তুরস্কে আন্তর্জাতিক স্বর্ণপদক পেলেন ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী ড. শাহেন শাহ

তুরস্কে আন্তর্জাতিক স্বর্ণপদক পেলেন ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী ড. শাহেন শাহ

বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ইলেকট্রনিক্স এবং টেলিকমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং (ইটিই) বিভাগের প্রাক্তন শিক্ষার্থী ড. এ এফ এম শাহেন শাহ ৩২তম আন্তর্জাতিক আবিষ্কার, উদ্ভাবন ও প্রযুক্তি প্রদর্শনী (আইটেক্স) আয়োজনে স্বর্ণপ্রদক লাভ করেছেন। মালয়েশিয়ায় ১৩-১৪ ডিসেম্বর আইটেক্সের ৩২তম আসর হাইব্রিডমুডে অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে এ বাংলাদেশিকে সেরা পুরস্কার দেওয়া হয়।

সহকারী অধ্যাপক ড. এ এফ এম শাহেন শাহের নেতৃত্বে ড. মো. আলী কারাবুলুত, ড. হাজি ইলহান ও ড. উফুক তুরেলি তাদের উদ্ভাবনটি প্রদর্শন করেন। ড. শাহেন শাহের পিএইচডি কাজের একটি অংশ ছিল ‘স্বায়ত্তশাসিত গাড়ির জন্য একটি অভিনব ক্লাস্টার-ভিত্তিক ম্যাক প্রোটোকলের ডিজাইন এবং অপ্টিমাইজেশন’, যা তাদের প্রদর্শনীর মূল বিষয়বস্তু। উদ্ভাবনটির মূল উদ্দেশ্য হলো ব্যবহারকারীর গতিশীলতার কারণে প্রতিবন্ধকতা কমিয়ে স্বায়ত্তশাসিত গাড়ির অ্যাডহক নেটওয়ার্কে যোগাযোগের নির্ভরযোগ্যতা বৃদ্ধি করা।

এছাড়া উচ্চতর থ্রুপুট ও কম বিলম্বের মাধ্যমে যোগাযোগের গুণমান উন্নত করা। সুরক্ষা বার্তাগুলোর যোগাযোগের ক্ষেত্রে ১০০ মিলি সেকেন্ডের বেশি দেরি হওয়া উচিত নয়। এই ক্লাস্টার-ভিত্তিকম্যাক প্রোটোকলটি গাড়ি শিল্পের জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে। ফোর্ড, গুগল, মার্সিডিজ-বেঞ্জ, টেসলা, উবার ইত্যাদি কোম্পানি যারা সম্পূর্ণ স্বায়ত্তশাসিত গাড়ি চায় তারা এটি ব্যবহার করতে পারেন।

এই ক্লাস্টার-ভিত্তিক সিবি-ম্যাক প্রোটোকল সহজে কম খরচে প্রয়োগ করা যেতে পারে কারণ সিবি-ম্যাক প্রোটোকল সফ্টওয়্যার সংজ্ঞায়িত এবং প্রোগ্রাম যোগ্য। এটি ব্যয়বহুল সেন্সর হ্রাস করে। কিন্তু, সিবি-ম্যাক প্রোটোকল আই.ই.ই.ই. ৮০২.১১ এর সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ, যা দীর্ঘ দিন ধরে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। এটি পরিবেশ বান্ধব, কারণ ক্ষতিকারক নির্গমন হ্রাস করে, মুদ্রিত নথির প্রয়োজন হয় না এবং এটি হার্ডওয়্যারের ব্যবহার কমায়।


ড. এ এফ এম শাহেন শাহ বর্তমানে তুরস্কের ইলদিজ টেকনিক্যাল ইউনিভার্সিটির সহকারী অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত আছেন। ২০২০ সালে তিনি এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ইলেকট্রনিক্স এবং যোগাযোগ প্রকৌশল বিভাগ থেকে বিশেষ কৃতিত্বের সঙ্গে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। ড. এ এফ এম শাহেন শাহ ২০০৯ সালে ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি থেকে ইলেক্ট্রিক্যাল ও টেলিকমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ থেকে বিএসসি অনার্স পাশ করেন। পরে উচ্চ শিক্ষার জন্য তুরস্ক গমন করেন।


আইটেক্স এমন একটি আন্তর্জাতিক প্লাটফর্ম, যেখানে পরিসংখ্যান অনুযায়ী ৭২টি দেশের ৫০০টি আন্তর্জাতিক উদ্ভাবন বিভিন্ন বিভাগে প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়। এই আন্তর্জাতিক জুরিবোর্ড পাঁচটি মানদন্ডের ওপর ভিত্তি করে প্রতিটি উদ্ভাবনের মূল্যায়ন করে: অভিনব এবং উদ্ভাবনী, কার্যকারিতা, উপযোগিতা এবং প্রয়োগ, বাজার এবং বাণিজ্যিক দৃষ্টিভঙ্গি, এবং পরিবেশ-বান্ধব।


বহুস্তরে মূল্যায়নের ওপর ভিত্তি করে, সেরা কাজগুলোকে স্বর্ণ, রৌপ্য এবং ব্রোঞ্জ পদক দেওয়া হয়। ড. এ এফ এম শাহেন শাহের উদ্ভাবনটি জুরিবোর্ড থেকে উল্লেখযোগ্য গুরুত্ব পেয়েছে এবং স্বর্ণ পদকের জন্য নির্বাচিত হয়েছে। এটি উদ্ভাবন দলের জন্য একটি অত্যন্ত মর্যাদাপূর্ণ এবং প্রতিযোগিতামূলক আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি। উদ্ভাবনটি জুরিবোর্ড থেকে উল্লেখযোগ্য গুরুত্ব পেয়েছে এবং স্বর্ণপদকের জন্য নির্বাচিত হয়েছে। এটি যে কোনো উদ্ভাবন দলের জন্য একটি অত্যন্ত মর্যাদাপূর্ণ এবং প্রতিযোগিতামূলক আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি

ড. এ এফ এম শাহেন শাহের বর্তমান গবেষণার আগ্রহের মধ্যে রয়েছে তারবিহীন যোগাযোগ, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, ৬-জি, ক্রস-লেয়ার নকশা, ব্লকচেইন ইত্যাদি। আন্তর্জাতিক সম্মেলন ও জার্নালে তিনি অনেক গবেষণা পত্র প্রকাশ করেছেন। তিনি ইনস্টিটিউট অব ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ার্সের (আইইইই) সিনিয়র সদস্য ও ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট বাংলাদেশের (আইইবি) আজীবন সদস্য।

Sharing is caring!

Leave a Comment