বই পড়া কেন জরুরি
- খান মাহবুব
কতটা এগোল বাংলাদেশ—এমন প্রশ্ন তোলা হলে অর্থনীতির বিভিন্ন ছক, ডাটা, পরিসংখ্যান কষে আর্থিক সূচকের একটা হিসাব কষা যাবে। কিন্তু মানুষ হিসেবে বাঙালির অগ্রায়নের চাকার হাল জানতে চাইলে বিপত্তি। মানবিকতা, দয়া, জিজ্ঞাসু মন, প্রশ্নাতীত মানুষ—এসব ইতিবাচক মানবিক দিক দিয়ে আমাদের এগুলোর পরিসংখ্যান করার, রাখার প্রয়োজনটা বোধ করি আমরা করি না। এ বিষয়ে আমাদের অগ্রগতির সূচকটাও মন্থর। আজ থেকে ৫০-৬০ বছর আগের সঙ্গে বর্তমান বাংলাদেশের তুলনা করলে সহজেই দৃশ্যমান হবে এখনকার গ্রামবাংলার জরাজীর্ণ বাড়িঘর, মেঠোপথের বিপরীতে আজ গ্রামের অজস্র পাকাবাড়ি, কার্পেটিং রাস্তা, জমজমাট বাজার, লিয়নসাইন, বিজলি বাতি ইত্যাদি। কিন্তু সেই সময়কার বাঙালি মধ্যবিত্ত ও নিম্ন মধ্যবিত্তের বাড়ির বইগুলো গেল কোথায়?
পূর্ববঙ্গের বাঙালিদের, বলা বাহুল্য যাদের অল্পবিস্তর পড়াশোনা এবং সামান্য সামর্থ্য ছিল তাদের বাড়ির উঠানে গাঁদা, শেফালি, শিউলি, বেলি, জবার যেমন দু-একটা গাছ শোভা পেত, তেমন ঘরের কামরায় রবিঠাকুর, শরৎ, বিভূতি, মানিক, বঙ্কিম, তারাশঙ্করসহ অনেকের বই থাকত। পারিবারিক পর্যায়ে বই পড়া এবং পাড়ার বই পড়ুয়াদের আন্তঃযোগাযোগ ছিল। বইয়ের আদান-প্রদান ছিল। সর্বোপরি মানসিক ভিত শক্ত করার জন্য বইপাঠের গরজও ছিল। সেদিনের বইগুলোয় প্রযুক্তির ছোঁয়া কম ছিল, তাই সৌকর্যে এখনকার মতো এতটা ঝলমলে, বর্ণিল ছিল না। তবে হাতে আঁকা প্রচ্ছদ পট, ব্লক, স্কেচ সব মিলিয়ে এক ধরনের নান্দনিকতা ছিল। সবচেয়ে বেশি ছিল বইয়ের তুল্যগুণ, বিষয় উপস্থাপন ইত্যাদি। এ বিষয়গুলো তো আর প্রযুক্তির দ্বারা উৎকর্ষ সাধন খুব একটা সম্ভব নয়। বইকে তৈরি করেন লেখক তার প্রজ্ঞা ও সংজ্ঞার সমন্বিত জ্ঞানের মাধ্যমে, যা লেখক অর্জন করে তার পঠন, দৃষ্টিভঙ্গি অভিজ্ঞতা অনেকটা হয়তো প্রকৃতি প্রদত্ত গুণে। আজ যেসব বইকে আমরা চিরায়ত বলে মান্য করি, সেসব বই পঠনে আমাদের বয়োবৃদ্ধজনদের মানসপট সাজিয়ে ছিল—ভবিষ্যৎ প্রজন্ম কী পারবে বর্তমানে প্রকাশিত বই মঞ্জরি পড়ে তাদের যথার্থ মানসপট তৈরি করতে।
