করোনাকালে শিক্ষা কার্যক্রম, মডেল হতে পারে ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়
- আশিকুল ইসলাম অর্ণব
করোনাভাইরাস মহামারীর প্রভাবে সবচেয়ে বড় বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে বিশ্বের শিক্ষাব্যবস্থা। জাতিসংঘের হিসাবমতে, বিশ্বের প্রায় ১৬০ কোটি শিক্ষার্থী এতে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। এ ক্ষতি অপূরণীয়।
জাতিসংঘ গত আগস্টে কোভিড-১৯ ও শিক্ষা সংক্রান্ত যে নীতিমালা প্রকাশ করেছে সেখানে শিক্ষার সামগ্রিক ক্ষতির চিত্র তুলে ধরে এ মৌলিক মানবাধিকারটি নিয়ে কিছু আশংকার কথাও জানানো হয়েছে। করোনাকালের ধকল সামলে নিতে সরকার ও বিভিন্ন সম্প্রদায়কে পদক্ষেপ গ্রহণের পরামর্শ দিয়েছে সংগঠনটি।
ক্ষতি পোষাণোর চেষ্টায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ইতোমধ্যে নানা উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।
করোনার আগ্রাসন থেকে মুক্ত নয় বাংলাদেশ। গত ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনাভাইরাস সংক্রমিত রোগী চিহ্নিত হবার কয়েকদিন পরই সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করে সরকার। পরবর্তীতে কয়েক ধাপে বন্ধের মেয়াদ বেড়েছে। সর্বশেষ সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, আগামী ০৩ অক্টোবর পর্যন্ত বন্ধ থাকবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এরমধ্যে স্কুল খোলার প্রস্তুতি হিসেবে কিছু নির্দেশনা জারি করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
বলা চলে, প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষাব্যবস্থাকে কেন্দ্র করে পরিকল্পনা গৃহীত হচ্ছে। কিন্তু দেশের বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে সমন্বিত কোনও পরিকল্পনার খবর চোখে পড়ছে না। যদিও শিক্ষামন্ত্রী বলছেন, করোনাকালীন ও করোনা পরবর্তীকালে শিক্ষায় কি ধরণের পরিবর্তন হবে তা নিয়ে কাজ করছে মন্ত্রণালয়।
দেশ করোনা আক্রান্তের সাত মাস চলছে। দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো যাতে অনলাইনেই নির্বিঘ্নে কার্যকর শিক্ষা কার্যক্রম চালাতে পারে সেই ব্যবস্থাপনা জরুরি ছিল।
করোনা পরবর্তীকালে যে ‘নতুন স্বাভাবিক’ এর কথা উচ্চারিত হচ্ছে তা নিশ্চিতভাবেই মানুষের জীবনাচারণ, ধ্যানধারণায় পরিবর্তন আনবে। শিক্ষা এর বাইরে নয়।
মহামারীর মতো কঠিন সময়ে দেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় যেভাবে শিক্ষা কার্যক্রম চালু রেখেছে তা নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবি রাখে। এখানে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা অনলাইন প্ল্যাটফর্ম ‘ব্লেন্ডেড লার্নিং সেন্টারের (বিএলসি)’ এর সর্বোচ্চ সুবিধা পাচ্ছি।
এছাড়া জি-সাইটের মাধ্যমে আনলিমিটেড ক্লাউড স্টোরেজসহ বেশকিছু ডাইনামিক কমিউনিকেশন টুল ব্যবহার করতে পারছি। সেগুলোর মাধ্যমে আমরা শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের অ্যাসাইনমেন্ট, কুইজ, ফোরাম ডিসকাশন, চ্যাট, ইন্টার্যাক্টিভ কনটেন্ট, জরিপ, পীর রিভিউ কর্মশালা, কোর্স উইকি, অ্যাডাপটিভ লেসনসহ নানা ধরনের কোর্স ম্যাটেরিয়াল দিতে পারছি। এছাড়াও কাহুত, কুইজিজ, ফ্লিপগ্রিড, প্যাাডলেট ইত্যাদি প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা নিজেদের দক্ষতাকে সমৃদ্ধ করছি।
প্রযুক্তির মাধ্যমে আমরা শিক্ষার্থীদের সকল অগ্রগতি ট্র্যাক করতে পারছি, তাদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিতে পারছি। সকল তথ্য প্ল্যাটফর্মে সংরক্ষিত থাকছে। ফলে ঝুঁকিপূর্ণ শিক্ষার্থীদেরকে সনাক্তকরণ, তাদের অতিরিক্ত যত্ন ও কাউন্সেলিংয়ের ব্যবস্থা সহজ হচ্ছে।
বিএলসি প্ল্যাটফর্ম স্থানীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে ক্লাউড ইনফাস্ট্রাকচারের মাধ্যমে ডিজাইন করা ফলে শিক্ষার্থীরা দূরবর্তী যেকোনো জায়গায় বসে সরাসরি ক্লাস করাসহ জ্ঞানার্জনের সকল মাধ্যমে যুক্ত থাকতে পারছে। দুর্বল ইন্টারনেট সংযোগের কারণে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা যাতে ব্যাহত না হয় সে ব্যবস্থাও রয়েছে।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিএলসি’র ব্যবহার আগে থেকেই রয়েছে। করোনাকালে এর প্রয়োজনীয়তা ও গুরুত্ব বহুগুণে বৃদ্ধি পেয়েছে। করোনা পুরো বিশ্বব্যবস্থাকে যেভাবে পাল্টে দিয়েছে সেখানে সামনের দিনগুলোতে আমাদেরকে পূর্বের যেকোন সময়ের চেয়ে বেশি সতর্কতা ও যেকোন পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুতি নিয়ে চলতে হবে।
২০১৩ সালে দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতার সময় ড্যাফোডিল বিএলসি’র ব্যবহার শুরু করলেও করোনাকালে এর বিস্তৃতি বেড়েছে। বর্তমান সেমিস্টারে ১৬ হাজারেরও অধিক শিক্ষার্থীকে এই প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে ১৬৪৭টি কোর্স পড়ানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে।
শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা নতুন শিক্ষা কার্যক্রম ব্যবস্থার মাধ্যমে ভবিষ্যত বিশ্বের জন্য নিজেদের তৈরি করছি। এক্ষেত্রে ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয় অন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে মডেল হতে পারে।
লেখক: শিক্ষক, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি।