চাকরির যেমন অভাব, যোগ্য প্রার্থীরও অভাব

চাকরির যেমন অভাব, যোগ্য প্রার্থীরও অভাব

  • ক্যারিয়ার ডেস্ক

একাডেমিক পড়াশোনাই যথেষ্ট নয়, চাকরির বাজারের জন্য নিজেকে তৈরি করতে হয়। কথা বলেছেন দেশের অন্যতম শীর্ষ শিল্পপ্রতিষ্ঠান ওয়ালটনের নির্বাহী পরিচালক (পলিসি, এইচআরএম অ্যান্ড অ্যাডমিন) এস এম জাহিদ হাসান।


  • প্রার্থী বাছাইয়ে কী কী বিষয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়?

শিক্ষাগত যোগ্যতা, অভিজ্ঞতা, বয়স দেখা হয়। এ ছাড়া বাচনভঙ্গি, আচরণ ও শারীরিক যোগ্যতা বিশেষ গুরুত্ব পেয়ে থাকে। সমসাময়িক বিষয়ে ভালো ধারণা রাখেন, এমন প্রার্থীরা এগিয়ে থাকেন। এসবের পাশাপাশি দেখা হয় প্রার্থীর ক্রিয়েটিভিটি, লিডারশিপ কোয়ালিটি, দায়িত্ববোধ, সততা, সর্বোপরি আসলেই তিনি কাজটির জন্য উপযুক্ত কি না।

  • বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার সময় থেকেই কি চাকরির প্রস্তুতি শুরু করা উচিত?

বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর একজন প্রার্থীর জীবনের লক্ষ্য মোটামুটি স্থির হয়ে যায়। তাই সে লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য যে ধরনের প্রস্তুতি দরকার, তার সব কিছুই করতে হবে। প্রার্থী যে পেশায় যুক্ত হতে চাচ্ছেন, সে পেশার সফল মানুষদের পরামর্শ নিয়ে ছাত্রাবস্থায়ই প্রস্তুতি শুরু করতে হবে। প্রার্থী যে বিষয়ে পড়াশোনা করছে, তাতে অবশ্যই দখল থাকতে হবে।

  • প্রার্থী কিভাবে নিজেকে তৈরি করবেন?

শিক্ষা ক্ষেত্রে ভালো ফলের পাশাপাশি কাজ শিখে আসার ব্যাপারটাও জরুরি। অভিজ্ঞতা সব সময় একজন প্রার্থীকে অন্যদের থেকে এগিয়ে রাখে। তাই ছোট-বড় যেকোনো পার্টটাইম কাজের সঙ্গে যুক্ত হওয়া উচিত।

  • প্রার্থী কী কী অযোগ্যতার কারণে প্রতিযোগিতা থেকে বাদ পড়তে পারে?

প্রাথমিকভাবে প্রার্থীরা বাদ পড়েন সিভি বাছাইয়ে। এরপর লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায়। তাই সিভি লেখার সময় সতর্ক থাকতে হবে। লিখিত পরীক্ষায় কম নম্বর পেলে প্রার্থী বাদ পড়েন। লিখিত পরীক্ষার জন্য জোর প্রস্তুতি নিতে হবে। এমন নয় যে পরীক্ষার দু-এক দিন আগে বই পড়লেই হবে। এ প্রস্তুতিটা মূলত পুরো শিক্ষাজীবনেই নিতে হবে। পাঠ্যপুস্তকের বাইরে বিভিন্ন বই ও পত্রপত্রিকা পড়তে হবে। সব শেষে ভাইভায় বাদ পড়ে অনেকেই। সাধারণত প্রার্থীর আচরণ ও উপস্থাপনের সক্ষমতা দেখা হয় ভাইভায়। এ ক্ষেত্রে উন্নতির জন্য বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও প্রাতিষ্ঠানিক সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত থাকারও পরামর্শ দেব।

  • ফ্রেশারদের জন্য সুযোগ কেমন?

ফ্রেশারদের কাজের সুযোগ অনেক আছে। ওয়ালটনসহ দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান প্রচুর ফ্রেশার নিয়োগ দিচ্ছে। যেহেতু প্রতিবছর অনেক ফ্রেশার চাকরির বাজারে প্রবেশ করে, তাই নিজেকে অন্য ফ্রেশারদের চেয়ে চৌকশ করে গড়ে তুলতে হবে। পাঠ্যপুস্তকের বাইরেও অনেক কিছু জানতে হবে। অর্থাৎ অন্যদের চেয়ে নিজেকে সেরা প্রমাণ করতে হবে।

  • ইন্টার্নশিপ কতটা এগিয়ে রাখে?

ইন্টার্নশিপের অভিজ্ঞতা চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রেও অনেক এগিয়ে রাখে। অনেক প্রফেশনাল সনদের জন্য ইন্টার্নশিপ বাধ্যতামূলক। গুরুত্ব বুঝেই কারিকুলামে এটা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। ইন্টার্নশিপ একজন প্রার্থীকে চাকরিতে প্রবেশের আগেই চাকরির জন্য প্রস্তুত করে তোলে। ইন্টার্নশিপে শিক্ষার্থীরা হাতে-কলমে শেখার সুযোগ পায়, করপোরেট কালচারের সঙ্গে পরিচিত হয়। পাঠ্যক্রমে বাধ্যবাধকতা না থাকলেও একজন প্রার্থী স্বেচ্ছায় ইন্টার্নশিপ করতে পারেন। অনেক প্রতিষ্ঠান ইন্টার্নশিপের সুযোগ দিয়ে থাকে। সাধারণত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এ বিষয়ে সহযোগিতা করে থাকে। ব্যক্তিগত যোগাযোগের মাধ্যমেও ইন্টার্নশিপ করা যায়।

  • অভিজ্ঞতা গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু চাকরির আগে অভিজ্ঞতার সুযোগ নেই।

অভিজ্ঞতা অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ। চাকরির ক্ষেত্রে মিড ও টপ লেভেলে অভিজ্ঞতা আবশ্যক। কিন্তু এন্ট্রি লেভেলে ততটা গুরুত্বপূর্ণ নয়। এন্ট্রি লেভেলের জন্য যে ধরনের অভিজ্ঞতা প্রয়োজন হয়, তা একজন প্রার্থী খুব সহজেই অর্জন করতে পারেন।

  • সিভি অনেক গুরুত্বপূর্ণ? সিভি তৈরিতে কী কী বিষয় মাথায় রাখবেন?

