যেসব ভুল করে থাকেন নতুন উদ্যোক্তারা

যেসব ভুল করে থাকেন নতুন উদ্যোক্তারা

  • উদ্যোক্তা ডেস্ক :

সাধারণত পড়ালেখার পর্ব চুকিয়ে অধিকাংশ তরুণই বেছে নেন পছন্দসই কোনো চাকরি। কিন্তু যারা চ্যালেঞ্জ নিতে পছন্দ করেন এবং ধরাবাঁধা চাকরিতে যাদের কোনো আগ্রহ নেই, তারাই হয়ে থাকেন উদ্যোক্তা। বর্তমান সময়ের তরুণদের মধ্যে অন্য যেকোনো সময়ের তুলনায় উদ্যোক্তা হওয়ার প্রবণতা একটু বেশিই লক্ষণীয়। তবে নতুন উদ্যোক্তাদের প্রতি ১০টি উদ্যোগের মধ্যে ৯টিই ব্যর্থ হয় বলে বিভিন্ন সমীক্ষায় দেখা গেছে। এর অবশ্য বেশ কিছু কারণও রয়েছে। একজন তরুণ যখন কোনো একটি উদ্যোগের শুরু করে থাকেন, তখন তিনি আগের কোনো ধরনের অভিজ্ঞতা ছাড়াই কিন্তু কাজ শুরু করেন। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এখানে থেকে যায় বেশ কিছু ভুল ত্রুটি। আর এই ভুলের কারণে উদ্যোগটি একেবারেই ভেস্তে যেতে পারে। তবে ভুল ত্রুটি হতে পারে, এই ভেবে বসে থাকলেও তো চলবে না। পরামর্শ নিতে হবে অভিজ্ঞ এবং বিভিন্ন খাতের সাথে সংশ্লিষ্টদের। ‘সাকসেস ম্যাগাজিন’ অবলম্বনে নতুন উদ্দ্যোক্তাদের এমনই কিছু  ভুল এবং সেগুলোর সমাধান আজ তুলে ধরা হলো—

  • বাস্তবতাকে গুরুত্ব না দেওয়া

উদ্যোগের শুরুতেই অনেক নতুন উদ্যোক্তা তাদের স্টার্টআপ আইডিয়ার প্রেমে পড়ে যান। তারা শুধু ভাবতে থাকেন এমন পণ্য বা সেবা বাজারে আনবেন যা রাতারাতি সফলতা পাবে। আর এরই মধ্যে অধিকাংশ উদ্যোক্তাই এটা হিসাব করতেই ভুলে যান যে কবে এবং কীভাবে তার এই আইডিয়া বাস্তবায়ন করা হবে। এ বিষয়ে সেটন হল ইউনিভার্সিটির সেন্টার ফর এন্ট্রারপ্রেনিয়াল স্টাডিজের পরিচালক সুসান শেরিক বলেন, ‘সফল উদ্যোক্তারা এটা খুব ভালো করেই জানেন যে একটা ব্যবসা চালু করা মানেই হলো এর সাথে সংশ্লিষ্ট সব কিছুর সঠিক বাস্তবায়ন। একটি পণ্য বা সেবা কীভাবে বাজারে ছাড়তে হবে, বাজারে এর চাহিদা আছে কিনা এবং মুনাফা করা সম্ভব হবে কিনা, এ সব কিছুই আছে এর মধ্যে।’ এজন্য তিনি অন্যান্য সফল উদ্যোক্তাদের কাছ থেকে বিভিন্ন বিষয়ে পরামর্শ নেওয়ার উপর জোর দিয়েছেন।

  • নিজের ভাবনায় ব্যস্ত থাকা

প্রতিষ্ঠানের ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে গেলে খুবই সত্ হতে হবে। আর এজন্য নিজের উদ্যোগ নিয়ে যথেষ্ট পরিমাণে চিন্তাভাবনা এবং এর সাথে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয় নিয়ে খোঁজ খবর রাখতে হবে। সেঞ্চুরি লিঙ্কের সাবেক সিইও লুকাস কার্লসনের মতে, ‘নিজের সব গল্প নিজেরই বিশ্বাস করা উচিত্ না। ব্যবসায়ে বাস্তবিক উন্নতির জন্য সংশয়বাদের একটি সুস্থ ডোজ আপনার প্রয়োজন।’

  • আর্থিক ব্যাপারকে গুরুত্ব না দেওয়া

একটি নতুন উদ্যোগের শুরুর দিকে নগদ অর্থের সংকট থাকে। অনেক নতুন উদ্যোক্তাই একে খুব গুরুত্ব দিয়ে থাকেন এবং অনেক বড় সমস্যা বলে মনে করেন। তবে উদ্যোক্তাদের নিয়ে কাজ করেন, এমন ব্যক্তিদের মতে, প্রথমেই সংশ্লিষ্ট খাতে কাজ করে সেই ব্যবসা সম্পর্কে একটি ধারণা লাভ করা এক্ষেত্রে খুবই সহায়ক যা বিভিন্ন দিক থেকেই অর্থের সাশ্রয় করবে। এ ছাড়া অর্থের সংকট কাটিয়ে উঠতে প্রথম দিকে নিজের শ্রমের উপরও গুরুত্ব দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছে এই খাতের সাথে সংশ্লিষ্টরা।

