ক্যারিয়ার হোক অন্দরসজ্জা
- ক্যারিয়ার ডেস্ক
কর্মমুখী শিক্ষায় স্বল্পমেয়াদি বিভিন্ন কোর্স করে আপনিও গড়তে পারেন স্বপ্নের ভবিষ্যৎ। অন্যের অধীন চাকরি না করেও গড়ে তুলতে পারেন স্বতন্ত্র ব্যবসা প্রতিষ্ঠানও। আর এসব কর্মমুখী শিার মধ্যে বর্তমানে চাকরির বাজারে এগিয়ে ইন্টেরিয়র ডিজাইনিং। অনেকে শখ করে বিষয় ইন্টেরিয়র ডিজাইন কোর্স করলেও আজ পেশা হিসেবেই এটা জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বদলে যাচ্ছে সব কিছু। ইন্টেরিয়র ডিজাইনিং একটি বহুমাত্রিক পেশা, যেখানে সৃজনশীলতা ও প্রযুক্তি একসঙ্গে প্রয়োগ করা হয়। এর মূল কাজ, গৃহ ও কর্মেক্ষেত্রের সাজসজ্জাকে আরও আকর্ষণীয় করে তোলা। সুন্দর একটি ঘর কে না ভালবাসে? ঘরকে রঙিন করতে কার না ভালো লাগে। রঙের ব্যবহার, আসবাবপত্র, কাপড় গৃহসজ্জার উপকরণের সামগ্রিকতাকে ব্যবহার করে ঘরদোর সুন্দর করাই ইন্টেরিয়র ডিজাইনিং। এসব বিষয়ে নিজেকে দ করার জন্যই জানা প্রয়োজন ইন্টেরিয়র ডিজাইন।
- ইন্টেরিয়র ডিজাইন কী?
ইন্টেরিয়র শব্দটি এসেছে লাতিন শব্দ থেকে, যার অর্থ ভেতর। আভিধানিক অর্থ দাঁড়ায় আভ্যন্তরীণ নকশা বা অন্দর সজ্জা। অনেকেই চান অফিস বা বাসা সুসজ্জিত হোক। যাতে অফিস বা বাসার মধ্যে কোনো স্পেস যাতে নষ্ট না হয়। এ ডেকোরেটেশনকে বলা হয় ইন্টেরিয়র ডিজাইন। সাধারণত ইন্টেরিয়র ডিজাইন বলতে ঘর গোছানোকে বুঝে থাকি আমরা, বাস্তবে শুধু ঘর গোছানো নয় ইন্টেরিয়র ডিজাইন আরও ব্যাপক অর্থে ব্যবহৃত হয়।
- ইন্টেরিয়র ডিজাইনার
প্রতিটি স্থানকে কাজে লাগিয়ে আসবাব, লাইট, গৃহসজ্জা সামগ্রীর যথাযথ ব্যবহারের মাধ্যমে বাড়ি, অফিস বা যে কোনো প্রতিষ্ঠানকে আরামদায়ক ও নান্দনিকভাবে উপস্থাপন করাই ইন্টেরিয়র ডিজাইনের প্রধান ল্য। আর যিনি এ কাজ দতার সঙ্গে করে থাকেন তিনি ইন্টেরিয়র ডিজাইনার। আগে আমাদের দেশে স্থপতিরাই সাধারণত কোনো ভবন নির্মাণের পাশাপাশি তার ইন্টেরিয়র ডিজাইন করতেন। কিন্তু বর্তমানে আর্কিটেকচার ও ইন্টেরিয়র ডিজাইন পৃথকভাবে করা হচ্ছে।
- পেশায় আসতে হলে
সমসাময়িক প্রোপটে বাংলাদেশে ইন্টেরিয়র ডিজাইন কোর্সটির খুবই চাহিদা। এইচএসসি পাস করে যে কেউ এ কোর্সটি করতে পারেন। ইন্টেরিয়র ডিজাইনার হওয়ার প্রথম ও প্রধান শর্ত হলো সৃষ্টিশীল চিন্তাভাবনা করার মানসিকতা থাকতে হবে। সেই সঙ্গে থাকতে হবে সূক্ষ্ম পরিকল্পনা করার মানসিকতা। একজন সত্যিকারের পেশাদার ডিজাইনারকে পারিপার্শ্বিক পরিবেশ, সবার