মাস্কের দাম: মানুষের দামের হিসাব কি কেউ রাখছেন?
- আল সানি
জাপানে একবার মুলা চাষ করে ব্যাপক লাভবান হয়েছেন একজন কৃষক। খেতের অর্ধেক মুলা বিক্রি করতেই কাঙ্ক্ষিত লাভ উঠে আসে। তাই কৃষক সিদ্ধান্ত নিলেন, বাকি অর্ধেক বিক্রি না করে জমি সবার জন্য উন্মুক্ত করে দেবেন। যাতে সবাই ফ্রিতে প্রয়োজনমতো নিতে পারে। কিন্তু দেখা গেল কেউ একটির বেশি মুলা নিচ্ছে না। কারণ, কারও এর অতিরিক্ত প্রয়োজন নেই। তাদের যখন প্রশ্ন করা হয়, মাত্র একটি নিচ্ছেন কেন? জবাবে তারা বলে, ‘অন্য লোকদের নেওয়ার সুযোগ দিতে চাই।’
এবার একটু বাংলাদেশের কথা কল্পনা করি। সরকারের পক্ষ থেকে গতকাল রোববার রাতে ঘোষণা দেওয়া হলো বাংলাদেশে তিনজন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত। সবাইকে পরিষ্কার থাকা ও বাইরে মাস্ক পরে চলাচল করতে বলা হলো। অথচ রাতের ভেতর বাংলাদেশের বাজারে মাস্ক–সংকট।
শেষের এ দুটি খবর আমাদের খুব ভাবাচ্ছে। একটি হলো, তিন বাংলাদেশি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত। অন্যটি হলো, হঠাৎ করেই বাজারে মাস্ক–সংকট। একটি প্রাকৃতিক সংকট, আরেকটি আমাদের মতোই মানুষেরা তৈরি করেছি। আমরা চাইলেই প্রকৃতির সঙ্গে পেরে উঠতে পারি না। তবে চেষ্টার ত্রুটি কেউই রাখছেন না। কিন্তু আমরা মানুষের সঙ্গে কোনোভাবেই যেন পেরে উঠতে পারছি না।
কিছুদিন আগে আমাদের ভেতরের একশ্রেণির মানুষ পেঁয়াজ মজুত করে রাখলেন, পেঁয়াজের আকাশচুম্বী দাম হলো। তবু আমাদের কিছুই করার ছিল না। আমরা বেশি দাম দিয়েই পেঁয়াজ কিনলাম। প্রতি রোজার সময় স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি দাম থাকে নিত্যপ্রয়োজনীয় সব পণ্যের, তাই আমাদের বেশি দামেই কিনতে হয়। কারণ, আমাদের বেঁচে থাকতে হবে। বাজারে সংকট থাকে না কোনো পণ্যের। যাঁর টাকা বেশি, তিনি বেশি করে কিনবেন। যাঁর কম, তিনি কম কিনবেন। কিন্তু এখনকার প্রেক্ষাপট পুরোটা ভিন্ন। ফার্মেসিতে কোথাও কোনো মাস্ক নেই। তবে আপনার যদি এ দেশে বেঁচে থাকার প্রবল আগ্রহ থাকে, তাহলে মাস্ক পাবেন, কিন্তু ৫ বা ১০ গুণ অতিরিক্ত টাকা আপনাকে গুনতে হবে।
১০ থেকে ১৫ টাকার যে মাস্কগুলো বাসে–রাস্তায় বিক্রি হতো, সেগুলো এখন ৫০ টাকার ওপরে। একবার ব্যবহার করা যায়, এ রকম মাস্ক ৩০ টাকার ওপরে। আর একটু ভালো মানের নিতে হলে পকট থেকে খসাতে হবে ৩০০ টাকার ওপরে, যেগুলো আগে ছিল ৫০ থেকে ৬০ টাকা।
আমরা হুজুগে জাতি, আমরা ব্যবসায়ী জাতি। ব্যবসার এই মৌসুম তো সব সময় আসবে না। তাই ব্যবসা করে নিচ্ছি। সবার দিকে তাকাতে গেলে তো ব্যবসা হয় না। তাই দাম বাড়িয়ে দাও সবকিছুর। কিন্তু এই যে সবকিছুর দাম বাড়াতে গিয়ে আমরা যে মানুষের দামটাই কমিয়ে দিয়েছি, সে হিসাব কি আদৌ কেউ রেখেছেন?
লেখক: শিক্ষার্থী, সাউথইস্ট বিশ্ববিদ্যালয়