বিনা মূল্যে প্রশিক্ষণ ও চাকরি

বিনা মূল্যে প্রশিক্ষণ ও চাকরি

  • ক্যারিয়ার ডেস্ক

আমাদের সমাজে, বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলের ছেলেমেয়েদের নানা কারণে খুব বেশি দূর লেখাপড়া করা সম্ভব হয় না। শিক্ষা বা প্রশিক্ষণের অভাবে বেশির ভাগ ছেলেমেয়েকে বেকার থাকতে হয়। আবার অনেকেই বিনা প্রশিক্ষণে নেমে পড়ে কঠিন কোনো কাজে। শিক্ষা ও উপযুক্ত প্রশিক্ষণ না থাকায় তাদেরও পিছিয়ে পড়তে হয় ভালো বেতন বা মজুরি থেকে। তবে যাঁরা কোনো হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ নেন, তাঁরা কোনো প্রতিষ্ঠানে ভালো মজুরি বা বেতন পান। এসব বেকার ছেলেমেয়ের হাতে-কলমে বিভিন্ন বিষয়ে বিনা মূল্যে স্বল্পমেয়াদি প্রশিক্ষণ দিয়ে স্বাবলম্বী করে তুলছে স্বনির্ভর বাংলাদেশ। ‘কথা নয়, কাজ’ স্লোগান সামনে রেখে প্রতিষ্ঠানটি ১৯৮৫ সাল থেকে দেশের দারিদ্র্য বিমোচন এবং বেকার যুবক ও যুব মহিলাদের আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে।

এরই ধারাবাহিকতায় প্রতিষ্ঠানটি তাদের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের জন্য বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে ১৯৯২ সাল থেকে বাংলাদেশ সরকারের অর্থ মন্ত্রণালয়ের ‘ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ’-এর আর্থিক সহায়তায় স্বনির্ভর বাংলাদেশ আয়বর্ধনমূলক বিভিন্ন ধরনের স্বল্পমেয়াদি প্রশিক্ষণ কর্মসূচি পরিচালনা করে আসছে। প্রতিষ্ঠানটির ঢাকায় প্রধান কার্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলায় বেকার যুবক ও যুব মহিলাদের বিনা মূল্যে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। প্রতিষ্ঠানটির সহকারী পরিচালক (মানবসম্পদ বিভাগ) সুমন কুমার দে বলেন, সারা দেশের যুবক ও যুব মহিলাদের দক্ষতা উন্নয়নের মাধ্যমে চাকরির সুযোগ বা আয়ের পথ তৈরি করতে সাহায্য করাই এই প্রশিক্ষণ কর্মসূচির মূল উদ্দেশ্য। এই প্রশিক্ষণগুলোর যেকোনো একটি বিষয়ে প্রশিক্ষণ নিলে চাকরি তথা নিজে ব্যবসা করেও ভালো আয় করা যাবে বলে জানান তিনি।

বছরে দুবার জাতীয় পত্রিকা ও প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব ওয়েবসাইটে এই প্রশিক্ষণের বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। ১৩ আগস্ট প্রথম আলোতে প্রথম সার্কেলের প্রশিক্ষণের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে প্রতিষ্ঠানটি। চাইলে আপনিও এই স্বল্পমেয়াদি প্রশিক্ষণ নিয়ে নির্ভরশীলতার হাত থেকে মুক্ত হয়ে নিজেকে চাকরির বাজারে আরও বেশি যোগ্য করে তুলতে পারেন।
প্রতিষ্ঠানটিতে আইটি (গ্রাফিকস, ওয়েব ডিজাইন, প্রোগ্রামিং ইত্যাদি), সেলাই ও পোশাক তৈরি, ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড হাউজওয়্যারিং, মোবাইল ফোন সার্ভিসিং, বেসিক বিউটিফিকেশন এবং পারলার ব্যবস্থাপনা, ফাস্টফুড তৈরি ও সংরক্ষণ এবং ব্লক ও বাটিক প্রিন্ট—এসব বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। এসব প্রশিক্ষণ নিতে হলে প্রার্থীকে ন্যূনতম এসএসসি পাস হতে হবে। তবে আইটি বিষয়ের প্রার্থীদের অবশ্যই ন্যূনতম এইচএসসি বা সমমান পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হবে।

