স্বপ্ন যাদের ডাক্তার হওয়ার

স্বপ্ন যাদের ডাক্তার হওয়ার

  • ক্যারিয়ার ডেস্ক

উচ্চ মাধ্যমিক ও সমমানের পরীক্ষার ফল বেরিয়েছে। রেজাল্ট মনের মতো হয়েছে কি-না মন্দ হয়েছে সেই রেশ ইতিমধ্যেই শিক্ষার্থীদের মন থেকে দূর হয়ে গেছে।  এখন কোথায় ভর্তি হবে, কাক্সিক্ষত প্রতিষ্ঠানে পড়ার সুযোগ হবে কি না এসব ভাবনাই শিক্ষার্থীদের মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে। কিছুদিনের মধ্যে শুরু হয়ে যাবে ভর্তিযুদ্ধ।  কেউ মেডিকেলে, কেউ ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে কেউ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভালো সাবজেক্টে ভর্তি হওয়ার জন্য মরণপণ লড়াইয়ে নামবে। মানসিক লড়াই এইসএসসি পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর থেকেই শুরু হয়ে গেছে। কাঙ্খিত প্রতিষ্ঠানে একটি আসন পেতে তাকে তুমুল প্রতিযোগিতাপূর্ণ ভর্তি পরীক্ষার মধ্য দিয়েই যেতে হবে। এটিই ফ্যাক্ট।

স্বপ্ন দেখতে হবে ছোট থেকেই
ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ থেকে সদ্য এমবিবিএস পাস করা মোশাররফ হোসেন বলেন, একজন ডাক্তার হতে চাইলে ছোট থেকেই স্বপ্নের বীজ বপন করা দরকার। কারণ, মাধ্যমিক পর্যায় থেকেই তাকে বিজ্ঞানে পড়তে হবে। এমবিবিএস কোর্স সম্পর্কে ডা. মোশাররফ জানান, এমবিবিএস কোর্সটি ৫ বছরব্যাপী। এরপর এক বছর ইন্টার্নশিপ রয়েছে। তবে ইন্টার্নি করার সময় ডাক্তাররা সরকারি নিয়ম অনুযায়ী নির্দিষ্ট ভাতা পেয়ে থাকেন। ৫ বছরব্যাপী কোর্সটিতে অ্যানাটমি, ফিজিওলজি ও বায়োক্যামিস্ট্রি, প্যাথলজি, মাইক্রোবায়োলজি, ফরেনসিক মেডিসিন, কমিউনিটি মেডিসিন, ফার্মাকোলজি, মেডিসিন, সার্জারি ও গাইনকোলজি ইত্যাদি বিষয় পড়ানো হয়। এমবিবিএস ও বিডিএস পাস করে ডাক্তারি মর্যাদা লাভ, দেশে-বিদেশে ডাক্তারি বিষয়ে উচ্চশিক্ষার ব্যবস্থা রয়েছে। বাংলাদেশে রয়েছে এফসিপিএস, এমএস, এমডি করার সুযোগ।

ভর্তির যোগ্যতা
এমবিবিএস ভর্তির যোগ্যতা হচ্ছে- মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকে যারা বিজ্ঞান বিভাগ থেকে উত্তীর্ণ হয় তারাই এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে পারে। তবে আবেদনকারীর জীববিজ্ঞান থাকা আবশ্যক। এখন এমবিবিএস ভর্তিতে তেমন কোনো ঝামেলা নেই। ভর্তির ফরম ও পরীক্ষার ফি মোবাইল সংযোগের মাধ্যমে দেয়া যায়। ভর্তির তথ্য-নির্দেশিকাসহ ফরম পাওয়া যায় অনলাইনেও।

