‘সহজ সমাধান আছে’
- ড. শামসুল হক
দেশের পরিবহন খাতে যে নৈরাজ্য চলছে— এটা নতুন নয়। এই সমস্যার সমাধান করা যে অপরিহার্য, সেটা শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের কারণে এবার সরকার বুঝতে পারবে। এতদিন যে আমরা এত চেঁচামেচি করলাম, তাতে সরকারের কানে পানি গেল না। কিন্তু পুরো পরিবহন খাতে শৃঙ্খলা ফেরানো একদিনে সম্ভব নয়। এটা সময়সাপেক্ষ। কিন্তু যেটা প্রয়োজন সেটা হলো গণপরিবহন খাতে শৃঙ্খলা ফেরানো। এই কাজটি সহজেই করা সম্ভব। এ জন্য শুধু আন্তরিকতা প্রয়োজন। এটা করলে মালিক, চালক, সহযোগীর আয় কমে যাবে। এ জন্য তারা এটা করে না। কিন্তু কাজটা করা অনেক সহজ। এটা করতে হলে মহানগরীর সব গণপরিবহনকে চার থেকে ছয়টা করিডোরের আওতায় নিয়ে আসতে হবে। এই পদ্ধতিটা ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রয়াত মেয়র আনিসুল হক গুলশান-বনানী-বারিধারায় ‘ঢাকা চাকা’ নামের একটা বাস চালু করে দেখিয়ে দিয়েছেন। একই আদলে হাতিরঝিলে আরেকটি চক্রাকার বাস সার্ভিসও চালু করা হয়েছে। সেখানে কেউ হুড়োহুড়ি করে বাসে ওঠে না। যাত্রীরা লাইন ধরে গাড়িতে ওঠেন। চালকদের মধ্যে কে কত যাত্রী নেবে সে প্রতিযোগিতা করতে হয় না। ঠিক একইভাবে কয়েকটা কোম্পানির অধীনে বাসগুলোকে পরিচালিত করলে চালকদের মধ্যে অসুস্থ প্রতিযোগিতা বন্ধ হবে। চালককে বেশি যাত্রী তোলার জন্য আরেকটি বাসের আগে গিয়ে দাঁড়াতে হবে না। কারণ তখন তাকে বেতন দেবে কোম্পানি। হাতিরঝিল ও গুলশান-বনানীতে যেহেতু একটি পাইলট প্রকল্প করে সুফল পাওয়া গেছে, তাহলে অন্য সড়কে কেন এটা চালু করা যাবে না। এটা করলে চালকদের আয় কমবে, মালিকের আয় কমবে। এ জন্য তারা আগ্রহী নয়। কিন্তু একটি অথরিটির মাধ্যমে এই পদ্ধতি চালু করা ছাড়া কোনো বিকল্প নেই। তখন সবার আয়েও সামঞ্জস্য আসবে।
আজ দেখা যায় উবারের চালকরা ভদ্র। যাত্রীকে পারলে গাড়ির দরজাও খুলে দেয় নামার জন্য। কারণ ভালো ব্যবহার করলে সে মূল্যায়িত হবে। ১০ শতাংশ বেতন বেড়ে যাবে। এ জন্য সে যাত্রীর সঙ্গে ভালো ব্যবহার করে। উবারের চালকরা তো মঙ্গল গ্রহ থেকে আসেনি। কিন্তু ওই উবারচালকই যখন বাস চালায়, তখন সে তার ইচ্ছেমতো যা খুশি তাই করে। বর্তমানে যেভাবে গণপরিবহন ব্যবস্থা চলছে, তাতে ওই ধরনের খারাপ চালকই দিন শেষে মালিককে বেশি টাকা আয় করে দেয়। চালকও বেশি টাকা পায়। এ জন্য ওই ধরনের চালকদের কদর মালিকদের কাছে বেশি। এসব কারণে দিন দিন পরিবহন খাতে বিশৃঙ্খলা বাড়ছে। সরকার সেই বিশৃঙ্খলা বন্ধ করার জন্য সঠিক পরিকল্পনার পরিবর্তে ভুল পরিকল্পনা করছে। দেখা যাচ্ছে, জরিমানা বাড়িয়ে দিচ্ছে। কিন্তু পদ্ধতিটা এমন হওয়া প্রয়োজন, চালকের জরিমানা করারই প্রয়োজন পড়বে না। এ জন্য প্রয়োজন রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। সরকার চাইলে স্বল্প সময়ের মধ্যেই এটা বাস্তবায়ন সম্ভব। নগর পরিবহনে শৃঙ্খলা ফেরানোর জন্য এ ছাড়া কোনো বিকল্প নেই। সেটা না করে ভুল পরিকল্পনা করে সমস্যার সমাধান সম্ভব হবে না।
ড. শামসুল হক: নগর পরিবহন বিশেষজ্ঞ ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক