যোগাযোগের ১০ অধ্যায়

যোগাযোগের ১০ অধ্যায়

  • ক্যারিয়ার ডেস্ক

অনেকেই দুষ্টুমি করে বলেন, আমরা যা বলি তার অর্ধেকই থাকে আমাদের মাথায়। আর বাকি অর্ধেকের ৪ ভাগের ৩ ভাগ থাকে জিভের সামনে, এই কারণেই আমরা যা বলতে চাই তা যাকে বলি সে শোনে কম। আর শোনে কম বলেই বোঝে কম। বিষয়টা একটু ভেবে দেখলে দেখবেন, প্রতিদিনই আমরা এমন করেই আমাদের যোগাযোগ দক্ষতার প্রমাণ দেই। অনেক তরুণ পেশাজীবি অভিযোগ করেন, তারা বসের কথা শোনেন না বা কম বোঝেন। বিষয়টার একটাই কারণই যোগাযোগে অদক্ষতা। আমরা যা বলি তা বলেই উপসংহার টানি, আসলে কিন্তু কিছু বলার পরে আরও অনেক কাজ থাকে। অনেক নামী দার্শনিক মানুষ কম শোনে বলে অভিযোগ করেন। শোনার দক্ষতা জন্মগত, কিন্তু শুনে বোঝার দক্ষতা মানসিক এবং বৈজ্ঞানিক। আপনি যদি কাউকে কিছু বোঝাতে না পারেন তার ব্যর্থতা আপনার। আমাদের অফিসের বসরা এই বিষয়টির দিকে কম খেয়াল করেন। যোগাযোগের ক্ষেত্রে আদেশ দিয়েই ক্ষ্যান্ত তারা, কিন্তু যে কর্মীকে আদেশ বা কোন বার্তা দেয়া হচ্ছে, সে বুঝতে পারছে কিনা সেদিকে বেশ অমনোযোগি থাকি আমরা। একটু ভাবুন তো, লতা মঙ্গেশকর এমন কোন একটি গান গাইলেন, যার কিছুই আপনি বা শ্রোতারা বুঝলেন না, কিন্তু গায়িকা লতা মঙ্গেশকর ধরেই নিলেন তার গান জনপ্রিয় হবে। আসলেই কি সেই গান জনপ্রিয় হবে?

যোগাযোগ বা কমিউনিকেশনে আমরা আসলেই অনেক দুর্বল। এমনকি আমি যে এই আর্টিকেলটা টাইপ করছি, আমিও হয়তো আমি যা বলতে চাচ্ছি তার পুরোটাই আপনাকে বলতে পারছি না। কিংবা ভাবের আবেগে বেশি বলে মূল কথাকেই অপ্রাসঙ্গিক দিকে নিয়ে যাচ্ছি। আমরা কথা বলা শুরু করলে, আসলে কোনটা গল্প, কোনটি ক্লাইমেক্স আর কোনটি আসল কথা সেটাই ভুলে যাই-লোকজ ভাষায় পেঁচিয়ে ফেলি আরকি। আমি এই আর্টিকেলে কমিউনিকেশনের উপরে ১০টি কমান্ডমেন্টস লিখছি। এই ১০টি কমান্ডমেন্ট প্রথম ২০১৪ সালে দ্য আর্ট অব ম্যানলিনেস নামে একটি ওয়েবসাইটে প্রকাশ করে।

১. কথায় কথায় জাস্টমেন্ট দেখানো বন্ধ করুন

আমাদের সহজাত একটা বলার স্টাইল হচ্ছে কথা কথায় জাস্টমেন্ট দেখানোর চেষ্টা করা। “তুমি এই মুহুর্তে বাচ্চাদের মত আচরণ করছো।” কিংবা “তোমার এই আচরণে আমি বিরক্ত।” বা “তুমি যদি আরও ভালো মানুষ হতে তাহলে এই সমস্যা খুব সহজে সমাধান করতে পারতে”-এমন হাজারো দারুণ লাইনে আমরা আমাদের পরিবারের সদস্য কিংবা অফিসের সহকর্মী বা জুনিয়রদের বিব্রত করার দক্ষতা দেখাই। এ ধরণের কথা বলার স্টাইল আসলে আপনাকেই ছোট করে দেয়। আপনার কথা বিনয় নিয়ে কথা বলার চেষ্টা করুন, এতে যা বলতে চান তার চেয়ে বেশি কাজে দেয়। যেমন ধরুন, “তুমি এই মুহুর্তে বাচ্চাদের মত আচরণ করছো।” এই লাইনটি বদলে আপনি, “এই ধরণের কথাবার্তা তোমার অস্থিরতাকেই প্রকাশ করছে।” বলতে পারেন। কথার মধ্যে বিনয় আর নম্র টোন রাখলে আপনি যাকে কথা বলছেন সে কথা শুনবে, বুঝবে। আর কথার মধ্যে রাগ-আবেগের ছড়াছড়ি থাকলে আপনি যা বলতে চাইছেন তা আসলে কেউ কোনদিন বোঝারই চেষ্টা করবে না।