প্রস্তুতি
ঢাকা মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী তানজিনা আনজুম বলেন, মেডিকেলে চান্স পাওয়ার শর্ত হল কঠিন প্রতিদ্বন্দ্বি^তাপূর্ণ ভর্তি পরীক্ষায় দেশসেরা মেধাবীদের সঙ্গে যুদ্ধ করে উত্তীর্ণ হওয়া। যেহেতু ডাক্তারি একটি অধিক চাহিদাপূর্ণ গৌরবময় পেশা, তাই এ ভর্তি পরীক্ষায় কঠিন প্রতিযোগিতা করে সর্বোচ্চ মেধা দিয়ে উন্নীত হতে হয়। প্রস্তুতির বিষয়ে আরেক সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী সোহানা মাহজাবিন বলেন, মেডিকেলে চান্স পেতে হলে তোমাকে প্রচুর পড়াশোনা করতে হবে, হতে হবে চরম অধ্যবসায়ী। স্বল্প সময়ে অনেক বড় সিলেবাস শেষ করতে হলে তোমাকে হতে হবে কৌশলী এবং কাজে লাগাতে হবে প্রতিটা মুহূর্তকে। প্রস্তুতির জন্য মেইন বই পড়ার কোনো বিকল্প নেই। কোনো গাইড বই দিয়ে কখনও পূর্ণাঙ্গ প্রস্তুতি নেয়া সম্ভব নয়। প্রশ্ন ব্যাংক দেখে নিজেকে ঝালাই করে নেয়া যেতে পারে। যে অধ্যায় থেকে নিয়মিত প্রশ্ন আসে, সেসব অধ্যায়গুলো খুব ভালো করে পড়বে। ইংরেজি ও সাধারণ জ্ঞান নিয়মিত পড়তে থাক। পাঠ্য বইয়ের বাইরে কোথায় কখন কী ঘটছে এসব সাম্প্রতিক বিষয়ের ওপর খোঁজ-খবর রাখতে হবে। সাধারণ জ্ঞানের জন্য সময় উপযোগী বিভিন্ন বইয়ের পাশাপাশি বাংলাপিডিয়া, বাংলাদেশের ইতিহাস ও মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক বই, এনসাইক্লোপিডিয়া ও উইকিপিডিয়াসহ জাতীয় দৈনিকের গুরুত্বপূর্ণ খবর ও সম্পাদকীয় অংশে চোখ রাখলে সাধারণ জ্ঞানের পরিধি বৃদ্ধি পাবে।

প্রসপেক্ট
এমবিবিএস ডাক্তারদের প্রসপেক্ট সম্পর্কে বিএসএমএমইউর সহযোগী অধ্যাপক ডা. আরেফিন বলেন, ‘এক কথায় আমি বলব, এটা হচ্ছে সম্পূর্ণ নিজেকে তৈরি করার একটা দারুণ মাধ্যম। এই পেশায় ক্যারিয়ার যেমন সম্ভাবনাময় তেমনি চ্যালেঞ্জের। বর্তমান সময়ে মানুষের মনে ভ্রান্ত ধারণা রয়েছে, ডাক্তাররা মনে হয় নির্দয়, তারা টাকা ছাড়া আর কিছুই বুঝে না। এমন ভ্রান্ত ধারণার মধ্যে থেকে সুনাম অর্জন করাটা অনেক কঠিন। বর্তমান বিশ্বের জনসংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। আর এ কারণেই ডাক্তারদের কাজের পরিধি, কর্মক্ষেত্র ও চ্যালেঞ্জ বৃদ্ধি পাচ্ছে।

কোথায় পড়বেন
বাংলাদেশের মেডিকেল কলেজগুলো উন্নত বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে খুব ভালো মানের ডাক্তার গড়ার কারখানা হিসেবে কাজ করছে। আমাদের দেশে ২২টি সরকারি মেডিকেল কলেজ, ১টি আর্মি মেডিকেল কলেজ, একটি স্বতন্ত্র ডেন্টাল কলেজ, বেশ কয়েকটি ডেন্টাল ইউনিট এবং ৫০টিরও বেশি বেসরকারি মেডিকেল কলেজ ডাক্তার গড়ার এ মহান কাজটি করছে।

সামনে সুদিন
জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইন্সটিটিউটের ডা. ফাইয়াজ জানান, এমবিবিএস পাস করার পর ডাক্তারদের জন্য আছে অনেক সুযোগ। বেসরকারি হাসপাতালে প্রতিবছর প্রচুর ডাক্তারের প্রয়োজন হচ্ছে। বিসিএসের মাধ্যমে প্রতিবছরই অনেক চিকিৎসক নিয়োগ দেয়া হয়। সেনাবাহিনীতেও ডাক্তার হওয়ার সুযোগ আছে। টেলিমেডিসিন, হেলথলাইন কার্যক্রমেও অনেকে কাজ করছেন। আছে মেডিকেল কলেজে শিক্ষকতার সুযোগ। বিভিন্ন ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানিও ডাক্তার নিয়োগ দিয়ে থাকে। আইচি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. মোয়াজ্জেম হোসেন জানান, বিসিএস পরীক্ষার মাধ্যমে সরকারি হাসপাতালে ডাক্তার হিসেবে কাজের সুযোগ রয়েছে। তবে যারা ডাক্তারি না করে অন্য সরকারি চাকরি করতে চান, তারাও বিসিএস দিয়ে প্রথম শ্রেণীর সরকারি চাকরি করতে পারেন। ডায়াগনস্টিক সেন্টার অথবা নিজেই কোথাও চেম্বার দিয়ে প্রাইভেট প্রাকটিস করতে পারেন।

সূত্র: যুগান্তরfavicon59

Sharing is caring!

Leave a Comment