাদকীয় অংশে চোখ রাখতে হবে। favicon59

Sharing is caring!

Leave a Comment