প্রেজেন্টেশনের ৫ পরামর্শ

প্রেজেন্টেশনের ৫ পরামর্শ

  • ক্যারিয়ার ডেস্ক

মাল্টিমিডিয়ারএ যুগে সব কাজই সহজ হয়ে উঠছে অনেক বড় কাজ এখন নিমেষেই করে ফেলা যায় কম্পিউটারের মাধ্যমে শিক্ষা, চাকরি, যোগাযোগ, ব্যবসায়বাণিজ্য ইত্যাদি ক্ষেত্রে কোথায় নেই কম্পিউটারের ভূমিকা কলেজবিশ্ববিদ্যালয়, মিটিংসেমিনার প্রভৃতিতে অনেকের সামনে কোনো বক্তব্য তুলে ধরার দরকার হয়এভাবে কোনো বক্তব্য অন্যের সামনে তুলে ধরাকে বলা হয় প্রেজেন্টেশন বা উপস্থাপন প্রেজেন্টেশন করার পদ্ধতি যদি নিরস হয় তবে যারা বক্তব্য শুনছেন বিরক্ত হয়ে যান তাই বক্তব্য এমনভাবে তুলে ধরতে হবে, যাতে সবাই আগ্রহ নিয়ে বক্তব্য শুনে দেখে এবং প্রেজেন্টেশন শেষে ব্যাপারটি পুরোপুরি উপলব্ধি করতে পারেআকর্ষণীয় প্রেজেন্টেশনের জন্য কিছু বিষয় মাথায় রাখুন:


) সময়ের হিসাব

কোনো বিষয়ে অনেক কিছু জানলে একটা প্রবনতা হলো সবকিছুকে উগরে দেয়া বিশাল লম্বা প্রেজেন্টেশন বানিয়ে। এর অবধারিত পরিণাম হলো সময়ের মধ্যে লেকচার শেষ করতে না পারা, ফলতঃ অনেক কিছু বাদ দিয়ে শেষের দিকে তাড়াহুড়া করে শেষ করা বা শেষ করতেই না পারা

তাই সবার আগের কাজ হলো স্লাইড কয়টা হবে তা ঠিক করা। একটা খুব সহজ ফরমুলা হলো, টাইটেল আর অন্য কিছু লিস্ট মার্কা স্লাইড বাদে অন্য স্লাইডগুলার জন্য স্লাইডপিছু এক বা দুই মিনিট বরাদ্দ করা। অর্থাৎ আপনার সময় যদি ১৫ মিনিট হয়, তাহলে বড়জোর ৮টা স্লাইড বানাবেন। এর বেশি বানালে আপনার স্লাইডগুলাতে তথ্য কমই থাকবে, অথবা আপনি শেষ করতে পারবেন না এই সময়ে

) ছবি কথা বলে

যেকোনো সেমিনারে গেলেই দেখবেন, হাত পা নেড়ে খুব উৎসাহের সাথে প্রেজেন্টার অনেক কিছু বলে যাচ্ছেন। কিছু দর্শক মনোযোগ দিয়ে দেখছে। বাকিরা হাই তুলছে, কয়েকজন ঘুমাচ্ছে। আর বাকিরা ফোন বা কম্পিউটারে মেইল/ফেইসবুক চেক করছে

এর কারণটা কী? কারণটা হলো প্রেজেন্টেশন এতোই বোরিং যে যারা ঘুম ঘুম ভাব ছিলো, তারা ঘুমিয়ে গেছে, আর যারা ছিলো সজাগ, তাদেরও ঘুম ঘুম ভাব হয়েছে

বোরিং হয় কখন? যখন স্লাইড ভর্তি করে একগাদা লেখা দিয়ে দেন, আর তার পর রিডিং পড়তে থাকেন। এটা খুব কমন একটা ঘটনা, বিশেষত নতুন নতুন করে যারা প্রেজেন্টেশন বানান, তারা এই কাজটা করেন

থামুন! একটু ভেবে দেখুন লেকচার কেনো মানুষ দেখতে গেছে। স্ক্রিনের লেখাতেই যদি সব ভরে দেয়া যেতো, তাহলে কিন্তু আপনার উপস্থিতিরই দরকার ছিলো না। স্লাইড শো দিলেই হতো। প্রেজেন্টারের উপস্থিতির কারণ হলো লেকচারের বিষয়টা বুঝিয়ে দেয়া, কথা বলে, নিজের ভাষায় সেটা করতে হলে স্লাইডে কথা থাকবে কম, সেই কথাগুলা বলবেন আপনি।তাহলে ইন্টারেস্টিং স্লাইড কীভাবে বানাবেন? প্রতি স্লাইডে একটা ছবি দেন। ডানে ছবি, বামে সেই স্লাইডের বিষয়ের উপরে অল্প কিছু কথা। এর পর স্লাইডটা দেখিয়ে বিস্তারিত ব্যাখ্যা নিজে বলুন

