যে পেশা উড়তে শেখায়

  • ক্যারিয়ার ডেস্ক

অল্পসংখ্যক কর্মেেত্র সীমাবদ্ধ নেই বর্তমান তারুণ্যের পেশাজীবন। তারুণ্য মানেই চ্যালেঞ্জ। আর চ্যালেঞ্জিং পেশার মধ্যে বিমানচালনা রয়েছে তরুণ-তরুণীদের পছন্দের শীর্ষে। পাইলট মানেই যোগ্যতা ও মূল্যায়নের দিক দিয়ে অনেক এগিয়ে থাকা একজন প্রফেশনাল। বর্তমানে শুধু পুরুষ নয়, সমান হারে নারীরাও এগিয়ে আসছে বিমান পাইলটিং পেশায়। এ পেশায় তারুণ্যের ভূমিকাই প্রধান। তাই আমাদের দেশের মেধাবী তরুণ-তরুণীরাই পারে এ পেশায় যুক্ত হয়ে দেশের গৌরবকে নীল আকাশ পর্যন্ত ছড়িয়ে দিতে। 


আকাশ জয়ের ভাবনায় শৈশবে অনেকেরই স্বপ্ন থাকে বড় হয়ে পাইলট হওয়ার। সঠিক ধারণা কিংবা দিকনির্দেশনা না থাকায় পরবর্তীকালে আর স্বপ্ন ছোঁয়ার সুযোগ হয়ে ওঠে না। বর্তমানে দেশেই আছে পাইলট কোর্স করার সুযোগ। পাইলট-সম্পৃক্ত হওয়ার আগ্রহ অনেক তরুণ-তরুণীর মধ্যেই দেখা যায়। কারণ বিমানের পাইলট হওয়ার পর লাইফস্টাইল সম্পূর্ণ বদলে যায়। শুধু আকাশে উড়ে বেড়ানো নয়, পুরো বিশ্ব ঘুরে বেড়ানোর সুযোগ পাওয়া যায় এ পেশায়। আজ আমেরিকা, কাল ইংল্যান্ড, পরশু জাপান। সকালে এক মহাদেশে তো দুপুরে আরেক মহাদেশে। একজন পাইলট সব সময় আন্তর্জাতিক মানের জীবনধারা নির্বাহ করে থাকেন। শুধু পাইলটই নন, তার পরিবার-পরিজনরাও এয়ারক্রাফটে ভ্রমণের বিশেষ সুবিধা পেয়ে থাকেন।

সবকিছু মিলিয়ে প্রথম সারির একজন গ্লোবাল প্রফেশনাল হিসেবে পাইলট সারা বিশ্বে সমাদৃত হন। পাখিরা যেন হার মেনে যায় এ জীবনের কাছে। এ জন্যই বাংলাদেশের অনেক তরুণ-তরুণী বিমান চালনা প্রশিণ নিয়ে পাইলট হয়েছে। এমনকি পেশাগত সাফল্যে দেশের নামকে ছড়িয়ে দিচ্ছে সারা বিশ্বে। যাদের দেখে আরও অনেক তরুণ-তরুণী অনুপ্রাণিত হয়ে এগিয়ে আসছে এ পেশায়। তারুণ্যের বিমানচালক হওয়ার আগ্রহের পেছনে বেশ কিছু কারণ রয়েছে, তবে এর অন্যতম হচ্ছে গ্ল্যামারাস জীবনের হাতছানি। একই সঙ্গে গ্ল্যামারাস এ পেশায় রয়েছে উন্নত ক্যারিয়ার গড়ার দারুণ সম্ভাবনা। তবে এ পেশায় আসতেও কিছু বিশেষ যোগ্যতার প্রয়োজন পড়ে। বিমান চালনায় আগ্রহীদের অবশ্যই সায়েন্স ব্যাকগ্রাউন্ড থাকতে হয়। এ ছাড়া কিছু বাড়তি যোগ্যতা যেমন- বুদ্ধি, ধৈর্য, চমৎকার ব্যক্তিত্ব, শারীরিক সামর্থ্য থাকা জরুরি। সর্বোপরি এ বিষয়ে পড়াশোনা কিছুটা ব্যয়বহুল। তাই আগ্রহীদের নিজেদের আর্থিক সামর্থ্যরে বিষয়টি বিবেচনা করা উচিত।

