নভেম্বর রেইন : বৃষ্টি কিংবা বেদনার কাব্য

নভেম্বর রেইন : বৃষ্টি কিংবা বেদনার কাব্য

  • মেহেরাবুল হক রাফি

Nothin’ lasts forever

And we both know hearts can change

And it’s hard to hold a candle

In the cold November rain

নভেম্বর মাস এলেই উত্তরের হিমেল হাওয়া যেন হাজির হয় শীতের আগমনীবার্তা নিয়ে। অনাগত কনকনে ঠাণ্ডার মুহূর্তগুলো মনে করিয়ে দেয় ফেলে আসা দিনের স্মৃতি। তারই মাঝে একটু-আধটু বৃষ্টি আরো বেশি স্মৃতিকাতর করে তোলে অনেককে। আর সেসব অনুভূতিগুলোই যেন নতুন মাত্রা পেয়েছে গান’স এন্ড রোজেসের তুমুল জনপ্রিয় গান নভেম্বর রেইনে।

আশির দশকের মাঝামাঝি সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের লস এঞ্জেলসের শহরতলী থেকে উঠে আসে গান’স এন্ড রোজেস। মূলত ভোকাল এক্সেল রোজ এবং লিড গিটারিস্ট স্ল্যাশের হাত ধরেই রক জনরার ব্যান্ডটির যাত্রা শুরু। পরের বছরই নিজেদের প্রথম অ্যালবাম ‘অ্যাপেটাইট ফর ডিস্ট্রাকশন’ দিয়ে সকলের নজর কাড়তে সক্ষম হয় তারা। সুইট চাইল্ড ও’মাইন, প্যারাডাইজ সিটি, ওয়েলকাম টু দ্যা জাংগালের মতো বিলবোর্ড কাঁপানো গান তখন মানুষের মুখে মুখে। এর মাঝেই কয়েক বছরের বিরতি দিয়ে ‘ইল্যুশন’ অ্যালবামের কাজ শুরু করে গান’স এন্ড রোজেস। ছোটবেলা থেকেই পিয়ানোর প্রতি বড়সড় ধরনের ভালোবাসা ছিল এক্সেল রোজের। বছর দশেক পিয়ানোতে সুর তোলা এক টিউন নিয়েই এবার কাজ শুরু করেন রোজ, যা পরবর্তীতে রূপান্তরিত হয় রক এন্ড রোল জনরার অন্যতম সেরা সৃষ্টি নভেম্বর রেইনে।

প্রথমদিকের ড্রাফটে গানটার ব্যাপ্তি ছিল প্রায় ২৫ মিনিট। পরে সেটিকে কেটেকুটে ৯ মিনিটে আটকানো হয়। স্ল্যাশ এবং ম্যাকাগনসহ ব্যান্ডের অন্য কেউ চাচ্ছিলেন না গানটি পরবর্তী অ্যালবামে থাকুক। কারণ একে তো লম্বা ডিউরেশন, উপরন্তু ব্যালাড-টাইপ হওয়ায় শ্রোতাদের মুখ ফিরিয়ে নেওয়ার সম্ভাবনাও ছিল। কিন্তু এতকিছু সত্ত্বেও এক্সেল রোজ হার মানার পাত্র নন। শেষমেশ রোজের লেখা লিরিকেই সুর বসালেন স্ল্যাশ। এরপরের গল্প তো মোটামুটি সবারই জানা।

তখনকার সময়ে প্রায় দেড় মিলিয়ন ডলারে বানানো নভেম্বর রেইনের মিউজিক ভিডিও এমটিভির বদৌলতে পৌঁছে যায় সকলের ঘরে ঘরে। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়াসহ অসংখ্য দেশের মিউজিক্যাল টপচার্টেও স্থান পায় নভেম্বর রেইনের নাম। গানটির শেষ দিকে স্ল্যাশের সোলো আজও বিবেচিত হয় সঙ্গীত ইতিহাসের অন্যতম সেরা সুর হিসেবে। মূলত লেড জেপলিনের ‘স্টেয়ারওয়ে টু হেভেন’ এবং কুইনের ‘বোহেমিয়ান র‍্যাপসোডি’ শোনার পরই এক্সেল রোজ সিদ্ধান্ত নেন নিজেদের ব্যান্ডের জন্যও এরকম একটা সিগনেচার সং তৈরি করার। পরবর্তীতে এই নভেম্বর রেইনই হয়ে দাঁড়ায় গান’স এন্ড রোজেসের সব লাইভ কনসার্টের সেন্টার পিস।

সোশ্যাল মিডিয়ার বদৌলতে গত এক দশকে নভেম্বর রেইনের জনপ্রিয়তা বেড়েছে আরো কয়েক গুণ। বিগত শতাব্দীর একমাত্র মিউজিক ভিডিও হিসেবে ইউটিউবে দুই বিলিয়ন ভিউয়ের ঘর স্পর্শ করেছে গানটি। তাছাড়া নভেম্বর মাসে হটাত বৃষ্টি নামলে তো কথাই নেই! যে কারোরই হোমপেজ হয়তো সয়লাব হয়ে যায় নভেম্বর রেইনের লিরিক্স কিংবা গানের ক্লিপ দিয়ে।

একেক গানের অর্থ ব্যক্তিভেদে পরিবর্তিত হওয়াটাই স্বাভাবিক। তবে নভেম্বর রেইনের লিরিক্স খুব মনোযোগ দিয়ে শুনলে এর অন্তর্নিহিত অর্থ খুব সহজেই অনুধাবন করা যায়। গানটির গল্প যেন এক্সেল রোজের নিজের জীবনেরই চিত্র। নিজের প্রেয়সীকে সবকিছুর বিনিময়ে পেয়েও আবার হারানোর বেদনাই ফুটে উঠেছে স্ল্যাশের গিটারের করুণ সুরে। প্রচলিত আছে যে মানুষের অধিকাংশ পাওয়া, না-পাওয়ার স্মৃতিগুলোর জন্ম নভেম্বরেরই প্রারম্ভে। তাই হয়ত নভেম্বর রেইনের মাঝে লোকে চটজলদি নিজেকে খুঁজে নিতে পারে। এজন্য প্রায় ত্রিশ পেরিয়ে গেলেও গান’স এন্ড রোজেসের অমর সৃষ্টিটি আজও মুগ্ধ করে যাচ্ছে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে।

Sharing is caring!

Leave a Comment