বাসযোগ্য স্থান, অফিস-আদালতের সুপরিসর কর্মসংস্থান, খেলার ময়দান ইত্যাদি স্থানকে নিজের চিন্তা-কল্পনা, গবেষণা, সৃজনশীলতা ও আপন মনের মাধুরী মিশিয়ে আরও আকর্ষণীয়ভাবে ফুটিয়ে তুলতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞা হতে হবে। কাজের ফাঁকে বা যে কোনো অবসরে নিত্যনতুন রুচিশীল, আকর্ষণীয় ডিজাইন উদ্ভাবনে একজন ইন্টেরিয়র ডিজাইনার সদা নিমগ্ন থাকেন। ইন্টেরিয়র ডিজাইনার হিসেবে কাজ করতে গেলে শুধু কাক্সিক্ষত ডিজাইন এঁকে দেওয়াটাই যথেষ্ট নয়, বরং একজন ডিজাইনারকে তার নিজস্ব ডিজাইন ও প্ল্যানিং ছাড়াও এ কাজে জড়িত কাঠমিস্ত্রি, রঙমিস্ত্রি, ইলেকট্রিশিয়ানÑ সবার কাজ ভালোভাবে দেখাশোনা করতে হয় শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত। একজন উঁচু মানের ইন্টেরিয়র ডিজাইনার তার নিজস্ব স্বপ্ন, কল্পনা, অনুভূতি দিয়ে একটি মলিন, নিষ্প্রাণ স্থানকেও করে তুলতে পারেন সজীব, প্রাণবন্ত, প্রশান্তিময় ও অপূর্ব সুন্দর।
- পেশা হিসেবে ইন্টেরিয়র ডিজাইন
আধুনিক স্থাপনার অভ্যন্তরীণ সৌন্দর্যবর্ধনে প্রধান ভূমিকা রাখছেন ইন্টেরিয়র ডিজাইনাররা। একটি প্রতিষ্ঠানের অন্দরমহলের সাজসজ্জা বৃদ্ধিতে ইন্টেরিয়র ডিজাইনারদের চাহিদা বুঝতে পারছে কর্তৃপ। আর তাই বেড়েছে ইন্টেরিয়র ডিজাইনারদের চাহিদা। তাই এ েেত্র উন্নত ক্যারিয়ার গড়তে পারেন যে কেউই। আবার বিবিএ, এমবিএ, অনার্স কিংবা গ্র্যাজুয়েশন করার পাশাপাশি ইন্টেরিয়র ডিজাইনের ওপর শর্ট বা লং কোর্স করেও গড়তে পারেন স্বতন্ত্র কর্মসংস্থান। মূলত ইন্টেরিয়র ডিজাইনারের চাহিদা এখন বিশ্বব্যাপী। একটি নতুন ভবন যখন তৈরি হয়, সেই ভবনে অফিস কিংবা বাসা যাই হোক না কেন, ব্যবহারকারীরা চাইবেন সেটিকে নিজের চাহিদামতো সাজাতে। একজন ইন্টেরিয়র ডিজাইনার ছাড়া তা কখনোই সম্ভব নয়। প্রায় সব রিয়েল এস্টেট প্রতিষ্ঠানই এখন ইন্টেরিয়র ডিজাইনার নিয়োগ দিচ্ছে। তাই এখনই এ দেশে ইন্টেরিয়র ডিজাইনারদের চাহিদা তৈরি হয়েছে। বাংলাদেশে ইন্টেরিয়র ডিজাইনারদের কাজের ত্রে ক্রমেই বাড়ছে। তাই সার্থকভাবে ইন্টেরিয়র ডিজাইন কোর্সটি শেষ করার পর সহজেই চাকরি পাওয়া যায়। সাধারণত যেসব েেত্র চাকরির সুযোগ রয়েছে সেগুলো হলোÑ দালান নির্মাণ, আবাস, প্রতিষ্ঠান, বিভিন্ন করপোরেট গ্রুপ, স্থাপত্য পরামর্শক প্রতিষ্ঠান, ইন্টেরিয়র ডিজাইন প্রতিষ্ঠান, আসবাবপত্র নির্মাতা ও বাজারজাতকরণ প্রতিষ্ঠান, বিভিন্ন নামিদামি