‘প্রাগৈতিহাসিক’, ‘আম আঁটির ভেঁপু’ ‘হাঁসুলী বাঁকের উপকথা’ ‘দত্তা’, ‘পথের পাঁচালী’র মতো ক্ল্যাসিক সাহিত্য এখন হয় না। তিন দশকে প্রকাশিত বইয়ের নাম স্মৃতির জমিতে এঁটে রাখার মতো বই আমাদের সম্ভারে কয়টি। ভালো বই যে একেবারে প্রকাশ হচ্ছে না তা কিন্তু নয়। প্রাপ্তি ও প্রত্যাশার বিস্তর ফারাক। জনসংখ্যা যে হারে বেড়েছে পাঠক সে হারে বাড়েনি এটা সত্য। পাঠকের বইবিমুখতা—এ জন্য ভালো বইয়ের অভাব, পাঠকের সময় বা আগ্রহের অভাব, বইয়ের চাহিদার সঙ্গে জোগানের অভাব, নাকি অন্য কোনো কারণ এসব নিয়ে তর্ক চলতেই পারে। এ দেশের বই প্রকাশনার প্রাকলগ্নে অনেক প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান নানা স্লোগানে সৃজনকর্ম প্রকাশনায় হাত রাখে। কেউ বলে আমরা বই ছাপি না, আমরা ছাপি বিষয়, কারো বক্তব্য মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় আমাদের পথচলা। কারো বক্তব্য চেতনায় সৃজনের প্রত্যয়। বক্তব্যের তুল্যগুণ যতই থাকুক না কেন, বাস্তব প্রয়োগে প্রসাদগুণ কতটুকু—এ প্রশ্ন উঠতেই পারে। মোটাদাগে বলতে গেলে বাংলাদেশের প্রকাশনা কাঙ্ক্ষিত মানের নয়। পাঠকের জনসংস্কৃতি পাঠঘনিষ্ঠ নয়। নানা কারণে রিডিং সোসাইটি এ দেশে গড়ে ওঠেনি। আজ থেকে শতবর্ষ আগে পূর্ববঙ্গে রাজা রামমোহন রায় লাইব্রেরি, ঢাকা (১৮৭২); জনসন লাইব্রেরি, ঢাকা (১৮৭৮); ডিক্টোরিয়া পাবলিক লাইব্রেরি, নাটোর (১৯০১); অন্নদা গোবিন্দ পাবলিক লাইব্রেরি, পাবনা (১৮৯০); রাজশাহী পাবলিক লাইব্রেরি, রাজশাহী (১৮৮৪); নীলফামারী সাধারণ গ্রন্থাগার, নীলফামারী (১৮৮৩); হরেন্দ্রলাল পাবলিক লাইব্রেরি, মুন্সীগঞ্জ (১৯০৮); রাম নারায়ণ পাবলিক লাইব্রেরি, নড়াইল (১৯০৭); প্যারিমোহন সাধারণ পাঠাগার, নওগাঁ (১৯০১); সাধারণ গ্রন্থাগার (সাবেক রমেশ হল), টাঙ্গাইল (১৮৯০) প্রতিষ্ঠিত এ লাইব্রেরিগুলো পূর্ববঙ্গে মগজের লড়াই জাগ্রত করার দ্বীপশিখা জ্বেলেছিল। আজ মূল্যায়নের জন্য যদি বলি সাম্প্রতিক সময়ে কতগুলো মানসম্মত লাইব্রেরি গড়ে উঠেছে? উত্তরটা সুখকর হবে না। একটা সময় সমাজপতিদের বাড়িতে কিংবা ব্যক্তিগত উদ্যোগেও গ্রন্থের বিশাল সমাহার ছিল।
এ তালিকায় আছে ঢাকার নবাববাড়ি, নাটোরের মহারানি, টাঙ্গাইলের জমিদার ওয়াজেদ আলী খান, চাঁদমিয়া কেরাটিয়া সন্তোষের জমিদার, ধনবাড়ির জমিদার, রংপুরের কু-িনগরের জমিদার প্রমুখ। ঢাকার নবাব স্যার সলিমুল্লাহ এবং ধনবাড়ির জমিদার নবাব নওয়াজ আলী চৌধুরী তো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম উদ্যোক্তা ও পৃষ্ঠপোষক। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ঢাকার নবাবদের জমি এবং ধনবাড়ির জমিদারের বড় অর্থায়নে প্রতিষ্ঠিত আজ যাদের বিদ্যোৎসাহী বলি প্রচার দেখি তাদের বিদ্যা প্রসারে অন্তরের মমত্ব কতটুকু?