  • যোগ্যতা

পাইলট হতে চাইলে এইচএসসি পর্যায়ে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে পদার্থ, গণিতসহ ন্যূনতম জিপিএ ২.৫০ পেতে হবে। বয়স ন্যূনতম ১৬ বছর এবং শারীরিকভাবে ফিট হতে হবে। এ ছাড়া ইংরেজি বলা ও লেখায় দ হতে হবে। যারা স্নাতক শ্রেণিতে পড়ছেন বা পাস করেছেন, তারাও পাইলট কোর্সে ভর্তির আবেদন করতে পারবেন। এইচএসসির পর ভর্তি হতে হবে দেশের বা বাইরের কোনো ফাইং ট্রেনিং একাডেমিতে। প্রথমত, গ্রাউন্ড ও ফাইং প্রশিণ শেষ করে প্রাইভেট পাইলট লাইসেন্সের (পিপিএল) জন্য আবেদন করতে হয়। বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচলকারী কর্তৃপরে (ক্যাব) নিয়ম অনুসারে লাইসেন্স পেতে কমপে ৪০ ঘণ্টা ফাইং করতে হয়। ন্যূনতম বয়স হতে হয় ১৭ বছর। পিপিএল পাওয়ার পর আবেদন করতে হয় কমার্শিয়াল পাইলট লাইসেন্সের (সিপিএল) জন্য। এ েেত্র ফাইং করতে হয় ১৫০ ঘণ্টা। সিপিএলের জন্য ন্যূনতম বয়স হতে হবে ১৮ বছর। এ পরীায় উত্তীর্ণ হলে দেশ-বিদেশের এয়ারলাইনসে ফার্স্ট অফিসার বা কো-পাইলট হিসেবে আবেদন করা যাবে।

  • ভর্তি পরীক্ষা

পাইলট কোর্সে ভর্তি হতে সবার আগে ভর্তি পরীায় উত্তীর্ণ হতে হবে। এ পরীা হয় দুটি ধাপেÑ মৌখিক ও স্বাস্থ্য পরীা। মৌখিক পরীায় সাধারণত বিজ্ঞান ও সাধারণ জ্ঞানের ওপর প্রশ্ন করা হয়। এটি সংশ্লিষ্ট একাডেমি নিয়ে থাকে। আর স্বাস্থ্য পরীা হয় সিভিল অ্যাভিয়েশন অনুমোদিত ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোয়।

  • গ্রাউন্ড কোর্স

ভর্তি পরীায় উত্তীর্ণরা পাইলট কোর্স করার যোগ্য বলে বিবেচিত হবেন। তবে পাইলট হতে পেরোতে হবে আরও তিনটি ধাপ। গ্রাউন্ড কোর্সের পর পেতে হয় এসপি বা স্টুডেন্ট পাইলট লাইসেন্স। এর পর পিপিএল (প্রাইভেট পাইলট লাইসেন্স), আর সর্বশেষে পেতে হয় সিপিএল বা কমার্শিয়াল পাইলট লাইসেন্স। তিন মাসের থিওরি কোর্সে বিমানের কারিগরি ও এয়ার ল’ বিষয়ে প্রশিণ দেওয়া হয়। এ ছাড়া এয়ারক্রাফট জেনারেল নলেজ, ফাইট পারফরম্যান্স অ্যান্ড প্ল্যানিং, হিউম্যান পারফরম্যান্স অ্যান্ড লিমিটেশন, নেভিগেশন, অপারেশনাল প্রসিডিউর ও প্রিন্সিপল অব ফাইটের মতো বিষয়গুলো সম্পর্কে ধারণা দেওয়া হয়।

