অনলাইন শপ : ডিজিটাল ক্যারিয়ার

অনলাইন শপ : ডিজিটাল ক্যারিয়ার

  • ক্যারিয়ার ডেস্ক

সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে প্রতিনিয়ত আমরা হয়ে পড়ছি অনলাইনমুখী। সব কিছুতেই এখন ডিজিটালাইজেশনের ছোঁয়া। প্রযুক্তির এ পরিবর্তনে অনলাইনে কেনাকাটার চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। ফলে এ সেক্টরেও তৈরি হচ্ছে ভালো ক্যারিয়ার। বিশেষ করে যারা চাকরি করার চেয়ে নিজেকে উদ্যোক্তা বা ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচিত করতে চান তাদের জন্য এটি চমৎকার দৃষ্টান্ত। কেন? অন্যান্য ব্যবসার চেয়ে এ সেক্টরে ইনভেস্ট তুলনামূলক কম লাগে। যৌথভাবে খুব সহজে শুরু করা যায় এটি। ফিজিক্যাল প্রোডাক্টের পাশাপাশি ডিজিটাল প্রোডাক্টও কেনাবেচা করা যায়। সহজে পেমেন্ট পাওয়া যায়। সবচেয়ে বড় ব্যাপার হলো_ এখানে বাকি দিয়ে লস খাওয়ার বালাই নেই।


মাথায় রাখবেন :

শুরুতেই নিজের অবস্থান যাচাই করুন। কেন এ পেশায় ক্যারিয়ার গড়তে চান_ তা জানা থাকলে ভালো। এবার সেটাকে আরও ভালোভাবে বিচার-বিশ্লেষণ করুন। যদি কিছু না জেনে থাকেন, অথচ আগ্রহ থাকে, তাহলে জেনে নিন এ ব্যাপারে বিশদ। তারপর সিদ্ধান্ত নিন।

যেভাবে শুরু :
ঠিক কোথায় থেকে শুরু করবেন_ সবার আগে এ প্রশ্নের জবাব জানা আবশ্যক। কাজ শুরুর আগে অবশ্যই আপনার ধারণা থাকতে হবে অনলাইন শপ, অনলাইন বা ই-কমার্স বিজনেস সম্পর্কে। তাহলে নিজেই বুঝতে পারবেন, ঠিক কীভাবে আর কখন শুরু করবেন? কী দিয়ে শুরু করবেন? এ জন্য প্রথমে অনলাইনের দ্বারস্থ হোন কিংবা কোনো উদ্যোক্তার পরামর্শ নিন। বর্তমানে বিভিন্ন এনজিও, উদ্যোক্তা ফ্যামিলি অনলাইন শপ ক্যারিয়ারের ওপর শর্ট ওয়ার্কশপ করিয়ে থাকে। সেগুলোতে যেতে পারেন। সফল উদ্যোক্তাদের লেখা কিছু বই পড়া আবশ্যক। পড়তে পারেন চেতন ভগতের ফিকশনগুলো। এভাবে নিজের মস্তিষ্কে অনলাইন শপ বা ই-কমার্স বিজনেস সম্পর্কে তথ্যের সনি্নবেশ ঘটান। দেখবেন, সেই তথ্যভাণ্ডার থেকে সহজেই একটা মডেল দাঁড় করাতে পারছেন আপনি।

পরিকল্পনা :

অনলাইন শপ বা ই-কমার্স সম্পর্কে মোটামুটি তথ্য জোগাড় করতে পারলে সুন্দর একটা পরিকল্পনা তৈরি করা সহজ। এ পরিকল্পনাটাই আসল। পরিকল্পনা যত সুন্দর হবে, আপনার অনলাইন শপ ততই সাফল্যের মুখ দেখবে। সুতরাং সুন্দর ও কার্যকর পরিকল্পনা মানেই আপনার ব্যবসার শতকরা ৭০ ভাগ কাজ সম্পন্ন বলা যায়।

পরিকল্পনাটিকে তিন ভাগে ভাগ করে নিতে পারেন_

জানাশোনা :

