বাংলাদেশ এবং ই-কমার্স
- ইয়ামান হোসেন রিফাত
বর্তমানে দেশে অনলাইনে কেনাকাটা বেশ জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। মহামারীতে ঘরে বসে পণ্য ডেলিভারি পাওয়া, বাজারের তুলনায় অপেক্ষাকৃত কম মূল্যে পণ্য পাওয়া ইত্যাদি বিবেচনায় অনলাইন কেনাকাটা বা ই-কমার্স খাত বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।
মহামারীর কারণে যেমন মানুষ ঘরে বসে স্বাচ্ছন্দ্যে পণ্য কিনতে পারছে, তেমনি উদ্যোক্তারাও লাভবান হচ্ছেন। তবে এই ই-কমার্সের সুযোগ নিয়ে দেশে গড়ে ওঠে বিভিন্ন ভুয়া ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান। যারা বাজারের তুলনায় কম মূল্যে পণ্য দেয়ার প্রচারণা চালিয়ে গ্রাহক ও বিক্রেতা উভয়ের থেকেই টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। এতে গ্রাহকরা তাদের কাঙ্ক্ষিত পণ্য পাচ্ছে না। একই সাথে বিক্রেতারাও তাদের ন্যায্যমূল্য পাচ্ছে না। এভাবেই দেশের সম্ভাবনাময় এক খাতকে শঙ্কার মুখে ফেলেছে গুটিকয়েক ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান।
অযৌক্তিক ডিসকাউন্টে মিলবে ব্র্যান্ড নিউ পণ্য। এরকম নানা বিজ্ঞাপণ দিয়ে গ্রাহকদের জালে জড়ায় দেশের বিভিন্ন ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান। বাজারের তুলনায় প্রায় অর্ধেক দামে গাড়ি, মোটরবাইক থেকে শুরু করে নিত্য প্রয়োজনীয় নানা পণ্যের বিজ্ঞাপণ দিয়ে গ্রাহকদের আকৃষ্ট করে তারা।
মহামারীতে অনলাইন কেনাকাটার ঝোঁককে কাজে লাগিয়ে ফুলে-ফেঁপে ওঠে এইসব ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলো। অনেক রিসেলার বা বাজারের থেকে কম দামে পণ্য কিনে বাজারের সাথে সামঞ্জস্য রেখে বিক্রি করা অনেকেই বেশি লাভের আশায় বিনিয়োগ করেন এইসব ই-কমার্স খাতে। কিন্তু পরে আর পণ্য মেলেনি। গ্রাহকদের টাকা কোথায় তা কেউই জানে না। তখন টনক নড়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের। অযৌক্তিক ডিসকাউন্ট দেয়া এইসব ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানদের ব্যাংক হিসাব জব্দ, প্রতিষ্ঠানের প্রধানদের আটকসহ নানা বিষয় যাচাই করে সরকার। দেয়া হয় গ্রাহকদের টাকা ফেরতের সুযোগও। কিন্তু কোনো উদ্যোগেই কাজ না হওয়ায় ইভ্যালি, ই-অরেঞ্জ, ধামাকাসহ ১০টি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের বিরূদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। তবে গ্রাহকদের টাকা কোথায় গেলো সেই হদিস এখনো মেলেনি। তাই এ নিয়ে তদন্তে নেমেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, দুর্নীতি দমন কমিশন ও বাংলাদেশ ব্যাংক।
এ নিয়ে গ্রাহক ও বিক্রেতারা প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রধানদের বাড়ির সামনে ও সড়কে বিক্ষোভ করেও কোনো ফল পায়নি। তদন্তে সেসব ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানে গ্রাহকের হাজার হাজার কোটি টাকা আটকে থাকলেও তাদের অ্যাকাউন্টে কয়েক লাখ টাকাই পাওয়া গেছে। এত টাকা কোথায় কীভাবে গেল তা নিয়েও তৈরি হয়েছে চাঞ্চল্য। আইনের ফাঁকফোকরে বেরিয়ে যাচ্ছে গ্রাহকদের টাকা লুট করা এইসব ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান। আর এর দায় নিচ্ছে না কেউই। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা এমন পরিস্থিতির জন্য সরকারকেই দায়ী করছেন। একই সাথে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, আইসিটি বিভাগেরও নজরদারী না দেয়ায় এমনটা হয়েছে বলে দাবি করছেন ভুক্তভোগীরা।
আন্তঃমন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত হয় যে, এখন থেকে কোনো ফেসবুক পেইজ কিংবা ওয়েবসাইট করে কোনো পণ্য বিক্রি করতে হলে নতুন ইউভি আইডি নিতে হবে উদ্যোক্তাদের। এছাড়াও ই-কমার্স নিয়ে নতুন আইন কিংবা আইন সংশোধন করতে হবে কিনা তা নিয়েও আলোচনা চলছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়, ই-কমার্সের জন্য নতুন আইন হবে কিনা তা পরে জানা যাবে। তবে আইন গঠন ও সংশোধনের জন্য একটি উপকমিটি গঠন করা হয়েছে।
তবে বর্তমানে দেশের ই-কমার্স যে পর্যায়ে পৌঁছেছে, তা একদিনে সম্ভব হয়নি। গুটিগুটি পায়ে এগিয়ে চলা দেশের সম্ভাবনাময় এই খাতকে সঠিক আইন ও দক্ষ জনবলের মাধ্যমে আরও উচ্চ শিখরে নিয়ে যাওয়া সম্ভব।
এ খাতে বিনিয়োগ করা গ্রাহকদের হাজার হাজার কোটি টাকা এতো সহজে হারিয়ে যেতে পারে না। তাই অপরাধীদের আইনের আওতায় এনে, সঠিক আইন প্রয়োগের মাধ্যমে সব টাকা সম্ভব না হলেও অনেকাংশই আদায় করা সম্ভব বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। একই সাথে গ্রাহকদেরও অযৌক্তিক ডিসকাউন্টের লোভে পড়ে এইসব ই-কমার্স খাতে বিনিয়োগ না করে, সচেতন হতে হবে।