পাল্টে যাচ্ছে বিনোদনের জগৎ

পাল্টে যাচ্ছে বিনোদনের জগৎ

  • নাইমা আনজুমান মুন

প্রযুক্তির বিস্তার যত বাড়ছে তার সাথে পাল্টে যাচ্ছে চিরচেনা বিনোদনের দুনিয়াও। ২০২০ সালে করোনা মহামারিতে যখন বিশ্ব থমকে গেছে ঠিক তখনই পরিবর্তন শুরু হচ্ছে বিনোদনের মাধ্যমগুলোতে।

বর্তমান সময়ে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে বেশিরভাগ সিনেমা হলগুলো। টিভি চ্যানেল গুলোতেও চোখে পড়ছে না আকর্ষণীয় কোনো অনুষ্ঠান। একবিংশ শতাব্দীতে এসে যান্ত্রিক জীবনের ব্যস্ততার কারণে মানুষ অনলাইন প্ল্যাটফরমের প্রতি বেশি আকৃষ্ট হচ্ছে। নির্দিষ্ট সময়ে টিভি সেটের সামনে বসার সময়টুকু এখন প্রায় বিলীন। সময়ের পরিবর্তনের সাথে সাথে বিকল্প রাস্তা যেন খুঁজে পেয়েছে অনলাইন মাধ্যমগুলোতে। ল্যাপটপ, মোবাইল অথবা ট্যাবের মাধ্যমে অনায়েসে যে কোনো সময়ে, যে কোনো পরিস্থিতিতে দেখে ফেলছে সবকিছু।

পরিবর্তনের ছোঁয়া ইতিমধ্যে চোখে পড়ার মতো। এখন আর আগের মতো কেউ নতুন সিনেমা বা সিরিজের মুক্তির অপেক্ষায় থাকে না। আমাজান, নেটফ্লিক্সের মতো ওটিটি বা ওভার দ্যা টপ প্ল্যাটফর্মগুলো বেশি নির্ভরযোগ্য হয়ে উঠেছে। সম্ভাব্য বৈধ উপায়ে শ্রেষ্ঠ অডিও এবং ভিডিওগুলো এক ক্লিকে দেখে নিতে পারছে মানুষ। এই অনলাইন প্ল্যাটফরমগুলোর সাহায্যেই বিনোদন উপভোগের সম্পূর্ণ নতুন ও বিশাল আকারের ইন্ডাস্ট্রি গড়ে উঠেছে যা একদশক আগেও মানুষ ভাবতে পারতো না।

জ্যামে কিংবা অফিসের ফাঁকে, অবসরে অথবা আধশোয়া অবস্থায় বিছানায় হেলান দিয়ে দেখে নিতে পারছে পছন্দের সব সিনেমা সিরিজগুলো। এসব অনলাইন প্লাটফর্মের জনপ্রিয়তার পেছনে প্রধান যে হাতিয়ার হিসেবে থাকছে তা হচ্ছে কন্টেন্টের ভিন্নতা। দিনের পর দিন রাজার ছেলে বা গরীবের মেয়ে, শিক্ষিত নারীর সাথে মূর্খের প্রেম, হঠাৎ বড়লোক হয়ে ওঠা বা বড়লোক থেকে গরীব, এসব মানুষ দেখতে চায় না আর।

পছন্দসই ভাষায় ডাবিং বা সাবটাইটেলসহ বিভিন্ন কনটেন্ট দর্শকের মনে স্থান করে নিচ্ছে প্রতিনিয়ত। এসব অনলাইন স্ট্রিমিংগুলো দারুণ সাশ্রয়ীও বটে। বিশেষত তরুণ প্রজন্মের জন্য অধিক খরচ করে ডিশের লাইন এনে টিভি দেখার চেয়ে অনলাইনে এক ক্লিকে সবটুকু দেখাতেই এরা স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে বেশি।

বিশ্বব্যাপী সবচেয়ে জনপ্রিয় স্ট্রিমিং-সার্ভিস হলো নেটফ্লিক্স, যাদের সাবস্ক্রাইবের সংখ্যা ১৯ কোটিরও বেশি। এর পরেই যার স্থান সেই প্ল্যাটফরমের নাম হচ্ছে আমাজন প্রাইম যার সাবস্ক্রাইবের সংখ্যা ১৫ কোটি। ইতিমধ্যে অল্পসময়ে সাড়া পেয়ে যাচ্ছে ডিজনি প্লাস যার সাবস্ক্রাইবের সংখ্যা ৬ কোটিরও বেশি। ইতিমধ্যে বাংলাদেশে সাড়া জাগিয়েছে বায়স্কোপ, বঙ্গ, জি টিভি।

২০১৬ সালে গ্রামীণফোনের মালিকানাধীন বায়স্কোপ তাদের বেটা সংরক্ষণ চালু করে। অন্যসব অ্যাপগুলোর মতো এখানেও সাড়া ফেলেছে দুর্দান্ত কন্টেন্ট, কলার বা ভিডিও অডিও কোয়ালিটি। এদের আরও দুটি বিশেষত্ব রয়েছে, তা হচ্ছে লাইভ টিভি এবং লাইভ স্পোর্ট। মাত্র ২ থেকে ৫ টাকার মধ্যেই পেয়ে যাচ্ছে পছন্দের সব কন্টেন্ট। ২০২২ সালের মধ্যে বাংলা ভাষাভাষী মানুষের হাতের মুঠোয় থাকবে এসব কন্টেন্ট।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিনোদন দুনিয়ায় অনলাইন স্ট্রিমিং অ্যাপগুলো নিজের অবস্থান গড়ার পাশাপাশি তাদের একচেটিয়া আধিপত্য দেখা যাবে। ২০২৫ সালের মধ্যে ভিডিও স্ট্রিমিং-সার্ভিসগুলোর সাবস্ক্রাইবের সংখ্যা অর্ধ বিলিয়ন ছাড়িয়ে যাবে।

বর্তমান সময়ের সবচেয়ে বড় আকর্ষণ এই ভিডিও স্ট্রিমিং-সার্ভিস যা বিনোদন জগতে ব্যাপক প্রসার লাভ করেছে। এত ইতিবাচক হওয়ার পরও কিছু নেতিবাচক ব্যাপারও চোখে পড়ছে। অশ্লীল কন্টেন্ট, এডাল্ট ভিডিও ইতিমধ্যে খুব দ্রুততার সাথে ছড়িয়ে পড়ছে। যুগের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে গিয়ে ঐতিহ্য, সংস্কৃতি হারানোর পথে। তাই শিশুদের এবং বড়দের সবার কন্টেন্ট নির্বাচন ও দেখার ক্ষেত্রে আরও সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।

Sharing is caring!

Leave a Comment