লিংকডইনে প্রোফাইল ছবি কেমন হওয়া চাই

লিংকডইনে প্রোফাইল ছবি কেমন হওয়া চাই

  • আ হ ম করিম

লিংকডইন নিয়ে লিখতে হলে পুরো বই লিখতে হবে। তবে এই লেখাটি লিংকডইনে হেডশট বা প্রোফাইল ছবি নিয়ে। তবে তার আগে সাধারণ কিছু কথা বলে নিই।

দেখুন, আপনার লিংকডইনে অল স্টার মার্ক মানে এই নয় যে, আপনার প্রোফাইলটি সঠিক বা আদর্শ মানের। আমার লিংকডইন প্রোফাইলটি প্রথম থেকেই অল স্টার ছিল। কিন্তু আমি যখন লিংকডইন এক্সপার্টকে দেখিয়েছি, তাঁরা আমাকে ডজনেরও বেশি ভুল বের করে দিয়েছেন। এখনো যে একশ ভাগ সঠিক সে কথা হলফ করে বলব না।

সোশ্যাল মিডিয়ার নিয়ে আমার ব্যক্তিগত ও প্রাতিষ্ঠানিক কিছু পড়াশোনা রয়েছে। লিংকডইনে আপনার হেডলাইনটি সঠিক কিনা, সামারিটি আপনার কাজ, লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যকে হাইলাইট করে লেখা হয়েছে কিনা, সেখানে আপনার Bio–টি সঠিকভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে কিনা, আপনার selling ও মার্কেটিং পয়েন্টগুলো সঠিকভাবে নিয়ে আসা হয়েছে কিনা, আবার এক্সপেরিয়েন্স সেকশনে শুধু রেজুমি থেকে কাট পেস্ট করে জব বর্ণনা লিখে দিয়েছেন নাকি আপনার ভিশনকে হাইলাইট করে লেখা হয়েছে—এইরকম অনেক বিষয় একটি লিংকডইন প্রোফাইল তৈরি করার সঙ্গে জড়িয়ে আছে।

উন্নত বিশ্বে যেহেতু ব্যক্তিগত, সামাজিক ও পেশাধারী জীবনে সোশ্যাল মিডিয়ার ব্যাপক প্রভাব, তাই অধিকাংশ প্রতিষ্ঠান তাদের কর্মচারীদের জন্য সোশ্যাল মিডিয়ার ওপর একটি পূর্ণ ট্রেনিং সেশন রাখে। এ ছাড়া স্কুল, কলেজ ও লাইব্রেরিসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানগুলোতে পরিপূর্ণ সার্টিফিকেট কোর্স রয়েছে। সুতরাং তাদের জন্য সঠিকভাবে নিজেদের সোশ্যাল মিডিয়া প্রোফাইল তৈরি ও ব্যবহার সহজ। উন্নয়নশীল দেশগুলোতে সেসব সুবিধাগুলো যেহেতু কম তাই অনেক সময় ইচ্ছা থাকলেও অনেক সময় সঠিকটা করা সম্ভব হয় না।

এবার আসল কথায় আসি, আর সেটা হলো লিংকডইনে হেডশট তথা প্রোফাইল ছবি কেমন হওয়া চাই। লেখাটি লিংকডইনের গাইড লাইন ও এক্সপার্টদের মতামত অনুসারে লেখা হবে। আশা রাখি আপনাদের উপকারে আসবে।

দেখুন, আপনার প্রোফাইলর সর্বপ্রথম যে জিনিসটি মানুষের চোখে পড়ে তা হলো আপনার প্রোফাইল ছবি। আমাকে কেউ যদি লিংকডইন নেটওয়ার্ক অনুরোধ পাঠায় সর্বপ্রথম তার ছবিটির দিকেই নজর যায়। লিংকডইনের একটি গবেষণায় দেখা গেছে, যাঁদের প্রফেশনাল প্রোফাইল ছবি আছে তাঁরা অন্যদের তুলনায় ১৪ গুন বেশি প্রোফাইল ভিউ পায়। সুতরাং, লিংকডিনে প্রোফাইল ছবি অনেক গুরুত্বপূর্ণ। এ জন্য আমি সবাইকে সুপারিশ করি যাতে সবাই লিংকডইনে প্রফেশনাল প্রোফাইল হেডশট ছবি দেন। আমেরিকাতে একটি প্রোফেশনাল হেডশট তুলতে খরচ গড়ে ২০০ থেকে ৪০০ ডলার। আমাদের দেশে অনেক কম খরচে আপনি প্রোফেশনাল হেড শট পেতে পারেন। প্রোফেশনাল হেডশট নেওয়ার আগে আপনার জন্য কয়েকটি টিপস।