বই জাগরণ ঘটায় মনের ভেতর থেকে। জাতির মুক্তির জন্য সাম্প্রতিক সময়ে কোনো ত্রাতার আবির্ভাবের সম্ভাবনা কম তাই জাগরণের জন্য বইয়ের সান্নিধ্য জরুরি। কিন্তু আমাদের বইয়ের সঙ্গে আত্মীয়তা দিন দিন কমে যাচ্ছে। বইকে অনেকেই বিনোদনের একটা মাধ্যম বলে। কিন্তু বই বিনোদনের সঙ্গে দর্শন মনোজগৎ, আশ্রয়স্থল ইত্যাদি হিসেবেও বড় আঙিনায় কাজ করে। এ বিষয়গুলোকে মাথায় নিয়ে আমাদের বই আন্দোলন হতে পারে। সমস্যা হচ্ছে, বিনোদনের অন্য মাধ্যমগুলো যেভাবে নিত্যনতুন চমক ও মোড়ক নিয়ে ভিজুয়াল হচ্ছে এবং সেটা গ্রহণে সময় ও মনোযোগ কম ব্যয় করতে হচ্ছে, সে তুলনায় বই ততটা আকর্ষণ করতে পারছে না। আমাদের কোমলমতি ছেলেমেয়েদের জন্য ভিজুয়াল বই কিংবা নানা আঙ্গিকের ও বিষয়বৈচিত্র্যে ভরপুর বইও কম। পাঠক সৃজনের বড় কারখানা পাঠাগার। সারা দেশে গণগ্রন্থাগারের নিয়ন্ত্রণে প্রায় ৭০টি এবং জাতীয় গ্রন্থাগারের অনুদানে প্রায় হাজার খানেক পাঠাগার চালু থাকলেও এদের উপস্থিতি পাঠকের ভুবনে তেমনটা নয়। সরকার অগ্রাধিকার খাত বিবেচনায় শিক্ষা, স্বাস্থ্য যোগাযোগকে যে দৃষ্টিতে দেখে, সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় বা সংস্কৃতির পৃষ্ঠপোষকতায় সেভাবে নয়। এটা সব সরকারের ক্ষেত্রেই কমবেশি সর্বজনীন। তিন দশক ধরে অমর একুশে গ্রন্থমেলার উদ্বোধন, একুশের অনুষ্ঠানে সরকারি কর্তাদের বক্তব্য হৃদয়গ্রাহী ও আকর্ষণীয় হলেও সরকারি বই ক্রয়ে বাজেট রীতিমতো হাস্যকর। গণগ্রন্থাগার অধিদপ্তর, জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র সর্বসাকল্যে বার্ষিক বই ক্রয় ৩ কোটি টাকার নিচে। অথচ আমাদের জনসমষ্টি ১৬ কোটি। সরকারের গ্রামের মরাখালে কালভার্ট নির্মাণেও অনেক সময় ৪-৫ কোটি টাকা ব্যয় হয়, অথচ নলেজ বেইজ সোসাইটি গড়তে বই ক্রয়ের বাজেট বেহাল। গণগ্রন্থাগারে এনাম কমিশন রিপোর্ট (১৯৮২); জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র আইন, (১৯৯৫); বাংলা একাডেমি আইন, (২০১৩) সবই জাতির মেধা-মনন উত্তুঙ্গে পৌঁছে দেওয়ার বক্তব্য আছে; কিন্তু বাস্তবসম্মত উদ্যোগ কতটুকু? আজও সরকারি উদ্যোগে উপজেলা পর্যায়ে লাইব্রেরি স্থাপন হয়নি, বেসরকারি লাইব্রেরি পরিচালনায় কোনো নীতিমালা ও ব্যবস্থাপনায় তদারকি নেই। বাংলা একাডেমি নিজস্ব কিছু ভালো প্রকাশনা থাকলেও সার্বিক প্রকাশনা জগৎকে এগিয়ে নিতে উদ্যোগ নেই, তরুণ লেখক প্রশিক্ষণ প্রকল্প নেই, সম্পাদক তৈরির প্রশিক্ষণ নেই। যদিও এসব বাংলা একাডেমির একক বিষয় নয়, পুরোটা অনেক সংস্থা ও সংগঠনের দায়িত্ব আছে এসব উদ্যোগের কিছু ‘বাঙালি জাতিসত্ত্বা ও বুদ্ধিবৃত্তিক উৎকর্ষের প্রতীক’ হিসেবে এই প্রতিষ্ঠানের কাছে আমাদের আরও অনেক চাওয়া।