যেহেতু প্রার্থী বাছাইয়ের শুরুই হয় সিভি দেখে, তাই সিভির গুরুত্ব অনেক। একটি সুন্দর ও নির্ভুল সিভি প্রার্থী সম্পর্কে নিয়োগদাতাকে একটা ভালো ধারণা দেয়। অনেকেই অপ্রয়োজনীয় তথ্য দিয়ে অনেক বড় সিভি বানিয়ে ফেলেন। এটা ঠিক নয়।

সিভির কাগজ থেকে লেখার ফন্ট, ছবি থেকে বানান—সবই গুরুত্বপূর্ণ। একজন প্রার্থীর যোগ্যতা, এক্সট্রা কারিকুলাম অ্যাক্টিভিটিস, পার্সোনাল স্কিল, পার্সোনালিটি—সব কিছুই তুলে ধরে একটি সিভি। সিভিতে থাকা ভুল বাক্য, ভুল বানান কিংবা ভুল তথ্য অযোগ্যতাই প্রমাণ করে। প্রতিষ্ঠানভেদে সিভি ভিন্ন হতে হবে। পদের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে সিভি তৈরি করতে হবে।

  • নিয়োগ প্রক্রিয়ার ধাপগুলো কী কী?

সাধারণত নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর আবেদনপত্র চাওয়া হয়। এরপর সেগুলো বাছাই করে নির্দিষ্টসংখ্যক প্রার্থীকে লিখিত পরীক্ষার জন্য ডাকা হয়। লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের ডাকা হয় ভাইভার জন্য। ভাইভায় উত্তীর্ণরা চূড়ান্ত নিয়োগ পেয়ে থাকেন। এ ছাড়া প্রতিষ্ঠানভেদে আরো কিছু পরীক্ষা নেওয়া হয়। যেমন ওয়ালটনে নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রার্থীকে বেসিক আইটি টেস্টে পাস করতে হয়।

  • বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে লিখিত ও বাছাই পরীক্ষায় কী কী বিষয় দেখা হয়?

সাধারণত প্রশ্ন করা হয় বিষয়ভিত্তিক জ্ঞান, সাধারণ গণিত, বাংলা, ইংরেজি, সমসাময়িক বিশ্ব ও সাধারণ জ্ঞান থেকে। বিষয়ভিত্তিক, মনস্তাত্ত্বিক ও সাধারণ জ্ঞান বিষয়ে বেশি প্রশ্ন থাকে ভাইভায়। প্রার্থীর উপস্থাপন ক্ষমতা, বাচনভঙ্গিও যাচাই করা হয়।

  • চাকরিপ্রার্থীরা বলছেন, চাকরির সুযোগ কম। চাকরিদাতারা বলেন, যোগ্য প্রার্থীর অভাব। এ বিষয়ে কী বলবেন?

দুটি বিষয়ই সঠিক। বাজারে চাকরির যেমন অভাব আছে, অভাব আছে যোগ্য চাকরিপ্রার্থীরও। তবে দিন বদলাচ্ছে। দেশীয় শিল্পের বিকাশের মাধ্যমে নতুন নতুন কর্মক্ষেত্র সৃষ্টি হচ্ছে। তার পরও দক্ষ জনবলের অভাব থেকেই যাচ্ছে।

  • আপনার প্রতিষ্ঠানে কাজের সুযোগ কেমন?

ওয়ালটনে প্রচুর কাজের সুযোগ আছে এবং তা প্রতিবছরই ব্যাপক হারে বাড়ছে। নতুন নতুন প্রজেক্টের জন্য প্রচুর টেকনিক্যাল ও নন-টেকনিক্যাল লোকের চাহিদা সৃষ্টি হচ্ছে। যেখানে আমরা দক্ষ, আধা দক্ষ ও ফ্রেশারদের সুযোগ দিচ্ছি। ওয়ালটনে চাকরির ক্ষেত্রে টেকনিক্যালদের তাত্ত্বিক জ্ঞানের পাশাপাশি হাতে-কলমে কাজ জানা থাকতে হবে। আর নন-টেকনিক্যালদের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে জ্ঞান থাকতে হবে।

  • চাকরিপ্রার্থীদের উদ্দেশে আপনার বিশেষ কোনো পরামর্শ?

পজিটিভ থাকুন আর লক্ষ্য ঠিক রাখুন। এমন মানুষদের সঙ্গে মিশুন, যাঁরা আপনাকে আত্মবিশ্বাসী করে তুলতে পারে, অনুপ্রেরণা জোগাতে পারে। পড়াশোনার পাশাপাশি কোনো কাজ পেলে করার চেষ্টা করুন। কাজের প্রকারভেদ কখনোই ছোট কাজ বড় কাজ নয়। এ অভিজ্ঞতাই হয়তো আপনাকে অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছে দেবে।

সূত্র: কালের কণ্ঠfavicon59

Sharing is caring!

Leave a Comment