ক্যারিয়ারের জন্য দরকার বিশ্লেষণী ক্ষমতা

ক্যারিয়ারের জন্য দরকার বিশ্লেষণী ক্ষমতা

  • সাবিহা বিনতে হাবিব

নিয়োগদাতা প্রতিষ্ঠানগুলো এখন শুধু ভালো রেজাল্টই দেখে না, একইসঙ্গে চাকরিপ্রত্যাশীর কাজের অভিজ্ঞতা ও বিশ্লেষণী ক্ষমতার উপরও গুরুত্ব দেয়। প্রতিষ্ঠানগুলো এমন কর্মীই নিয়োগ দিতে চায় যারা সমস্যা সমাধানে দক্ষ। সুতরাং আপনার বিশ্লেষণী দক্ষতা বাড়াতে হবে। সেটা আসলে কী? বিশ্লেষণী দক্ষতা আপনার ব্যক্তিত্বের সঙ্গে সম্পর্কিত একটি বিশেষ গুণ যা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে উন্নত হয়। বিশ্লেষণী দক্ষতাসম্পন্ন ব্যক্তিরা মনোযোগ দিয়ে তথ্য সংগ্রহ করতে পারেন। তাদের কল্পনাশক্তি হয় প্রখর। আর তারা যেকোনো সমস্যা বিশ্লেষণে সহজাত ক্ষমতা রাখেন। তারা যেকোনো সমস্যার সমাধান অন্যদের চেয়ে দ্রুততম সময়ের মধ্যে করতে পারেন। এর অর্থ হচ্ছে, তারা নতুন ধারনার উদ্ভাবন করতে পারেন এবং যৌক্তিক পদ্ধতিতে সমস্যা বিশ্লেষণ করতে পারেন।

ক্রিটিক্যাল থিংকিং

ক্রিটিক্যাল থিংকাররা যেকোনো সমস্যার বহুমুখী সমাধান বের করতে পারেন। এবং সমাধান বের করতে তারা খুব বেশি সময় ব্যয় করেন না।

গবেষণা

গবেষণা বলতে আমরা বুঝি অনেক তথ্য সংগ্রহ করা এবং সেসব তথ্যের মধ্য থেকে এটা অর্থ খুঁজে বের করা। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, আপনার সহকর্মী কিংবা বন্ধুকে তার চিন্তা-ভাবনা বা আইডিয়া সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করাও হতে পারে একটি গবেষণা। এটা অনলাইন কিংবা অফলাইনে পত্রিকা পড়া কিংবা অর্টিকেল পড়ার সঙ্গেও সম্পৃক্ত। বিশ্লেষণের প্রবণতাই হচ্ছে কোনো সমস্যার সমাধান নিয়ে গবেষণা করা।

যোগাযোগ

সহজভাবে কোনো কাজ সমাধানের অন্যতম চাবিকাঠি হচ্ছে যোগাযোগে দক্ষতা। আপনার বিশ্লেষণী দক্ষতার সঙ্গে যুক্ত রয়েছে সমস্যা সমাধানের বিভিন্ন উপায়।

কৌশলগত চিন্তা

আপনি যদি কোনো ব্যবসায়কে সামনের দিকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য অভিনব আইডিয়া উদ্ভাবন ও বাস্তবায়ন করতে পারেন, তাহলে আপনি একজন স্ট্রাটেজিক থিংকার বা কুশলী চিন্তক। আপনি জানেন, কী উপায়ে ব্যবসার ক্ষতি কমাতে হয় এবং লাভ বাড়াতে হয়।

প্রযুক্তিগত দক্ষতা

চাকরির নিশ্চয়তার জন্য কোনো একটি সুনির্দিষ্ট বিষয়ে দক্ষতা অর্জন করা খুবই জরুরি। এখন সময়টা যেহেতু প্রযুক্তির, তাই প্রযুক্তিগত দক্ষতা অর্জন করাই বুদ্ধিমানের কাজ। প্রযুক্তিগত দক্ষতা হচ্ছে এমন একটি গুণ যা তথ্য প্রযক্তি ও সফটস্কিল ব্যবহার করে অর্জন করা যায়। বর্তমানে যেসব প্রযুক্তিগত দক্ষতা বিশেষভাবে মূল্যবান হয়ে উঠেছে তারমধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে: তথ্য-প্রযুক্তির প্রকল্প ব্যবস্থাপনা, তথ্যসংগ্রহশলা, গ্রাফিক ডিজাইন ইত্যাদি।

কীভাবে আপনার বিশ্লেষণী দক্ষতা উন্নত করবেন?