সবার আগে দরকার পর্যাপ্ত তথ্যজ্ঞান। অনলাইন শপ সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করার ব্যাপার থাকবে এ অংশে। আর আপনি কোন ধরনের প্রোডাক্ট নিয়ে অনলাইন শপ করতে চান, সেটি বাছাই করাও খুব গুরুত্বপূর্ণ।

উপস্থাপন :

এ পর্যায়ে আপনার অনলাইন শপের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কেনাকাটা, সাজানো ও রেডি করে পরিবেশন করার দায়িত্ব থাকবে। যেমন_ অনলাইন শপের জন্য মূল দরকারি ব্যাপার হচ্ছে, একটি ই-কমার্স ওয়েবসাইট, যেখানে আপনার প্রোডাক্টগুলো শোকেস আকারে প্রদর্শিত হবে যাবতীয় তথ্যসহ। যেমন_ প্রোডাক্টের ডাইমেনশনাল ছবি, দাম, বর্ণনা, ডেলিভারি মেথড, পেমেন্ট মেথড, ওয়ারেন্টি বা গ্যারান্টিসহ আরও বেশকিছু তথ্য ইনপুট করতে হবে। আর ওয়েবসাইট তৈরিতে আপনাকে কিনতে হবে ডোমেইন-হোস্টিং এবং ওয়েবসাইট ডিজাইন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট।

প্রচার :

প্রোডাক্টসহ আপনার অনলাইন শপ এখন প্রস্তুত। বিশ্বের যে কোনো প্রান্ত থেকে অনলাইনে সংযোগের মাধ্যমে এ অনলাইন শপ যে কেউ দেখতে পারবে। যদি ইন্টারন্যাশনাল ডেলিভারি সিস্টেম থাকে তাহলে দেশের বাইরে থেকেও কেনাকাটা করতে পারবে আপনার ওয়েবসাইট থেকে। এবার আপনার মূল কাজ হচ্ছে_ মার্কেটিং। অর্থাৎ অনলাইন শপটির প্রচার করতে হবে। সে ক্ষেত্রে অফ লাইনের চেয়ে অনলাইন মার্কেটিংয়ের গুরুত্ব বেশি হওয়া আবশ্যক। কারণ আপনি আপনার পণ্য বিক্রি করবেন অনলাইনে। ক্রেতাদের টার্গেট অর্ডিয়েন্স আগে চিনতে পারলে মার্কেটিংয়ে সুবিধা হবে।

বাস্তবায়ন :

এরই মধ্যে আপনি অনলাইন শপের বাস্তবায়নের অনেক কাজ করে ফেলেছেন। এখন সেটাকে পূর্ণতা দিতে দরকার আরও কিছু সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও সেগুলোর বাস্তবায়ন। যদি সঠিকভাবে তা করতে পারেন, তাহলে আপনার অনলাইন শপ হবে টপ অব দ্য মার্কেট। কীভাবে করবেন সেগুলো? একটি অনলাইন শপকে বাস্তবে পরিপূর্ণ রূপদানের জন্য প্রয়োজন সঠিক মার্কেটিং পলিসি এবং আপনার ক্রেতাদের অবস্থান নির্ণয় করা। ক্রেতাদের অডিয়েন্স যদি টার্গেট করতে পারেন সফলভাবে তাহলে আপনাকে আর পেছন ফিরে তাকাতে হবে না। নিজের ক্যারিয়ার নিয়েও চিন্তা করতে হবে না। এ ছাড়াও যে বিষয়গুলোর প্রতি নজর রাখতে হবে_

নামকরণ :

ব্র্যান্ডিং একটি কঠিন ব্যাপার। ব্র্যান্ডিংয়ের শুরুতে সুন্দর ও অর্থবোধক একটি নামকরণ করতে হবে আপনার অনলাইন শপের। কেননা আপনার ওয়েবসাইটের নামটি এ নামেই হবে। এ ক্ষেত্রে ছোট ও সহজে মনে রাখা যায়_ এ রকম নাম হলে সুবিধা।

টাকা আদায় :

বাংলাদেশের মার্কেট যদি হয় আপনার মূল টার্গেট তাহলে শুরুতেই পেমেন্ট মেথডের ধাক্কা সামলাতে হবে। অযথা অনেকগুলো পেমেন্ট মেথড অ্যাড না করে প্রয়োজনীয় দুই-তিনটা অ্যাড করুন। এ ক্ষেত্রে থার্ড পার্টির সহযোগিতা নিতে পারেন অথবা সরাসরি পেমেন্ট মেথডও অ্যাড করতে পারেন। তবে যদি আপনার অনলাইন শপকে শুরুতেই হুমকির মুখে ফেলতে না চান তাহলে খরচ বেশি হলেও থার্ড পার্টির সহযোগিতা নেওয়াই শ্রেয়।

পণ্য ডেলিভারি :

ক্রেতাকে কত দ্রুত ও সহজে আপনার প্রোডাক্ট ডেলিভারি দিতে পারছেন_ সেটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ ক্ষেত্রে আমাদের দেশে বর্তমানে অনেকেই ক্যাশ অন ডেলিভারি মেথড ব্যবহার করেন। অর্থাৎ ক্রেতা যখন প্রোডাক্ট গ্রহণ করবে তখনই পেমেন্ট দেবে। এ ক্ষেত্রে নিজস্ব ডেলিভারিম্যান দিয়ে ডেলিভারি দেওয়া যেতে পারে কিংবা কুরিয়ার সার্ভিসগুলো শর্তসাপেক্ষে আপনার প্রোডাক্ট বুকিং নেবে। অর্থাৎ ক্রেতা যখন প্রোডাক্ট রিসিভ করবে, তখন পেমেন্ট দেবে। তা ছাড়া যদি অগ্রিম পেমেন্ট নেন তাহলে শর্ত ছাড়াই প্রোডাক্ট পাঠাতে পারেন।

বিনিয়োগ :

অনলাইন শপে ক্যারিয়ার দাঁড় করাতে কী পরিমাণ বিনিয়োগ আবশ্যক? এর সঠিক কোনো পরিসীমা নেই। এটা নির্ভর করছে আপনার ওপর। বরং খরচগুলো কোন কোন খাতে হবে তা নিয়ে আলাপ করা যাক।

  • মার্কেট রিসার্চ বা সার্চ ইঞ্জিনে প্রোডাক্ট বাছাই, প্রোডাক্ট বাছাই, জানাশোনা ইত্যাদি বাবদ ২০ হাজার টাকা;
  • ডোমেইন বার্ষিক এক হাজার টাকা;
  • হোস্টিং শুরুতেই শেয়ার্ড নিয়ে শুরু করলে বার্ষিক ২-১০ হাজার টাকা;
  • ওয়েবসাইট ডিজাইন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট বাবদ ১৫ হাজার থেকে ৫ লাখ টাকা;
  • এসইও বা মার্কেটিং বাবদ মাসে ৫-১০ হাজার টাকা;

আর বাকি থাকল প্রোডাক্ট। প্রোডাক্ট যদি নিজে তৈরি করেন তাহলে আপনার প্রোডাক্টের ওপর নির্ভর করে সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হন, সে ক্ষেত্রে খরচ হবে কম। শুরুতে সবাই সাধারণত নিজের অনলাইন শপের নামে ট্যাগ তৈরি করে এবং হোয়াইট লেবেল প্রোডাক্ট কিনে ট্যাগ লাগিয়ে নেয়। এতে খরচ তুলনামূলক কম।

অন্যান্য প্রসঙ্গ :

অনলাইন শপে ক্যারিয়ার অবশ্যই সুন্দর ও স্মার্ট। যদি সঠিক পরিকল্পনা করে শুরু করতে পারেন তাহলে সহজেই এ ব্যবসায় ভালো করা সম্ভব। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে, অনলাইনে ভোক্তার নির্ভরতা দিন দিন বাড়ছে। তাই সম্ভাবনাও বেশি। দেরি না করে কাজ শুরু করুন। তবে এটাও মাথায় রাখবেন যে, সময়ের সঙ্গে এখানেও বাড়ছে প্রতিদ্বন্দ্বী। তাই আপনার একাগ্রতা, বিশ্বস্ততা আর পরিশ্রমই এনে দিতে পারে চূড়ান্ত সাফল্য। শুভ কামনা রইল আপনার জন্য। favicon59

Sharing is caring!

Leave a Comment