আগ্রহী প্রার্থীদের আবেদন করতে হবে আগামী ৮ সেপ্টেম্বরের মধ্যে। স্বনির্ভর বাংলাদেশের প্রধান কার্যালয়ের মানবসম্পদ বিভাগ অথবা প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব ওয়েবসাইট (www.swanirvarbangladesh.org.bd) এই ঠিকানা থেকে আবেদনপত্র সংগ্রহ করে সরাসরি বা ডাকযোগে চিফ অপারেটিং অফিসার বরাবর অথবা ই-মেইলের (sumandey2040gmail.com) মাধ্যমে আবেদনপত্র পাঠাতে হবে। প্রার্থীদের আবেদনকৃত আবেদনপত্র যাচাই-বাছাইয়ের পর প্রশিক্ষণার্থীদের লিখিত পরীক্ষার জন্য ডাকা হবে। এ ছাড়া প্রার্থীদের শিক্ষাগত যোগ্যতা, পূর্ব অভিজ্ঞতা, আর্থিক সক্ষমতা এবং পারিবারিক ও সামাজিক অবস্থা ইত্যাদি দেখা হবে।

চূড়ান্তভাবে নির্বাচিত প্রার্থীদের দেশের বিভিন্ন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট বা ল্যাবের মাধ্যমে অভিজ্ঞ ও দক্ষ প্রশিক্ষকের মাধ্যমে এসব প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। প্রশিক্ষণের স্থান ও বিষয় অনুযায়ী আবাসিক ও অনাবাসিকের বিষয়টি বিবেচনায় নেওয়া হবে। আবাসিক প্রশিক্ষণার্থীদের থাকা-খাওয়া এবং যাতায়াতের খরচ প্রশিক্ষণ কর্মসূচি থেকে বহন করা হবে। নির্বাচিত প্রার্থীর সংখ্যা বেশি হলে যথাসম্ভব বেশি সংখ্যক প্রার্থীকে প্রশিক্ষণের সুযোগ দেওয়া হবে। স্বনির্ভর সূত্রে জানা গেছে, প্রতি বিষয়ে ন্যূনতম ৩০ থেকে ৪০ জন প্রশিক্ষণার্থী নিয়ে প্রশিক্ষণ কার্যক্রম পরিচালিত হবে। সফলভাবে প্রশিক্ষণ শেষে প্রত্যেক প্রশিক্ষণার্থীকে সনদ দেওয়া হবে। প্রশিক্ষণে যাঁরা ভালো করবেন, বিশেষ ক্ষেত্রে ইন্টার্ন এবং সংস্থা থেকে চাকরির সুযোগ করে দেওয়া হবে। প্রশিক্ষণ শেষে প্রশিক্ষণার্থীদের মধ্যে যদি কেউ ক্ষুদ্র ব্যবসা শুরু বা ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা হতে চান, তাঁদের প্রতিষ্ঠান থেকে প্রয়োজনীয় ঋণ সাহায্যের ব্যবস্থাও করা হবে।

স্বনির্ভর বাংলাদেশ থেকে বেসিক বিউটিফিকেশন এবং পারলার ব্যবস্থাপনা বিষয়ে প্রশিক্ষণ নেন কোহিনুর আক্তার। বর্তমানে সৈয়দপুরে তিনি নিজেই একটি বিউটি পারলার খুলেছেন। নিজের গড়া তাঁর প্রতিষ্ঠানে অনেক মেয়ের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থাও করেছেন। তিনি বলেন, এখানকার পরিবেশ অনেক ভালো। এই প্রশিক্ষণগুলো নিলে নিজে কাজ করে স্বাবলম্বী হওয়ার ভালো সুযোগ পাওয়া যাবে। কাউকে ঘরে বসে থাকতে হবে না বলে জানান কোহিনুর আক্তার। এ ছাড়া তিনি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে খণ্ডকালীন প্রশিক্ষক হিসেবেও কাজ করে ভালো আয় করছেন।

আরও জানতে: প্রশিক্ষণ-সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য জানতে যোগাযোগ করতে পারেন প্রধান কার্যালয়, স্বনির্ভর বাংলাদেশ, ৫/৫ ব্লক-সি, লালমাটিয়া, ঢাকা ১২০৭ এই ঠিকানায়। অথবা ভিজিট করতে পারেন (www.swanirvarbangladesh.org.bd) এই ঠিকানায়।
ফোন: ৯১১৬৫৫৮, ৯১১৬৮০৮।

সূত্র: প্রথম আলোfavicon59

Sharing is caring!

Leave a Comment