কেমন হবে আপনার ভবিষ্যৎ ব্যাংকিং
- আশিষ বিরলা
বিগত কয়েক বছর ধরে আমরা অ্যাপল কার্ড, ফেসবুকের লিব্রা, উবার মানি, স্কোয়ার ক্যাশ, গুগল পে ইত্যাদি ব্যবহার করতে করতে এখন প্রায় অভ্যস্থ হয়ে গেছি। ব্যাংক লেনদেনের ক্ষেত্রে এইসব পরিসেবা এখন অধিকতর সুবিধাজনক এবং সময় সাশ্রয়ী। কোভিড-১৯ মহামারির কারণে এসব ডিজিটাল পেমেন্ট ব্যবস্থার ব্যবহার এখন অনেক বেশি বেড়ে গেছে।
আগে আমরা দেখতাম, ব্যাংকের অর্থ লেনদেন প্রক্রিয়া ছিল অনেক ধীর গতির, সময়সাপেক্ষ এবং ব্যয়বহুল। বিগত পঞ্চাশ বছরের ব্যবধানে প্রযুক্তির উন্নয়ন সারা বিশ্বকে নানা দিক থেকে বদলে দিয়েছে। ব্যাংকিং খাতও এই বদলের বাইরে নয়। প্রযুক্তির কল্যাণে ব্যাংকিং কর্মকাণ্ড অনেক সহজ ও গতিশীল হয়েছে।
মানুষ এখন প্রযুক্তিকে বিশ্বাস করে
আর্থিক লেনদেনের ক্ষেত্রে প্রযুক্তির উপর মানুষ খুব একটা আস্থা রাখত না। মানুষ মনে করত, ভার্চুয়াল লেনদেনের মাধ্যমে কখন, কীভাবে টাকা লোপাট হয়ে যায় কে জানে! কিন্তু আস্তে আস্তে মানুষের এই ভ্রান্ত ধারনা বদলে গেছে। মানুষ এখন অনেক বেশি প্রযুক্তির উপর আস্থাশীল। গুগল ও অ্যাপলের প্রযুক্তিবীদরা বলছেন, গত বছর তাদের প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করেছেন প্রায় ১.৪ বিলিয়ন মানুষ। এই বিশাল গ্রাহক শ্রেণির বিশ্বস্ততা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছেন তারা।
অ্যামাজনের কথাই ধরা যাক। বই বিক্রি দিয়ে শুরু। এখন আসবাবপত্র থেকে শুরু করে নিত্য প্রয়োজনীয় সবকিছুই কেনাবেচা করা যায় এই প্ল্যাটফর্মে। আর এইসব কেনাবেচায় আর্থিক লেনদেন হয় ভার্চুয়াল মাধ্যমে।
এশিয়ার কোটি কোটি গ্রাহক এখন গোজেক ও গ্রাবের মতো সুপার অ্যাপস ব্যবহার করে। তারা বুঝতে পেরেছে, এই ডিজিটাল বিশ্বে পেমেন্ট পরিষেবার ক্ষেত্রেও ডিজিটাল না হয়ে উপায় নেই।
অবকাঠামোগত সুবিধা
একটা সময় ছিল যখন প্রযুক্তির বড় বড় প্রতিষ্ঠানগুলোর বিশাল অবকাঠামো ছিল। কিন্তু এখন সফটওয়্যার প্রযুক্তির অভূতপূর্ব উন্নয়নের ফলে সেই অবকাঠামোর প্রয়োজন হচ্ছে না। স্বল্প পরিসরেই বিশাল বিশাল জায়ান্ট প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা সম্ভব হচ্ছে। যেহেতু বড় বড় অবকাঠামো তৈরি করতে হচ্ছে না, তাই পরিবেশ ও জলবায়ুও সুস্থ স্বাভাবিকভাবে বিকশিত হতে পারছে।
মেক্সিকো, ইংল্যান্ড, সিঙ্গাপুরসহ অনেক দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো পুরোপুরি প্রযুক্তিনির্ভর হয়ে পড়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে ‘স্কয়ার’ নামে একটি আর্থিক সেবাপ্রদানকারী অ্যাপ রয়েছে, অ্যাপটি সম্প্রতি ফেডারেল ডিপোজিট লাইসেন্স করপোরেশন থেকে ব্যাংকিং লাইসেন্স পেয়েছে। অপরদিকে এই ডিসেম্বর থেকে সিঙ্গাপুরের আশপাশের দেশগুলোতে ডিজিটাল ব্যাংকিং করতে চায় গ্র্যাব—এই মর্মে আবেদনও করেছে।
