আমি মানুষ, কিন্তু মানুষ না !
আতিকুর রহমান, রাজশাহী : মাথায় উসকো-খুসকো চুল, মুখে কমেডিয়ান দাড়ি-গোফ আর এক চিলতে হাসি। যেন রিতিমত কমেডিয়ান। হ্যাঁ, আসলেই তিনি একজন কমেডিয়ান। তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলা বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী হৃদয় আল মিরু। সম্প্রতি তিনি বেসরকারি টেলিভিশন এনটিভি’র রিয়েলিটি কমেডি শো ‘মার্সেল হা-শো সেশন-৩’এ চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন।
নীলফামারীর জলঢাকা উপজেলার লক্ষ্মীমারা গ্রামে অতি সাধারণ পরিবারে বেড়ে ওঠা মিরু ছোটবেলা থেকেই ছিলেন চঞ্চল ও হাস্যোজ্জ্বল স্বভাবের। সব সময় মুখে যেন এক ঝলক হাসি লেগেই থাকে। স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে বন্ধুদের মধ্যে কারো মন খারাপ দেখতে পেলে তার কাছে গিয়ে হাসিমাখা মুখে কৌতুকের ভনিতায় সব দুঃখ দূর করার চেষ্টা করতেন মিরু।
মিরু ২০১০-১১ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি হন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে। স্বপ্ন পূরণের পদযাত্রা সেখান থেকেই শুরু। পড়ালেখার পাশাপাশি অভিনয়, গান আর আড্ডাবাজিতে মেতে থাকেন সব সময়। বিশ্ববিদ্যালয়ের সব জায়গায় অভিনয়ের কারণে অল্পসময়ে ক্যাম্পাসে পরিচিত মুখ হয়ে ওঠেন মিরু। নীলফামারী, রাজশাহী, নাটোর, পাবনা, বগুড়া, রংপুর, চাঁপাইনবাবগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় অভিনয় করে যথেষ্ট সুনাম অর্জন করেন তিনি।
বর্তমানে তিনি বাংলাদেশ টেলিভিশনের রিয়েলিটি কমেডি শো ‘হাসতে মোদের মানা’তে পারফর্ম করছেন।
রাজশাহীতে ‘দি প্রমিনেন্ট’কে দেওয়া তার সাক্ষাৎকার প্রকাশ করা হলো আজ।
দি প্রমিনেন্ট : সম্প্রতি আপনি দেশের সবচেয়ে বড় কমেডি শো মার্সেল হা-শোতে চ্যম্পিয়ান হয়েছেন। কেমন লাগছে?
হৃদয় আল মিরু : সত্যি বলতে কি, এভাবে টিভিতে এসে অভিনয় করে চ্যাম্পিয়ান হবো, এটা আমি ভাবিনি। এর অনুভুতি আমি ভাষায় প্রকাশ করতে পারবো না। আমার খুব ভালো লাগছে।
দি প্রমিনেন্ট : আপনার এই সফলতার পেছনে কার অবদান বেশি?
হৃদয় আল মিরু : আমার সফলতার পেছনে যার অবদান বেশি তার নাম বলতে চাইলে প্রথমেই আসে বিভাগের বড়ভাই মিরাক্কেল চ্যাম্পিয়ান আবু হেনা রনি ভাইয়ের কথা। রনি ভাইয়ের সাহসেই আমি এখানে অডিশন দিয়েছিলাম। তিনি বলা যায় একবারে জোর করেই আমকে এখানে পারফর্ম করিয়েছেন। যার ফল আজ আমার হাতে। এরপরেই রয়েছে রাজশাহী কমেডি ক্লাব। আমি ওখানে যত পাগলামি, কমেডি করেছি, জোকস বলছি তারই প্রতিফলন এটা। এই পাগলামিগুলো যে আমার জীবনে এত কাজে আসবে তা আমি কখনো ভাবতেই পারিনি।
দি প্রমিনেন্ট : বন্ধুদের কাছে থেকে কমেডির ক্ষেত্রে কতটা সহযোগিতা বা উৎসাহ পেয়েছেন?