দেশের প্রকাশনার মান উন্নত নয় এই অজুহাতে নানা গোষ্ঠীর প্রতি আঙুল তোলা যায়। কিন্তু ফেব্রুয়ারি মাস এলেই কেন সবার ঘুম ভাঙে। সারা বছর বই প্রকাশের কর্মযজ্ঞ থাকলে তো আরও বেশি ভালো মানের বই প্রকাশ করা যায়। তবে কেন ফেব্রুয়ারিতে এসব বই আয়োজন। বই প্রকাশের মান নিয়ে অনেক প্রেসক্রিপশন দেওয়া যায়, যেমন—প্রকাশনা এখনো শিল্পের ঘোষণা পায়নি, এ সেক্টরে পেশাদারি লোকের অভাব, সনাতনী উৎপাদন পদ্ধতি, দুর্বল বিপণন নেটওয়ার্ক, সরকারি পৃষ্ঠপোষকতার অভাব, পুঁজি ও ব্যাংকঋণের স্বল্পতা, প্রচারের অভাব ইত্যাদি। এসব সমস্যা থেকে উত্তরণের জন্য আমাদের সবার একটা সার্বিক বোঝাপড়া প্রয়োজন। আজ বাংলা ভাষার বানান সংস্কার হয়নি। বাংলা একাডেমির প্রমিত বানান রীতি থাকলেও সবল পক্ষ তা যথার্থভাবে অনুসরণ করে না। আর বাক্য গঠন, ক্রিয়াপদের ব্যবহার, ব্যাকরণের নানা অনুষঙ্গের অনুসরণে মতমতান্তরের অন্ত নেই। ফলে প্রকাশনা সেক্টর চলছে অগোছালোভাবে। এর ভেতর অনেকে ভালো কিছু বই প্রকাশ করছে, যা সার্বিক প্রকাশনার গাণিতিক হিসাবে মোটা কোনো প্রভাবক নয়। এখনো আমরা প্রকাশনার সনাতনী শতায়ু নিয়ে টিকে থাকা সমস্যার সমাধানে পুরোপুরি সফল নই। মানসম্মত পাল্ডুলিপি, সম্পাদনার সমস্যা, অনুবাদকের অভাব, লেখক-প্রকাশক সম্পর্ক, বইয়ের মূল্য নির্ধারণের সমস্যা, পাইরেসি, প্রকাশনা সংগঠনের দুর্বলতা, অবিন্যস্ত গুদাম ব্যবস্থাপনা, লগ্নি টাকার অনিশ্চয়তা ইত্যাদি—এসব চলার পথের সঙ্গী। এসব সমস্যা মঞ্জরীকে সারথি করেই চলছে সৃজনশীল প্রকাশনা।
পাঠক তৈরির সবচেয়ে সহায়ক পরিবেশ তৈরি হয় পাঠ্যপুস্তকে সহায়ক গ্রন্থে, সৃজনশীল গ্রন্থে। পাঠ্যপুস্তক, কোচিং, স্কুল এসবের চাপে সৃজনশীল পাঠে শিক্ষার্থীদের সময় একেবারেই অনুপস্থিত। সৃজনশীল পদ্ধতির চাপে এখন সৃজনশীল কিংবা সাদামাটাভাবে বলতে আউট বইগুলো আজ অপাঠ্য বইয়ের স্থানে জায়গা করে নিয়েছে। শিশু বয়সে পাঠ্যবইয়ের হাতেখড়ির সঙ্গে সৃজনশীল বইয়ের পরিচয় ঘটানো প্রয়োজন। এই আয়োজনে নিয়ামকের ভূমিকায় পরিবার, বিদ্যালয় ও