  • উড়াল দেওয়া

গ্রাউন্ড কোর্সের পর সংশ্লিষ্ট একাডেমি লিখিত পরীা নেয়। পরীায় উত্তীর্ণদের সরাসরি বিমান চালনার জন্য সিভিল অ্যাভিয়েশনে এসপিএল বা স্টুডেন্ট পাইলট লাইসেন্সের আবেদন করতে হয়। আবেদনের পর সিভিল অ্যাভিয়েশন অথরিটি (সিএএবি) পরীা নেয়। সিএএবির পরীা ও সিএমবির (সার্টিফায়েড বাই দ্য মেডিক্যাল বোর্ড) স্বাস্থ্য পরীায় উত্তীর্ণ হলেই কেবল এসপিএল দেওয়া হয়। এ লাইসেন্স দিয়ে ৪০ থেকে ৫০ ঘণ্টা বিমান চালনার সার্টিফিকেট অর্জন করে পিপিএল বা প্রাইভেট পাইলট লাইসেন্সের আবেদন করতে হয়। এ সময় তিন মাসের থিওরি কাসের সঙ্গে একটি ক্রস কান্ট্রি ফাইট (এক জেলা থেকে অন্য জেলায় যাওয়া-আসা) চালানোর অভিজ্ঞতাও অর্জন করতে হয়। এর পর আবারও লিখিত ও স্বাস্থ্য পরীায় উত্তীর্ণ হলেই মিলবে প্রাইভেট পাইলট লাইসেন্স। এ লাইসেন্স দিয়ে কোনো বাণিজ্যিক বিমান চালানো যায় না। তাই পাইলট হিসেবে চাকরির জন্য প্রয়োজন সিপিএল বা কমার্শিয়াল পাইলট লাইসেন্স। এ লাইসেন্স পেতে ১৫০ থেকে ২০০ ঘণ্টা বিমান চালানোর অভিজ্ঞতা থাকতে হয়।

  • কাজের ক্ষেত্র

বর্তমানে দেশে ও বিদেশে দ পাইলটের বেশ চাহিদা রয়েছে। আন্তর্জাতিক বিমান পরিবহন সংস্থা দি ইন্টারন্যাশনাল এয়ার ট্রান্সপোর্ট অ্যাসোসিয়েশনের এক রিপোর্টে জানা গেছে, প্রতিবছর ১৭ হাজার নতুন পাইলট প্রয়োজন হচ্ছে। এটি এমন এক পেশা, যেখানে চাকরিই প্রার্থীকে খোঁজে।

  • কোর্সের সময়

বৈমানিক কোর্স করতে দেড় থেকে সর্বোচ্চ তিন বছর সময় লাগে। পিপিএল কোর্স করতে লাগে ছয় মাস। আর সিপিএল কোর্সে সময় লাগে এক বছর। বছরে জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি ও জুলাই-আগস্ট দুটি সেশনে বৈমানিক কোর্সে ভর্তি হওয়া যায়।

  • প্রশিক্ষণ

দেশে সরকারি-বেসরকারি বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান রয়েছে, যেখানে এ বিষয়ে পড়াশোনার সুযোগ রয়েছে। বিদেশেও অনেক প্রতিষ্ঠানে এ বিষয়ে পড়াশোনা করার সুযোগ রয়েছে। শুরুতে শিাব্যয় বেশি হলেও এ পেশায় উচ্চ বেতনের নিশ্চয়তা রয়েছে। সিভিল অ্যাভিয়েশন একাডেমি ট্রেনিং সেন্টার, বাংলাদেশ এয়ারলাইনস ট্রেনিং সেন্টার, বাংলাদেশ ফাইং একাডেমি অ্যান্ড ফাই অ্যাভিয়েশন লিমিটেড, আরিরাং অ্যাভিয়েশন লিমিটেড ও গ্যালাক্সি ফাইং একাডেমি লিমিটেড। ফাইং একাডেমি থেকে মোট দেড়-দুই বছরের মধ্যে সম্পন্ন করা যাবে এ কোর্স। সব মিলিয়ে খরচ পড়বে ৩০ থেকে ৩২ লাখ টাকার মতো। বিভিন্ন বিমান সংস্থা বিভিন্ন সময় পাইলট নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। ফার্স্ট অফিসার বা কো-পাইলট হিসেবে প্রতিষ্ঠানভেদে মাসিক বেতন হতে পারে ৭৫ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা।

Sharing is caring!

Leave a Comment