১১ জনের একসঙ্গে আত্মহত্যা!
- আদিবা ইসলাম
নেটফ্লিক্সে যারা সিরিজ দেখেন তাদের কাছে ‘হাউস অব সেকরেটস’ নিশ্চয় খুবই পরিচিত একটি নাম। এই সিরিজের গল্পটি অত্যন্ত মর্মান্তিক। গল্পের স্থান দিল্লির বুরারি এলাকা। সেখানে একদা ৩ প্রজন্মের ১১জন সদস্য একসাথে আত্মহত্যা করেন। শুনেই মনটা কেমন করে উঠলো, তাই না? হ্যাঁ, শুনতে আতঙ্কিত লাগলেও এটাই সত্যি। এই ঘটনা প্রত্যেকের জন্য একটি বিরাট রহস্য। কেউই বুঝতে পারছে না, কেউ কেন তার পুরো পরিবার নিয়ে এভাবে একসাথে আত্মাহুতি দিবেন?
বুরারি মৃত্যু ঘটনা সংবাদমাধ্যমে কেবল উদ্ভট এবং আজগুবি হিসেবে উপস্থাপন করা হলেও নেটফ্লিক্সের সর্বশেষ ডকুমেন্ট ক্রাইম সিরিজ হাউস অব সেকটেরসে এটি বেশ কৌতূহলোদ্দীপকভাবেই তুলে ধরা হয়েছে। ক্রাইম সিরিজটির নির্মাতা লিনা ইয়াধাব দর্শককে পুরো সিরিজে সংযুক্ত করে রেখেছেন যা অবশ্যই প্রশংসনীয়।
মূলত একজন বিধবা মা, তার মেয়ে এবং ছেলের পরিবার অর্থাৎ ৩ প্রজন্মের ১১ জন্য সদস্যকে একসাথে গলায় দড়ি ঝুলিয়ে আত্মহত্যা করার গল্প এটি। পরিবারের ১০ জন সদস্যকে ঝুলন্ত এবং হাত পা বাঁধা অবস্থায় পাওয়া যায়। সবচেয়ে অবাক করা বিষয় হচ্ছে তারা সকলেই একটি বৃত্তাকার অবস্থায় আত্মহত্যা করে যা সবার মনেই প্রশ্ন তৈরি করে। পরিবারের সবচেয়ে বয়স্ক বিধবা মাকে অন্য একটি রুমে শ্বাসরোধ অবস্থায় পাওয়া যায়। তাদের এই মৃত্যু অনেক রকমের সন্দেহ মানুষের মনে জাগিয়ে তোলে। সকলেই নিজেদের মতো এই রহস্যের সমাধান খুঁজছিল। যেমন কিছু রাজনৈতিক দল এই ঘটনাকে একটি হত্যাকাণ্ড হিসেবে তুলে ধরছিল আবার কিছু ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের মতে এটি কোনো তান্ত্রিক বিষয়ের সাথে জড়িত। কিন্তু আসলে কি হয়েছিল সেদিন?
কি হয়েছিল তা খুঁজে বের করার দায়িত্ব শুধুমাত্র পুলিশের। কিন্তু পুলিশও কোনও রকমের সুত্র খুঁজে পাচ্ছিল না যা ধরে আত্মহত্যার কারণ খুঁজে বের করা সম্ভব। সেদিন বাইরে থেকে ভিতরে প্রবেশ করার কোনো প্রকার প্রমাণ মিলেনি, এমনকি বাড়ি থেকে কোনো প্রকার চুরির ঘটনাও ঘটেনি। নিহত ১১ জনের মধ্যে মহিলাদের কারোর শরীরের কোনো অলংকারও গায়েব হয়নি। পুলিশ শুধুমাত্র কিছু ছাই পায় যা দেখে ধারণা করা হয় যে এখানে হয়তো কোনো প্রকার পূজা করা হয়েছে। তবে একটি ডাইরি পাওয়া যায় যা পুরো ঘটনাকেই মোটামোটি সমাধান করে ফেলে।
হাউস অব সেকরেটস কেন দেখবেন? দিল্লির একটি সাধারণ বুরারি এলাকায় ১১ জনের আত্মহত্যার ঘটনা ঘটবে এমন হয়তো কেউ কল্পনাই করতে পারেনি। তাই তার আশেপাশের আতঙ্ক হয়তো আপনি সিরিজটি দেখলে অনুমান করতে পারবেন। এই সিরিজের মাধ্যমে আপনি ধারণা করতে পারবেন যে সে সময় মিডিয়া জগত কতোটা ভুল পথে জনগণকে নিয়ে যাচ্ছিল যা শুধুমাত্র ভয় এবং আতঙ্কের সৃষ্টি করেছিল। এত বড় একটি দুর্ঘটনার মাধ্যমে আপনি উপলব্ধি করতে পারবেন যেকোনো ব্যক্তির মানসিক স্বাস্থ্য কতোটা গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়াও এই ডকুমেন্ট ক্রাইম সিরিজটির প্রযোজনার মান উন্নত যা আপনাকে তিনটি পর্ব পর্যন্ত একটি জালে আটকে রাখবে। আইএমবিডিতে এই সিরিজটি ১০ এর মধ্যে রেটিং পেয়েছে ৭.৭ যা একটি ভালো সিরিজের নির্দেশক।
অতএব, দেখে ফেলতে পারেন সিরিজটি।