কর্মজীবনে বিশ্লেষণী দক্ষতার মূল্য অপরিসীম। এই একটি গুণ আপনাকে চাকরিক্ষেত্রে উন্নতির চরম শিখরে পৌঁছে দিতে পারে। আপনি যদি আপনার সিভিতেই আপনার বিশ্লেষণী দক্ষতার বিষয়টি ফুটিয়ে তুলতে পারেন, তাহলে চাকরি পাওয়াও সহজ হবে। তাই আপনার বিশ্লেষণী দক্ষতাকে বাড়িয়ে তুলতে নিচের অভ্যাসগুলো রপ্ত করতে পারেন।

১. নেতৃত্বের চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করুন

নিজের চিন্তা করার পদ্ধতিতে পরিবর্তন আনুন এবং চ্যালেঞ্জ করুন নিজের চিন্তাকে। নিজের অন্তর্দৃষ্টিকে প্রসারিত করুন। সারা বিশ্বের দিকে দৃষ্টি মেলে তাকান এবং তথ্য সংগ্রহ করুন। তথ্যকে বিশ্লেষণ করুন। এর মাধ্যমে আপনার বিশ্লেষণী ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে। পাশাপাশি, আপনি আপনার নিজের সক্ষমতা সম্পর্কে যতটুকু চিন্তা করেন, তার চেয়েও বেশি কাজ করুন। এভাবে নিজেই নিজের সক্ষমতাকে চ্যালেঞ্জ করুন। আপনার চারপাশে যে আর্থসামাজিক অবস্থা বিরাজ করছে, সেই অবস্থার বাইরে পা ফেলুন। ভাবুন, এই আর্থসামাজিক অবস্থাকে অস্বীকার করে আপনি কীভাবে বেড়ে উঠবেন।

২. পাঠ্যসূচিতে বিশ্লেষণী দক্ষতা যুক্ত করুন

নিজেকে একটি জ্ঞানভাণ্ডার হিসেবে তৈরি করুন। পড়াশোনার পরিধি বাড়ান। যতই পড়বেন, ততই শিখবেন। তাহলে আপনার অধীত জ্ঞান কর্মক্ষেত্রে প্রয়োগ করতে পারবেন। কর্মক্ষেত্রে বিভিন্ন সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়, সেসব সমস্যার সমাধান করতে হয় নিজের জ্ঞান ও অভিজ্ঞতার আলোকে। তাই জানার জন্য পড়ুন এবং পড়ার পর যা শিখলেন তা কর্মক্ষেত্রে প্রয়োগ করুন।

৩. চাকরির দক্ষতা উন্নয়নে গুরুত্ব দিন

নিজের দক্ষতা বাড়াতে হলে নিজের দুর্বলতাগুলো আগে খুঁজে বের করতে হয়। নিজের দুর্বলতা সনাক্ত করার জন্য আপনার বিশ্লেষণী ক্ষমতা ব্যবহার করুন। শুধু তাই নয়, প্রতিদিনকার কাজেকর্মে বিশ্লেষণী ক্ষমতা ব্যবহার করুন। যে বিষয়ে নিজেকে দুর্বল মনে করেন, সেই বিষয়ে দক্ষতা বাড়ানোর কৌশলগুলো জেনে নিন গুগলে অনুসন্ধান করে।

৪. পঠিত বিষয় সম্পর্কে জ্ঞান বাড়ান

আপনি যে বিষয়ে গ্রাজুয়েশন সম্পন্ন করেছেন সেই বিষয় সম্পর্কে গভীরভাবে জানুন। বিষয়টি সম্পর্কে জ্ঞান বাড়ান। এটা আমাদের স্বভাবগত প্রবণতা যে, পরীক্ষা পাশের জন্য আমরা যা পড়ি তা সাধারণত পরবর্তীতে ভুলে যাই। কারণ মুখস্ত জিনিস বেশিদিন মস্তিষ্কে থাকে না। এটা এক ধরনের মানসিক প্রতিবন্ধকতা। এই প্রতিবন্ধকতা দূর করতে প্রতিদিন নতুন কিছু শেখার চেষ্টা করুন। নতুন কিছু জানার চেষ্টা করুন। এই শেখা ও জানার বিষয়টিকে অভ্যাসে পরিণত করুন। যেসব বিষয়ে আপনার আগ্রহ, সেসব বিষয় অনলাইনে অনুসন্ধান করুন। আপনার আগ্রহের সেক্টরে যারা বিশেষজ্ঞ তাদের সঙ্গে কথা বলুন।

সূত্র: ডেইলি স্টার

ইংরেজি থেকে অনুবাদ : মারুফ ইসলাম

Sharing is caring!

Leave a Comment