  • ভবিষ্যত্ নিয়ে চিন্তা না করা

অধিকাংশ নতুন উদ্যোক্তার ক্ষেত্রেই এই ব্যাপারটি লক্ষ্য করা যায়। তবে এই সমস্যাটি কেবলমাত্র একই উদ্যোগের একাধিক উদ্যোক্তা থাকলেই চোখে পড়ে। আর তা হলো কে কতটুকু কাজ করবে, এই ব্যাপারটি নিয়ে একটি জটিলতা তৈরি হয়। তবে উদ্যোক্তাদের মধ্যে যদি কারও অন্য কোনো চাকরি থাকে, সেক্ষেত্রে সমস্যাটি প্রকট আকার ধারণ করে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন। ‘দুইজন সমান অংশীদার যখন তাদের উদ্যোগে সমান পরিমাণ কাজ করে না, তখন তাদের মধ্যে একটি সমস্যা দেখা দেয়। একজন মনে করে আমি সব কাজ করি, অন্যজন অল্প কিছু কাজ করেও অর্ধেক অংশের ভাগ পাবে, এটা মেনে নেওয়া যায় না।’ সমস্যা এড়াতে শুরুতেই চুক্তি করে নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি যেখানে তাদের কাজের ব্যাপারে এবং অংশীদারিত্বের বিস্তারিত সবকিছু উল্লেখ থাকবে।

  • পণ্য বা সেবা নিয়ে গবেষণা না করা

প্রায়ই দেখা যায় একজন উদ্যোক্তা কোনো ধরনের চিন্তা ভাবনা না করেই একটি পণ্য বা সেবা বাজারে নিয়ে আসেন। এক্ষেত্রে সেই পণ্য বা সেবাটি বাজারে কতটুকু গ্রাহকপ্রিয় হবে কিংবা আদৌ কেউ কিনবে কিনা, সেটি নিয়ে অনেকেই ভাবেন না। আর এখানেই অধিকাংশ উদ্যোক্তা বাজারে পিছিয়ে পড়েন এবং কখনও কখনও তাদের পুরো ব্যবসাই ভেস্তে যায়।

  • শুরু করতে দেরি করা

কোনো উদ্যোগ শুরুর একটি পরিকল্পনা করে যত দ্রুত সম্ভব কাজে নেমে পড়তে হবে। কেননা আজ যে পণ্য বা সেবার চাহিদা রয়েছে, কাল সেটি নাও থাকতে পারে। এ ছাড়া দেরি করার ফলে অন্য কোনো প্রতিষ্ঠান সেই সুযোগটি গ্রহণ করতে পারে। সব মিলিয়ে সব ঠিক থাকলে দ্রুতই কাজে নেমে পড়া জরুরি।

  • প্যাটেন্ট নিয়ে সচেতন না থাকা

নতুন ব্যবসার ক্ষেত্রে পণ্য, ব্র্যান্ড, লোগো, ট্রেডমার্ক প্রভৃতি বিষয়ে প্রথম থেকেই সচেতন থাকতে হবে। যদি অন্য কেউ তার আগেই একই ব্যবসায়িক ভাবনা নিয়ে পেটেন্ট করে ফেলে তবে পরে গিয়ে তাকে বাড়তি টাকা বা কখনও কখনও পণ্য বিক্রি করারই অনুমতি দেয় না। এই ক্ষতি কোনো নতুন ব্যবসা বহন করতে পারে না।

  • অদক্ষ কর্মী নিয়োগ

নতুনরা প্রায়শই এই ভুলটি করে থাকেন। মানবসম্পদ বিভাগের পূর্বের কোনো যোগ্যতা না থাকায় অনেক উদ্যোক্তা ভুল কর্মী নিয়োগ করে থাকেন যার ফলে উদ্যোগের মূল লক্ষ্য অর্জন অনেক ক্ষেত্রেই কঠিন হয়ে পড়ে। ‘নিয়োগের ক্ষেত্রে দক্ষতা, বুদ্ধিমত্তা এবং প্রবল আগ্রহের উপর গুরুত্ব দেওয়া ভালো। তবে ভালো কর্মী নিয়োগ দেওয়ার ফাঁদে পড়াটা খুবই সহজ যখন আপনার প্রতিষ্ঠান ভালো কিছু করতে শুরু করছে। এ পদক্ষেপ ক্ষতিকর হতে পারে’ বলে মনে করেন হোথ্রোন ল্যাবের সহ-প্রতিষ্ঠাতা ইবান রিয়াস।

সূত্র : দৈনিক ইত্তেফাক । favicon59

Sharing is caring!

Leave a Comment