২. আমরা, আমাদের-শব্দাংশ দিয়ে কথা শুরু করবেন না

“তোমার জন্য আমাদের এই সমস্যা তৈরি হয়েছে।” এই ধরণের বাক্য ব্যবহার থেকে বিরত থাকুন। আপনি “এই ধরণের সমস্যার কারণে অফিসের অনেক বড় ক্ষতি হয়”-এই স্টাইলে কথা বলতে পারেন। “তোমাকে দিয়ে কিছুই হবে না।”-এই বাক্যের বদলে “আমি এখন একটু ব্যস্ত আছি, তোমার এই সমস্যা নিয়ে আমি একটু পরে বিকেলে বোঝার চেষ্টা করবো। এর মধ্যে তুমিও চেষ্টা করতে থাকো, সমাধান হয়েও যেতে পারে।” ব্যবহার করুন।

৩. দোষ দিতে “তুমি”, “তোমরা” এড়িয়ে যান

আমরা তুমি আর তোমরা শব্দ দুটিকে সব সময় যাচ্ছে তাই ভাবে ব্যবহার করি। “তুমি খারাপ”, “তোমরা পচা”, “তোমাকে দিয়ে কিচ্ছু হবে না”-টাইপের কত যে বাক্য ব্যবহারে অভ্যস্ত আমরা তা আমরা নিজেরাই জানি না। “তুমি সব সময় রুম নোংরা করো” এই বাক্যের বদলে “এভাবে ঘর-বাড়ি নোংরা করলে (মা কিংবা) আমার রুম গোছাতে অনেক কষ্ট হয়।” ব্যবহার করতে পারেন। “তোমার জন্যই আমাদের প্রেম টিকবে না”-এই কঠিন বাক্যকে দারুণভাবে “তোমাকে যেহেতু আমি পড়তে পারি না, আমি তোমার বোঝার মাত্রাকে বুঝতে পারি না। এই “না” গুলো যেকোন সম্পর্কের জন্য খুব খারাপ।”-এমন ইতিবাচক উপায়ে নেতিবাচক কথা বলার চেষ্টা করুন। “তুমি সব সময় যে কোন অনুষ্ঠানে আসতে দেরি করো”-অফিসের লেট লতিফ ভাইদের এই কথা বলতে আমরা দারুণ পছন্দ করি। এতে কিন্তু লতিফ ভাইদের আসলে পরিবর্তন আসে না। আপনি এই কথাটিকে একটু ঘুরিয়ে “তুমি-আমি যখন এভাবে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে দেরি করে আসি তখন আসলে লজ্জায় সবারই মাথা কাটা যায়।” বলুন তো। লতিফ ভাই পরের বার সবার আগে আসবে গ্যারান্টি দিতে পারি আমি

৪. ইতিহাস টেনে আনবেন না

তুমি সব সময়ই অকৃতজ্ঞ। আমি তোমার জন্য গত মাসে কত কষ্ট করেছি, আর তুমি আমার কোন কথাই মনে রাখো না।

তুমি আমাকে বিশ্বাস করো না তাই না? আমি তো তোমাকে কখনও আমার কথা লুকাই না।

আমি সব সময় তোমার জন্য সব করে যাই। আর তুমি?

কাউকে খারাপ বললে আসলে তার খারাপ দিকটা দূর হয় না। এটা আমরা সব সময় ভুলে যাই। এধরণের কথা বলার স্টাইল সব সময় এড়িয়ে যাওয়া উচিত।

৫. তুলনা না করাই ভালো

৬. হুমকি দিয়ে কথা বলবেন না

৭. আক্রমণ না করার চেয়ে নিজের অনুভূতি প্রকাশ করুন

৮. শরীরি ভাষাকে ইতিবাচক রাখুন সব সময়

৯. মাথায় যা গুছিয়ে রেখেছেন তাই বলার চেষ্টা করুন।

১০. পরিষ্কার টোনে কথা বলুন

অ্যা, ম্যা, ইয়ে মানেএই ধরণের শব্দগুলো কখনই কথা বলার সময় ব্যবহার করবেন না। এতে আপনার দুর্বলতাই প্রকাশ পায়। ধীরে কথা বলুন, কিন্তু গুছিয়ে বলুন।

লেখক: জাহিদ হোসাইন খান, সাইকোলজিক্যাল সাপোর্ট সেন্টার ‘মনের বন্ধু’র প্রতিষ্ঠাতা।favicon59

Sharing is caring!

Leave a Comment