তাহলে ব্যাংকগুলোর কী হবে?
অ্যাকসেন্টারের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে ২০২৫ সালের মধ্যে ডিজিটাল পেমেন্ট এবং নন-ব্যাংকিং পেমেন্ট প্রতিযোগিতার কারণে ব্যাংকগুলি অন্তত ২৮০ বিলিয়ন ডলার ক্ষতির সম্মুখীন হবে। এই ক্ষতি সামলানোর জন্য ব্যাংকগুলোকে অবশ্যই অবকাঠামোর আধুনিকায়ন করতে হবে এবং নতুন ও উদ্ভাবনী আর্থিক পরিষেবার জন্য ব্লকচেইনের দিকে যেতে হবে। ব্লকচেইন অনেক বেশি দ্রুত এবং সুরক্ষিত ব্যাংকিং ব্যবস্থা। এটি বিশ্বব্যাপী বিদ্যমান ব্যাংকিং ব্যবস্থার অবকাঠামোর চেয়ে সহজগম্য। বর্তমানে কোনো ব্যাংকে অভ্যন্তরীণ লেনদেনের জন্য তিন থেকে পাঁচ কর্মদিবস সময় লাগে। কিন্তু ব্লকচেইন মডেল ব্যবহার করলে কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে লেনদেন সম্পন্ন করা সম্ভব।
অংশীদারত্ব
ভেনমো এবং আলিপে’র মতো মোবাইল ওয়ালেটগুলিকে ব্যাংকগুলো হুমকি মনে করছে। কারণ এই ওয়ালেটগুলি ব্যবহার করে গ্রাহকরা দ্রুততম সময়ে এবং সস্তায় লেনদেন সম্পন্ন করতে পারে। তাই ব্যাংকগুলো চেষ্টা করছে কৌশলগত অংশীদারত্বের মাধ্যমে এইসব পরিষেবার দিকে নজর রাখতে। ব্যাংকগুলো বুঝে ফেলেছে, মোবাইল ওয়ালেট সুবিধার সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে লাভ নেই। তারচেয়ে বরং অংশীদার হওয়া ভালো। ব্যাংকগুলো যদি ওয়ালেট বাজারের অংশীদার হয় তবে ২০২৪ সালের মধ্যে তাদের লেনদেন ২৫০ বিলিয়ন ছাড়িয়ে যাবে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা।
যারা ওয়ালেট শিল্পকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে তাদের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার সুযোগ রয়েছে ব্যাংকগুলোর। ব্যাংকগুলো যদি অংশীদারীর ভিত্তিতে কাজ করে তবে আর্থিকভাবে অনেক বেশি লাভবান হতে পারবে। ব্যাংকগুলো যদি এখনই নিজেদেরকে প্রযুক্তির সঙ্গে সম্পৃক্ত করতে না পারে তবে অচিরেই পেমেন্ট ব্যবস্থার মালিকানা চলে যাবে ফেসবুক, অ্যাপল, গুগলের মতো প্রতিষ্ঠানের হাতে।
সূত্র: ক্রাঞ্চবেজ
আশিষ বিরলা : সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট, রিপল
ইংরেজি থেকে অনুবাদ: ফয়সাল আহমেদ

 
	                
	                	
	             
	                       			                       	 
	                       			                       	 
	                       			                       	 
	                       			                       	