হোটেল, বিজ্ঞাপন সংস্থাসহ বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানের স্থাপত্য বিভাগ। অনেক প্রতিষ্ঠান আছে, শতভাগ চাকরির সুবিধাসহ প্রশিণ দিয়ে থাকে। এ পেশার মূল সুবিধা হলো, অন্য পেশার পাশাপাশি প্রশিণ নিয়ে একে পূর্ণ পেশা হিসেবে নেওয়া যায়। চাকরির ক্ষেত্রে প্রশিক্ষিত ডিজাইনারদের চাহিদা বাড়ার কারণে বর্তমানে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে এ পেশায় যাওয়ার আগ্রহ বেড়েছে।
- ফ্রিল্যান্সার হিসেবে ইন্টেরিয়র ডিজাইন
বর্তমানে দেশে অনেক ইন্টেরিয়র ডিজাইন ফার্ম প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, যারা অত্যন্ত সফলতার সঙ্গে ইন্টেরিয়র ডিজাইন করে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে। ফলে এসব প্রতিষ্ঠানে অনেক চাকরির সুযোগও বাড়ছে। এর পাশাপাশি ইন্টেরিয়র ডিজাইন শেখার পর ফ্রিল্যান্সার হিসেবে কাজ করারও সুযোগ রয়েছে। তবে ফ্রিল্যান্সার হিসেবে কাজ করার জন্য সৃজনশীলতার পাশাপাশি চাই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করার মানসিকতাও। আমাদের দেশের অনেক তরুণ-তরুণী আপওয়ার্ক (ওডেস্ক) কিংবা ফ্রিল্যান্সার ডটকমে অটো ক্যাড অথবা থ্রিডি স্টুডিও ম্যাক্সের সাহায্যে বিভিন্ন ইন্টেরিয়র আইডিয়া ডিজাইন করে আয় করছেন হাজার ডলার। বর্তমানে দেশে অনেক ইন্টেরিয়র ডিজাইন কোম্পানি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, যারা অত্যন্ত সফলতার সঙ্গে ইন্টেরিয়র ডিজাইন করে যাছে।
- কোথায় শিখবেন
বাংলাদেশে বর্তমানে ইন্টেরিয়র ডিজাইন শেখানোর বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। তার মধ্যে বাংলাদেশ ইন্টেরিয়র ডিজাইন ডেভেলপমেন্ট (বিআইডিপি), ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ইউ অ্যান্ড অ্যালায়েন্স বিভাগ, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ডিজাইন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট, ইনস্টিটিউট অব ইনোভেটিভ ডিজাইনের নাম উল্লেখযোগ্য। এক বছর থেকে দুই বছর ও ছয় মাস মেয়াদি এসব কোর্সে খরচ পড়বে ৪০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা পর্যন্ত। তবে এককালীন বা কিস্তিতেও টাকা শোধ করা যায়। সে ক্ষেত্রে টাকা কম বা বেশি হতে হবে। এসব কোর্সে সাধারণত যেসব বিষয় পড়ানো হয়- ফোরিং, ফার্নিশিং, ফলস সিলিং, বিদ্যুৎ, আলো, এয়ারকন্ডিশনার, প্লাম্বিং, কিচেন ইত্যাদি।