সামাজিক সংগঠনকে উদ্যোগী হতে হবে। শিশুতোষ প্রকাশনার স্বর্ণযুগে দিগদর্শন, মৌচাক, সসার হাত ধরে সুকুমার রায়ের ‘সন্দেশ’ পত্রিকা শুধু শিশুদের উপযোগী পত্রিকাই ছিল না—মুদ্রণ ও প্রকাশনায় এনে দিয়েছিল নতুন দ্বার। সুকুমার রায়ের পর তার খ্যাতিমান পুত্র সত্যজিৎ পত্রিকাটিতে নতুন মাত্রার লেখা, রেখা ও অঙ্কন দিয়ে পত্রিকাকে নিয়ে গেছে নতুন উচ্চতায়। এ রকম অনেক উদাহরণ আছে অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর (১৮৭১-১৯৫১)-এর প্রকাশিত ‘বুড়ো আংলা’ (১৯৪১) বইটি শিশুমনের জন্য নব ব্যঞ্জনা সৃষ্টি করল। এ ধারায় ‘ক্ষীরের পুতুল’ রাজকাহিনী নাম প্রাণিধানযোগ্য। আজও কিছু ভালো কাজ হয়, সম্প্রতি চিত্রশিল্পী সব্যসাচী হাজরার ছোটদের বর্ণমালা পরিচয়ের বই দুটি আঙ্গিক ও বিষয়বস্তু বিবেচনায় প্রশংসার দাবিদার, কিন্তু এসব উদাহরণ স্বল্প। তাই প্রকাশকরা আজ পুরনো পাঠকপ্রিয় বইগুলো পুনঃমুদ্রণ করে শতায়ু দিয়ে টিকিয়ে রাখে, একই সঙ্গে সামাজিক দায়বদ্ধতা ও ব্যবসায়িক টিকে থাকার স্বার্থে।
আজকাল প্রকাশিত বইয়ের নাম দীর্ঘদিনের জন্য পাঠকের মনে দাগ যেমন কাটে না, তেমনি প্রকাশক এমনকি লেখকও নিজের অনেক পুরনো বইয়ের স্মৃতি নিয়ে এগোয় না। সৃজনের এ জায়গাটিতেও সবার দরদ ও গরজ কম। ডিজিটাল যুগে সবাই গুগল, ফেসবুকসহ নানা মাধ্যমের আশ্রয়ে আশ্রিত। লেখক, পাঠকের তাই কাগজের বই সময় ও মনোনিবেশ সহযোগ পড়ার ফুরসৎ কই। চটজলদি কাজের অভ্যস্ততায় মানুষ লেখালেখির কাজটিও দ্রুত সারতে চায় কিন্তু এটা তো বড় শ্রমের কাজ। এ কাজে কঠিন শ্রম ও ধৈর্য অনিবার্য। কিন্তু এসব মান্য করা হয় না বলেই ভালো বই হয় না। লেখক, সম্পাদক, প্রকাশক কেউ দীর্ঘসময় নিবেদন দিতে পারে না বা দেওয়ার সুযোগ থাকে না। ফলে ভালো বই এবং ভালো লেখক নেই। সবচেয়ে বেশি নেই ভালো মানুষ। ভালো মানুষের বড়ই আকাল। এখন কোনটা আগে বলে বই সৃজন করে ভালো মানুষ সৃজন, নাকি ভালো মানুষ সৃজন করে ভালো বই? এসব ভালোর সারথি হতে হবে ভালো প্রকাশক, সম্পাদক, পাঠকের।
সব কাজ একসঙ্গে, নাকি পর্যায়ক্রমে। তবে সবটা যে একসঙ্গে জড়িয়ে, সেটা নিশ্চিত। এখন প্রয়োজন সবাই একসঙ্গে এগিয়ে এসে একটা বোঝাপড়া করা—তবেই হয়তো সম্ভব…।
খান মাহবুব : গবেষক ও প্রকাশক, খণ্ডকালীন শিক্ষক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
সূত্র: আমাদের সময়