নদী দূষণ বাড়লে পরিবেশ বিপর্যয়ও বাড়ে
- শারমিন নিশু
ছোটবেলা থেকেই আমরা পড়ে এসেছি, ‘বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ’। এখন একটি নদীমাতৃক দেশের পরিবেশ রক্ষায় নদীর ভূমিকা কতটা গুরুত্বপূর্ণ সে বোধ আমাদের কমবেশি আছে। বর্তমানে যোগাযোগের জন্য সড়কপথ, আকাশপথ নানান মাধ্যম থাকলেও একসময় নদী পথেই গড়ে উঠেছিল দেশের অর্থনীতি। এখনো যে নদী পথ অর্থনীতিতে কম ভূমিকা রাখছে তা নয়। পরিবেশের বৈচিত্র্যতা রক্ষায় নদীর ভূমিকা নেহাত কিছু কম নয়। বর্তমানে সেই নদীই এখন দূষণের কারণে পরিবেশ বিপর্যয়ে অনেকটা দায়ী হয়ে উঠছে।
পরিবেশ দূষণে সবথেকে বেশি ভূমিকা রাখে গ্রিন হাউজ গ্যাস নিঃসরণ। গ্রিন হাউজ গ্যাস বলতে আমরা কার্বন ডাই অক্সাইড, মিথেন এবং নাইট্রাস অক্সাইডকে বুঝি। চাইনিজ ইউনিভার্সিটি অভ হংকং-এর জিওগ্রাফি অ্যান্ড রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট বিভাগের অধ্যাপক ডেরিক ইয়ুক ফো লাই নদী বিষয়ক এক গবেষণায় বলেন, নদীর পানিতে গ্রিন হাউজ গ্যাসের পরিমাণ বায়ুর থেকে ৪.৫ গুণ বেশি। তাহলে সরাসরি বলা যায়, পরিবেশ দূষণের ফলে জলবায়ু পরিবর্তনে নদী দূষণ সরাসরি দায়ী।
নদী দূষণের কারণ দেখলে মানুষের অপরিকল্পিত নগরায়ন শিল্পায়নের কথা প্রথমেই আসে। নদীর তীরে কারখানা, ইটের ভাটা, শহরের ময়লা আবর্জনা এসব নদীতে ফেলায় নদীর পানি দূষিত হয়। আর এসব ময়লা আবর্জনা থেকে দূষণের মাত্রা এতটাই বেড়ে যায় সেখানে গ্রিন হাউজ গ্যাসের মাত্রাও বাড়তে থাকে। গবেষণা থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, নদীর পানির গ্রহণযোগ্যতার মাত্রা দূষিত মাত্রায় নেমে এলে পানিতে কার্বন ডাই-অক্সাইড, মিথেনের পরিমাণ স্বাভাবিকের থেকে শতকরা ১০ গুণ এবং নাইট্রাস অক্সাইডের মাত্রা শতকরা ১৫ গুণ পর্যন্ত বৃদ্ধি পায়।
২০১১ সালে ফিনল্যান্ডের অ্যালটো ইউনিভার্সিটির ওয়াটার অ্যান্ড ডেভলপমেন্ট রিসার্চ গ্রুপের একটি জরিপ অনুযায়ী, পৃথিবীর অর্ধেকেরও বেশি মানুষ স্বাদু পানির জলাশয়ের তিন কিলোমিটারের মধ্যে বসবাস করে। আর বর্তমানে অধিক নগরায়নের ফলে শিল্প কারখানা, স্থাপত্য নদী তীরে গড়ে উঠছে। এর ফলে মিউনিসিপ্যাল বর্জ্যের ৮০ শতাংশ সরাসরি জলাশয়গুলোতে যাচ্ছে। ফলে নদীর এ দূষণ সরাসরি প্রভাব রাখছে জলবায়ুর ভয়ংকর পরিবর্তনে।
এই নদী দূষণ থেকে পরিবেশ দূষণ, গ্রিন হাউজ গ্যাসের পরিমাণ বৃদ্ধি, তার থেকে জলবায়ু পরিবর্তন, বৈশ্বিক উষ্ণায়ন বাড়ছে। যা মানবকুলের জন্য মারাত্মক হুমকি।
তাই জলবায়ু পরিবর্তন এবং পরিবেশ দূষণের সমাধান হিসেবে নদী দূষণ কমানো অতি জরুরি বিষয়। কারণ নদী দূষণ কমলে গ্রিন হাউজ গ্যাসের পরিমাণও কমবে। গবেষণা বলছে ইতোমধ্যে নদীর পানি পরিষ্কার করার কারণে গ্রিন হাউজ গ্যাসের পরিমাণও কমতে শুরু করেছে। কারণ নদীর পানিতে যখন দূষণের মাত্রা সহনীয় হতে শুরু করবে, তখন দূষক দ্রব্যের কার্বন ডাই-অক্সাইড, নাইট্রাস অক্সাইড, মিথেনের মতো ক্ষতিকর গ্যাস উৎপাদন করতে পারবে না।
এছাড়াও নদীর পানির গুণগত বিশুদ্ধতা নিশ্চিত করতে পারলে নদী তীরে যেসব বাস্তুসংস্থান গড়ে উঠেছে, তার উন্নতি ঘটবে এবং এতে পরিবেশ দূষণের হারও কমে আসবে। অর্থাৎ এখন ভবিষ্যতে পরিবেশ বিপর্যয়ের যে সম্ভাবনা রয়েছে, তা কেবল নদী দূষণ রোধ এবং দূষিত নদীর পানি পরিষ্কারের ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে প্রতিরোধ করা যায়।