সময় ঠিক রেখে সবকিছু

সময় ঠিক রেখে সবকিছু

  • ক্যারিয়ার ডেস্ক

প্রতিদিন ছুটছে পৃথিবী। তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ছুটছে আমাদের জীবনধারা। প্রতিদিনের এই জীবন প্রণালীতে চিহ্ন রেখে যায় গত হয়ে যাওয়া সময়। আগামীর জন্য যে পথ চলা, তাতেও ভূমিকা রেখে চলে সময়। আর বর্তমানের এই যে বয়ান শুনছেন তাতেও কিন্তু গত হয়ে চলছে সময় নামে এক দুরন্ত পথিক। একে বাঁধা যায় না কোনো পিছু টানের মায়ায়। একে ধরা যায় না কোনো অমোঘ শক্তিতে। একে ফ্রেম বন্দি করা যায় না পৃথিবীর সবচেয়ে আধুনিকতম ক্যামেরাটি দিয়েও। কোনো গল্পে সময় কখনও থেমে থাকে না। তবুও সময়কে থামানোর চেষ্টা করতে হয়, সময়কে হাতের মুঠোয় ধরার স্বপ্ন দেখতে হয়, কখনও কখনও সময়কে ভেঙ্গে-চূড়ে সু-সময়ে রূপান্তরিত করতে হয়। এতসব সাফল্যগাঁথা এক বিন্দুতে ফেলতে পারলেই তবেই সময় হয়ে উঠে একান্ত আপন। জীবনের সাফল্য নিশ্চিত করতে প্রতিটি মানুষকেই সময়কে আপন করার চেষ্টা করতে হয়। আর তরুণ বয়সে এই চেষ্টা করার মানসিকতা প্রয়োজন অনেক অনেক বেশি।


একজন তরুণের জীবনের যতো প্রত্যাশা তা প্রাপ্তির শ্রেষ্ঠ বিন্দুতে পরিণত হতে পারে সময়ের সর্বোচ্চ ও যথার্থ ব্যবহারের মাধ্যমে। নিজেকে যথার্থ সময়ে উপস্থাপন করার মধ্য দিয়েও সময়কে নিয়ন্ত্রণ করা যায়। হাতঘড়ির দিকে লক্ষ্য রেখে নয় বরং মনঘড়ির সঙ্গে হিসাব-নিকাষ করে জীবনে সময়কে বেঁধে নেওয়া যায় অদৃশ্য দড়িতে। সময়ের চাকাকে নিয়ন্ত্রণ করার যে মানসিকতা গড়ে তুলতে হয়, তার নাম সময় নিয়ন্ত্রণ বা টাইম ম্যানেজমেন্ট।

সময় নিয়ন্ত্রণ মানেই সময়কে নানানভাবে আপনার মতো করে নিয়ন্ত্রণ করা। যখন যে কাজটি করা প্রয়োজন, তা ঠিকমতো করতে পারলেই কেবল নিয়ন্ত্রণ করা যাবে সময়কে, নতুবা নয়। প্রতিদিনই আমাদের রুটিনবাঁধা জীবনের পাকে পড়ে ঘুরতে হয়। শিক্ষার্থী হলে সেই সকালে উঠে ক্লাস, তারপর হয়ত বিকেলে কোচিং বা প্রাইভেট। আর নিজের পড়া তো রয়েছেই। আবার চাকরিজীবী হলে তো সেই সাত-সকালে ঘুম থেকে উঠে অফিস, তারপর সারাদিনের ক্লান্তি নিয়ে বাসায় ফেরা সন্ধ্যায়। বাসার টুকটাক কাজ করতে গিয়েই রাত। এর বাইরেও তো অনেককিছু করতেই মন চায়। কিন্তু তার সময়টা কোথায়? করার ইচ্ছেটা আবার কোনোভাবেই কম নয়। দু’টি পারস্পরিক মনোজগতকে বিচ্ছিন্ন করে তোলে সময় নামক এক রূঢ় ভিলেন। কখনও কখনও মনে হয় নিজের জন্য, বন্ধু-বান্ধবের জন্য, শখের জন্য কিংবা আড্ডা মজা হৈ চৈ’য়ের জন্য একটুও সময় হাতে থাকছে না। একটি কাজ শেষ করলেই আরেকটি কাজ এসে হাতের কাছে অপেক্ষার প্রহর নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। জীবনের এই ব্যস্ত দোলাচালে সময়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ আর কেউ থাকে না। অথচ একটু চেষ্টা করলেই সময় নামক এই অদৃশ্য দানব হয়ে উঠতে পারে সবার আকাঙ্ক্ষিত বন্ধু।

নিজের সঙ্গে প্রতিদিন যে নিজের বসবাস সেটা কিন্তু নষ্ট করে ফেলে সময়। আজ নয় কাল কিংবা এখন নয় পরে এরকম সিদ্ধান্তের ঘূর্ণিপাকে সময় কিন্তু আর একান্ত নিজের থাকে না, অন্যের হয়ে যায়। সময়ের এই হাতের মুঠো ছেড়ে চলে যাওয়া আপনাকে করে তুলতে পারে সময়হীন এক অচেনা মানুষ। প্রতিদিনের সময় ভাবনাকে খানিকটা গুছিয়ে নিতেই এখানে তুলে ধরা হলো কিছু পরামর্শ, যার মাধ্যমে আপনি সময়কে শুধু শাসন নয় বরং আপনার জীবনের একজন গুরুত্বপূর্ণ সঙ্গী হিসেবে নির্বাচন করতে পারবেন।