প্রথম টিপস

প্রোফাইল ছবির ৬০ ভাগ জায়গা জুড়ে যাতে আপনার মুখমণ্ডল থাকে। আপনার কাঁধ থেকে মাথার ওপরের দিকে ক্রপ করে নিলে হেডশটটি পরিপূর্ণ হবে অর্থাৎ আপনার মুখমণ্ডলটি প্রোফাইল ছবিতে আসবে। মুখে স্বাভাবিক হাসি রাখুন। সবচেয়ে ভালো হেডশট আসে আপনি যদি সোজা দাঁড়িয়ে মুখকে ৩০ ডিগ্রি বাঁকিয়ে একটু উঁচু করে ছবি তোলেন। একজন প্রোফেশনাল ফটোগ্রাফার আপনাকে প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দিতে পারবেন। অনেকে তাদের পূর্ণ ছবি বা অর্ধেক ছবি হেডশট হিসেবে দিয়ে থাকেন যা আসলে পেশাদারি নয়।

দ্বিতীয় টিপস

আপনার অভিব্যক্তি সঠিক করুন। একজন এক্সপার্ট বলেন, আপনি আপনার চোখ দিয়ে হাসুন। অর্থাৎ আপনার হাসিটি যেন চোখে মুখের অভিব্যক্তিতে ফুটে ওঠে। এমনটি নয় যেন আপনার তাকানো too serious অথবা অস্বাভাবিক।

তৃতীয় টিপস

পোশাক পরিধানের ক্ষেত্রে স্যুট–টাই পরতে হবে এমনটি নয়। আর পরলে তো অবশ্যই ভালো। আপনি সাধারণত যে পোশাকে অফিসে যান ও কাজ করেন, সে পোশাকেই হেডশট নিতে পারেন। পোশাক যাতে কুঁচকানো, মোড়ানো না থাকে, পোশাকের রং যেন ব্যাকগ্রাউন্ডের রঙের সঙ্গে মিলে না যায়। আপনি যদি কন্ট্রাস্ট করে স্যুট–জ্যাকেট না পরেন তবে সাদা শার্ট না পরাই ভালো।

চতুর্থ টিপস

ব্যাকগ্রাউন্ডে এমন কিছু না থাকে যাতে দর্শকের দৃষ্টি আপনার চেহারা থেকে ব্যাকগ্রাউন্ডের দিকে চলে না যায়। এ জন্য খোলা জায়গায় DSLR ক্যামেরা দিয়ে ছবি তোলা ভালো।

পঞ্চম টিপস

আপনার হেডশটটি যেন আপনাকেই বোঝায়। চোখ–মুখের ভঙ্গির কারণে যেন ভিন্ন না বোঝা যায়। আবার অনেক পুরোনো হেডশট প্রোফাইল ছবি হিসেবে না দেওয়াই ভালো। আমি কয়েক মাস আগে একটা মিটআপ ইভেন্টে গিয়েছিলাম। মিটআপ ইভেন্টেগুলোতে সাধারণত ভার্চ্যুয়াল পরিচিত লোকদের সাক্ষাৎ হয়। আমার মিটআপ গ্রুপে একজন ছিলেন, যার ছবি দেখে মনে হয়েছিল ৪০–৪৫ বছরের। কিন্তু বাস্তবে গিয়ে দেখি তিনি ৬৫ ঊর্ধ্ব এক মানুষ। যাঁকে চিনতেই কষ্ট হয়েছিল।

ষষ্ঠ টিপস

স্টুডিও রুমে ছবি না তুলে ন্যাচারাল আলোতে ছবি অনেক ভালো আসে। তবে সরাসরি সূর্যের আলোতে ছবি না তুলে ছায়ায় ছবি তুলতে হবে। মুখে হাত দিয়ে ছবি তুলবেন না। মুখের এক পাশের ছবি তুলবেন না এবং প্রোফাইল ছবি হিসেবে দেবেন না।

নারীদের জন্য কিছু টিপস

*অতিশয় উজ্জ্বল রং এড়িয়ে চলুন। বড় ডিজাইনের বেশি রঙিন কাপড় পরিধান না করাই ভালো।
*পরিচ্ছন্ন ও স্বাভাবিক মেক আপ নিন।
*খুব সাধারণ ও ছোট ধরনের জুয়েলারি ব্যবহার করুন। অনেক জাঁকজমকপূর্ণ জুয়েলারি আপনার মুখ থেকে দৃষ্টি সরিয়ে নিবে।

আশা রাখি একটু হলেও কারও কারও উপকারে আসবে। শুভকামনা সবার জন্য।

সূত্র: প্রথম আলোfavicon59-4

Sharing is caring!

Leave a Comment