হৃদয় আল মিরু : সবার আগে তো বন্ধুরাই। বিশেষ করে ইউনিভার্সিটিতে আসার পর থেকে আমার নাট্যকলা বিভাগের ১১তম ব্যাচের ১৫ জন বন্ধুর কথা মনে আসে। প্রত্যেকটা বন্ধুর একেকটা কথা একেকটা সাহস জুগিয়েছিল আমাকে হাশোতে আসার জন্য আর চ্যাম্পিয়ান হওয়ার জন্য।
দি প্রমিনেন্ট : আপনার কী মনে হয় হা-শো’তে চ্যাম্পিয়ান হওয়ার মাধ্যমে আপনার পরিচিতি আগের চেয়ে অনেকগুন বেড়ে গেছ?
হৃদয় আল মিরু : মূলত চ্যাম্পিয়ান হওয়ার মাধ্যমেই দেশব্যাপী আমি পরিচিতি পেয়েছি। এটা বুঝতে পারি চ্যাম্পিয়ান হওয়ার আগে আমি যখন আমি ঢাকায় পাবলিক বাসে উঠি বা রাস্তায় হাঁটি তখন। আমাকে সবাই বলছিল আপনিই হা-শোর সেই কমেডিয়ান ছেলেটা নাকি, পাগলটা নাকি। তখন আমি বলি, হ্যাঁ আমি সেই পাগলটা।
দি প্রমিনেন্ট : আপনি হাসতে এবং সবাইকে হাসাতে ভালবাসেন, আপনার দৃষ্টিতে বাংলাদেশের হাস্যরস বা কমেডির বর্তমান অবস্থা কেমন?
হৃদয় আল মিরু : আগে অনেকে মনে করত কিংবা আমি নিজেও ভাবতাম, কমেডি মানে একদম নিচু চরিত্র, যারা কমেডি করে তারা শুধূ মজা করবে বা শুধু হাসাবে। কিন্তু আমরা এখন ভাবছি কমেডি তো শাহরুখ খানও করে আমির খানও করে, আবার মোশাররফ করিম, চঞ্চল চৌধুরিও কমেডি করে। এই কমেডিগুলোর ধাঁচ কিন্ত আলাদা।
দি প্রমিনেন্ট : আপনার বিশেষ একটি কথা বা উক্তি আছে যা আপনাকে সবাই অভিনয় করতে দেখেছে। আর তা হলো ‘আমি মানুষ কিন্তু মানুষ না’ এর মাধ্যমে আপনি আসলে কি বুঝাতে চেয়েছেন?
হৃদয় আল মিরু : আসলে এটি আমি আমার প্রথম দিকে বেশি অভিনয় করেছি। ‘আমি মানুষ কিন্তু মানুষ না! আমি নাকি পাগল’। আসলে পাগলরাও যে মানুষ সেটা কিন্তু তেমন কেউ ভাবে না। আর তাই আমি এটাকে কমেডির মাধ্যমে সবার কাছে তুলে ধরার চেষ্টা করছি।
দি প্রমিনেন্ট : যারা কমেডিতে আসতে চায় বা কমেডি করতে চায়, তাদের উদ্দেশ্যে আপনি কি বলবেন?
হৃদয় আল মিরু : যারা কমেডি করতে চায় তাদের সবাইকে আমি স্বাগত জানাই। সবাই যাতে কমেডি চর্চা করতে পারে এজন্য আমরা সারাদেশে কমেডি ক্লাব করছি। এখানে আমরা আড্ডা দিচ্ছি, কমেডি করছি। সেখানে তাদের সবাইকে আমরা স্বাধুবাদ জানাচ্ছি।
দি প্রমিনেন্ট : আপনার কোন জিনিসটি করতে সবচেয়ে বেশি ভালো লাগে?
হৃদয় আল মিরু : সবকিছু করতেই ভালো লাগে তবে কমেডি বা মজা করাটাই আমার কাছে সবচেয়ে আনন্দের। আর আমি যা কিছুই করি না কেন, তাই কমেডি হয়ে যায়।
দি প্রমিনেন্ট : সময় দেয়ার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।