প্রথমেই ঠিক করে নিন আগামীদিন আপনার কাজের নির্দিষ্ট কোন বিষয়গুলো সম্পন্ন হওয়া সবচেয়ে জরুরী। সেই কাজটিকে পরবর্তী দিনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ করে তুলুন। এছাড়াও সঙ্গী অন্যান্য কাজকেও অবহেলা করলে চলবে না। বরং সময়কে আরও বেশি যত্ন দিয়ে এই কাজগুলোর জন্যও সময় করে নিতে হবে।

জীবনের নানা মুহূর্তে অলস সময় ঘুরে ফিরে আসে। দিনের প্রতিটি সময়ে এই অলস সময় আপনার কাছে এসে ধরা দিতে পারে। তাকে প্রশ্রয় দেওয়া আপনার কাজ নয়। অর্থাত্ অলস সময়ের দৈর্ঘ্যকে দীর্ঘায়িত করা আর তাকে নিজের আপন সঙ্গী ভেবে নেয়া একই কথা। যারা এ বিষয়টিকে প্রশ্রয় দেন তারাই মনে প্রাণে বিশ্বাস করেন আজকের কাজ কালকে হলেও করা সম্ভব। কিন্তু কালকের কাজ যে কালকে করা সম্ভব নাও হতে পারে এটি অলস সময় অনেক সময়ই ভাবতে দেয় না।

তারুণ্যের মূল অস্ত্র হওয়া উচিত গতি। নিজেকে বেগবান করে তুলতে সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিতে হবে আপনাকেও। আরেকজন সময়কে ব্যবহার করতে পারলে আপনারও তা করতে পারার ক্ষমতা থাকা উচিত। অনেকেই নিজের অক্ষমতাকে ঢাকতে বারবার সময়কে দোষারোপ করেন। মনে রাখতে হবে সময় শিকারি কুকুরের মতো প্রভুভক্ত হয়। তাই তাকে শাসন করাই সাজে, সবসময় আদর করা নয়। যে সময় আপনার কথা শুনে না, তার যথাযোগ্য নিয়ন্ত্রণ করার দায়িত্ব আপনারই। নিজের মনোবিশ্লেষণে জেনে নিন সময় কেন শুধু আপনার প্রতিই বেরহম হয়।

শুধু অফিসের সময় কিংবা স্কুল কলেজে পরীক্ষার সময় সময়কে গুরুত্বপূর্ণ ভাবলে জীবনে অনেক ব্যর্থতা দেখা দেবে। সময়কে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে অনেকেই বোহেমিয়ান হয়ে উঠে। কিন্তু যারা নিয়ম মেনে চলে তারা অনেক ভাল থাকে। আগামীর শক্তি তাদের জন্যই অপেক্ষা করে।

মনে রাখতে হবে জীবনের সময় যেমন কম তেমনি সেকেন্ডের হিসেবে সময়কে হিসেব করাও অগুণিত। তাই সময় নষ্ট করবেন না। প্রতিটি মুহূর্ত মূল্যবান, হিসেব কষে আর জীবনের চাওয়া পাওয়ার বিন্যাসেই সময়কে খরচ করা উচিত। যারা এই জ্ঞানগুলো এতক্ষণ সময় নষ্ট করে গ্রহণ করলেন তাদের ভবিষ্যতে নষ্ট হওয়া সময়ের পরিমাণ কমবে সবচেয়ে বেশি।

এ পক্ষত্রে প্রথমেই জীবনের লক্ষ্য ঠিক করে নেওয়া উচিত। বয়সের যে মুহূর্তেই আপনি থাকেন না কেন আপনি ভবিষ্যতে কি হতে চান কিংবা ভবিষ্যতে আপনার অবস্থান কোথায় হবে তা আপনাকেই ভেবে নিতে হবে। নিজের নির্দিষ্ট প্ল্যান থাকলে ভাল, না থাকলে এখনই ঠিক করে নেয়া উচিত। ক্যারিয়ার গ্রাফ চিন্তা করেই জীবন যাপনের ধারা নিয়ন্ত্রণ করা উচিত। এক্ষেত্রে মা-বাবার পরামর্শ গ্রহণ করার পাশাপাশি আপনার যদি বাড়তি কোনো ইচ্ছে থাকে তবে তাও যথার্থ সময়ে সবার সামনে প্রকাশ করতে হবে। যদি ক্রিকেটার বা নৃত্যশিল্পী হতে চান তবে নিয়মিত একাডেমিক পড়াশোনার পাশাপাশি খেলা বা নাচ এবং নিজের শারীরিক ফিটনেসের উপরও জোর দিতে হবে। মনে রাখতে হবে ভাবনার পাখিরা ইচ্ছে করলেই ডানা মেলতে পারে। তাই বলে নিজের অবস্থা বোঝার চেষ্টা করতে হবে।

সপ্তাহের শুরুতে কিংবা প্রতিদিন নিজের জন্য একটি প্ল্যান রাখা উচিত। হতে পারে তা ডায়রিতে লিখে কিংবা মোবাইল টুডু লিস্টে তা লিপিবদ্ধ করে। শুধু প্ল্যান নয় চেষ্টা করতে হবে এই লিখে নেওয়া জীবন প্রণালীকে যথাসম্ভব ফলো করা। প্রথম দিকে রুটিন মাফিক কাজ করা অসুবিধে হয়ে দাঁড়ায়। পরবর্তীতে সময়কে শাসন করতে তাই মূল অস্ত্র হয়।

সময়ের সঠিক ব্যবহার ছাড়া কখনই নিজের ইচ্ছেমতো কাজ করা যাবে না। তাই সময়টাকেই লাগাম দিয়ে বশে আনতে হবে নিজের। নইলে নিজের সময় আর থাকবে না নিজের দখলেই। favicon59

Sharing is caring!

Leave a Comment