কম্পিউটারে চাকরির নানা সুযোগ

কম্পিউটারে চাকরির নানা সুযোগ

  • ক্যারিয়ার ডেস্ক

বর্তমান যুগটাই কম্পিউটারের যুগ। এ বিভাগের শিক্ষার্থীদের স্নাতক-স্নাতকোত্তর শেষ করে চাকরির জন্য তেমন একটা ঘুরতে হয় না। তবে শিক্ষার্থীর যোগ্যতা, দক্ষতার কারণে অনেক সময় চাকরিই তাঁকে খুঁজে বের করে। আর চাকরি না করতে চাইলে ফ্রিল্যান্সিং বা ব্যবসায় নেমে প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন অনেকেই।

কাজের ধরন
কম্পিউটার বিজ্ঞানের ছাত্রছাত্রীদের জন্য অনেক রাস্তা খোলা। এ বিভাগ থেকে পাস করা শিক্ষার্থীরা মূলত দুই ভাগে কাজ করেন। কেউ হন প্রোগ্রামার আবার কেউবা নেটওয়ার্ক অ্যাডমিনিস্ট্রেটর। এ দুই ধরনের কাজেই শিক্ষার্থীদের ব্যাপক চাহিদা।
এ ছাড়া আঁকায় দক্ষতা থাকলে গ্রাফিকস বা ওয়েব ডিজাইনারও হতে পারেন। পাশাপাশি আছে ফ্রিল্যান্সিংয়ের সুযোগ। ঘরে বসেই বিষয়ভিত্তিক জ্ঞানের চর্চা করে দেশ-বিদেশের বিভিন্ন কাজ করে দিতে পারেন। নিজেই আরও মানুষের কর্মসংস্থান করে দিতে পারেন।
আর অফিস-আদালতের চাকরি তো আছেই। প্রতিটি ব্যাংক, করপোরেট হাউস, গণমাধ্যমসহ প্রায় সব সরকারি-বেসরকারি অফিসেই প্রয়োজন হয় কম্পিউটারে দক্ষ জনবলের।

দেশ ছাড়িয়ে
বাংলাদেশের কম্পিউটার বিজ্ঞানের শিক্ষার্থীদের ব্যাপক চাহিদা দেশের বাইরে। বিশ্বখ্যাত প্রতিষ্ঠান গুগল গত ৫ জানুয়ারি থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্সেস অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে এক সপ্তাহের একটি কর্মশালা করে। সেখানে ঢাকার আশপাশের কম্পিউটারের শিক্ষার্থীরা অংশ নেন। বেশ কয়েকজনকে সেই কর্মশালা থেকেই চাকরিও দেওয়া হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই বিভাগ থেকে সদ্য স্নাতক শেষ করেছেন, কিন্তু ফল প্রকাশ হয়নি, এমন এক শিক্ষার্থীও গুগলে চাকরি পেয়েছেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্সেস অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান জানান, কম্পিউটার বিজ্ঞানে পড়া শিক্ষার্থীদের চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। গুগলের মতো প্রতিষ্ঠান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রতিবছর এমন কর্মসূচি করে যোগ্য শিক্ষার্থীদের নিয়ে যায়। সরাসরি গুগল, ফেসবুক বা আন্তর্জাতিক মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে কাজ করতে পারার সুযোগ এই বিভাগেই বোধ হয় একমাত্র পাওয়া যায়।
ইতিমধ্যে বাংলাদেশি অনেক ছাত্র এসব নামকরা প্রতিষ্ঠানে নিজেদের আসন করে নিয়েছেন। এ ছাড়া উচ্চশিক্ষার জন্য প্রতিবছর বেশ কিছু শিক্ষার্থী দেশের বাইরে যান। তাঁরাও বেশ ভালো করছেন। সারা বছরই বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় বা কোম্পানি প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতা করে থাকে। এসব প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে নিজেকে প্রমাণের সুযোগ তো থাকছেই। সফটওয়্যার নির্মাণ প্রতিযোগিতাও হচ্ছে, বিশেষ করে মোবাইল সফটওয়্যার তৈরি।

কাজের ক্ষেত্র
এ দেশে মূলত বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোয় কম্পিউটার বিজ্ঞানের শিক্ষার্থীদের চাহিদা রয়েছে। তবে সরকারি অফিসগুলোয় কম্পিউটারে উচ্চতর ডিগ্রিধারীদের নিতে তেমন কোনো আগ্রহ নেই। বাংলাদেশ থেকে গড়ে প্রতিবছর প্রায় আড়াই থেকে তিন শ শিক্ষার্থী বিদেশে যান। তাঁরা প্রত্যেকেই দেশের সম্পদ। তাঁদের যদি সঠিকভাবে ব্যবহার করা যায়, তবে পুরো দেশ বদলে যেতে পারে।
দেশের চাকরিগুলোর বেশির ভাগই শুরুতে সহকারী প্রোগ্রামার, আবার অনেকে সিনিয়র প্রোগ্রামার হিসেবে যোগ দেন। কিছু কিছু জায়গায় সিস্টেমস অ্যানালিস্ট হিসেবেও কাজ হয়। টাইগার আইটি, বাংলাকেট, বেক্সিমকো, ইনফিনিটি, লিডস, দোহাটেক, বিডিকন, ন্যানোসফট, অটোমেশন, বেজ ইত্যাদি প্রতিষ্ঠান প্রতিবছর লোক নিয়ে থাকে।

যোগ্যতা
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান মো. হাসানুজ্জামান জানান, এ বিষয়ে চাকরির ক্ষেত্রে প্রথম শর্তই হচ্ছে ব্যক্তিগত যোগ্যতা। নিজের যোগ্যতা ও দক্ষতার ওপরই নির্ভর করে বেশির ভাগ চাকরি। এখানে একাডেমিক সনদের তেমন কোনো গুরুত্ব নেই। তবে ভালো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের কদর একটু আলাদাই।

নিয়োগ পদ্ধতি
বাংলাদেশে বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলো সাধারণত এক সপ্তাহ থেকে ১৫ দিনের কর্মশালা করে। সেখানে শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন ধরনের পরীক্ষা নেওয়া হয়। পরে সেখান থেকে বাছাই করা শিক্ষার্থীদের নিয়ে যাওয়া হয়। এ ছাড়া কিছু প্রতিষ্ঠান ভারতে পরীক্ষা নেয়। বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের সেখানে গিয়ে পরীক্ষা দিতে হয়।

বেতনকাঠামো
বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলোর বেতন অতি উচ্চ মানের। একাধিক শিক্ষক জানান, বড় বড় প্রতিষ্ঠানের চাকরির শুরুতে বেতন দাঁড়ায় পাঁচ হাজার মার্কিন ডলারে। আর দেশেও ৩৫ থেকে ৪০ হাজার টাকা সর্বনিম্ন বেতন হয়ে থাকে। অনেকেই ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকায় চাকরি শুরু করেন। শুরুতে বেতন অনেকটাই নির্ভর করে শিক্ষার্থীর যোগ্যতা ও তাঁর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ওপর।

সূত্র: প্রথম আলোদলে দলে কাজ

Sharing is caring!

Leave a Comment