) বাদ দিন গতানুগতিক ফরম্যাট

পাওয়ারপয়েন্টে লেখার বড় সমস্যা হলো, সেই গৎবাধা বুলেট পয়েন্ট মার্কা স্লাইড বানিয়ে ফেলে সবাই। কিন্তু সেটা আসলে আপনার করতেই হবে এমন কিন্তু কথা নাই। নিজের মতো করে লিখুন, বুলেট পয়েন্ট বাদ দিয়ে। এক্ষেত্রে একটা ভালো সাজেশন হলো স্লাইডের টাইটেলে একটা দুইটা শব্দ না লিখে স্লাইডের বর্ণনা দিয়ে বা যা সিদ্ধান্ত উপস্থাপন করা হয়েছে, সেটা লিখুন

ধরা যাক, আপনার স্লাইডে একটা গ্রাফ দেখিয়ে বলছেন, আপনার বানানো সিস্টেম ১০% দ্রুত কাজ করে। এই ক্ষেত্রে স্লাইডের টাইটেল Results না দিয়ে সেখানে এভাবে লিখতে পারেন

Results show that system X works 10% faster

আর বিস্তারিত কথা নিজে মুখে বলুন। এতে করে আপনার স্লাইডের প্রথম অংশ মানে টাইটেল দেখেই সবাই শুরুতেই ধারণা পাবে এই স্লাইডের মোদ্দা কথা কী

) লেখার ফন্ট/স্লাইডের রঙ

নতুন নতুন ওয়েবসাইট বানানো শিখেছে, এমন কারো সাইটে গেলে একটা ব্যাপার দেখবেন অনেক সময়, ক্যাটক্যাটে সব রঙ দিয়ে ভর্তি।

এক্ষুনি থামুন!! অতিরিক্ত বাহারী স্লাইড আসলে আপনার স্লাইডগুলোকেই অপাঠযোগ্য বানিয়ে দিচ্ছে।খেয়াল করুন, স্লাইড কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই দেখানো হবে প্রজেক্টরে। কম্পিউটারের স্ক্রিনে যা দেখছেন, প্রজেক্টরে কিন্তু রঙ বা উজ্জ্বলতা, কোনটাই হবেনা একই রকমের। দিলেন নীল, দেখাচ্ছে সবজেটে, লালকে দেখাচ্ছে কমলা, এরকম হবেই। কাজেই অতিরিক্ত রঙ বাদ দিন। ব্যবহার করুন কেবল বেসিক কালার, যেমন কালো, সাদা, উজ্জ্বল লাল, গাঢ় নীল, গাঢ় সবুজএগুলো। আর খেয়াল রাখবেন, অনেক সময়েই প্রেজেন্টেশন দিবেন দিনের আলোয়, কাজেই এমন যদি ব্যাকগ্রাউন্ড আর ফন্ট কালার দেন, যাতে দিনের আলোয় সেটার কনট্রাস্ট বেশি না, রুমে আলো বেশি থাকলেই ঝাপসা হয়ে যাবে, তাহলে কিন্তু আপনার স্লাইড অনেকেই দেখতে পাবে না। স্লাইডের ব্যাকগ্রাউন্ড ডার্ক, আর ফন্ট সাদা ব্যবহার না করাই ভালো। হলুদ রঙ গায়ে হলুদে বা বাসন্তি অনুষ্ঠানে মানায়, কিন্তু স্লাইডে না, সেটা প্রজেক্টরে প্রজেক্ট করার পরে আদৌ যায়না দেখা

তবে হ্যাঁ, স্লাইডের মধ্যে কোনো শব্দকে নজরে আনতে চাইলে টেক্সট কালার কালো হলেও শব্দটাকে উজ্জ্বল কোনো রঙ করে দিন। স্লাইডের টাইটেল উজ্জ্বল রঙে রাখতে পারেন

) স্লাইডের ফরম্যাট : শেষ হইয়াও হইলোনা শেষ?

আগের পয়েন্টের ধারাবাহিকতায় স্লাইডের ক্রম নিয়ে কিছু বলি। আপনার লেকচারের স্লাইডগুলোর ক্রম বানান অনেকটা এরকম

টাইটেল স্লাইড (আপনার লেকচার টাইটেল, ইন্টারেস্টিং সম্পর্কিত কিছু ছবি, আপনার নাম ধাম পরিচয়, ইমেইল)

ওভারভিউ

লেকচারের বিস্তারিত স্লাইড

উপসংহার

এন্ডিং স্লাইড (এখানে আপনার লেকচারের মোদ্দা কথাটা বা বাক্যে লিখুন। এবংধন্যবাদদিন)

ব্যাকাপ স্লাইড

এন্ডিং স্লাইডে বেশি কিছু না থাকলেও এটা বেশ দরকারী। আপনার লেকচারকে সামারাইজ করে এমন একটা ছবি এবং / বাক্যে লিখুন। আপনার নাম/ইমেইল সেটা দিন। এইখানে এসে থামবেন, কাজেই প্রশ্নোত্তর এর সময়ে এই স্লাইডটাই স্ক্রিনে থাকবে, আর পাঠকের এটাই বেশি মনে থাকবে। কাজেই সময় নিয়ে এটা বানানfavicon59

Sharing is caring!

Leave a Comment